নিউইয়র্ক ০৮:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

লাসভেগাসে এশিয়ান-আমেরিকানদের প্রথম ‘জাতীয় সম্মেলন’ ১৯ জুন

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১০:৪৭:১৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / ১১ বার পঠিত

ইউএনএ, নিউইয়র্ক : যুক্তরাষ্ট্রে এশিয়ার ৮ দেশীয় প্রবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগঠন অ্যাসাল। যার পুরো নাম অ্যালায়েন্স অব সাউথ এশিয়ান আমেরিকান লেবার। আমেরিকান রাজনীতিতে প্রবাসী বাংলাদেশী সহ দক্ষিণ এশিয়ান কমিউনিটির অধিকার নিয়ে কাজ করাই মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। দিনে দিনে বাড়ছে অ্যাসল’র পরিধি। অ্যাসাল’র গুরুত্ব বাড়ছে মূলধারার রাজনীতিতে। সিটি কাউন্সিল থেকে শুরু করে ইউএস কংগ্রেস সদস্য, সিনেট সদস্যগণ পর্যন্ত এখন গুরুত্ব দিচ্ছেন অ্যাসল-কে। সাড়া দিচ্ছেন অ্যাসাল-এর ডাকে। যার ফলে এবার রেকর্ড সংখ্যক জনপ্রতিনিধি সহ দক্ষিণ এশিয় ইমিগ্র্যান্টদের সরব উপস্থিতিতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো অ্যাসাল’র ১৬ তম বার্ষিক কনভেনশন। এবারের কনভেনশনের শ্লোগান ছিলো- ‘আওয়ার ওয়ার্ক স্ট্রেন্থ-২০২৪ প্রেসিডেন্ট ইলেকশন’। কনভেনশনে যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন বিশেষ করে আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দক্ষিণ এশিয়ান আমেরিকানদের আরো জোরালো ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশীসহ এশিয়ান কমিউনিটির অধিকার সুরক্ষায় উপর গুরুত্তারোপ করা হয়। এছাড়াও এশিয়ান আমেরিকানদের অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষায় ‘ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব এশিয়ান আমেরিকান ইলেক্টেড অ্যান্ড এপয়েন্টেড অফিসিয়ালস’ গঠনের ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করা হয়। সিটির ব্রুকলীনস্থ ম্যারিয়ট হোটেলের বিশাল হল রুমে গত ২ ডিসেম্বর শনিবার বিকেলে এ কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। এদিন বেলা ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এই কনভেনশন চলে। কনভেনশনে আগামী ১৯ জুন লাসভেগাসে এশিয়ান-আমেরিকানদের প্রথম ‘জাতীয় সম্মেলন’ অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়। খবর ইউএনএ’র।

এবারের কনভেনশনে প্রধান অতিথি ছিলেন নিউইয়র্ক সিটি কম্পট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডার। উদ্বোধন করেন অ্যাসাল’র ১৬ তম বার্ষিক কনভেনশন কমিটির চেয়ার ও ইয়েল ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের রিসার্চ সায়েন্টিস্ট অধ্যাপক ড. গোলাম এম আই চৌধুরী ইকবাল। কি নোট স্পিকার ছিলেন নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত ইউএস সিনেটর ক্রিস্টিন জিলিব্রান্ড। কনভেনশনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অ্যাসাল’র ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ও প্রতিষ্ঠাতা, মূলধারার প্রখ্যাত লেবার ইউনিয়ন লিডার মাফ মিসবাহ উদ্দিন।

কনভেনশনে সরাসরি উপস্থিত থাকতে না পেরে ভিডিও বার্তা পাঠান নিউইয়র্কের গভর্ণর ক্যাথি হোকুল, ইউএস সিনেটর চার্লস ই. শুমার, কংগ্রেসম্যান হাকিম জেফরি, নিউজার্সীর গভর্ণর ফিলিপ ডি. মারফি, নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস স্টেট কম্পট্রোলার থমাস পি. ডিনাপোলি, অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস, স্টেট সিনেটর আন্দ্রিয়া স্টুয়ার্ট কাজিনস, স্পিকার কার্ল ই হিস্টি।

কনভেনশনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জর্জিয়ার স্টেট সিনেটর শেখ রহমান, নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জন ল্যু, নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর ন্যাথালিয়া ফার্নান্দেজ, অ্যাসেম্বলীওম্যান কারিনা রেস, অ্যাসেম্বলীম্যান রন কিম, অ্যাসেম্বলীম্যান জাহরান মামদানি, নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলম্যান শেখর কৃষ্ণান, কাউন্সিলমেম্বার লিন্ডা লি, কাউন্সিলমেম্বার ফারাহ লুইস, এনএএসিপি’র নিউইয়র্ক সিটি প্রেসিডেন্ট অ্যান্থনি হারমন, এনওয়াইসি লেবার কাউন্সিল ফর ল্যাটিন আমেরিকান অ্যাডভান্সমেন্ট’র এনওয়াইসি প্রেসিডেন্ট পেড্রো এ কার্ডি, এনওয়াইসি কোয়ালিশন অব ব্ল্যাক ট্রেড ইউনিয়নিস্ট এর প্রেসিডেন্ট চার্লস জেনকিনস, পাবলিক এমúøয়ী ফেডারেশনেনর ভাইস প্রেসিডেন্ট শ্যারন ডিসিলভা ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ডারলিন উইলিয়ামস, লোকাল ১৯৩০’র প্রেসিডেন্ট ডেবরা উইলিয়ামস সহ মূলধারার নির্বাচিত কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ এবং শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। যৌথভাবে অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট মাফ মিসবাহ উদ্দিন ও ন্যাশনাল সেক্রেটারী এম করিম চৌধুরী।

কনভেনশনে অ্যাসাল’র বিভিন্ন চ্যাপ্টারের নেতৃবৃন্দ তাদের শুভেচ্ছা বক্তব্যে ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন। তাদের উপস্থিতিতে কনভেশন স্থল অ্যাসাল’র মিলন মেলায় পরিণত হয়। এর মধ্যে উল্লেখ্রযাগ্যরা হলেন- ইউএস ক্যাপিটাল চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট শরাফাত হোসেন বাবু, ব্রুকলীন চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট ডা. মুজিবুর রহমান মজুমদার, কুইন্স চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট কাজী ফরিদ আহমেদ, ব্রঙ্কস চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ তাহমিদুল হক, স্ট্যাটান আইল্যান্ড চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট ইরাশাদ শেখ, নিউজার্সী চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট মো. ফারুক হোসেন, মিশিগান চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মো. আলী রেজা, পেনসিলভানিয়া চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট শাহ এম গোলাম কাদের, নিউইয়র্ক স্টেট ক্যাপিটাল রিজিয়ন চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট মিজানুর রহমান, জ্যাকসন হাইটস চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট সোমনাথ ঘিমিরি, মেরিল্যান্ড চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট কবিরুল ইসলাম, রিচমন্ড হিল চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট আলবার্ট বাল্ডিও, লং আইল্যান্ড চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট ডা. মুজিবুল হক, হেল্থকেয়ার চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট ড. রফিক আহমেদ নিজ নিজ চ্যাপ্টারের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। এছাড়াও বিভিন্ন চ্যাপ্টারের কর্মকর্তাদের মধ্যে মো. রাব্বি আলম, সাহানা বেগম, আদান ইসলাম, মোঃ আলাউদ্দিন, সুলতানা খানম, মাসুদ রানা তপন, হাসান আলী, গোলাম ফারুক শাহীন, এ এস এম মাইন উদ্দিন পিন্টুসহ সাপ্তাহিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক লাবলু আনসার বক্তব্য রাখেন।কনভেনশনে স্বাগত বক্তব্যে মাফ মিসবাহ উদ্দিন অ্যাসাল’র লক্ষ্য ও কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে বলেন, এবারের থিম ‘আওয়ার ওয়ার্ক স্ট্রেন্থ-২০২৪ প্রেসিডেন্ট ইলেকশান’। তিনি মূলধারার রাজনীতিতে দক্ষিণ এশীয়দের অবস্থান আরো সুসংহত করতে অ্যাসাল’র দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশীসহ দক্ষিণ এশিয়রা যাতে নিজ নিজ অধিকার ও মর্যাদা সুসংহত রাখতে পারেন সে লক্ষে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে ‘অ্যাসাল’। তিনি বলেন, অ্যাসাল ক্রমবর্ধমান বাংলাদেশীসহ দক্ষিণ এশিয়ানদের বিভিন্ন যৌক্তিক দাবি জোরালোভাবে তুলে ধরছে। ইমিগ্র্যান্টদের নানা ইস্যুগুলো জনপ্রতিনিধিদের ইস্যুতে পরিণত করে তা বাস্তবায়নে কাজ করছে অ্যাসাল। আমরা যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সেসব সমস্যা সমাধানে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।

মাফ মিসবাহ উদ্দিন তার বক্তব্যে অ্যাসাল’র ২০ চ্যাপ্টারের নানা কর্মকান্ডের স্বীকৃতি দিয়ে বলেন, সদস্যদের কঠোর পরিশ্রমের ফলেই আজকের এ অবস্থানে আসতে সক্ষম হয়েছে অ্যাসাল। তবে আমাদের আত্মতৃপ্তির সুযোগ নেই, আমাদের আরো অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে। অ্যাসালের আমন্ত্রণে কনভেনশনের অতিথিসহ যোগদানকারী সকলের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।

ইউএস সিনেটর ক্রিস্টিন জিলিব্রান্ড তার বক্তব্যে অ্যাসাল’র ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, অ্যাসাল ইমিগ্রান্ট কমিউনিটির ঐক্য প্রতিষ্ঠা ও তাদের এগিয়ে নিতে কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্রে শ্রম পরিবেশ উন্নয়ন, শ্রমিকের ন্যয্য মজুরি আদায়ের লড়াইয়ে অ্যাসাল অবদান রাখছে বলে উল্লেখ করে বলেন, অ্যাসাল জানে আমরা তাদের ভালোবাসি, আমরা তাদের সাথে আছি এবং তারা আমাদের সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ করে দক্ষিণ এশীয় সম্প্রদায়ের জন্য যা করে আমরা তার প্রশংসা করি। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার প্রবাসীরা পরিশ্রমী এবং পরিবার বান্ধব। এই কমিউনিটি আমেরিকান সোসাইটিতে ব্যাপক অবদান রাখছে। দিনদিন তারা মূলধারার রাজনীতিতে শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলছে। অ্যাসাল এশিয়ান কমিউনিটির মুখপাত্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। নিজেদের কণ্ঠস্বরকে আরও শক্তিশালী করতে কমিউনিটির সবাইকে ভোটার হওয়া এবং সকল নির্বাচনে ভোট দেবার জন্যও তিনি আহবান জানান।

প্রসঙ্গত ক্রিস্টিন জিলিব্রান্ড বলেন, ‘অ্যাসাল আমার পুরানো বন্ধু, আমরা এর আগেও একসাথে কাজ করে ছিলাম। আমি ইউনিয়নের মেম্বার ছিলাম, আমি ইউনিয়নকে চিনি, আমি শ্রমিক আন্দোলনের অংশ ছিলাম, চুক্তির আলোচনা স্থির হবে, একসাথে আমরা এই সিটিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’ তিনি বলেন, আমরা নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছি। আমাদের অর্থনীতি উন্নত হচ্ছে, বেকারত্¦ কমছে।’

ষ্টেট সিনেটর শেখ রহমান বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ নেই বলে অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। সকলে ঐকবদ্ধ থাকলে বড় কিছু অর্জন করা সম্ভব। তিনি বলেন, আমরা অনেকেই মানবিকতার সাফাই গাই, অথচ গাজায় নির্বিচারে শিশু, নারীসহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদেরকেও বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ নেই বলে আমরা অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এশিয়ানদের ভোটে বিজয়ী অনেকের নগ্ন আচরণও আমরা প্রত্যক্ষ করছি। গাজায় নির্বিচারে মুসলিম নিধনে কারা মদদ দিচ্ছে তাও এখন আর আমাদের অজানা নেই। তাই সকলে যদি ঐকবদ্ধ থাকতে পারি তাহলে কেউই এমন নির্দয় আচরণে মদদ দিতে সাহস দেখাবে না।

অ্যাসাল সেক্রেটারী এম করিম চৌধুরী কনভেনশনে বিগত বছরের কার্যক্রম তুলে ধরে অ্যাসালের ন্যাশনাল কমিটিসহ বিভিন্ন চ্যাপ্টারের কর্মকর্তাদের পরিচয় করিয়ে দেন। এসময় তিনি ১০টি রাজ্যের ২০টি চ্যাপ্টারের কার্যক্রমের বিবরণও তুলে ধরেন।

উল্লেখ্য, কনভেনশনের শুরুতে শপথ বাক্য পাঠ করান অ্যাসাল স্ট্যাটেন আইল্যান্ড চ্যাপ্টারের ইউথ কমিটির মিনহা মাহজাবীন। সবশেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ড. রফিক আহমেদ। এবারের কনভেনশনে অ্যাসাল’র পক্ষ থেকে স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান মাইকেল কিউসিক, নিউইয়র্ক সিটি সেন্ট্রাল লেবার কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ভিনসেন্ট আলভারেজ, টিডব্লিউইউ লোকাল ১০০ এর প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডেভিস ও জুমা জেনিফার (মরনোত্তর)-কে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এছাড়াও নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের পক্ষ থেকে অ্যাসাল’র ন্যাশনাল সেক্রেটারী এম করিম চৌধুরী ও ব্রুকলীন চ্যাপটারের পলিটিক্যাল ডাইরেক্টর মো. আজিজুল হক-কে সাইটেশন প্রদান করা হয়। কনভেনশন উপলক্ষে তথ্য সমৃদ্ধ একটি বিশেষ জার্নালও প্রকাশ করা হয়।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

লাসভেগাসে এশিয়ান-আমেরিকানদের প্রথম ‘জাতীয় সম্মেলন’ ১৯ জুন

প্রকাশের সময় : ১০:৪৭:১৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৩

ইউএনএ, নিউইয়র্ক : যুক্তরাষ্ট্রে এশিয়ার ৮ দেশীয় প্রবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগঠন অ্যাসাল। যার পুরো নাম অ্যালায়েন্স অব সাউথ এশিয়ান আমেরিকান লেবার। আমেরিকান রাজনীতিতে প্রবাসী বাংলাদেশী সহ দক্ষিণ এশিয়ান কমিউনিটির অধিকার নিয়ে কাজ করাই মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। দিনে দিনে বাড়ছে অ্যাসল’র পরিধি। অ্যাসাল’র গুরুত্ব বাড়ছে মূলধারার রাজনীতিতে। সিটি কাউন্সিল থেকে শুরু করে ইউএস কংগ্রেস সদস্য, সিনেট সদস্যগণ পর্যন্ত এখন গুরুত্ব দিচ্ছেন অ্যাসল-কে। সাড়া দিচ্ছেন অ্যাসাল-এর ডাকে। যার ফলে এবার রেকর্ড সংখ্যক জনপ্রতিনিধি সহ দক্ষিণ এশিয় ইমিগ্র্যান্টদের সরব উপস্থিতিতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো অ্যাসাল’র ১৬ তম বার্ষিক কনভেনশন। এবারের কনভেনশনের শ্লোগান ছিলো- ‘আওয়ার ওয়ার্ক স্ট্রেন্থ-২০২৪ প্রেসিডেন্ট ইলেকশন’। কনভেনশনে যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন বিশেষ করে আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দক্ষিণ এশিয়ান আমেরিকানদের আরো জোরালো ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশীসহ এশিয়ান কমিউনিটির অধিকার সুরক্ষায় উপর গুরুত্তারোপ করা হয়। এছাড়াও এশিয়ান আমেরিকানদের অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষায় ‘ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব এশিয়ান আমেরিকান ইলেক্টেড অ্যান্ড এপয়েন্টেড অফিসিয়ালস’ গঠনের ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করা হয়। সিটির ব্রুকলীনস্থ ম্যারিয়ট হোটেলের বিশাল হল রুমে গত ২ ডিসেম্বর শনিবার বিকেলে এ কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। এদিন বেলা ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এই কনভেনশন চলে। কনভেনশনে আগামী ১৯ জুন লাসভেগাসে এশিয়ান-আমেরিকানদের প্রথম ‘জাতীয় সম্মেলন’ অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়। খবর ইউএনএ’র।

এবারের কনভেনশনে প্রধান অতিথি ছিলেন নিউইয়র্ক সিটি কম্পট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডার। উদ্বোধন করেন অ্যাসাল’র ১৬ তম বার্ষিক কনভেনশন কমিটির চেয়ার ও ইয়েল ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের রিসার্চ সায়েন্টিস্ট অধ্যাপক ড. গোলাম এম আই চৌধুরী ইকবাল। কি নোট স্পিকার ছিলেন নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত ইউএস সিনেটর ক্রিস্টিন জিলিব্রান্ড। কনভেনশনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অ্যাসাল’র ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ও প্রতিষ্ঠাতা, মূলধারার প্রখ্যাত লেবার ইউনিয়ন লিডার মাফ মিসবাহ উদ্দিন।

কনভেনশনে সরাসরি উপস্থিত থাকতে না পেরে ভিডিও বার্তা পাঠান নিউইয়র্কের গভর্ণর ক্যাথি হোকুল, ইউএস সিনেটর চার্লস ই. শুমার, কংগ্রেসম্যান হাকিম জেফরি, নিউজার্সীর গভর্ণর ফিলিপ ডি. মারফি, নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস স্টেট কম্পট্রোলার থমাস পি. ডিনাপোলি, অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস, স্টেট সিনেটর আন্দ্রিয়া স্টুয়ার্ট কাজিনস, স্পিকার কার্ল ই হিস্টি।

কনভেনশনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জর্জিয়ার স্টেট সিনেটর শেখ রহমান, নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জন ল্যু, নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর ন্যাথালিয়া ফার্নান্দেজ, অ্যাসেম্বলীওম্যান কারিনা রেস, অ্যাসেম্বলীম্যান রন কিম, অ্যাসেম্বলীম্যান জাহরান মামদানি, নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলম্যান শেখর কৃষ্ণান, কাউন্সিলমেম্বার লিন্ডা লি, কাউন্সিলমেম্বার ফারাহ লুইস, এনএএসিপি’র নিউইয়র্ক সিটি প্রেসিডেন্ট অ্যান্থনি হারমন, এনওয়াইসি লেবার কাউন্সিল ফর ল্যাটিন আমেরিকান অ্যাডভান্সমেন্ট’র এনওয়াইসি প্রেসিডেন্ট পেড্রো এ কার্ডি, এনওয়াইসি কোয়ালিশন অব ব্ল্যাক ট্রেড ইউনিয়নিস্ট এর প্রেসিডেন্ট চার্লস জেনকিনস, পাবলিক এমúøয়ী ফেডারেশনেনর ভাইস প্রেসিডেন্ট শ্যারন ডিসিলভা ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ডারলিন উইলিয়ামস, লোকাল ১৯৩০’র প্রেসিডেন্ট ডেবরা উইলিয়ামস সহ মূলধারার নির্বাচিত কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ এবং শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। যৌথভাবে অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট মাফ মিসবাহ উদ্দিন ও ন্যাশনাল সেক্রেটারী এম করিম চৌধুরী।

কনভেনশনে অ্যাসাল’র বিভিন্ন চ্যাপ্টারের নেতৃবৃন্দ তাদের শুভেচ্ছা বক্তব্যে ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন। তাদের উপস্থিতিতে কনভেশন স্থল অ্যাসাল’র মিলন মেলায় পরিণত হয়। এর মধ্যে উল্লেখ্রযাগ্যরা হলেন- ইউএস ক্যাপিটাল চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট শরাফাত হোসেন বাবু, ব্রুকলীন চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট ডা. মুজিবুর রহমান মজুমদার, কুইন্স চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট কাজী ফরিদ আহমেদ, ব্রঙ্কস চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ তাহমিদুল হক, স্ট্যাটান আইল্যান্ড চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট ইরাশাদ শেখ, নিউজার্সী চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট মো. ফারুক হোসেন, মিশিগান চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মো. আলী রেজা, পেনসিলভানিয়া চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট শাহ এম গোলাম কাদের, নিউইয়র্ক স্টেট ক্যাপিটাল রিজিয়ন চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট মিজানুর রহমান, জ্যাকসন হাইটস চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট সোমনাথ ঘিমিরি, মেরিল্যান্ড চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট কবিরুল ইসলাম, রিচমন্ড হিল চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট আলবার্ট বাল্ডিও, লং আইল্যান্ড চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট ডা. মুজিবুল হক, হেল্থকেয়ার চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট ড. রফিক আহমেদ নিজ নিজ চ্যাপ্টারের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। এছাড়াও বিভিন্ন চ্যাপ্টারের কর্মকর্তাদের মধ্যে মো. রাব্বি আলম, সাহানা বেগম, আদান ইসলাম, মোঃ আলাউদ্দিন, সুলতানা খানম, মাসুদ রানা তপন, হাসান আলী, গোলাম ফারুক শাহীন, এ এস এম মাইন উদ্দিন পিন্টুসহ সাপ্তাহিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক লাবলু আনসার বক্তব্য রাখেন।কনভেনশনে স্বাগত বক্তব্যে মাফ মিসবাহ উদ্দিন অ্যাসাল’র লক্ষ্য ও কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে বলেন, এবারের থিম ‘আওয়ার ওয়ার্ক স্ট্রেন্থ-২০২৪ প্রেসিডেন্ট ইলেকশান’। তিনি মূলধারার রাজনীতিতে দক্ষিণ এশীয়দের অবস্থান আরো সুসংহত করতে অ্যাসাল’র দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশীসহ দক্ষিণ এশিয়রা যাতে নিজ নিজ অধিকার ও মর্যাদা সুসংহত রাখতে পারেন সে লক্ষে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে ‘অ্যাসাল’। তিনি বলেন, অ্যাসাল ক্রমবর্ধমান বাংলাদেশীসহ দক্ষিণ এশিয়ানদের বিভিন্ন যৌক্তিক দাবি জোরালোভাবে তুলে ধরছে। ইমিগ্র্যান্টদের নানা ইস্যুগুলো জনপ্রতিনিধিদের ইস্যুতে পরিণত করে তা বাস্তবায়নে কাজ করছে অ্যাসাল। আমরা যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সেসব সমস্যা সমাধানে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।

মাফ মিসবাহ উদ্দিন তার বক্তব্যে অ্যাসাল’র ২০ চ্যাপ্টারের নানা কর্মকান্ডের স্বীকৃতি দিয়ে বলেন, সদস্যদের কঠোর পরিশ্রমের ফলেই আজকের এ অবস্থানে আসতে সক্ষম হয়েছে অ্যাসাল। তবে আমাদের আত্মতৃপ্তির সুযোগ নেই, আমাদের আরো অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে। অ্যাসালের আমন্ত্রণে কনভেনশনের অতিথিসহ যোগদানকারী সকলের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।

ইউএস সিনেটর ক্রিস্টিন জিলিব্রান্ড তার বক্তব্যে অ্যাসাল’র ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, অ্যাসাল ইমিগ্রান্ট কমিউনিটির ঐক্য প্রতিষ্ঠা ও তাদের এগিয়ে নিতে কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্রে শ্রম পরিবেশ উন্নয়ন, শ্রমিকের ন্যয্য মজুরি আদায়ের লড়াইয়ে অ্যাসাল অবদান রাখছে বলে উল্লেখ করে বলেন, অ্যাসাল জানে আমরা তাদের ভালোবাসি, আমরা তাদের সাথে আছি এবং তারা আমাদের সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ করে দক্ষিণ এশীয় সম্প্রদায়ের জন্য যা করে আমরা তার প্রশংসা করি। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার প্রবাসীরা পরিশ্রমী এবং পরিবার বান্ধব। এই কমিউনিটি আমেরিকান সোসাইটিতে ব্যাপক অবদান রাখছে। দিনদিন তারা মূলধারার রাজনীতিতে শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলছে। অ্যাসাল এশিয়ান কমিউনিটির মুখপাত্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। নিজেদের কণ্ঠস্বরকে আরও শক্তিশালী করতে কমিউনিটির সবাইকে ভোটার হওয়া এবং সকল নির্বাচনে ভোট দেবার জন্যও তিনি আহবান জানান।

প্রসঙ্গত ক্রিস্টিন জিলিব্রান্ড বলেন, ‘অ্যাসাল আমার পুরানো বন্ধু, আমরা এর আগেও একসাথে কাজ করে ছিলাম। আমি ইউনিয়নের মেম্বার ছিলাম, আমি ইউনিয়নকে চিনি, আমি শ্রমিক আন্দোলনের অংশ ছিলাম, চুক্তির আলোচনা স্থির হবে, একসাথে আমরা এই সিটিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’ তিনি বলেন, আমরা নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছি। আমাদের অর্থনীতি উন্নত হচ্ছে, বেকারত্¦ কমছে।’

ষ্টেট সিনেটর শেখ রহমান বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ নেই বলে অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। সকলে ঐকবদ্ধ থাকলে বড় কিছু অর্জন করা সম্ভব। তিনি বলেন, আমরা অনেকেই মানবিকতার সাফাই গাই, অথচ গাজায় নির্বিচারে শিশু, নারীসহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদেরকেও বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ নেই বলে আমরা অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এশিয়ানদের ভোটে বিজয়ী অনেকের নগ্ন আচরণও আমরা প্রত্যক্ষ করছি। গাজায় নির্বিচারে মুসলিম নিধনে কারা মদদ দিচ্ছে তাও এখন আর আমাদের অজানা নেই। তাই সকলে যদি ঐকবদ্ধ থাকতে পারি তাহলে কেউই এমন নির্দয় আচরণে মদদ দিতে সাহস দেখাবে না।

অ্যাসাল সেক্রেটারী এম করিম চৌধুরী কনভেনশনে বিগত বছরের কার্যক্রম তুলে ধরে অ্যাসালের ন্যাশনাল কমিটিসহ বিভিন্ন চ্যাপ্টারের কর্মকর্তাদের পরিচয় করিয়ে দেন। এসময় তিনি ১০টি রাজ্যের ২০টি চ্যাপ্টারের কার্যক্রমের বিবরণও তুলে ধরেন।

উল্লেখ্য, কনভেনশনের শুরুতে শপথ বাক্য পাঠ করান অ্যাসাল স্ট্যাটেন আইল্যান্ড চ্যাপ্টারের ইউথ কমিটির মিনহা মাহজাবীন। সবশেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ড. রফিক আহমেদ। এবারের কনভেনশনে অ্যাসাল’র পক্ষ থেকে স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান মাইকেল কিউসিক, নিউইয়র্ক সিটি সেন্ট্রাল লেবার কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ভিনসেন্ট আলভারেজ, টিডব্লিউইউ লোকাল ১০০ এর প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডেভিস ও জুমা জেনিফার (মরনোত্তর)-কে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এছাড়াও নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের পক্ষ থেকে অ্যাসাল’র ন্যাশনাল সেক্রেটারী এম করিম চৌধুরী ও ব্রুকলীন চ্যাপটারের পলিটিক্যাল ডাইরেক্টর মো. আজিজুল হক-কে সাইটেশন প্রদান করা হয়। কনভেনশন উপলক্ষে তথ্য সমৃদ্ধ একটি বিশেষ জার্নালও প্রকাশ করা হয়।