নিউইয়র্ক ০৮:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

মতের বিপক্ষে বললেই রাজাকার-স্বাধীনতা বিরোধী আখ্যা দেয়া জাতির জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:০৫:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০১৪
  • / ১৪০৪ বার পঠিত

বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের কন্যা এবং ‘তাজউদ্দিন আহমদ : নেতা ও পিতা’ শীর্ষক আলোচিত গ্রন্থের লেখিকা শারমিন আহমদ বলেছেন, দেশে কারো মতের বিপক্ষে কথা বললেই স্বাধীনতা বিরোধী আখ্যা দেয়া বা নিজের মত মেনে না নিলেই কাউকে রাজাকার-আলবদর, স্বাধীনতা বিরোধী বলার প্রবণতা দেশ ও জাতির জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এই প্রবণতা রোধ করতে সাহসী ভুমিকা নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য দেশপ্রেমিক চিন্তাশীলদের ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে।
প্রোগ্রেসিভ ফোরাম ইউসএ ইন্ক’র দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শারমিন আহমদ উপরোক্ত কথা বলেন। সিটির জ্যাকসন হাইটস্থ জুইস সেন্টারে গত ৮ নভেম্বর শনিবার ফোরাম-এর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল তিনটা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সম্মেনের কর্মকান্ড চলে। সম্মেলনের অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিলো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, সেমিনার, আলোচনা সভা, কবিতা আবৃত্তি, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নতুন কমিটি গঠন।
অপরাহ্নে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী মোত্তালেব বিশ্বাস। উদ্বোধনী পর্বে আনন্দ ধ্বনি ও উদীচীর শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। সম্মেলনে ফোরামের প্রতিবেদন পাঠ করেন সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলীম উদ্দিন। এছাড়া কবিতা আবৃত্তি করেন গোপন সাহা। সম্মেলনে ‘তরুণ প্রজন্মের বাংলাদেশ ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে এই প্রজন্মের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। সেমিনারে তরুণদের কন্ঠে  বাংলাদেশ নিয়ে হতাশার কথাই উঠে আসে। সেমিনার সঞ্চালনায় ছিলেন সেমন্তি ওয়াহেদ। সেমিনারটি উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের নজর কাড়ে। এছাড়া শিশুদের জন্য বাংলাদেশ বিষয়ক ছবি আঁকা প্রতিযোগিতায় নতুন প্রজন্মের শিশুরা অংশ নেয়। এই প্রতিযোগিতায় সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন বিশিষ্ট চিত্রগ্রাহক ওবায়েদুল্লাহ মামুন। বিজয়ীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করেন সঙ্গীত শিল্পী মোত্তালেব বিশ্বাস।
ফোরামের সভাপতি খোরশেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কাসেম আলী, বাংলাদেশ সোসাইটি ইন্্ক নিউইয়র্কের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রানা ফেরদৌস চৌধুরী, উৎসব ডট কম-এর ডাইরেক্টও (মার্কেটিং) কামাল হোসেন মিতু, হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতা নবেন্দু দত্ত, বাসদ নেতা মোশাররফ খান প্রমুখ। এসময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. জিয়া উদ্দিন আহমেদ, বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার কবির আনোয়ার ও অধ্যাপিকা হুসনে আরা বেগম। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন নাজনীন মামুন।
আলোচনা সভায় শারমিন আহমেদ আরো বলেন, আমার সৌভাগ্য যে আমি তাজ উদ্দিনের মতো এক মহান নেতার সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আর তাজউদ্দিন একে অন্যের পরিপূরক। তাজউদ্দিনের কথা বললে বঙ্গবন্ধুকে খাটো করা হয় না। তিনি বলেন, আমি একজন মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখতে আগ্রহী, দেবতা হিসেবে নয়।
তিনি বলেন, অজ্ঞাত, অজানা ভীতির কারণে বাংলাদেশে সত্য উচ্চারণ করতে না দেয়ার সংস্কৃতি চালু হয়েছে। ব্যক্তি আর দলীয় স্বার্থে খন্ডিত ইতিহাস উপস্থাপন করা হচ্ছে। নতুন প্রজন্মকে সত্যিকার ইতিহাস জানতে দেয়া হচ্ছে না। অথচ একটি দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য অখন্ড ইতিহাস জানার সুযোগ সৃষ্টি করাটা সবচেয়ে জরুরী। যেখানে সত্য উচ্চারণের সুযোগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, কোনো দেশে যদি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং মুক্তবুদ্ধি চর্চার অবাধ সুযোগ না থাকে, তাহলে কেবলমাত্র অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন কখনো টেকসই হয় না। টেকসই উন্নয়নের জন্য অবশ্যই মুক্তিবুদ্ধি চর্চার অবারিত সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
শারমিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে সরকার বদল হচ্ছে, ইতিহাস বদলে যাচ্ছে। আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবিরা দলীয় হয়ে যাচ্ছেন, এটাই সমস্যা। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পার হয়ে গেলেও নতুন প্রজন্মের জন্য একটি অখ- ইতিহাস জাতির সামনে তুলে ধরা যায়নি।
জেলহত্যার বিচার নিয়ে নিজের অসন্তোষ ও হতাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ৩ নভেম্বর জেল হত্যার ঘটনার সাথে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা। জেল হত্যার কথিত বিচারে এমন কয়েক ব্যক্তিকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হলো, যারা দেশেই নেই। এছাড়া তারা খুবই অপরিচিত এবং সেনাবাহিনীর সদস্য। এই হত্যার সঠিক বিচার করতে হলে তৎকালীন আইজি প্রিজন ও ডিআইজি প্রিজনকেও আসামী করা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, কেননা কারাগারের প্রত্যেক বাসিন্দার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব তাদের ওপর অর্পিত ছিল। তিনি বলেন, জেল হত্যাকান্ডের হোতারা দেশের বাইরে ছিল। জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে রাজনীতির সুযোগ করে দেয়। অথচ দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই এরশাদ আজ বর্তমান সরকারের অংশীদার।
তিনি বলেন, ৭১-এ যাঁরা দেশ স্বাধীন করলেন। পরবর্তীতে তাঁরা কেনো দূরে চলে গেলেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে তাজউদ্দিন আহমদের দূরত্ব সৃষ্টি হলো কেনো? এসব নিয়ে জানার অবকাশ রয়েছে। সত্য সাইকে জানতে হবে।
শারমিন আহমেদ তার আলোচনার শুরুতেই নিজের লেখা ‘তাজউদ্দিন আহমেদ নেতা ও পিতা’ আলোচিত গ্রন্থের সমালোচনার প্রসঙ্গ টেনে উপস্থিত সুধীজনের কাছ থেকে গ্রন্থটিতে ইতিহাসের সত্য তথ্যের বাইরে কিছু আছে কিনা তা জানতে চান। তিনি বলেন, বইটি প্রকাশের পর পরই আমাকে অনেক উপাধি দেয়া হলো। বইটি না পড়েই ঢালাও সমালোচনা করা হলো। খোদ মন্ত্রী পর্যায় থেকে বলা হলো যে, এ কে খন্দকারের বই ও শারমিন আহমদের বই একই জায়গা থেকে লেখা হয়েছে। অথচ আমি কেবল অনালোচিত ও গবেষণালব্ধ সত্যি ইতিহাসগুলোই গ্রন্থটিতে তুলে ধরেছি মাত্র। জেলহত্যার পূর্বাপর ঘটনা নিয়ে শীঘ্রই তার আরেকটি বই প্রকাশিত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মকে সত্যিকার ইতিহাস জানানোর চেষ্টার অংশ হিসেবেই তিনি এসব বই লিখছেন।
পরে তিনি তার গ্রন্থের বিষয়ে নানা সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে বলেন, কারো মতের সাথে না মিললেই তাকে স্বাধীনতা বিরোধী-রাজাকার আখ্যা দেয়ার প্রবণতা জাতিকে ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি তার গ্রন্থটির তথ্য ইতিহাসের সত্য উল্লেখ করে, জাতির সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য তা মেনে নেয়ার সংস্কৃতি শুরু এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের হতাশা দূর করতে সকল প্রকার লোভ-মোহ-পক্ষপাত দূর করে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার আহবান জানান।
ফোরামের প্রতিবেদনে আলীম উদ্দিন বলেন, ২০০৫ সালের ১৩ মে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশী কমিউনিটির প্রগতিমনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, অসাম্প্রদায়িক ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিক প্রোগ্রেসিভ ফোরাম ইউএস ইন্্ক‘র সাংগঠনিক কার্যক্রমের সূচনা হয়। হাঁটি হাঁটি পা পা করে সংগঠন তার অবিচল লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়নের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী কমিউনিটির মধ্যে প্রগতিশীল ও মুক্তচিন্তার মানুষদের একটির প্লাটফর্ম হিসেবে ইতিমধ্যেই স্থান করে নিয়েছে। প্রোগ্রেসিভ ফোরাম একটি অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও রাজনীতি বিমুখ নয়। ফোরাম বাংলাদেশী কমিউনিটিকে সাথে নিয়ে দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, নারীর অধিকার ভিত্তিক নানা কর্মসূচী বাস্তবায়নের ফলে সংগঠনটি অন্যান্য কমিউনিটি ভিত্তিক সংগঠনগুলো থেকে গতানুগতিক সংগঠনের বাইরে ব্যতিক্রম সংগঠন হিসেবে আতœ প্রকাশ করেছে বলে তিনি দাবী করেন। প্রতিবেদনে তিনি গত দু’বছরে ফোরামের কর্মকান্ডের মধ্যে শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস পালন, ‘বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক সেমিনার, ড. নজরুল ইসলাম রচিত ‘আগামী দিনের বাংলাদেশ’ গ্রন্থের উপর আলোচনা, সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ স্মরণ সভা, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিকাশের সঙ্কট ও সম্ভাবনা‘ শীর্ষক গোল টেবিল আলোচনা, তাজ উদ্দিন ও নারী দিবস পালনের কথা তুলে ধরা হয়।
সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনে ফোরামের সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে খোরশেদুল ইসলামকে পুনরায় সভাপতি ও আলীম উদ্দিনকে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে প্রোগ্রেসিভ ফোরাম ইউএনএ ইন্ক’র ৫১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণা করেন গোলাম মর্তুজা।
উল্লেখ্য, প্রোগ্রেসিভ ফোরামের সম্মেলন উপলক্ষ্যে ‘দিশারী’ শীর্ষক একটি স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়। এটি সম্পাদনা করেন মোহাম্মদ হারুন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

মতের বিপক্ষে বললেই রাজাকার-স্বাধীনতা বিরোধী আখ্যা দেয়া জাতির জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে

প্রকাশের সময় : ১১:০৫:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০১৪

বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের কন্যা এবং ‘তাজউদ্দিন আহমদ : নেতা ও পিতা’ শীর্ষক আলোচিত গ্রন্থের লেখিকা শারমিন আহমদ বলেছেন, দেশে কারো মতের বিপক্ষে কথা বললেই স্বাধীনতা বিরোধী আখ্যা দেয়া বা নিজের মত মেনে না নিলেই কাউকে রাজাকার-আলবদর, স্বাধীনতা বিরোধী বলার প্রবণতা দেশ ও জাতির জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এই প্রবণতা রোধ করতে সাহসী ভুমিকা নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য দেশপ্রেমিক চিন্তাশীলদের ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে।
প্রোগ্রেসিভ ফোরাম ইউসএ ইন্ক’র দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শারমিন আহমদ উপরোক্ত কথা বলেন। সিটির জ্যাকসন হাইটস্থ জুইস সেন্টারে গত ৮ নভেম্বর শনিবার ফোরাম-এর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল তিনটা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সম্মেনের কর্মকান্ড চলে। সম্মেলনের অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিলো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, সেমিনার, আলোচনা সভা, কবিতা আবৃত্তি, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নতুন কমিটি গঠন।
অপরাহ্নে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী মোত্তালেব বিশ্বাস। উদ্বোধনী পর্বে আনন্দ ধ্বনি ও উদীচীর শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। সম্মেলনে ফোরামের প্রতিবেদন পাঠ করেন সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলীম উদ্দিন। এছাড়া কবিতা আবৃত্তি করেন গোপন সাহা। সম্মেলনে ‘তরুণ প্রজন্মের বাংলাদেশ ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে এই প্রজন্মের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। সেমিনারে তরুণদের কন্ঠে  বাংলাদেশ নিয়ে হতাশার কথাই উঠে আসে। সেমিনার সঞ্চালনায় ছিলেন সেমন্তি ওয়াহেদ। সেমিনারটি উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের নজর কাড়ে। এছাড়া শিশুদের জন্য বাংলাদেশ বিষয়ক ছবি আঁকা প্রতিযোগিতায় নতুন প্রজন্মের শিশুরা অংশ নেয়। এই প্রতিযোগিতায় সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন বিশিষ্ট চিত্রগ্রাহক ওবায়েদুল্লাহ মামুন। বিজয়ীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করেন সঙ্গীত শিল্পী মোত্তালেব বিশ্বাস।
ফোরামের সভাপতি খোরশেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কাসেম আলী, বাংলাদেশ সোসাইটি ইন্্ক নিউইয়র্কের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রানা ফেরদৌস চৌধুরী, উৎসব ডট কম-এর ডাইরেক্টও (মার্কেটিং) কামাল হোসেন মিতু, হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতা নবেন্দু দত্ত, বাসদ নেতা মোশাররফ খান প্রমুখ। এসময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. জিয়া উদ্দিন আহমেদ, বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার কবির আনোয়ার ও অধ্যাপিকা হুসনে আরা বেগম। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন নাজনীন মামুন।
আলোচনা সভায় শারমিন আহমেদ আরো বলেন, আমার সৌভাগ্য যে আমি তাজ উদ্দিনের মতো এক মহান নেতার সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আর তাজউদ্দিন একে অন্যের পরিপূরক। তাজউদ্দিনের কথা বললে বঙ্গবন্ধুকে খাটো করা হয় না। তিনি বলেন, আমি একজন মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখতে আগ্রহী, দেবতা হিসেবে নয়।
তিনি বলেন, অজ্ঞাত, অজানা ভীতির কারণে বাংলাদেশে সত্য উচ্চারণ করতে না দেয়ার সংস্কৃতি চালু হয়েছে। ব্যক্তি আর দলীয় স্বার্থে খন্ডিত ইতিহাস উপস্থাপন করা হচ্ছে। নতুন প্রজন্মকে সত্যিকার ইতিহাস জানতে দেয়া হচ্ছে না। অথচ একটি দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য অখন্ড ইতিহাস জানার সুযোগ সৃষ্টি করাটা সবচেয়ে জরুরী। যেখানে সত্য উচ্চারণের সুযোগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, কোনো দেশে যদি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং মুক্তবুদ্ধি চর্চার অবাধ সুযোগ না থাকে, তাহলে কেবলমাত্র অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন কখনো টেকসই হয় না। টেকসই উন্নয়নের জন্য অবশ্যই মুক্তিবুদ্ধি চর্চার অবারিত সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
শারমিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে সরকার বদল হচ্ছে, ইতিহাস বদলে যাচ্ছে। আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবিরা দলীয় হয়ে যাচ্ছেন, এটাই সমস্যা। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পার হয়ে গেলেও নতুন প্রজন্মের জন্য একটি অখ- ইতিহাস জাতির সামনে তুলে ধরা যায়নি।
জেলহত্যার বিচার নিয়ে নিজের অসন্তোষ ও হতাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ৩ নভেম্বর জেল হত্যার ঘটনার সাথে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা। জেল হত্যার কথিত বিচারে এমন কয়েক ব্যক্তিকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হলো, যারা দেশেই নেই। এছাড়া তারা খুবই অপরিচিত এবং সেনাবাহিনীর সদস্য। এই হত্যার সঠিক বিচার করতে হলে তৎকালীন আইজি প্রিজন ও ডিআইজি প্রিজনকেও আসামী করা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, কেননা কারাগারের প্রত্যেক বাসিন্দার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব তাদের ওপর অর্পিত ছিল। তিনি বলেন, জেল হত্যাকান্ডের হোতারা দেশের বাইরে ছিল। জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে রাজনীতির সুযোগ করে দেয়। অথচ দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই এরশাদ আজ বর্তমান সরকারের অংশীদার।
তিনি বলেন, ৭১-এ যাঁরা দেশ স্বাধীন করলেন। পরবর্তীতে তাঁরা কেনো দূরে চলে গেলেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে তাজউদ্দিন আহমদের দূরত্ব সৃষ্টি হলো কেনো? এসব নিয়ে জানার অবকাশ রয়েছে। সত্য সাইকে জানতে হবে।
শারমিন আহমেদ তার আলোচনার শুরুতেই নিজের লেখা ‘তাজউদ্দিন আহমেদ নেতা ও পিতা’ আলোচিত গ্রন্থের সমালোচনার প্রসঙ্গ টেনে উপস্থিত সুধীজনের কাছ থেকে গ্রন্থটিতে ইতিহাসের সত্য তথ্যের বাইরে কিছু আছে কিনা তা জানতে চান। তিনি বলেন, বইটি প্রকাশের পর পরই আমাকে অনেক উপাধি দেয়া হলো। বইটি না পড়েই ঢালাও সমালোচনা করা হলো। খোদ মন্ত্রী পর্যায় থেকে বলা হলো যে, এ কে খন্দকারের বই ও শারমিন আহমদের বই একই জায়গা থেকে লেখা হয়েছে। অথচ আমি কেবল অনালোচিত ও গবেষণালব্ধ সত্যি ইতিহাসগুলোই গ্রন্থটিতে তুলে ধরেছি মাত্র। জেলহত্যার পূর্বাপর ঘটনা নিয়ে শীঘ্রই তার আরেকটি বই প্রকাশিত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মকে সত্যিকার ইতিহাস জানানোর চেষ্টার অংশ হিসেবেই তিনি এসব বই লিখছেন।
পরে তিনি তার গ্রন্থের বিষয়ে নানা সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে বলেন, কারো মতের সাথে না মিললেই তাকে স্বাধীনতা বিরোধী-রাজাকার আখ্যা দেয়ার প্রবণতা জাতিকে ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি তার গ্রন্থটির তথ্য ইতিহাসের সত্য উল্লেখ করে, জাতির সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য তা মেনে নেয়ার সংস্কৃতি শুরু এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের হতাশা দূর করতে সকল প্রকার লোভ-মোহ-পক্ষপাত দূর করে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার আহবান জানান।
ফোরামের প্রতিবেদনে আলীম উদ্দিন বলেন, ২০০৫ সালের ১৩ মে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশী কমিউনিটির প্রগতিমনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, অসাম্প্রদায়িক ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিক প্রোগ্রেসিভ ফোরাম ইউএস ইন্্ক‘র সাংগঠনিক কার্যক্রমের সূচনা হয়। হাঁটি হাঁটি পা পা করে সংগঠন তার অবিচল লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়নের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী কমিউনিটির মধ্যে প্রগতিশীল ও মুক্তচিন্তার মানুষদের একটির প্লাটফর্ম হিসেবে ইতিমধ্যেই স্থান করে নিয়েছে। প্রোগ্রেসিভ ফোরাম একটি অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও রাজনীতি বিমুখ নয়। ফোরাম বাংলাদেশী কমিউনিটিকে সাথে নিয়ে দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, নারীর অধিকার ভিত্তিক নানা কর্মসূচী বাস্তবায়নের ফলে সংগঠনটি অন্যান্য কমিউনিটি ভিত্তিক সংগঠনগুলো থেকে গতানুগতিক সংগঠনের বাইরে ব্যতিক্রম সংগঠন হিসেবে আতœ প্রকাশ করেছে বলে তিনি দাবী করেন। প্রতিবেদনে তিনি গত দু’বছরে ফোরামের কর্মকান্ডের মধ্যে শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস পালন, ‘বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক সেমিনার, ড. নজরুল ইসলাম রচিত ‘আগামী দিনের বাংলাদেশ’ গ্রন্থের উপর আলোচনা, সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ স্মরণ সভা, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিকাশের সঙ্কট ও সম্ভাবনা‘ শীর্ষক গোল টেবিল আলোচনা, তাজ উদ্দিন ও নারী দিবস পালনের কথা তুলে ধরা হয়।
সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনে ফোরামের সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে খোরশেদুল ইসলামকে পুনরায় সভাপতি ও আলীম উদ্দিনকে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে প্রোগ্রেসিভ ফোরাম ইউএনএ ইন্ক’র ৫১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণা করেন গোলাম মর্তুজা।
উল্লেখ্য, প্রোগ্রেসিভ ফোরামের সম্মেলন উপলক্ষ্যে ‘দিশারী’ শীর্ষক একটি স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়। এটি সম্পাদনা করেন মোহাম্মদ হারুন।