নিউইয়র্ক ০৮:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

যুক্তরাষ্ট্রে তুষারঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত শত শত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে জরিমানার মুখে বাংলাদেশিরা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৭:০৩:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৫২ বার পঠিত

বাংলাদেশি-আমেরিকান সম্প্রদায়ের সদস্যরা সম্প্রতি তুষারঝড়ের সময় যা করেছেন তা প্রথমবার নয়, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে তারা আজ বাফেলো হোমটাউনে ‘সিটি অফ গুড নেবারস’ নামে পরিচিত। কিন্তু এই প্রথম তাদের জরিমানা করা হলো। বাংলাদেশি-আমেরিকান সম্প্রদায়ের প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন স্বেচ্ছাসেবক তুষারঝড়ের সময় শত শত লোককে সরিয়ে নিয়েছিল, বিপজ্জনক অবস্থা থেকে সরিয়ে নিয়ে তাদের আশ্রয় ও খাবার সরবরাহ করেছিল। কিন্তু ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গাড়ি চালানোর জন্য তাদের জরিমানার মুখে পড়তে হয়।

বাংলাদেশি-আমেরিকান কমিউনিটি রেসকিউ টিম গাড়ি চালানোর জন্য ৪,৫০০ ডলারের টিকিট কেটেছে যখন ভ্রমণ নিষিদ্ধ ছিল। বাংলাদেশি গ্রুপের একজন সদস্য মোহাম্মদ ওসমান শিমুল বলেছেন, ‘আমরা জানতাম যে সেখানে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ছিল, কিন্তু আমরা পাত্তা দিইনি কারণ লোকেদের আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন ছিল। ‘আমাদের লোক’ বলতে তিনি সহকর্মী বাংলাদেশিদের বোঝাননি । তিনি বাফেলোর বাসিন্দাদের কথা বলতে চেয়েছিলেন। বাংলাদেশি সদস্যরা বাসিন্দাদের চেক করার জন্য দরজায় দরজায় কড়া নাড়তেন এবং হাউস কলের অনুরোধও করেছিলেন।

তুষারঝড়ের মধ্যেও তারা প্রায় এক সপ্তাহ ধরে প্রধান সড়কে সাতটি ভ্যান চালিয়েছেন। কখনো রাস্তা ধরে হেঁটে গেছেন। বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবকরা ওয়েস্ট সাইড এবং চিকটোওয়াগাতেও লোকেদেরও সাহায্য করেছিলেন ।

‘যেখানেই মানুষের সাহায্যের প্রয়োজন ছিল, সেখানেই আমাদের দল ছিল,’ বলছেন শিমুল। সামগ্রিকভাবে তারা প্রায় ৫০০ জনকে তাদের বাড়ি থেকে একটি উষ্ণ জায়গায় স্থানান্তর করেছেন। জায়গাগুলির মধ্যে রয়েছে বেইলি অ্যাভিনিউতে বাংলাদেশ প্লাজা, ফুগেরন স্ট্রিটের দেশি সেন্টার এবং ফিলমোর অ্যাভিনিউতে আল আকসা সুপারমার্কেট।
তিনি বলেন, ‘মানুষকে একে অপরকে সাহায্য করতে হবে। আমাদের সকলেরই নিজস্ব কর্তব্য আছে।’ বাড়িগুলিতে বিদ্যুত এবং রুম হিটার চালু হয়ে গেলে গ্রুপটি আবার উদ্ধারকৃত মানুষগুলিকে তাদের পুরোনো আস্তানায় ফেরত নিয়ে যেতে শুরু করেছিল। কিন্তু খালি হাতে নয়। যাদের উদ্ধার করা হয়েছে তাদের হাতে গরম খাবার, মুদির দোকানের একাধিক সামগ্রী এবং কিছু টাকা দিয়ে সাহায্য করা হয়েছিলো বলে জানাচ্ছেন শিমুল । এমনকি এখনও, গ্রুপটি গ্রিডার স্ট্রিটের লাভবার্ডস রেস্তোরাঁ থেকে গরম খাবার সরবরাহ করছে এবং বিনামূল্যে পিকআপের জন্য অফার করছে।

কারলান্ডা মেডরস হলেন একজন শান্তিপ্রিয় এবং যুব এনগেজমেন্ট গ্রুপ মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্যারেন্টস এর একজন মুখপাত্র। যিনি কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায় এবং বাংলাদেশি অভিবাসীদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত করতে বাংলাদেশি গ্রুপের সাথে কাজ করে। কারলান্ডা বলছেন, ‘তাদের সাহায্য করতে কোনো সমস্যা নেই। তারা আমাদের সম্প্রদায়ের জন্য যা যা প্রয়োজন তাই করে, এবং সেই কারণে আমি তাদের ভালবাসি।’

কারলান্ডা নিজেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলছেন, ‘বাঙালি সম্প্রদায়ের এখানে প্রচুর রেস্তোরাঁ রয়েছে, তাই তারা খাবার রান্না করা শুরু করে এবং সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা বিনামূল্যে যে কারো কাছে পৌঁছে দেবে। তারা আমাদের জিজ্ঞাসা করতো কাদের খাবার দরকার? আমি তাদের ঠিকানা বলে দিতাম।’

মেডরস বৃহস্পতিবার GYC মন্ত্রণালয়ের স্বেচ্ছাসেবকদের একটি দলের সাথে মিলে বাংলাদেশিদের বিতরণ করা খাদ্য পৌঁছে দিচ্ছেন যাতে বিপর্যস্ত মানুষগুলো এই দুঃসময়ে কিছু ভালো জিনিস খেতে পারেন। এদিকে জরিমানার বিরুদ্ধে আপিল করার পরিকল্পনা করছেন শিমুল। তিনি বলছেন, ৪৫০০ ডলার যদি কোনো ভালো কাজের জন্য দিতে হয়, তাহলে আমার অসুবিধা নেই, কারণ আমরা এই সম্প্রদায়কে ভালবাসি।

 

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

যুক্তরাষ্ট্রে তুষারঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত শত শত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে জরিমানার মুখে বাংলাদেশিরা

প্রকাশের সময় : ০৭:০৩:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ জানুয়ারী ২০২৩

বাংলাদেশি-আমেরিকান সম্প্রদায়ের সদস্যরা সম্প্রতি তুষারঝড়ের সময় যা করেছেন তা প্রথমবার নয়, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে তারা আজ বাফেলো হোমটাউনে ‘সিটি অফ গুড নেবারস’ নামে পরিচিত। কিন্তু এই প্রথম তাদের জরিমানা করা হলো। বাংলাদেশি-আমেরিকান সম্প্রদায়ের প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন স্বেচ্ছাসেবক তুষারঝড়ের সময় শত শত লোককে সরিয়ে নিয়েছিল, বিপজ্জনক অবস্থা থেকে সরিয়ে নিয়ে তাদের আশ্রয় ও খাবার সরবরাহ করেছিল। কিন্তু ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গাড়ি চালানোর জন্য তাদের জরিমানার মুখে পড়তে হয়।

বাংলাদেশি-আমেরিকান কমিউনিটি রেসকিউ টিম গাড়ি চালানোর জন্য ৪,৫০০ ডলারের টিকিট কেটেছে যখন ভ্রমণ নিষিদ্ধ ছিল। বাংলাদেশি গ্রুপের একজন সদস্য মোহাম্মদ ওসমান শিমুল বলেছেন, ‘আমরা জানতাম যে সেখানে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ছিল, কিন্তু আমরা পাত্তা দিইনি কারণ লোকেদের আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন ছিল। ‘আমাদের লোক’ বলতে তিনি সহকর্মী বাংলাদেশিদের বোঝাননি । তিনি বাফেলোর বাসিন্দাদের কথা বলতে চেয়েছিলেন। বাংলাদেশি সদস্যরা বাসিন্দাদের চেক করার জন্য দরজায় দরজায় কড়া নাড়তেন এবং হাউস কলের অনুরোধও করেছিলেন।

তুষারঝড়ের মধ্যেও তারা প্রায় এক সপ্তাহ ধরে প্রধান সড়কে সাতটি ভ্যান চালিয়েছেন। কখনো রাস্তা ধরে হেঁটে গেছেন। বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবকরা ওয়েস্ট সাইড এবং চিকটোওয়াগাতেও লোকেদেরও সাহায্য করেছিলেন ।

‘যেখানেই মানুষের সাহায্যের প্রয়োজন ছিল, সেখানেই আমাদের দল ছিল,’ বলছেন শিমুল। সামগ্রিকভাবে তারা প্রায় ৫০০ জনকে তাদের বাড়ি থেকে একটি উষ্ণ জায়গায় স্থানান্তর করেছেন। জায়গাগুলির মধ্যে রয়েছে বেইলি অ্যাভিনিউতে বাংলাদেশ প্লাজা, ফুগেরন স্ট্রিটের দেশি সেন্টার এবং ফিলমোর অ্যাভিনিউতে আল আকসা সুপারমার্কেট।
তিনি বলেন, ‘মানুষকে একে অপরকে সাহায্য করতে হবে। আমাদের সকলেরই নিজস্ব কর্তব্য আছে।’ বাড়িগুলিতে বিদ্যুত এবং রুম হিটার চালু হয়ে গেলে গ্রুপটি আবার উদ্ধারকৃত মানুষগুলিকে তাদের পুরোনো আস্তানায় ফেরত নিয়ে যেতে শুরু করেছিল। কিন্তু খালি হাতে নয়। যাদের উদ্ধার করা হয়েছে তাদের হাতে গরম খাবার, মুদির দোকানের একাধিক সামগ্রী এবং কিছু টাকা দিয়ে সাহায্য করা হয়েছিলো বলে জানাচ্ছেন শিমুল । এমনকি এখনও, গ্রুপটি গ্রিডার স্ট্রিটের লাভবার্ডস রেস্তোরাঁ থেকে গরম খাবার সরবরাহ করছে এবং বিনামূল্যে পিকআপের জন্য অফার করছে।

কারলান্ডা মেডরস হলেন একজন শান্তিপ্রিয় এবং যুব এনগেজমেন্ট গ্রুপ মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্যারেন্টস এর একজন মুখপাত্র। যিনি কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায় এবং বাংলাদেশি অভিবাসীদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত করতে বাংলাদেশি গ্রুপের সাথে কাজ করে। কারলান্ডা বলছেন, ‘তাদের সাহায্য করতে কোনো সমস্যা নেই। তারা আমাদের সম্প্রদায়ের জন্য যা যা প্রয়োজন তাই করে, এবং সেই কারণে আমি তাদের ভালবাসি।’

কারলান্ডা নিজেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলছেন, ‘বাঙালি সম্প্রদায়ের এখানে প্রচুর রেস্তোরাঁ রয়েছে, তাই তারা খাবার রান্না করা শুরু করে এবং সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা বিনামূল্যে যে কারো কাছে পৌঁছে দেবে। তারা আমাদের জিজ্ঞাসা করতো কাদের খাবার দরকার? আমি তাদের ঠিকানা বলে দিতাম।’

মেডরস বৃহস্পতিবার GYC মন্ত্রণালয়ের স্বেচ্ছাসেবকদের একটি দলের সাথে মিলে বাংলাদেশিদের বিতরণ করা খাদ্য পৌঁছে দিচ্ছেন যাতে বিপর্যস্ত মানুষগুলো এই দুঃসময়ে কিছু ভালো জিনিস খেতে পারেন। এদিকে জরিমানার বিরুদ্ধে আপিল করার পরিকল্পনা করছেন শিমুল। তিনি বলছেন, ৪৫০০ ডলার যদি কোনো ভালো কাজের জন্য দিতে হয়, তাহলে আমার অসুবিধা নেই, কারণ আমরা এই সম্প্রদায়কে ভালবাসি।