শব্দ’র রংময় সন্ধ্যা
- প্রকাশের সময় : ০৩:৪৮:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১ জানুয়ারী ২০১৬
- / ১২১২ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: প্রিয়ার কপালের জ্বলজ্বলে লাল টিপ অথবা কপোলের কালো তিল, রঙিন প্রজাপতি অথবা কালো ভ্রমর, শুভ্র মেঘ, সবুজ প্রকৃতি অথবা সাত রঙা রংধনু কোনটাই আমাদের জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন নয়, নয় জীবনের বাইরে একটি জীবনের অথবা যে কোনো সৃষ্টির প্রতিটি ধাপেই চলতে থাকে রঙের অপরূপ খেলা, অপূর্ব কারুকাজ। মানুষের আবেগ, অনুভূতির প্রতিটি কনায় রং ছড়িয়ে যায় আপনমনে, সযতনে কখনো তার ভালো লাগে মায়ের আঁচল, কখনো প্রিয়ার চোখের কাজল কখনো আকাশে উড়তে থাকা বেপরোয়া ঘুড়ি, আবার
কখনো কোনো কিশোরীর হাতে বাজতে থাকা রঙিন চুড়ি।প্রবল আলো থেকে পাথর কালো অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যাওয়া রংময় এ ছোট্ট জীবন এবং জীবনকে ঘিরে থাকা অপরূপ বৈচিত্রময় প্রকৃতিকে নিয়েই শব্দ সাজিয়েছে তাদের পরিবেশনা ‘রং’। গত ২০ ডিসেম্বর ২০১৫, রবিবার সন্ধ্যে সাতটায় নিউইয়র্কের পি.এস.২৩৪ মিলনায়তন সেজে ছিল রংময় পরিবেশে।এখানে পরিবেশিত হয়,শব্দ রিসাইটেশন ইনস্টিটিউট এন্ড কালচারাল মিডিয়া ইনক্, নিউইয়র্ক এর ১৯তম প্রযোজনা সঙ্গীত শিল্পী শফিকুল ইসলাম রচিত ও নির্দেশিত “রং” এবং শব্দের শিক্ষার্থী পারভীন সুলতানা’র গ্রন্হনা ও নির্দেশনায় “মাতে আনন্দে প্রাণ”। আায়েশা তাহমিনা অধরার সাবলীন উপস্থাপনার জানা যায়,শব্দের এইবারের পুরো আয়োজনটি বীর শহীদদের প্রতি উৎসর্গ করা হয়।আরো জানা যায়,তিনটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে অনুষ্ঠানটি। প্রথমেই শব্দ’র শিক্ষানবীশ প্রযোজনা “মাতে আনন্দে প্রাণ” পরিবেশিত হয়। প্রায় বারো থেকে পনের মিনিটের এই আয়োজনে দুইজন শিশুশিল্পী সহ মোট সাতজন অংশগ্রহণ করে।এটি আবৃত্তি ও সঙ্গীত সমন্বিত পরিবেশনা। স্কীপ্টের সাথে মিল রেখে নিজেদের এবং মঞ্চও সাজিয়েছে সেইভাবে। দ্বিতীয় পর্বে,শব্দের দুইজন শিক্ষার্থী মাইশা ও মৌসুমী দে আবৃত্তি পরিবেশন করেন।শব্দের পরিচালকদ্বয় শফিকুল ইসলাম ও ইভান চৌধুরী মঞ্চে এসে শব্দের কার্যক্রম সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করেন। এরপর আমন্ত্রিত বিশেষ অতিথিবৃন্দ; নাট্যব্যক্তিত্ব জামালউদ্দিন হোসেন, সংগীতজ্ঞ মুত্তালিব বিশ্বাস এবং বাংলাদেশ সরকারের নিউইর্য়কস্থ মাননীয় কনসাল জেনারেল মো. শামীম আহসান শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন।এই পর্বের শেষে শব্দের শিক্ষার্থীদের মাঝে সনদপত্র প্রদান করা হয়। সবশেষে ছিল শব্দের ১৯তম প্রযোজনা সঙ্গীত শিল্পী শফিকুল ইসলাম রচিত ও নির্দেশিত “রং”। “রং” এর সাথে মিল রেখে সুজজ্জিত মঞ্চ,অংশগ্রহণকারীদের দৃষ্টিনন্দন পোশাক,চমৎকার লাইটিং পুরো হলের দৃশ্যপট বদলে দেয়।এই আয়োজনটি ছিল সঙ্গীত, আবৃত্তি আর নৃত্য দিয়ে সাজানা একটি নিখুঁত,পরিচ্ছন্ন ও সমন্বিত পরিবেশনা। আয়োজনটি তথাকথিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মত ভাবলে ভুল করা হবে। মঞ্চে ষোলজন সদস্য তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে বসে ছিলেন প্রায় ঘন্টাব্যাপী।মাঝে চারজন আর দুইপাশে ছয়জন করে বারোজন।সঙ্গীতে সাতজন (তিনজন শিশুশিল্পী),আবৃত্তিতে নয়জন আর নৃত্যে দুইজন। কবিতার সাথে মিল রেখে বেশ কয়েকটি মৌলিক গানের পরিবেশনা ছিল শ্রুতিমধুর। চমৎকার কথা আর অপূর্ব সুরে দর্শকদের নিয়ে গিয়েছে অন্য জগতে। উপস্থিত দর্শকদের মানসপটে তৈরী করেছে রঙ্গীন এক পরিবেশ। চমৎকার সমন্বয়তার মাধ্যমে পরিবেশিত হয়েছে তাদের সমবেত পরিবেশনা। যাদের পরিবেশনায় আয়োজনটি স্বার্থক হয়েছে, সঙ্গীতে: অনন্ত, তাহিয়াত অধরা, অজেয়, তানিয়া, শফিক,সানি,লিপি;আবৃত্তিতে চাঁপা,সীতেশ, জুঁই, অধরা, ইভান,চুমকি, প্রীতি, পারভীন, মিহির; নৃত্যে ঝিলিক ও মাইশা। সঙ্গীত আয়োজন ও পরিকল্পনায় শফিকুল ইসলাম এবং পুরো আয়োজনের মঞ্চ ও প্রযোজনা ব্যবস্থাপক আশরাফুল হাবিব চৌধুরী মিহির। শব্দ সন্ধেটা রং -এ রাঙ্গিয়ে দিয়ে গেছে দারুনভাবে।ভবিষ্যতে শব্দ এমনি আরো অনেক ভালো ভালো অনুষ্ঠান উপহার দেবে নিউইর্য়কের দর্শকদের; এই প্রত্যাশা রইলো শব্দে্’র প্রতি।