যুক্তরাষ্ট্র কি দোটানায়
- প্রকাশের সময় : ১১:৪৫:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ মার্চ ২০২৪
- / ৪৫ বার পঠিত
গাজা ও ফিলিস্তিনের অন্যান্য এলাকায় মানবিক সঙ্কট এখন দিন দিন তীব্র হচ্ছে। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কয়েক দিন আগে গাজায় ত্রাণ পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হলে সেটি ব্যাপক উপহাসের জন্ম দেয়। তারা এখন গাজায় অস্থায়ী জেটি তৈরি করে জরুরি মানবিক সহায়তা পাঠাতে যাচ্ছে। তবে এর জন্য দু মাস লেগে যেতে পারে। ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও ফিলিস্তিনে মানবিক বিপর্যয় রোধ- এর মধ্যে কোনটাকে গুরুত্ব দিতে হবে তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কি দোটানায় পড়েছে?
অনেক সময় মিত্র দেশের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হয়। কূটনীতিতে এটি বেশ জটিল একটি কৌশল। মিত্রকেও অনেক সময় নিজের জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হয়। এটি করতে হয় এই জন্য যেন এই দুই মিত্রের অভিন্ন প্রতিপক্ষ পরিস্থিতি থেকে বেশি সুবিধা নিতে না পারে। যেমন বর্তমান পরিস্থিতিতে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে একটি পক্ষে ধরলে অপর পক্ষে রয়েছে হামাস, হুতি, হিজবুল্লাহ ও ইরানপন্থি অন্যান্য গ্রুপ। মিত্রদের ওপর চাপ হিসেবে অনেক সময় বিনা শর্তে সহয়তা না দিয়ে কিছু শর্ত বেঁধে দেওয়া হয়। ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্র যে সামরিক সহায়তা দিয়ে থাকে সেটি যেন আন্তর্জাতিক আইন মেনে করা হয় সে বিষয়ে সতর্ক করে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন ও ক্রিস ভ্যান হলেনসহ ডেমোক্র্যাট দলীয় কয়েকজন কংগ্রেস সদস্য একটি চিঠি দিয়েছেন। তবে এতে ইসরায়েল যদি এই নির্দেশনা লঙ্ঘন করে তখন বাইডেন প্রশাসন কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে সে ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে মিত্রদের স্বার্থরক্ষার পাশাপাশি নিজের স্বার্থও রক্ষা করতে চায়। গণতন্ত্র বিস্তার ও মানবাধিকার রক্ষা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির দুটি স্তম্ভ। নুরী আল মালিকি যখন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী বা হামিদ কারজাই যখন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ওয়াশিংটন কোনো কোনো সময় বাগদাদ ও কাবুলকে কিছু বিষয়ে চাপ প্রয়োগ করেছিল। কিন্তু বর্তমানে সেটা দৃশ্যমান নয়। তবে ইসরাইলকে সামরিক সহায়তা পাঠানো এই মুহূর্তে স্থগিত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে যুক্তরাষ্ট্র কখনোই চাইবে না ইসরায়েল দুর্বল হোক। সেটা হলে অন্য মিত্রদের এই বার্তা দেওয়া হবে যে যুক্তরাষ্ট্র নির্ভরযোগ্য অংশীদার নয়। তা ছাড়া ইসরায়েল রাশিয়া অথবা ইউরোপের দিকে বেশি ঝুঁকতে পারে।
সাবেক যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০০৯ সালে তৎকালীন আফগান প্রেসিডেন্ট কারজাইকে দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রকাশ্যে আহ্বান জানিয়েছিলেন। কারজাই সরকার তাতে কান না দিলেও যুক্তরাষ্ট্র কারজাইয়ের ওপর খুব বেশি চাপ দেয়নি। কেন দেয়নি সে সম্পর্কে দেশটিতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পরে জানিয়েছিলেন যে সেটা তালেবানকে শক্তিশালী করত। ওবামার সেই আহ্বান কার্যত কথার কথাই থেকে যায়। শেষ পর্যন্ত তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে আলোচনায় বসতে হয় এবং তারাই আবার ক্ষমতায় ফিরে আসে। এ থেকে এটি প্রতীয়মান যে ওয়াশিংটন মিত্রদের ওপর সব সময় খুব বেশি প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করে না।
তবে ফিলিস্তিন ইস্যুতে তাদের কিছু একটা করতেই হবে। কারণ মধ্যপ্রাচ্যের অন্য মিত্রদের এই বার্তাটি দেওয়া জরুরি যে ওয়াশিংটন একটি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে এবং আঞ্চলিক বৈরী পক্ষগুলো যেন বর্তমান অবস্থার খুব বেশি সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা না করে। সূত্র : সাম্প্রতিক দেশকাল।