দৈনিক ইত্তেফাক-এর খবর : যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলে ভয়াবহ তুষার ঝড়, নিহত ৮

- প্রকাশের সময় : ০৬:৪৩:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০১৬
- / ৯৫৮ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের নিউইয়র্কসহ কমপক্ষে ১৮টি রাজ্যে শুরু হয়েছে ভয়াবহ তুষার ঝড়। নিউইয়র্কে রাত ১০টার পর থেকে তুষারপাত শুরু হয়েছে এবং তা স্থানীয় সময় রোববার ভোর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। ইতিমধ্যেই কোথাও কোথাও পাঁচ ইঞ্চি পরিমাণ তুষার জমা হয়েছে। শনিবার ভোর পাঁচটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তুষারের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। দেশটির আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, ভোর পাঁচটা থেকে তুষার ঝড়ের তীব্রতা শুরু হয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে নিউইয়র্ক ও আশপাশের রাজ্যে অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে। আর এ কারণে শুক্রবার নিউইয়র্কের মেয়র বিল ডি ব্লাজিও জরুরি এক সংবাদ সম্মেলনে নগরবাসীকে শনিবার বাসায় অবস্থান করার আহ্বান জানিয়েছেন। মেয়র এ ঝড়কে এই ‘মওসুমের প্রথম বড় ঝড়’ বলে অভিহিত করেছেন।
এদিকে নিউইয়র্কে শনিবার সকাল থেকে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। খুব দরকারি প্রয়োজন ছাড়া নগরবাসীকে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের না হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। তুষারপাত এভাবে চলতে থাকলে নিউইয়র্কের গণপরিবহন ব্যবস্থা, বিশেষ করে পাতাল রেল বন্ধ করে দেয়া হতে পারে। তবে সাপ্তাহিক ছুটিতে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় এবার এই দুর্ভোগ কিছুটা কম হতে পারে।
তীব্র তুষারপাতের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ রয়েছে। হাজারো যাত্রী বিভিন্ন বিমানবন্দরে আটকা পড়েছেন বলে জানতে পেরেছি। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে উদ্বিগ্ন হয়ে স্বজনরা প্রতিনিয়ত ফোনে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। তবে বাংলাদেশীরা নিরাপদেই আছেন। আগে থেকে সতর্ক অবস্থা জারি করায় তারা প্রতিকূল অবস্থার জন্য প্রস্তুত ছিলেন।
তুষার ঝড়ের প্রভাবে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে রেকর্ড পরিমাণ বরফ পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দুপুরেরর পর থেকে সেখানে শুরু হয়েছে তীব্র তুষারপাত, যা চলবে স্থানীয় সময় রোববার ভোর পর্যন্ত। তুষার ঝড়ের সঙ্গে বইছে প্রবল বাতাস।
তুষারপাতের কবলে পড়ে নর্থ ক্যারোলিনা, কেন্টাকি ও টেনেসি রাজ্যে আটজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। প্রায় সাড়ে ৮ কোটি মানুষ এই বিরূপ আবহাওয়ার কবলে পড়েছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ। এছাড়া বিরূপ আবহাওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সবকটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ রয়েছে। এ পর্যন্ত সাড়ে ৭ হাজার ফ্লাইট বাতিল ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
একাধিক সূত্র জানায়, নিউইয়র্ক এবং পূর্ব উপকূলীয় অন্যান্য নগরীগুলোও এ ঝড়ের কবলে পড়েছে। ঝড়ের আশঙ্কায় রাজধানী ওয়াশিংটনসহ পাশ্ববর্তী মেরিল্যান্ড, নর্থ ক্যারোলিনা, জর্জিয়া, পেনসিলভেনিয়া ও ভার্জিনিয়ায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। ঝড়ে উত্তর পূর্বাঞ্চলজুড়ে জনজীবন অচল হয়ে পড়ার আশংকা আরো তীব্র হয়েছে। এছাড়া মেরিল্যান্ডের রাজধানী বাল্টিমোরসহ ওয়াশিংটন ডিসি’র মেট্রো এলাকাগুলোতে দুই ফুটেরও বেশি বরফ জমেছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পেনসিলভানিয়া ও ফিলাডেলফিয়ায় ১০ থেকে ১৬ ইঞ্চি (২৫ থেকে ৪২ সেন্টিমিটার) বরফ পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বরফ পড়তে পারে কেনটাকি এবং নর্থ ক্যারোলাইনায়।
ঝড়ের সময় মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ২৪ ইঞ্চি পর্যন্ত তুষারপাত হওয়ার পূর্বাভাস দিয়ে মানুষজনকে সতর্ক করে দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। তুষারপাতের কারণে বিদ্যুতসংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া ছাড়াও রাস্তাঘাট অচল হয়ে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যওয়ারও পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের পরিচালক লুইস উসেলিনি এ ঝড়কে খুবই বিপজ্জনক বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, অন্তত পাঁচ কোটি লোক এই ঝড়ে দুর্ভোগ পোহাবে। পূর্বাভাসে আরো বলা হয়েছে, শনিবার নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে ঘন্টায় ৩০ মাইল বেগে বয়ে যেতে পারে ঝড়ো হাওয়া। ওয়াশিংটন এবং বাল্টিমোরে বাতাসের গতিবেগ হতে পারে আরও বেশি।(দৈনিক ইত্তেফাক)