নিউইয়র্ক ০১:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

‘নোবেল সম্মেলনে’ ইউনূসের সঙ্গে থাকছেন না আটলান্টার মেয়র

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৫:১৫:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ এপ্রিল ২০১৫
  • / ৮৫২ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: শান্তিতে নোবেল বিজয়ীদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় সম্মেলনের আয়োজন করতে গিয়ে নগর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছে ইউনূস ক্রিয়েটিভ ল্যাব নামে মুহাম্মদ ইউনূসের একটি প্রতিষ্ঠান।
মুহাম্মদ ইউনূসের এই আয়োজন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে আটলান্টার মেয়র কাসিম রিড বলেছেন, এর সঙ্গে আটলান্টা নগর কর্তৃপক্ষেরও কোনো সম্পর্ক আর থাকবে না। সম্মেলনের ওয়েবসাইট, বিজ্ঞাপন ও প্রচারপত্রে কোথাও মেয়র বা নগর কর্তৃপক্ষের কারো নাম বা লোগো ব্যবহার করা যাবে না।
স্থানীয় এক সাংবাদিককে রিড বলেছেন, আয়োজক শহরের মেয়র হিসাবে তিনি এ সম্মেলনের আয়োজনে থাকতেই চেয়েছিলেন। কিন্তু ইউনূস ক্রিয়েটিভ ল্যাব এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ভূইয়া যতক্ষণ আয়োজনের নেতৃত্বে থাকছেন, ততক্ষণ তা আর সম্ভব না।
আয়োজক কর্তৃপক্ষের সাংগঠনিক কাঠামো এবং সংগৃহীত তহবিলের রক্ষণাবেক্ষণ কীভাবে হবে তা নিয়েই ইউনূস ক্রিয়েটিভ ল্যাবের সঙ্গে নগর কর্তৃপক্ষের মতবিরোধ।
দুই পক্ষের চিঠি চালাচালিতেও বিষয়টি উঠে এসেছে, যা আটলান্টার একটি ওয়েবভিত্তিক সাময়িকী হুবহু প্রকাশ করেছে।
আগামী ১৫ থেকে ১৯ নভেম্বর জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের বাংলাদেশী অধ্যুষিত আটলান্টা শহরে জর্জিয়া একুরিয়াম ও জর্জিয়া ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস সেন্টারে অনুষ্ঠেয় এ সম্মেলনের প্রস্তুতি শুরু হয় গত অক্টোবরে। শান্তিতে নোবেলজয়ী জীবিত ৩০ জনের মধ্যে অন্তত ২১ জনকে এ সম্মেলনে আশা করছেন আয়োজকরা।
গত নভেম্বরে জমকালো এক অনুষ্ঠানে এ সম্মেলনের জন্য তহবিল সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু হয়। এর পৃষ্ঠপোষক হিসেবে এরইমধ্যে চুক্তিবদ্ধ হয় ইউনাইটেড পার্সেল সার্ভিস ও কোকা-কোলা। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী বাংলাদেশী মুহাম্মদ ইউনূস আয়োজনের মূল উদ্যোক্তা। তার সঙ্গে রয়েছেন আরেক নোবেলজয়ী জিমি কার্টার।
আয়োজক সংস্থা হিসেবে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে ইউনূসের গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠান ইউনূস ক্রিয়েটিভ ল্যাব।এর সিইও মোহাম্মদ ভূইয়া সম্মেলন আয়োজক পর্ষদেরও প্রধান নির্বাহী। আর আয়োজনের দায়িত্বে চিফ অপারেটিং অফিসারের দায়িত্বে আছেন ভূইয়ার স্ত্রী শামীমা আমিন।
সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের পাশাপাশি কয়েক হাজার শিক্ষার্থীরও অংশ নেওয়ার কথা। গত ১৯ মার্চ ইউনূস ক্রিয়েটিভ ল্যাবের প্রধান নির্বাহীকে এক চিঠিতে এ আয়োজন থেকে সরে যাওয়ার কথা জানান আটলান্টার মেয়র। গত ২৭ মার্চ ‘আটলান্টা জার্নাল অব কনস্টিটিউশন’-এ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে শুরু হয় নানামুখী আলোচনা ও দুই পক্ষের বাকযুদ্ধ।
যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে একজন বিদেশির সম্মেলন আয়োজন নিয়ে মানুষের যে ঔৎসুক্য ছিল তাকে নতুন মাত্রা দেয় ওই খবর। নিজের উদ্বেগের বিষয়গুলো তুলে ধরে মেয়র রিড তার চিঠিতে বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ ইভেন্টের সমন্বয় সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে মতৈক্যে পৌঁছাতে না পেরে আমি এ কঠিন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ অথবা এ ইভেন্টের সঙ্গে আটলান্টা শহরের আর কোনো সম্পৃক্ততা থাকবে না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইলেভেন অ্যালাইভকে পাঠানো এক বিবৃতিতে মোহাম্মদ ভূইয়া বলেন, ‘নোবেল পিস লরিয়েট সামিটের আটলান্টা অরগানাইজিং কমিটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা সর্বসম্মতভাবে সম্মেলনের প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে সম্মতি দিয়েছেন। অধ্যাপক ইউনূস ও প্রেসিডেন্ট কার্টারের নেতৃত্বে সম্মেলন আয়োজনে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি।… আমরা আশা করি, অন্য পৃষ্ঠপোষকদের মতো নগর কর্তৃপক্ষও এ আয়োজনে পূর্ণ সহযোগিতা দেবে।’
তিনি বলেন, ‘এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, আরএফপি (রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল) প্রসেস পাশ কাটিয়ে ইভেন্ট প্ল্যানার হিসেবে একজনের (রিড) বন্ধুকে নিয়োগের সুপারিশ প্রত্যাখ্যানের বিষয়টিই নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্তদের সম্মেলন আয়োজন করে এ নগরীকে সম্মানিত করার চেয়ে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
‘এটা আরও দুর্ভাগ্যজনক যে, কেউ কেউ আমাদের বলেছেন- আমরা এ নগরীর প্রতিনিধিত্ব করার জন্য উপযুক্ত নই এবং তাদের এমন একজন প্রয়োজন যিনি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবেন। কিন্তু যে নোবেলবিজয়ী আটলান্টাকে এ (আয়োজনের) সম্মান দিচ্ছেন তিনিও দেখতে আমাদের মতোই।’
ইউনূস ক্রিয়েটিভ ল্যাবের প্রধান নির্বাহীর এ অভিযোগের জবাব এসেছে মেয়র রিডের চিঠিতে, যা গত ২৬ মার্চ তিনি মোহাম্মদ ভূইয়াকে পাঠিয়েছেন। রিড বলেন, ‘আপনার আয়োজন পরিকল্পনা প্রক্রিয়ায় কোনোভাবেই সম্পৃক্ত হবে না আটলান্টা সিটি। আপনার প্রস্তুতিতে হস্তক্ষেপের কোনো ইচ্ছা নগর কর্তৃপক্ষের নেই। আমার ঐকান্তিক ইচ্ছা, আমি বা আমার প্রশাসনের কোনো সদস্য এ প্রস্তুতিতে সম্পৃক্ত থাকব না।
মেয়র বলছেন, আটলান্টার কম্যুনিটি ও অংশীজনের উদ্বেগের বিষয়টিই তিনি ইউনূস ল্যাবকে জানিয়েছেন। অতীতে এ ধরনের বড় আয়োজনের অভিজ্ঞতা থাকায় তিনি এ সম্মেলনে ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব শিকাগোর জ্যাসুলকা টারমান অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসকে দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন।
‘আপনার ভুয়া অভিযোগের জবাবে বলতে চাই, জ্যাসুলকা আমার ‘বন্ধু’ নন। তার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয় ২০১৪ সালের ৪ ডিসেম্বর এক বৈঠকে, যেখানে আপনিও ছিলেন,’ ভূইয়াকে লিখেছেন রিড।
২০১২ সালে শিকাগো সিটিতে নোবেলবিজয়ীদের সম্মেলনের অন্যতম আয়োজক ছিল জ্যাসুলকা টারমান পাবলিক রিলেশনস ফার্ম। ক্লিনটন ফাউন্ডেশন ও কার্টার সেন্টারের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতাও এ প্রতিষ্ঠানের রয়েছে বলে চিঠিতে বলা হয়েছে।
মেয়র লিখেছেন, তার আরেকটি প্রস্তাব ছিল সম্মেলনের জন্য সংগৃহীত অর্থ ‘কম্যুনিটি ফাউন্ডেশন ফর গ্রেটার আটলান্টা’র অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা। আটলান্টা অঞ্চলের সমাজহিতৈষী ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের দ্বারা পরিচালিত এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আগামী সম্মেলনের অর্থ সংগ্রহ হলে স্বচ্ছতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠবে না।
এছাড়া জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির স্যাম নান স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের চেয়ারপারসন জোসেফ ব্যাংকফসহ মোহাম্মদ ভূইয়ারই কয়েকজন উপদেষ্টা আলেকজান্ডার ফ্রেজার নামের একজনের নেতৃত্বে সম্মেলনের নতুন আয়োজক কমিটি করার পক্ষে বলেছিলেন বলে জানান মেয়র রিড।
তিনি বলেন, ‘টার্নার গ্লোবাল প্রোপার্টিজের সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফ্রেজার ব্যবস্থাপনা, নেতৃত্ব ও নৈতিকতার জন্য দেশজুড়ে পরিচিত।’
কিন্তু অন্যান্য প্রস্তাবের মতো ফ্রেজারের নেতৃত্বাধীন নতুন পর্ষদের প্রস্তাবও খারিজ হয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন তিনি। ভূইয়াকে তিনি লিখেছেন, ‘বর্তমান কাঠামোয় যেখানে আপনি নিজে ইভেন্টের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার এবং আপনার স্ত্রী শামীমা আমিন আপনার প্রধান অপারেটিং অফিসার হিসেবে রয়েছেন তা অব্যাহত রাখতে আপনি ওই প্রস্তাব নাকচ করলেন, যাতে আমরা অবাক হইনি।’
আয়োজক কমিটিতে পরিবর্তনের প্রস্তাব নিয়ে সম্মেলনের অনারারি চেয়ার টেড টার্নারকে লেখা এক চিঠিতে মোহাম্মদ ভূইয়া মিথ্যাচার করেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন আটলান্টার মেয়র। তিনি বলেছেন, অনারারি চেয়ারপারসনের পদ থেকে টেড টার্নারকে সরিয়ে দিতে মেয়রের পক্ষ থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে ভূইয়া ওই চিঠিতে লিখেছেন, যা পুরোপুরি মিথ্যা।
‘যেহেতু আমি কখনোই অনারারি চেয়ারের দায়িত্ব থেকে টার্নারকে সরানোর প্রস্তাব করিনি তাই এ বিষয়টিও সম্মেলন আয়োজন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা রেখেছে,’ বলেন মেয়র।
গত মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) আটলান্টার সাংবাদিক মারিয়া সাপোর্টাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রিড বলেন, নগর কর্তৃপক্ষ নোবেলবিজয়ীদের নিয়ে এ সম্মেলনের আয়োজনে থাকতে চাইলেও ভূইয়াকে আয়োজক কমিটির নেতৃত্বে রেখে সেটা সম্ভব নয়।
এসব বিষয়ে আগামী দশ দিনে দুটো গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হবে জানিয়ে রিড সাপোর্টারিপোর্ট.কম- কে বলেন, সমস্যার সমাধান নিয়ে তিনি আশাবাদী।
ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে ‘শান্তি স্থাপনে’ ভূমিকা রাখায় ২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক ও এর প্রতিষ্ঠাতা ইউনূস শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। ২০১০ সালে নরওয়ের জাতীয় টেলিভিশনে প্রচারিত একটি প্রামাণ্যচিত্রে ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংককে দেওয়া বিদেশি অর্থ এক তহবিল থেকে অন্য তহবিলে স্থানান্তরের অভিযোগ উঠলে দেশে-বিদেশে শুরু হয় আলোচনা।
গ্রামীণ ব্যাংকের সূচনা থেকেই এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন মুহাম্মদ ইউনূস। অবসরের বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে ২০১১ সালের মার্চে তাকে অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আদালতে গেলেও ওই পদ তিনি আর ফিরে পাননি।
সাপোর্টা লিখেছেন, ইউনূস আটলান্টাকে বলেন তার দ্বিতীয় বাড়ি। কয়েক বছর আগে মেয়র নিজেই এ নোবেলবিজয়ীকে এ শহরের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দিয়ে স্বাগত জানিয়েছিলেন। তবে এই বিরোধের বিষয়ে ইউনূসের সঙ্গে কথা হয়নি বলে তাকে জানিয়েছেন মেয়র রিড।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

‘নোবেল সম্মেলনে’ ইউনূসের সঙ্গে থাকছেন না আটলান্টার মেয়র

প্রকাশের সময় : ০৫:১৫:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ এপ্রিল ২০১৫

নিউইয়র্ক: শান্তিতে নোবেল বিজয়ীদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় সম্মেলনের আয়োজন করতে গিয়ে নগর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছে ইউনূস ক্রিয়েটিভ ল্যাব নামে মুহাম্মদ ইউনূসের একটি প্রতিষ্ঠান।
মুহাম্মদ ইউনূসের এই আয়োজন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে আটলান্টার মেয়র কাসিম রিড বলেছেন, এর সঙ্গে আটলান্টা নগর কর্তৃপক্ষেরও কোনো সম্পর্ক আর থাকবে না। সম্মেলনের ওয়েবসাইট, বিজ্ঞাপন ও প্রচারপত্রে কোথাও মেয়র বা নগর কর্তৃপক্ষের কারো নাম বা লোগো ব্যবহার করা যাবে না।
স্থানীয় এক সাংবাদিককে রিড বলেছেন, আয়োজক শহরের মেয়র হিসাবে তিনি এ সম্মেলনের আয়োজনে থাকতেই চেয়েছিলেন। কিন্তু ইউনূস ক্রিয়েটিভ ল্যাব এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ভূইয়া যতক্ষণ আয়োজনের নেতৃত্বে থাকছেন, ততক্ষণ তা আর সম্ভব না।
আয়োজক কর্তৃপক্ষের সাংগঠনিক কাঠামো এবং সংগৃহীত তহবিলের রক্ষণাবেক্ষণ কীভাবে হবে তা নিয়েই ইউনূস ক্রিয়েটিভ ল্যাবের সঙ্গে নগর কর্তৃপক্ষের মতবিরোধ।
দুই পক্ষের চিঠি চালাচালিতেও বিষয়টি উঠে এসেছে, যা আটলান্টার একটি ওয়েবভিত্তিক সাময়িকী হুবহু প্রকাশ করেছে।
আগামী ১৫ থেকে ১৯ নভেম্বর জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের বাংলাদেশী অধ্যুষিত আটলান্টা শহরে জর্জিয়া একুরিয়াম ও জর্জিয়া ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস সেন্টারে অনুষ্ঠেয় এ সম্মেলনের প্রস্তুতি শুরু হয় গত অক্টোবরে। শান্তিতে নোবেলজয়ী জীবিত ৩০ জনের মধ্যে অন্তত ২১ জনকে এ সম্মেলনে আশা করছেন আয়োজকরা।
গত নভেম্বরে জমকালো এক অনুষ্ঠানে এ সম্মেলনের জন্য তহবিল সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু হয়। এর পৃষ্ঠপোষক হিসেবে এরইমধ্যে চুক্তিবদ্ধ হয় ইউনাইটেড পার্সেল সার্ভিস ও কোকা-কোলা। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী বাংলাদেশী মুহাম্মদ ইউনূস আয়োজনের মূল উদ্যোক্তা। তার সঙ্গে রয়েছেন আরেক নোবেলজয়ী জিমি কার্টার।
আয়োজক সংস্থা হিসেবে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে ইউনূসের গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠান ইউনূস ক্রিয়েটিভ ল্যাব।এর সিইও মোহাম্মদ ভূইয়া সম্মেলন আয়োজক পর্ষদেরও প্রধান নির্বাহী। আর আয়োজনের দায়িত্বে চিফ অপারেটিং অফিসারের দায়িত্বে আছেন ভূইয়ার স্ত্রী শামীমা আমিন।
সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের পাশাপাশি কয়েক হাজার শিক্ষার্থীরও অংশ নেওয়ার কথা। গত ১৯ মার্চ ইউনূস ক্রিয়েটিভ ল্যাবের প্রধান নির্বাহীকে এক চিঠিতে এ আয়োজন থেকে সরে যাওয়ার কথা জানান আটলান্টার মেয়র। গত ২৭ মার্চ ‘আটলান্টা জার্নাল অব কনস্টিটিউশন’-এ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে শুরু হয় নানামুখী আলোচনা ও দুই পক্ষের বাকযুদ্ধ।
যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে একজন বিদেশির সম্মেলন আয়োজন নিয়ে মানুষের যে ঔৎসুক্য ছিল তাকে নতুন মাত্রা দেয় ওই খবর। নিজের উদ্বেগের বিষয়গুলো তুলে ধরে মেয়র রিড তার চিঠিতে বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ ইভেন্টের সমন্বয় সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে মতৈক্যে পৌঁছাতে না পেরে আমি এ কঠিন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ অথবা এ ইভেন্টের সঙ্গে আটলান্টা শহরের আর কোনো সম্পৃক্ততা থাকবে না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইলেভেন অ্যালাইভকে পাঠানো এক বিবৃতিতে মোহাম্মদ ভূইয়া বলেন, ‘নোবেল পিস লরিয়েট সামিটের আটলান্টা অরগানাইজিং কমিটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা সর্বসম্মতভাবে সম্মেলনের প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে সম্মতি দিয়েছেন। অধ্যাপক ইউনূস ও প্রেসিডেন্ট কার্টারের নেতৃত্বে সম্মেলন আয়োজনে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি।… আমরা আশা করি, অন্য পৃষ্ঠপোষকদের মতো নগর কর্তৃপক্ষও এ আয়োজনে পূর্ণ সহযোগিতা দেবে।’
তিনি বলেন, ‘এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, আরএফপি (রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল) প্রসেস পাশ কাটিয়ে ইভেন্ট প্ল্যানার হিসেবে একজনের (রিড) বন্ধুকে নিয়োগের সুপারিশ প্রত্যাখ্যানের বিষয়টিই নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্তদের সম্মেলন আয়োজন করে এ নগরীকে সম্মানিত করার চেয়ে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
‘এটা আরও দুর্ভাগ্যজনক যে, কেউ কেউ আমাদের বলেছেন- আমরা এ নগরীর প্রতিনিধিত্ব করার জন্য উপযুক্ত নই এবং তাদের এমন একজন প্রয়োজন যিনি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবেন। কিন্তু যে নোবেলবিজয়ী আটলান্টাকে এ (আয়োজনের) সম্মান দিচ্ছেন তিনিও দেখতে আমাদের মতোই।’
ইউনূস ক্রিয়েটিভ ল্যাবের প্রধান নির্বাহীর এ অভিযোগের জবাব এসেছে মেয়র রিডের চিঠিতে, যা গত ২৬ মার্চ তিনি মোহাম্মদ ভূইয়াকে পাঠিয়েছেন। রিড বলেন, ‘আপনার আয়োজন পরিকল্পনা প্রক্রিয়ায় কোনোভাবেই সম্পৃক্ত হবে না আটলান্টা সিটি। আপনার প্রস্তুতিতে হস্তক্ষেপের কোনো ইচ্ছা নগর কর্তৃপক্ষের নেই। আমার ঐকান্তিক ইচ্ছা, আমি বা আমার প্রশাসনের কোনো সদস্য এ প্রস্তুতিতে সম্পৃক্ত থাকব না।
মেয়র বলছেন, আটলান্টার কম্যুনিটি ও অংশীজনের উদ্বেগের বিষয়টিই তিনি ইউনূস ল্যাবকে জানিয়েছেন। অতীতে এ ধরনের বড় আয়োজনের অভিজ্ঞতা থাকায় তিনি এ সম্মেলনে ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব শিকাগোর জ্যাসুলকা টারমান অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসকে দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন।
‘আপনার ভুয়া অভিযোগের জবাবে বলতে চাই, জ্যাসুলকা আমার ‘বন্ধু’ নন। তার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয় ২০১৪ সালের ৪ ডিসেম্বর এক বৈঠকে, যেখানে আপনিও ছিলেন,’ ভূইয়াকে লিখেছেন রিড।
২০১২ সালে শিকাগো সিটিতে নোবেলবিজয়ীদের সম্মেলনের অন্যতম আয়োজক ছিল জ্যাসুলকা টারমান পাবলিক রিলেশনস ফার্ম। ক্লিনটন ফাউন্ডেশন ও কার্টার সেন্টারের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতাও এ প্রতিষ্ঠানের রয়েছে বলে চিঠিতে বলা হয়েছে।
মেয়র লিখেছেন, তার আরেকটি প্রস্তাব ছিল সম্মেলনের জন্য সংগৃহীত অর্থ ‘কম্যুনিটি ফাউন্ডেশন ফর গ্রেটার আটলান্টা’র অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা। আটলান্টা অঞ্চলের সমাজহিতৈষী ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের দ্বারা পরিচালিত এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আগামী সম্মেলনের অর্থ সংগ্রহ হলে স্বচ্ছতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠবে না।
এছাড়া জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির স্যাম নান স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের চেয়ারপারসন জোসেফ ব্যাংকফসহ মোহাম্মদ ভূইয়ারই কয়েকজন উপদেষ্টা আলেকজান্ডার ফ্রেজার নামের একজনের নেতৃত্বে সম্মেলনের নতুন আয়োজক কমিটি করার পক্ষে বলেছিলেন বলে জানান মেয়র রিড।
তিনি বলেন, ‘টার্নার গ্লোবাল প্রোপার্টিজের সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফ্রেজার ব্যবস্থাপনা, নেতৃত্ব ও নৈতিকতার জন্য দেশজুড়ে পরিচিত।’
কিন্তু অন্যান্য প্রস্তাবের মতো ফ্রেজারের নেতৃত্বাধীন নতুন পর্ষদের প্রস্তাবও খারিজ হয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন তিনি। ভূইয়াকে তিনি লিখেছেন, ‘বর্তমান কাঠামোয় যেখানে আপনি নিজে ইভেন্টের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার এবং আপনার স্ত্রী শামীমা আমিন আপনার প্রধান অপারেটিং অফিসার হিসেবে রয়েছেন তা অব্যাহত রাখতে আপনি ওই প্রস্তাব নাকচ করলেন, যাতে আমরা অবাক হইনি।’
আয়োজক কমিটিতে পরিবর্তনের প্রস্তাব নিয়ে সম্মেলনের অনারারি চেয়ার টেড টার্নারকে লেখা এক চিঠিতে মোহাম্মদ ভূইয়া মিথ্যাচার করেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন আটলান্টার মেয়র। তিনি বলেছেন, অনারারি চেয়ারপারসনের পদ থেকে টেড টার্নারকে সরিয়ে দিতে মেয়রের পক্ষ থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে ভূইয়া ওই চিঠিতে লিখেছেন, যা পুরোপুরি মিথ্যা।
‘যেহেতু আমি কখনোই অনারারি চেয়ারের দায়িত্ব থেকে টার্নারকে সরানোর প্রস্তাব করিনি তাই এ বিষয়টিও সম্মেলন আয়োজন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা রেখেছে,’ বলেন মেয়র।
গত মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) আটলান্টার সাংবাদিক মারিয়া সাপোর্টাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রিড বলেন, নগর কর্তৃপক্ষ নোবেলবিজয়ীদের নিয়ে এ সম্মেলনের আয়োজনে থাকতে চাইলেও ভূইয়াকে আয়োজক কমিটির নেতৃত্বে রেখে সেটা সম্ভব নয়।
এসব বিষয়ে আগামী দশ দিনে দুটো গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হবে জানিয়ে রিড সাপোর্টারিপোর্ট.কম- কে বলেন, সমস্যার সমাধান নিয়ে তিনি আশাবাদী।
ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে ‘শান্তি স্থাপনে’ ভূমিকা রাখায় ২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক ও এর প্রতিষ্ঠাতা ইউনূস শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। ২০১০ সালে নরওয়ের জাতীয় টেলিভিশনে প্রচারিত একটি প্রামাণ্যচিত্রে ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংককে দেওয়া বিদেশি অর্থ এক তহবিল থেকে অন্য তহবিলে স্থানান্তরের অভিযোগ উঠলে দেশে-বিদেশে শুরু হয় আলোচনা।
গ্রামীণ ব্যাংকের সূচনা থেকেই এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন মুহাম্মদ ইউনূস। অবসরের বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে ২০১১ সালের মার্চে তাকে অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আদালতে গেলেও ওই পদ তিনি আর ফিরে পাননি।
সাপোর্টা লিখেছেন, ইউনূস আটলান্টাকে বলেন তার দ্বিতীয় বাড়ি। কয়েক বছর আগে মেয়র নিজেই এ নোবেলবিজয়ীকে এ শহরের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দিয়ে স্বাগত জানিয়েছিলেন। তবে এই বিরোধের বিষয়ে ইউনূসের সঙ্গে কথা হয়নি বলে তাকে জানিয়েছেন মেয়র রিড।