সকল কর্মকান্ডে স্বচ্ছতা, প্যারেড আয়োজন, স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণসহ নানা প্রস্তাব
- প্রকাশের সময় : ০৪:১৩:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ মে ২০১৫
- / ৭০৬ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের সামাজিক সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটিকে শক্তিশালী আর গণমুখী সংগঠনে পরিণত করতে সাংবাদিকদের পরামর্শ নিলেন সোসাইটির কর্মকর্তারা। এ উপলক্ষে ২ মে শনিবার বিকেলে নিউইয়র্কের এলমহার্স্ট-এ সোসাইটির নিজস্ব কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ সোসাইটি ইন্্ক নিউইয়র্কের সভাপতি আজমল হোসেন কুনুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার সঞ্চালক ছিলেন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহীম হাওলাদার।
সভায় সোসাইটির কর্মকর্তারা বলেন, প্রবাসে আমাদের কমিউনিটি বাড়ছে, সেই সাথে সোসাইটির দায়িত্বও বাড়ছে। কর্মকর্তারা নিউইয়র্কে স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ ও কমিউনিটি সেন্টার প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমের পাশাপাশি সকল প্রবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন এবং এই লক্ষ্য অর্জনে পর্যায়ক্রমে প্রবাসের সকল সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন এবং পেশাজীবীদের সাথে মতবিনিময়ের মাধ্যমে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেন জানান। খবর ইউএনএ’র।
সভায় বিভিন্ন মিডিয়ার সম্পাদক, পরিচালক ও সাংবাদিকরা সোসাইটির উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং তাদের মতামত ব্যক্তকালে সোসাইটিকে দলমত নির্বিশেষে সকল প্রবাসীর সংগঠনে পরিণত করার লক্ষ্যে সর্বাগ্রে সোসাইটির কর্মকর্তাদের কমিউনিটির আস্থা, বিশ্বাস ও স্বচ্ছতা অর্জনের উপর গুরত্বারোপ করেন বলেন, সোসাইটির সদস্য ও ভোটার বৃদ্ধি করে সকল বাংলাদেশীদের তালিকা তৈরী, প্রবাসের অন্যান্য রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের সাথে মতামতের ভিত্তিতে সুসম্পর্ক জোরদার, বৃহদাকারে প্যারেড আয়োজন, ঐক্যবদ্ধভাবে পহেলা বৈশাখ তথা বাংলাবর্ষবরণ, একুশে ফেব্রুয়ারী তথা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, মহান স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস পালন, নিউইয়র্কে স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণে ও কমিউনিটি সেন্টার প্রতিষ্ঠায় যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ এবং সোসাইটির কর্মকান্ড পরিচালনায় স্বচ্ছতার উপর গুরুত্বারোপ করেন। সেই সাথে নতুন প্রজন্ম ও সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য কল্যাণকর কর্মসূচী গ্রহণ, সময়ে সময়ে ট্যাক্স ফাইলিং, ইমিগ্রেশন, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানের সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং কনস্যুলেট সেবার ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন। সেই সাথে সকল প্রবাসীর অংশগ্রহণে কার্যকর সাধারণ সভার আয়োজন করা দরকার বলে সাংবাদিকরা অভিমত ব্যক্ত করেন।
সভায় আলোচনার সূচনা করেন সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা’র সম্পাদক ও টাইম টিভি’র সিইও আবু তাহের। তিনি বলেন, সোসাইটিকে গণমূখী আর সকলের সংগঠনে পরিণত করতে হলে সর্বাগ্রে আর্থিক বিষয়াদীসহ সকল কর্মকান্ডে স্বচ্ছতা আনতে হবে এবং তার সদস্য-ভোটারদের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। প্রয়োজনে সোসাইটির নোটিশ বোর্ডে এসব তথ্যাদি সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকতে পারে।
সাপ্তাহিক ঠিকানা’র প্রধান সম্পাদক মুহাম্মদ ফজলুর রহমান বলেন, নিউজার্সীর প্যাটারসনে কতজন প্রবাসী বাংলাদেশী রয়েছেন। তারা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারেন তাহলে নিউইয়র্কে হবে না কেন? তিনি বলেন, সোসাইটি যদি নিউইয়র্কের সকল প্রবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে তাহলেই কমিউনিটি শক্তিশালী হবে। আর কমিউনিটি শক্তিশালী হলে শহীদ মিনারসহ সকর সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে।
সভায় সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান বলেন, কমিউনিটিতে এখন অনেক সামাজিক সংগঠন গড়ে উঠেছে। ৪০ বছর আগে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সোসাইটি যেসব অনুষ্ঠান করতো এখন আর সেসব অনুষ্ঠান করে অর্থ আর শ্রম নষ্ট করার কোন মানে নেই। তিনি সোসাইটির মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন প্রদান বাবদ সোসাইটির খরচ সহ সকল প্রকারের আয়-ব্যয় উন্মুক্ত করার পরামর্শ দেন।
সাপ্তাহিক বাঙালী সম্পাদক কৌশিক আহমেদ মূলধারায় কমিউনিটির শক্তি দেখাতে সকল প্রবাসী মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে ‘বাংলাদেশ ডে প্যারেড’ আয়োজনের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, শুধু মুখে বললেই হবে না যে, নিউইয়র্কে তিন লাখ বা যুক্তরাষ্ট্রে ৫ লাখ বাংলাদেশীর বসবাস। কমিউনিটির জন্য আগে কিছু করতে হলে নিজের পায়ের মাটি শক্ত করতে হবে। এজন্য ডকুমেন্ট দরকার, দরকার সকল প্রবাসীর তালিকা। যা সোসাইটি করতে পারে। তিনি মুলধারার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বরাত দিয়ে বলেন, তাদের কাছে নিউইয়র্কে স্থায়ী শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশীদের পক্ষ থেকে কোন ‘অফিসিয়ালী আবেদন’ নেই। আর অফিসিয়ালী আবেদন ছাড়া মুখে মুখে শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠার কথা বলে লাভ নেই।
সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান বলেন, সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে ‘ওয়ান স্টপ কমিউনিটি সেন্টার’ (স্থায়ী শহীদ মিনারের পাশাপাশি একই স্থানে মিলনায়তন’ নির্মাণে বাজেট নির্ধারণ করে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। প্রবাসের সকল সংগঠনের সাথে সমন্বয় সাধন করে সুদূর প্রসারী কর্মসূচীর পাশপাশি নতুন প্রজন্ম যাতে সোসাইটির সাথে সম্পৃক্ত হয় তারও উদ্যোগ নিতে হবে।
সাপ্তাহিক দেশবাংলা’র সম্পাদক তাসের মাহমুদ সোসাইটির মতবিনিময় সভাকে ভালো উদ্যোগ আখ্যায়িত করে বলেন, আমাদের সবার প্রিয় বাংলাদেশ সোসাইটিকে গণমূখী ও কার্যকরী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হলে কমিউনিটির অন্যান্য সামাজিক সংগঠনের সাথে সোসাইটির ভাব-ভালবাসা জোরদার করতে হবে।
সাপ্তাহিক বর্ণমালা সম্পাদক মাহফুজুর রহমান বলেন, প্রকৃত অর্থেই সোসাইটিকে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের ‘মাদার সংগঠন’-এ পরিণত করতে হলে সকল ভয়-ভীতি আর ব্যক্তিগত লোভ-লালসার উর্ধ্বে উঠে সোসাইটির কর্মকর্তাদের সকল প্রবাসীতে সোসাইটির পতাকাতলে আনতে হবে। আজীবন সদ্যদের যথাযথ সম্মান আর ব্যতিক্রমী সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। সেই সাথে গতানুগতিক অনুষ্ঠান নয়, ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান করতে হবে। সোসাইটির সদস্যপদ ফ্রি করে ভোটার হতে জনপ্রতি ৫ ডলার ফি নির্ধারিত হতে পারে।
সাপ্তাহিক জন্মভূমি সম্পাদক রতন তালুকদার সোসাইটির কাজ কি এমন প্রশ্ন তুলে বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রীদের নিউইয়র্ক সফরকালীন সময়ে তাদেরকে সোসাইটির পক্ষ থেকে সম্বর্ধিত করে সেখানে সরকারের কাছে প্রবাসীদের সমস্যা তুলে ধরা যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ কনস্যুলেটে প্রবাসীরা নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন, সে খোঁজ কি সোসাইটি রাখেন বা তাদের সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নিয়েছেন? তিনি অভিযোগ করে বলেন, সম্প্রতি কনস্যুলেটে তার স্ত্রী-পুত্রের সামনেই এক প্রবাসীর সাথে এক কর্মচারী অশোভন আচরণ করেছেন।
আইঅন বাংলাদেশ টিভি’র পরিচালক রিমন ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সোসাইটি এখন যেসব কাজ করছে তা আঞ্চলিক সংগঠনের কাজ, মাদার সংগঠনের কাজ নয়। ফলে সোসাইটির প্রতি প্রবাসীদের আগ্রহ কমছে। এই সংকট কাটাতে হবে।
হককথা.কম ও ইউএনএ সম্পাদক এবিএম সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আর্থিক অবস্থাসহ বর্তমানে সোসাইটির সার্বিক অবস্থা কি, সোসাইটির ফান্ড কত আছে তা সবাইতে জানিয়ে একটি পরিকল্পনা নিয়ে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে কর্মকর্তাদের এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই সোসাইটি গণমূখী হবে। তিনি বলেন, সোসাইটির সকল কর্মকান্ডের আমন্ত্রণ যাতে প্রবাসের সকল সাংবাদিক পান সেই দাবীও করেন।
এটিএন নিউজ ইউএসএ’র বার্তা সম্পাদক দর্পণ কবীর সোসাইটির সদস্যপদ সবল প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য উন্মুক্ত আর নির্বাচনের আগে কোঠা ব্যক্তিগত উদ্যোগে সদস্য বা ভোটার বানানোর প্রক্রিয়া বন্ধ করা উচিৎ বলে অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, প্রয়োজনে ভোটার হতে আগ্রহীদের ফি নির্ধারিত থাকতে পারে। তিনি বলেন, সোসাইটিতে যদি ৫০ হাজার সদস্য/ভোটার থাকেন এবং প্রতিজন ৫ ডলার করে দিলে আড়াই লাখ ডলার ফান্ড হতে পারে।
এনটিভি ইউএসএ’র বার্তা প্রধান তাওহীদুল ইসলাম মতবিনিময় সভার আমন্ত্রণ সকল সাংবাদিক না পাওয়ার অভিযোগ তুলে বলেন, সোসাইটির প্রচার সম্পদকের দায়িত্ব কি। এমন বৈষম্য থাকলে সোসাইটিতে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে না।
সাপ্তাহিক প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ কমিউনিটির অনুষ্ঠানাদিতে জাতিসংঘের বাংলাদেশ মিশন প্রধান বা কনসাল জেনারেলের সকল অনুষ্ঠানেই অতিথি হওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে কি না এমন প্রশ্ন তুলে বলেন, সরকারী কর্মকর্তাদের পরিবর্তে কমিউনিটির প্রবীণ ব্যক্তিত্বদের অতিথি করে তাদের অতিথি করে সম্মানিত করার পরামর্শ দেন।
সাপ্তাহিক আজকাল-এর নির্বাহী সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সেলিম বলেন, সোসাইটিকে গণমুখী করতে হলে বিগত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দুই প্যানেলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে।
দৈনিক ইত্তেফাক ও সাপ্তাহিক বাঙালীর বিশেষ প্রতিনিধি শহীদুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকদের কাজ পরামর্শ দেয়া নয়, সোসাইটির কর্মকর্তাদের কর্মকান্ডের মাধ্যমেই সংগঠনকে প্রবাসীদের দৌড়গোড়ায় নিতে হবে। সাংবাদিকরা সেই কর্মকান্ড তুলে ধরে সোসাইটিকে সাহায্য করতে পারেন।
সাপ্তাহিক দেশবাংলা’র নির্বাহী সম্পাদক আলমগীর সরকার বলেন, সমাজিক কর্মকান্ডের মাধ্যমেই সোসাইটিকে গণমূখী করতে হবে। প্রবাসীদের সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি তাদের চাহিদা মিটিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে। ফ্রি কনস্যুলেট সেবা, ট্যাক্স রির্টান করার সেবা’র মতো প্রয়োজনে বাংলাদেশী-আমেরিকান চিকিৎসকদের সমন্বয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
সাপ্তাহিক রানার-এর সাংবাদিক সন্্জীবন কুমার সরকার বলেন, কোন সংগঠনকে গণমুখী আর শক্তিশালী করতে হলে সেই সংগঠনের সুন্দর পরিকল্পনা থাকা দরকার। যা বাংলাদেশ সোসাইটিতে দেখা যাচ্ছে না। ভালো কাজের জন্য সাবার আগে দরকার সঠিক পরিকল্পনা।
সাপ্তাহিক ঠিকানার সাংবাদিক আবুল কাশেম বলেন, নিউইয়র্কে একটি স্থায়ী শহীদ মিনার ও কমিউনিটি সেন্টার প্রতিষ্ঠা জরুরী। এজন্য সোসাইটিকে উদ্যোগী হতে হবে।
সাংবাদিক হাকিকুল ইসলাম খোকন সোসাইটির মতবিনিময় সভাকে সাধুবাদ জানান এবং সম্মিলিতভাবে কমিউনিটির সেবায় সোসাইটিকে ভূমিকা রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
এছাড়া সভায় সাপ্তাহিক ঠিকানা’র বার্তা সম্পাদক ও এনা’র সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সোসাইটির কর্মকর্তাদের মধ্যে সিনিয়র সহ সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান, সহ সভাপতি ফারুক হোসেন মজুমদার, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী, প্রচার সম্পাদক মফিজুল ইসলাম ভূইয়া রুমি, সাহিত্য সম্পাদক ওয়াহিদ কাজী এলিন, সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী তোফায়েল ইসলাম, ক্রীড়া সম্পাদক সৈয়দ এনায়েত আলী, কার্যকরী পরিষদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ, সিরাজুল হক জামাল, আবুল কাশেম চৌধুরী, সৈয়দ ইলিয়াস খসরু, নাদির আহমেদ আইয়্যুব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, সভার এক পর্যায়ে একটি উক্তিকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার সৃষ্টি হলে সাংবাদিক ও সোসাইটির কর্মকর্তাদের অলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়।