যে কারণে ‘কামাল-রুহুল’ আর ‘কুনু-আজম’ প্যানেলের জয়-পরাজয়

- প্রকাশের সময় : ০৭:৩৮:৩৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ নভেম্বর ২০১৬
- / ৬৪৭ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: সদ্য অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক’র কার্যকরী পরিষদের দ্বি-বার্ষিক (২০১৭-২০১৮) নির্বাচন শেষে এখন চলছে প্রতিদ্বন্দ্বি ‘কামাল-রুহুল’ আর ‘কুনু-আজম’ প্যানেলের জয়-পরাজয়ের হিসাব-নিকাশ। গত ২৩ অক্টোবর রোবার অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে সোসাইটির ১৯ সদস্যের কার্যকরী পরিষদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ ১৭টি পদে ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেল আর ‘কুনু-আজম’ প্যানেল মাত্র দুটি পদে জয়লাভ করেছে। আর এই জয়-পরাজয়ের মধ্য দিয়ে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটলেও ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেলের নিরঙ্কুশ বিজয় আর ‘কুনু-আজম’ প্যানেলের ব্যাপক পরাজয়ের কথা নির্বাচনের এক সপ্তাহ পরেও ‘টক অব দ্যা কমিউনিটি’-তে পরিণত হয়েছে। এদিকে নির্বাচন কমিশন ৩০ অক্টোবর রোববার সোসাইটির নির্বাচনের ফলাফল অফিসিয়ালী ঘোষণা করেছে। খবর ইউএনএ’র।
বাংলাদেশ সোসাইটির ৪০ বছরের ইতিহাসে সর্বাধিক ১৮ হাজার ৫৫১ ভোটার আর সবচেয়ে ব্যয়বহুল এবারের নির্বাচন নিয়ে কমিউনিটিতে ব্যাপক আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। নির্বাচন পূর্ব বিভিন্ন জরিপে দেখা যায় নির্বাচনে দুই প্যানেলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে, এককভাবে কোন প্যানেল বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই, দুই প্যানেল থেকেই প্রার্থী নির্বাচিত হবেন ইত্যাদি ইত্যাদি। অনুসন্ধানে জানা যায়, সোসাইটির বিগত দিনগুলোর নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচনে উভয় প্যানেলের প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা ছিলেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে যোগ্য। ইতিপূর্বে সোসাইটিতে নেতৃত্বে দেয়ার যোগ্য প্রার্থীও ছিলেন সর্বাধিক। কিন্তু নির্বাচন পরবর্তী অনুসন্ধানে দেখা যায়, সবমিলিয়ে এবারের নির্বাচনের সকল হিসেব-নিকেশ পাল্টে দিয়েছে কমিউনিটির সচেতন মানুষের সকল হিসেব-নিকেশ। ফলে নির্বাচন পরবর্তী গেলো সপ্তাহে আনন্দের বন্যা বইছে বিজয়ী ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেল পরিবারে, আর পরাজিত ‘কুনু-আজম’ প্যানেল পরিবারে বিষাদের ছায়ার পাশাপাশি দেখা দিয়েছে নানা দ্বন্দ্ব, অবিশ্বাস, উঠেছে পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ। নির্বাচনে ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেলের বিজয় আর ‘কুনু-আজম’ প্যানেলের পরাজয়ের কারণ সন্ধানে দুই প্যানেলের একাধিক প্রার্থী, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কর্মকর্তা, কর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের সাথে আলাপ করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তারা তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে তারা খোলামেলা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। সবমিলিয়ে ‘কুনু-রুহুল’ প্যানেলের নির্বাচনী বুদ্ধি আর কৌশলের কাছে হেরেছে ‘কুনু-আজম’ প্যানেল বলে তারা উল্লেখ করেন।
এদিকে নির্বাচন পরবর্তী সপ্তাহে চলছে বিজয়ী প্রার্থীদের অভিনন্দন, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ আর শুভেচ্ছা বিনিময়। এজন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ব্যাপকহারে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিয়ে অভিনন্দন জানানো হচ্ছে। এছাড়া ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেলের ব্রঙ্কস নির্বাচন পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে ব্রঙ্কসে বিজয় উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কেন জয়ী হলেন ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেল: অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশ সোসাইটির এবারের নির্বাচনে ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেল জয়ের নেপথ্যের উল্লেখযোগ্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে: নির্বাচন পরিচালনা কমিটির যোগ্য নেতৃত্ব, সমন্বয়, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, ভোটারকরণ, অর্থের যোগান, ব্যাপক প্রচারণা, প্রার্থী আর ভোটারের মধ্যে ব্যক্তিগত যোগাযোগ, ভোটের দিন প্যানেল ভোট নিশ্চিত করা, প্রার্থী আর ভোটারদের সাথে ‘পার্সন টু পার্সন’ যোগাযোগ ও ভোট-দোয়া প্রার্থনা প্রভৃতি। বিশেষ করে সোসাইটির দুই দুইবারের নির্বাচিত সভাপতি এম আজিজ ছাড়াও প্যানেলটির কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি আহ্বায়ক এডভোকেট জামাল আহমেদ জনি, সদস্য সচিব মফিজুর রহমান ও প্রধান উপদেষ্টা আলী ইমাম শিকদার সহ সংশ্লিস্ট সকল কর্মকর্তা আর বিভিন্ন এলাকার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কর্মকর্তা ও সদস্যরা তাদের দায়িত্ব পালনে ছিলেন একনিষ্ঠ। যা নির্বাচনের শেষ দিন পর্যন্ত অর্থাৎ ভোটের দিনও ছিলো স্পষ্ট লক্ষণীয়। ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেলের পক্ষ থেকে তাদের ব্যালট পেপারের নমুনা নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগেই সকল ভোটারের কাছে মেইল করার বিষয়টি অনেক ভোটারের সমর্থন কাড়ে বলে অনেকে জানিয়েছেন। এছাড়াও একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন দৃশ্যত: নির্বাচন তথা ভোটের দিন নির্বাচনী সকল কেন্দ্রেই ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেলের কর্মী-সমর্থকদের ছিলো ব্যাপক উপস্থিতি। ভোটার আনা-নেয়া আর ভোট নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও তারা ছিলেন সোচ্চার। নির্বাচনের আগের রাতে ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেলের প্রার্থীদের রং বে রং-এর ব্যানার-পোস্টার মধ্য রাতের আগেই ছেয়ে যায় ৫টি কেন্দ্রেই। ফলে তারা ভালো আর আকর্ষণীয় স্থান দখল করে ফেলে আগেভাগেই। এমনটির সত্যতা স্বীকার করে ‘কুনু-আজম’ প্যানেলের এক প্রার্থী ইউএনএ প্রতিনিধিকে জানান, ওরা যখন কেন্দ্রেগুওেলাতে ব্যানার-পোষ্টার লাগাচ্ছিলো আমাদের অনেক কর্মকর্তাকে তখন জ্যাকসন হাইটসে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।
‘কামাল-রুহুল’ প্যানেলের সভাপতি পদপ্রার্থী কামাল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী রুহুল আমীন সিদ্দিকীর জয়ের পেছনে প্যানেল ভোট ছাড়াও অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে ভোটার সহ কমিউনিটির সাথে তাদের ব্যক্তিগত যোগাযোগ। ভোটের দিন পর্যন্ত তাদেরকে বিরতিহীন ফোন কল করতে দেখা যায়। অপরদিকে দলীয়ভবে নির্বাচন না হলেও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারণে সহজেই আওয়ামী দলীয় ভোট পেয়েছেন কামাল আহমেদ।
কেনো পরাজিত হলেন ‘কুনু-আজম’ প্যানেল: ‘কুনু-আজম’ প্যানেল পরাজিত হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সাথে প্রার্থী, কর্মী আর সমর্থকদের সমন্বয়হীনতা, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নেয়া, তুলনামূলকভাবে কম ভোটারকরণ, আর্থিক দূর্বলতা, নির্বাচনে নিশ্চিত বিজয়ের আস্থা, ভোটের দিন প্যানেল ভোট নিশ্চিত না করা প্রভৃতি। সংশ্লিষ্টদের মতে, ‘কুনু-আজম’ প্যানেলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক আবু নাসের ও সদস্য সচিব বাবুল চৌধুরী সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ কমিউনিটির কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকলেও তাদের প্রচারণা ছিলো সভা-সমাবেশ নির্ভর। তুলনামূলকভাবে ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেলের চেয়ে প্রচারণায় ‘কুনু-আজম’ প্যানেল এগিয়ে থাকলেও থাকলেও তাদের ছিলো না ঐক্যবদ্ধ প্রচারণা। বাংলাদেশী অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা, ওজনপার্ক, ব্রুকলীন, ফুলটন, এস্টোরিয়া, ব্রঙ্কস প্রভৃতি এলাকায় পোষ্টারিং থাকলেও মূলত: সভা-সমাবেশ আর পরিচিতি সভাতেই ছিলো তাদের প্রচারণা। তাছাড়া প্রার্থী প্যানেলের পক্ষ থেকে ভোটারদের কাছে কোন আবেদন-নিবেদন বা প্রার্থী পরিচিতি তুলে ধরে বা ব্যালট পেপারের নমুনা সহ কোন চিঠি মেইলিং করা হয়নি। শুধুমাত্র জনসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক প্রার্থী রিজু মোহাম্মদের পক্ষে ভোটারদের কাছে ভোট আর দোয়া চেয়ে ফোন কল গেছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে ‘কুনু-আজম’ প্যানেলের সভাপতি পদপ্রার্থী এবং সোসাইটির বর্তমান সভাপতি আজমল হোসেন কুনুর পরাজয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে তার ব্যক্তিগত যোগাযোগ কম থাকার কথা উঠে এসেছে। তাছাড়া কুনু সহ এই প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক কাজী আজম পরাজয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র দ্বিধা-বিভক্তিকেও অনেকে চিহ্নিত করেছেন। কেননা, তারা উভয়েই যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র রাজনীতির সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। এছাড়া প্যানেল ভোট কম পড়েছে এই প্যানেলের প্রার্থীদের পক্ষে।
জনসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক প্রার্থী রিজু মোহাম্মদ ও কার্যকরী পরিষদ সদস্য পদপ্রার্থী সারোয়ার খান বাবু’র জয়ের পেছনে প্যানেল ভিত্তিক ভোট ছাড়াও কমিউনিটির সাথে তাদের ব্যক্তিগত যোগাযোগ আর পরিচিতি অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করেছে করে বলে অনেবে উল্লেক করেছেন। অপরদিকে সভাপতি পদপ্রার্থীদ্বয়ের ব্যাপারে বৃহত্তর সিলেটবাসী দ্বিধা বিভক্ত থাকলেও সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার সন্তান হিসেবে রিজু মোহাম্মদের প্রতি প্রবাসী জালালাবাদবাসীদের সফ্ট কর্ণার কাজ করেছে তার বিজয়ের পেছনে বলেও অনেকে মনে করেন।