ফ্লোরিডায় সমকামী ক্লাবে ‘ঘরোয়া সন্ত্রাসবাদী হামলা’য় নিহত ৫০ ॥ হামলার দায় স্বীকার আইএস’র ॥ সন্ত্রাস এবং বিদ্বেষের কাজ-ওবামা ॥ হিলারী-ট্রাম্পের নিন্দা
- প্রকাশের সময় : ০৩:১০:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জুন ২০১৬
- / ১১০৫ বার পঠিত
অরল্যান্ডে (ফ্লোরিডা): যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার একটি সমকামী নাইটক্লাবে হামলা চালিয়েছে এক বন্দুকধারী। এতে নিহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। আহত ৫৩ জনকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়বে। হামলাকারী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। পুলিশ তাকে ওমর মতিন নামে শনাক্ত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয়া মতিনের পিতা মাতা আফগান। কর্তৃপক্ষ এ সহিংসতাকে ঘরোয়া সন্ত্রাসবাদী কর্ম (অ্যাক্ট অব ডোমেস্টিক টেরর) হিসেবে বিবেচনা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বন্দুকধারীর গুলিতে এটিই সবচেয়ে বেশি নিহত হওয়ার ঘটনা। তদন্তে যুক্ত হয়েছে এফবিআই। অরলান্ডো পুলিশ প্রধান জন মিনার বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে বিবিসি ও সিএনএন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় সমকামীদের এক নাইটক্লাবে হত্যাযজ্ঞের দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)।
খবরে বলা হয়েছে, ১১ জুন শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে (স্থানীয় সময় রাত দুইটা) এক বন্দুকধারী হামলা চালায় ফ্লোরিডার পালস ক্লাবে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়েকজন জানিয়েছেন, তারা ৪০ থেকে ৫০ রাউন্ড গুলির শব্দ পেয়েছেন। হামলার সময় ওমর মতিনের কাছে অ্যাসল্ট রাইফেল, হ্যান্ডগান ও এক ধরণের ডিভাইস দেখা গেছে। পুলিশের কাছে মনে হয়েছে, এ হামলা সুসংগঠিত। কিছুদিন ধরে পুলিশের নজরদারিতে ছিলেন তিনি। তবে তার বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোন তদন্ত কখনও হয়নি।
স্থানীয় সময় রাত দুইটায় ক্লাবে হামলা করে ওই বন্দুকধারী। বাছবিচারহীনভাবে গোলাগুলির এক পর্যায়ে সেখানে কর্মরত এক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে গুলি বিনিময় হয় তার। এক পর্যায়ে কয়েকজনকে জিম্মি হিসেবে আটক করে সে। কিন্তু ভোর ৫টার দিকে সোয়াতের বিশেষ একটি টিম অভিযান চালিয়ে জিম্মিদের মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ সময় নিহত হয় ওমর।
হামলার পর বেঁচে চাওয়া ক্রিস্টোফার হ্যানসন নামে এক ব্যক্তি জানান, হামলার পর ভিতরে কেবল মানুষের দেহ পড়ে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘পার্কিং লটে তাদের হলুদ বা লাল রঙ দিয়ে চিহ্নিত করা হচ্ছেÑ কার জন্য আগে সহায়তা প্রয়োজন। তাদের কারও প্যান্ট ছিঁড়ে গেছে, কারও গায়ে শার্ট নেই, তাদের শরীরে বুলেটের চিহ্ন। চারদিকে কেবল রক্ত আর রক্ত।’
রিকার্ডো আলমোদোভার নামে এক ব্যক্তি পালস ক্লাবের ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ড্যন্স ফ্লোর ও বারে যারা ছিলেন, তারা আত্মরক্ষার তাগিদে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। যারা বার বা পেছনের দরজার পাশে ছিলেন, তারা আমার মতো দৌড়ে পালাতে পেরেছে। অ্যান্থনি তোরেস নামে আরেক ব্যক্তি জানান, তিনি অনেককে চিৎকার করতে শুনেছেন যে ভেতরের অনেকে মারা গেছে। স্থানীয় টিভির প্রতিবেদক স্টুয়ার্ট মুর টুইট করেন যে, তাকে একটি সূত্র জানিয়েছে ২০ জনেরও বেশি মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তিনি তখন জানিয়েছিলেন, হামলাকারী জিম্মিসহ নাইটক্লাবের ভেতর অবস্থান করছিল। একজন নারী জানিয়েছেন, তার মেয়ে তাকে টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে জানিয়েছে যে তার হাতে গুলি লেগেছে। ওই মেয়ে ক্লাবের মধ্যেই ছিল।
হামলার দায় স্বীকার আইএস’র: এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় সমকামীদের এক নাইটক্লাবে হত্যাযজ্ঞের দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। এ খবর দিয়েছে জঙ্গি গ্রুপগুলোর ওপর নজরদারি করা মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ। এতে বলা হয়েছে, এ হামলাকে উদযাপন করেছে আইএস। আরও হামলা চালানোর আহ্বান জানিয়েছে তারা। সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ লিখেছে, অরল্যান্ডোতে সমকামীদের একটি নাইট ক্লাবে ওমর মতিন গুলি করে মানুষ হত্যা করেছে ১১ই জুন। সামাজিক মিডিয়ায় এ হত্যাযজ্ঞের প্রশংসা করেছে আইএস।
প্রেসিডেন্ট ওবামা’র প্রতিক্রিয়া: ওদিকে বিবিসি জানায়, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা একে সন্ত্রাস এবং বিদ্বেষের কাজ বলে আখ্যা দিয়েছেন। এদিকে, লস অ্যানজেলেসেও সমকামীদের সমাবেশে হামলার এক পরিকল্পনাকারীকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় সমকামীদের নাইটক্লাবে হামলার সময় হামলাকারী বন্দুকধারী পুলিশকে ফোন করে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠী বা আইএস-এর প্রতি আনুগত্যের কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। আইএসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আমাক সংবাদ সংস্থা বলছে, হামলাটি চালিয়েছে একজন ‘আইএস যোদ্ধা’। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী ২৯ বছর বয়সী বন্দুকধারী তরুণের নাম ওমর মতিন। তার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে হলেও তার বাবা-মা আফগান। শনিবার মধ্যরাতে ফ্লোরিডার অরল্যান্ডো শহরের ‘পালস’ নামের নাইটক্লাবটিতে ঢুকে গুলি চালায় সে। তাতে ৫০ জন নিহত হন। আহতের সংখ্যা তার চেয়ে বেশি। তাদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। হামলা শুরুর প্রায় তিন ঘণ্টা পর সেখানে ঢুকে ওমর মতিনকে হত্যা করে পুলিশ। একে সন্ত্রাস ও বিদ্বেষের কাজ আখ্যা দিয়ে প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, বন্দুকধারীর কাছে একটি হ্যান্ডগান এবং একটি অ্যাসল্ট রাইফেল ছিল। এতেই প্রমাণ হয় কত সহজেই বন্দুকের ব্যবহার করে এখানে স্কুল বা আবাসিক এলাকা বা নাইটক্লাবে হামলা করা যায়।
হিলারী-ট্রাম্পের নিন্দা: এই ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারী ক্লিন্টন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ ঘটনায় মুসলিম মৌলবাদীদের দায়ী না করায় প্রেসিডেন্ট ওবামার পদত্যাগও দাবি করেছেন ট্রাম্প।
এদিকে, গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-এর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা রন হপার জানিয়েছেন, এই হামলাকারী ওমর মতিন সম্পর্কে ২০১৩ এবং ১৪ সালেও তদন্ত করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বন্দুকধারীর হামলায় এত বেশি হতাহতের ঘটনা এর আগে ঘটেনি। (মানবজমিন)