নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় সেভ দ্যা পিপল এবং ইউএমআর’র খাবার বিতরণ করেছে
- প্রকাশের সময় : ০৪:০৩:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ এপ্রিল ২০২৪
- / ৮২ বার পঠিত
ইউএনএ,নিউইয়র্ক : সেবামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নিউইয়র্ক সিটির জ্যামাইকায় আগ্রহী মানুষের হাতে খাবার বিতরণ করেছে চ্যারিটি অরগানাইজেশন ইউএমআর এবং সেভ দ্যা পিপল। গত ৩০ মার্চ শনিবার দুপুরে ১৬৩ স্ট্রীট এন্ড হিলাইড এভিনিউ এলাকায় বিনামূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় ১৮ ধরনের ফুড বিতরণ করা হয়। এদিন তিন শতাধিক মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয় বলে সংশ্লিরা জানান। এর আগেও একই স্থানে গত ২৩ মার্চ অনুরূপ কর্মসূচী গ্রহন করে সংগঠন দুটি। খবর ইউএনএ’র।
খাবার বিতরণ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন জ্যমাইকা মুসলিম সেন্টার (জেএমসি)-এর খতিব ও ইমাম মির্জা আবু জাফর বেগ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর টবি এন স্টেভেস্কি। বিভিন্ন পর্যায়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ইউএমআর-এর ডিরেক্টর মোহাম্মদ ফারুক, ওয়ার্ল্ড হিউম্যানিটি সার্ভিসের এডভাইজার ডা. আবুল কাশেম, আশা হোম কেয়ারের সিইও আকাশ রহমান, বাংলাদেশী আমেরিকান সোসাইটির সভাপতি মোহাম্মদ আলী, মসজিদ কুবার প্রেসিডেন্ট সেলিম খান, জেএসি’র জয়েন্ট সেক্রেটারী হুমায়ুন খান ও ছারছিনা দরবার শরীফের হুজুর শাহ মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সেভ দ্যা পিপলের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ইমাম মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এই খাদ্য বিতরণ আয়োজনে সহযোগিতা করেন আশা হোম কেয়ারের সিইও আকাশ রহমান ও বাংলাদেশী আমেরিকান সোসাইটির সভাপতি মোহাম্মদ আলী। খাবার বিতরণে আরও সহযোগিতা করে ইউএথ্রি। ভলান্টিয়ারি সাপোর্ট করেছে ইউএনএ-ইউএসএ অ্যাসোসিয়েশন কুইন্স চ্যাপ্টার এবং নিউইয়র্ক সিটি স্পিকার এনরিয়া অ্যাডামসের অফিস। বাংলাদেশী কমিউনিটি ছাড়াও অন্যান্য কমিউনিটির বিপুল সংখ্যক মানুষ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার সংগ্রহ করেন। উল্লেখযোগ্য খাবার আইটেমের মধ্যেছিলো ডিম, সেমাই, দুধ, আলু, পিয়াজ, সবজি, নানান রকমের ফল প্রভৃতি।
অনুষ্ঠানে স্টেট সিনেটর টবি এন স্টেভেস্কি তার বক্তব্যে এমন আয়োজনের প্রশংসা করেন এবং আরো ভালো করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, নিউইয়র্কে বাংলাদেশীদের অবস্থান আরও সুসংহত হবে। তাদের নিজেদের মধ্যে যে ঐক্য ও পারস্পরিক সহযোগিতা রয়েছে, সেটা অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেন টবি এন স্টেভেস্কি।
ইমাম মির্জা আবু জাফর বেগ বলেন, রমজান মাস হলো রহমতের মাস। এই মাসের শেষ দশদিন আমাদেরকে আরও বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে। মানুষকে খাবার দেওয়া, সহযোগিতা করাটাও একটা বিরাট বড় ইবাদত। এই ইবাদতের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।
শাহ মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী বলেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে পার্শ্ববর্তী অসহায় মানুষের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করবেন। আমরা তাদের জন্য কী করেছি, সে বিষয়েও প্রশ্ন করা হবে। আজকের এই ফুড ডিস্ট্রিবিউশন আসলে সেই প্রশ্নের জবাব। আমাদের প্রত্যেককে অবশ্যই অন্যের পাশে দাঁড়াতে হবে।
ডা. আবুল কাশেম বলেন, মানুষ হিসেবে মানুষর পাশে দাঁড়ানো আমাদের রেসপন্সিবিলিটি। আমরা মনে করি, যে কোনো মানবিক কাজে এগিয়ে আসা আমাদের কর্তব্য। আর এই কর্তব্য ও দায়িত্ব একদিনের জন্য নয়, এটা একটা কন্টিনিউয়াস প্রসেস। তাছাড়া একজন মুসলমানের দায়িত্ব হলো সবসময় ভালো কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকা। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই খাবার বিতরণের এখানে এসেছি।
মোহাম্মদ ফারুক বলেন, জন্মলগ্ন থেকেই ইউএমআর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে মানবিক কাজ করে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় হাতেগোনা যে কয়েকটি সংস্থা অসহায় ফিলিস্তিনীদের সাহায্যে কাজ করছে, তার মধ্যে ইউএমআর অন্যতম। এর বাইরে বাংলাদেশেও সংস্থাটির একাধিক প্রজেক্ট আছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার অসহায় নিউইয়র্কারদের হেল্প করার জন্য ছুটে এসেছে ইউএমআর।
আকাশ রহমান খাবার বিতরণের এই চমৎকার উদ্যোগের অংশ হতে পেরে নিজের উচ্ছাসের কথা জানান। তিনি বলেন, আমি এবং আমার প্রতিষ্ঠান সবসময়ই কমিউনিটির পাশে থাকার চেষ্টা করছি। এমন নানা সহায়তার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশি কমিউনিটি এখন মেইনস্ট্রিমে অনেক কাজ করছে। এই ফুড ডিস্ট্রিবিউশন তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ।
মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা সবসময়ই নিউইয়র্কের অসহায় মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। কোভিডের কঠিন সময়ও আমাদের তৎপরতা ছিল। শুধু খাবার নয়, তাদের যে কোনো ধরনের সহযোগিতায় আমরা সদা জাগ্রত। নিউইয়র্ক সিটিতে এখন অনেক ইমিগ্র্যান্ট, অনেক নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস। তাদেরকে সাহয্য করতেই ইউএমআর এবং সেভ দ্য পিপলকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এই চ্যারিটি কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
সেলিম খান সংকটাপন্ন মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে যারা এই খাবার বিতরণের আয়োজন করেছে, তাদের সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, কমিউনিটিতে আরও বেশি বেশি এমন আয়োজন করতে হবে। সেজন্য সমাজের বিত্তবানদেও এগিয়ে আসতে হবে।
হুমায়ুন খান বলেন, রমজান আমাদেরকে অন্যের প্রতি সহমর্মী হতে শেখায়। দুস্থ মানুষের প্রতি হাত বাড়িয়ে দেওয়া শেখায়। সেই শিক্ষা থেকেই এই ফুড ডিস্ট্রিবিউশনে উপস্থিত হয়েছি।
খাবার বিতরণের এই অনুষ্ঠানে ইউনাইটেড ন্যাশন্স এসোসিয়েশনের প্রতিনিধি হিসেবে সিস্টার আলিমাতা উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, জাতিসংঘের যে এসডিজি গোল, তার প্রথমেই রয়েছে নো পোবার্টি। জাতিসংঘ এই মিশন নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা ইউনাইটেড নেশন অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এখানে ভলান্টারি করছি সেই মিশন বাস্তবায়নের লক্ষ্য হিসেবেই। সুন্দর আয়োজনের জন্য ইউএমআর এবং সেভ দ্য পিপলের প্রতি অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা।
ইউনাইটেড ন্যাশন্স এসোসিয়েশনের আরেক প্রতিনিধি ফারিহা হাবিব বলেন, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত পৃথিবী গড়ার যে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছে জাতিসংঘ, সেটা পূরণ করা একা জাতিসংঘের পক্ষে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সবাইকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। এই খাবার বিতরণও তেমনই একটি তৃণমূল পর্যায়ের প্রয়াস।