সালাহউদ্দিন আহমদকে অবিলম্বে অক্ষত অবস্থায় পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবী
- প্রকাশের সময় : ১২:০৩:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল ২০১৫
- / ৯৫১ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: কেন্দ্রীয় বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব, সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদকে অবিলম্বে অক্ষত অবস্থায় পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবী জানিয়েছে নিউইয়র্কে নব গঠিত ‘সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তি আন্দোলন’ যুক্তরাষ্ট্র কমিটি। সেই সাথে গ্রেফতারকৃত সকল প্রগতিশীল নেতার মুক্তি এবং আসন্ন তিনটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে।
সিটির জ্যাকসন হাইটস্থ ফুডকোর্ট রেষ্টুরেন্টের কনফারেন্স কক্ষে গত ১৩ এপ্রিল সোমবার সন্ধ্যায় আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ‘সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তি আন্দোলন’এর আহ্বায়ক এডভোকেট কাজী খায়রুর বাশার। জনাকীর্ণ এই সাংবাদিক সম্মেলনে উপরোক্ত দাবী জানিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সদস্য সচিব, নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির সিনিয়র সাইন্টিস ডা. জাহিদ দেওয়ান শামীম। সাংবাদিক সম্মেলনে উল্লেখিত দাবীর সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. মজিবুর রহমান মজুমদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লু, সাবেক সহ সভাপতি ইলিয়াস আহমেদ মাস্টার ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে ‘সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তি আন্দোলন’-এর আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব ছাড়াও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংগঠনের অন্যতম উদ্যেক্তা, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি সামসুল ইসলাম মজনু। সাংবাদিক সম্মেলন পরিচালনা করেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ছৈয়দুল হক ও চট্টগ্রাম সমিতি ইউএসএ’র সাবেক সহ সভাপতি মাকসুদুল হক চৌধুরী।
সাংবাদিক সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী ও কেন্দ্রীয় জাসাস নেত্রী বেবী নাজনীন যোগ দিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদের মুক্তি আন্দোলনের সাথে একাত্ততা প্রকাশ করেন। এছাড়াও কমিউনিটি লিডার আলী ইমাম, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সুরুজ্জামান, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, যুক্তরাষ্ট্র যুবদলের সভাপতি জাকির এইচ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ আহমেদ, চট্টগ্রাম সমিতি ইউএসএ’র সহ সভাপতি খোকন কে চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের, কক্সবাজার জেলা সমিতির অব নর্থ আমেরিকার সভাপতি সারওয়ার জামান চৌধুরী (সিপিএ) সহ প্রায় অর্ধশত প্রবাসী বাংলাদেশী উপস্থিত সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে ‘সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তি আন্দোলন’-এর সদস্য সচিব ডা. জাহিদ দেওয়ান শামীম তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত ৫ জানুয়ারী ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর থেকে বাংলাদেশের ভোটার অধিকার বঞ্চিত মানুষ, নিজেদের ভোটাধীকার ও গণতন্ত্র পুণ:প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অনেকে প্রাণ দিয়েছেন এবং গুম ও মিথ্যা মামলায় গণহারে গ্রেফতার হয়েছেন। যারা গুম হয়েছেন তাদের খুজে বের করে তাদের পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়া এবং যারা গ্রেফতার হয়েছেন তাদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার পূর্বক অনতিবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবী জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, গত ১০ মার্চ রাত আনুমানিক ১০টার সময় উত্তরার একটি বাসা থেকে সাদা পোষাকধারী আইনর্শঙ্খলার বাহিনীর পরিচয়ে বিএনপি’র যুগ্ন মহাসচিব ও দলের মুখপাত্র সালাহউদ্দিন আহমেদকে চোখে কাপড় বেঁধে তুলে নিয়ে যায় আজ অবধী তার কোন খোজ খবর পাওয়া যায়নি। তার স্ত্রী ঢাকার গুলশান ও উত্তরা থানায় সাধারণ ডায়েরী করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ তা নেয়নি। তিনি একজন সাবেক সরকারী আমলা, দুইবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী। তিনি একজন আদর্শবান রাজনৈতিক নেতা, সমাজসেবক ও দায়িত্বশীল অবিভাবক। অত্যন্ত দু:খের সাথে বলতে হয় বর্তমান সরকার আজ পর্যন্ত সরকারীভাবে কোন ধরনের দায়িত্বশীল বক্তব্য পেশ করেননি। বর্তমান সরকারের আইন শৃঙ্খলাবাহিনীও তাকে খুজে বের করার জন্য কোন উল্লেখ যোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সরকার আজ অবধি সালাহউদ্দিন আহমদকে গ্রেফতারের কথা নিলর্জ্জের মত বেমালুম অস্বীকার করে চলছে এবং বিষয়টি নিয়ে তার আতংকগ্রস্ত পরিবারের সাথে নিষ্ঠুর ঠাট্টা ও মশকরা করছে। খোদ সরকার প্রধান থেকে শুরু করে সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রী ও নেতারা সালাহউদ্দিন আহমদকে নিয়ে এমন সব নির্মম উক্তি করে চলেছেন, যা বর্তমান অবৈধ সরকারের ভয়ংকর পৈশাচিক চরিত্রের নগ্ম প্রকাশ ছাড়া আর কিছুই নয়। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে সমাবেশে বক্তাতায় বলেছেন যে, সালাহউদ্দিনকে বিএনপি চেয়ারপারর্সনের কার্যালয় থেকে ময়লার বস্তার সঙ্গে পাচার করে দেওয়া হয়েছে।
ডা. জাহিদ দেওয়ান শামীম বলেন, একজন জাতীয় নেতা ও বিরোধী দলীয় মুখপাত্রকে নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ ধরনের অমানবিক ও তাচ্ছিল্যপূর্ণ নিষ্ঠুর মন্তব্যে দেশে এবং প্রবাসের নাগরিকরা গভীর উদ্বেগ ও বিষ্ময় প্রকাশ করছে। আমাদের প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর কাছে যদি এ ধরনের কোন তথ্য থেকেই থাকে তাহলে তিনি সময় মত ব্যবস্থা নেননি কেন?
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা চিরদিনের জন্য আকড়ে থাকার জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব সহ হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে মাসের পর মাস বিনা বিচারে জেলে রাখা হয়েছে। আমরা প্রগতিশীল সকল রাজনৈতিক বন্দিদেরও মুক্তি দাবী করছি। ইতিপূর্বে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াছ আলী, ঢাকা মহানগরী কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলম, লাকসামের সাবেক সংসদ সদস্য হিরু এবং একমাস আগে রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে ছাত্রনেতা আনিসুর রহমান খোকনসহ অগণিত নেতা-কর্মীকে তুলে নিয়ে গুম করে দিয়েছে। এই আওয়ামী সরকার ১৯৭২ সাল থেকে পরবর্তী কয়েক বছরে তৎকালীন বাকশালী শাসন যুগেও ভিন্ন মতাবলম্বী নাগরিকদেরকে একই কায়দায় রক্ষী বাহিনী দিয়ে তুলে নিয়ে গুম করে দেওয়ার মত ভয়ংকর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস জাতি দেখেছিল। আজ আবারও তারা সেই পূরনো পদ্ধতিতে গুম খুন চালিয়ে ভিন্নমত দমন করে একদল তথা এক ব্যক্তির শাসন শোষনকে দীর্ঘায়িত করার বর্বর পথ বেছে নিয়েছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রিয় মানুষ একবার জেগে উঠলে ক্ষমতা অপব্যবহারকারীদের পরিনাম কি ভয়াবহ হতে পারে তা ১৯৭১ এবং ১৯৯০ সালে জনগণ প্রমাণ করে দিয়েছে।
ডা. জাহিদ বলেন, আগামী ২৮ এপ্রিল তিনটি সিটি কর্পোরশেনের নির্বাচন হতে চলেছে। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার সমর্থিত প্রার্থীরা একের পর এক নির্বাচন বিধি লংঘন করে চলেছে। তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন কোন ধরনের আইনী ব্যবস্থা নিচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনের এসব নিলজ্জ ভূমিকা দেখলে গত ৫ জানুয়ারী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পরবর্তী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের কথা মনে পড়ে যায়। এই নির্বাচন কমিশন ৫% ভোটকে ৪০% দিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বর্তমান সরকারকে বৈধতা দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করেছে, অন্যদিকে উপজেলা নির্বাচনে ১ম, ২য় দফায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা এগিয়ে থাকলেও ৩য় ও ৪র্থ দফা নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থীরা গণ হারে ভোট ডাকাতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে জনগণের বিজয়কে ছিনিয়ে নিয়েছে। আমরা আসন্ন তিনটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
ডা. জাহিদ বলেন, বর্তমান অবৈধ শাসকদেরকে আমরা কেবল এই বলে হুশিয়ার করে দিতে চাই যে, পতনের এই লগ্নে এসে গুম ও খুনসহ জুলুম নির্যাতনের সকল পথ পরিহার করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জননেতা সালাহউদ্দিন আহমদকে সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার জোর দাবী জানাচ্ছি। অন্যথায় এই মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য বর্তমান অবৈধ সরকার ও তাদের দোসরদেরকে চরম মূল্য দিতে হবে। একই সাথে এ যাবত কালে সকল গুম করে দেওয়া নেতা-কর্মীদেরও তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে দ্রুত ক্ষমতা থেকে সরে গিয়ে অবিলম্বে সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের জোর দাবী জানাচ্ছি।
সাংবাদিক সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে এডভোকেট কাজী খায়রুল বাশার বলেন, আমরা সর্বজনীনভাবে ‘সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তি আন্দোলন’ গঠন করেছি। আমাদের সাথে বিএনপির বাইরেও অনেক প্রবাসী রয়েছেন। আমরা সবাইকে নিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদের মুক্তি দাবী করছি। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সমর্থন ও সহযোগিতা নিয়েই আমাদের আন্দোলনে চলবে।
সামসুল ইসলাম মজনু বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সাদেক হোসেন খোকা সাংবাদিক সম্মেলনে দলের পক্ষে সালাহউদ্দিন আহমেদের মুক্তি দাবী করেছেন। আমরা দলের বাইরেও ভিন্ন প্রেক্ষাপটে সকল প্রবাসীদের নিয়ে ‘সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তি আন্দোলন’ গঠন করেছি। এই সংগঠনের আহ্বায়ক কক্সবাজারের আর সদস্য সচিব রাজশাহীর। তিনি বলেন, জননেতা সালাহউদ্দিন আহমেদকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর না করা পর্যন্ত আন্দোলন, সংগ্রাম চলবে। আগামী দিনে জাতিসংঘের সামনে সমাবেশ কর্মসূচীসহ ইউএস সিনেটর ও কংগ্রেসম্যানসহ আন্তর্জাতিক মহলে বিষয়টি তুলে ধরা হবে।
ডা. মুজিবুর রহমান মজুমদার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে ‘জুলুমবাজ ও স্বৈরাচারী’ সরকার আখ্যায়িত করে বলেন, জাতি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এই সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চলবে।
জিল্লুর রহমান জিল্লু বলেন, সালাহউদ্দিন আহমেদ আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু। তার গুম হওয়ার ঘটনায় আমি খুবই ব্যথিত। তিনি কোন কোন বাহিনীর হাতেই রয়েছেন বলে আমরা জেনেছি। আমরা তাকে অবিলম্বে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবী জানাই।
মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল বলেন, বিএনপি বড় রাজনৈতিক দল। এখানে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা রয়েছে বলেই মাঝে-মধ্যে আমরা এদিক-ওদিক ছুটে যাই। কিন্তু দল, দেশ ও জাতির প্রয়োজনে আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি, ঐক্যবদ্ধ থাকবো।
সাংবাদিক সম্মেলনে কমিউনিটির উল্লেখ্যযোগ্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যে তারেক মুক্তি আন্দোলন ইউএসএ’র সভাপতি পারভেজ সাজ্জাদ, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতা শাহাদৎ হোসেন রাজু, সাবেক ছাত্রনেতা জীবন শফিক, ব্রুকলীন বিএনপির সভাপতি হাজী কামাল, সিনিয়র সহ সভাপতি মাস্টার মঈন উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, ফয়েজ উল্লাহ, সিদ্দিকুর রহমান, আজিজুল বারী তিতাস, মোহাম্মদ সারওয়ার উদ্দিন, আব্দুল মতিন, নাজিম আহমেদ চৌধুরী, মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, মোর্শেদুল আলম, মোহাম্মদ জাহিদ হাসান, সোলায়মান চৌধুরী, আরিফ হোসেন মিথুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।