স্বাধীনতা দিবস : মুক্তধারা ফাউন্ডেশন ও বাঙালীর চেতনামঞ্চ’র বর্ণাঢ্য প্যারেড

- প্রকাশের সময় : ০৭:৩৩:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ এপ্রিল ২০১৬
- / ১২৭৪ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: বাংলাদেশে মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে নিউইয়র্কস্থ মুক্তধারা ফাউন্ডেশন এবং বাঙালীর চেতনামঞ্চ যৌথভাবে ২৬ মার্চ শনিবার অপরাহ্নে ‘পতাকা শোভাযাত্রা’র (প্যারেড) ও স্থানীয় পাবলিক স্কুল-৬৯ এ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক পুস্তক প্রদর্শণীর আয়োজন করে। জ্যাকসন হাইটস্থ ডাইভার্সিটি প্লাজা থেকে ৭৩ স্ট্রিট ধরে প্যারেডটি ৩৭ এভিনিউ হয়ে ৭৭ স্ট্রিটে অবস্থিত পিএস ৬৯ এ গিয়ে শেষ হয়। প্যারেডে অংশগ্রহণকারীরা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বহন করে আর ‘জয়বাংলা, জয়বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগানে নিউইয়র্কের রাজপথ প্রকম্পিত করে তোলেন। প্যারেডের সম্মুখে ছিলেন ‘গ্র্যান্ড মার্শাল’ নিউইয়র্ক সিটি কম্পট্রোলার স্কট স্ট্রিঙ্গার ছাড়াও নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কন্স্যুলেটে নিযুক্ত কন্সাল জেনারেল শামীম আহসান, মুক্তিযোদ্ধা ও নিউজার্সীর প্লেইন্সবরো সিটির কাউন্সিলম্যান ড. নূরন্নবী, একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা জামালউদ্দিন হোসেন প্রমুখ। এছাড়া নিউইয়র্ক ষ্টেট ও সিটি প্রশাসনের প্রতিনিধিরা সহ জেনোসাইড একাত্তর ফাউন্ডেশন, যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগ প্রভৃতি সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও প্যারেডে অংশ নেন। আয়োজকদের দাবী এতে ১০৮টি সংগঠন অংশ নেয়। শতদল সংগঠন’র ব্যানারে অনুষ্ঠিত স্বাধীনতা দিবস অনুষ্ঠানের মার্শাল ও গ্র্যান্ড মার্শালদের বাংলাদেশের পতাকা খচিত উত্তোরিয় পরিয়ে দেন অনুষ্ঠানের কনভেনার জামাল উদ্দিন হোসেন।
প্যারেড শুরুর আগে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অংশ নেন প্যারেডের সম্মুখে ছিলেন ‘গ্র্যান্ড মার্শাল’ নিউইয়র্ক সিটি কম্পট্রোলার স্কট স্ট্রিঙ্গার, ষ্টেট সিনেটর হোজে পেরলটা, কন্সাল জেনারেল শামীম আহসান, ইমিগ্রেশন অ্যফেয়ার্সের কমিশনার নিশা আগারওয়াল, ড. নূরন্নবী, অভিনেতা জামালউদ্দিন হোসেন, স্থানীয় এনওয়াপিডি (নিউইয়র্ক পুলিশ) প্রিসেন্ট’র কমান্ডার ইন চীফ ব্রায়ান সি হ্যানেসি, এটর্নী মঈন চৌধুরী, এডভোকেট মোহাম্মদ এন মজুমদার, জেনোসাইড একাত্তরের সভাপতি ড. প্রদীপ রঞ্জন কর, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের সভাপতি মিসবাহ আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আলম প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন রানু ফেরদৌস ও সেমন্তী ওয়াহেদ।
অনুষ্ঠানে সিটি কম্পোট্রলার স্কট স্ট্রিঙ্গার বলেন, বাংলাদেশীদের সুদিন আসছে আমেরিকায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশী প্রজন্ম তাদের উত্তরসূরিদের ত্যাগের প্রতিদান যাতে পায় সে বিষয়ে কাজ করবে সিটি প্রশাসন। তিনি নিউইয়র্ক সিটির গড়ার পেছনের প্রবাসী বাংলাদেশীদের ত্যাগের কথা তুলে ধরে বলেন, একটা সময়ে প্রাবসি বাংলাদেশীরা অনেক কঠিন (অড জব) কাজ করে নিউইয়র্ক সিটির অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রেখেছেন। আজকে যারা বাংলাদেশী প্রজন্ম, নানা ঘাত প্রতিঘাতের মাঝেও তাদের পিতা-মাতা এবং পূর্ব পুরুষেরা তাদের মেধা ও শ্রমে নিউইয়র্ক সিটির উন্নয়নে অবদান রেখেছেন। সেই পুরস্কার দেবার সময় এখন এসেছে। নিউইয়র্ক সিটির কম্পট্রোলার হিসেবে আমি ঘোষণা দিচ্ছি- বাংলাদেশী প্রজন্মরা যাতে করে সিটির শিক্ষা, চাকুরি’সহ সর্বক্ষেত্রে সম-অধিকার নিশ্চিত করা হবে। সেই লক্ষ্যে সিটি প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। এটা তাদের প্রাপ্য। কম্পট্রোলার আরো জানান, বাংলাদেশী প্রজন্ম তাদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে আগামীতে যাতে পূর্ব পুরুষদের ত্যাগের প্রতিদান দিতে পারে সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে সিটি কম্পট্রোলার অফিস।
অনুষ্ঠানে সিটি কম্পট্রোলার স্কট স্ট্রিঙ্গার তার পক্ষ থেকে মুক্তধারাকে প্রোক্লেমোশন প্রদান করেন। মুক্তধারার পক্ষে বিশ্বজিৎ সাহা প্রোক্লেমোশনটি গ্রহণ করেন। প্যারেড কর্মসূচী সফল করার জন্যে আয়োজকদের পক্ষে বিশ্বজিৎ সাহা এবং আব্দুর রহিম বাদশা সকলের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানান।
প্যারেডে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার প্রতিনিধিত্বকারীদের সাথে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশীরা সপরিবারে অংশ গ্রহনের ফলে জ্যাকসন হাইটস ক্ষণিকের জন্য একখন্ড বাংলাদেশে পরিণত হয়। ভিনদেশীরাও আগ্রহ ভরে প্যারেডটি উপভোগ করেন। এদিকে প্যারেড শুরুর আগে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত কবিতা আবৃত্তি এবং গণসঙ্গীতের আসর বসে। এতে প্রবাসের শিল্পরা অংশ নেন।
এদিকে প্যারেড শেষে জ্যাকসন হাইটস্থ পিএস ১৬৯ স্কুল মিলনায়তনের আলোচনা সভায় নিউইয়র্কে ২৬ মার্চকে ‘বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডে ঘোষণায়’ নিউইয়র্ক স্টেট গভর্ণর এন্ড্রু কুমো’র অনুমোদনকৃত ঘোষণাপত্রটি শোভাযাত্রার আহবায়ক জামাল উদ্দিন হোসেনের হাতে হস্তান্তর করেন গভর্নরের প্রতিনিধি হ্যাসকে প্যারেক।
উল্লেখ্য, ‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার, সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার……’ এই চেতনাকে সামনে রেখে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন ও বাঙালীর চেতনা মঞ্চ উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক-সামাজিক-রাজনৈতিক-আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর সহযোগিতায় নিউইয়র্কে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্যারেড আয়োজন করে। আরো উল্লেখ্য, ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে নিউইয়র্কে ব্যাপক কর্মসূচির প্রস্তুতি উপলক্ষে এই প্যারেডের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের মহাগৌরবের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন ইতিমধ্যেই ছয় বছর ব্যাপী এই কর্মসূচী ঘোষণা করেছে ।