যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতার পুত্রের ৪২ মাসের জেল
- প্রকাশের সময় : ০৮:১৪:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ মার্চ ২০১৫
- / ৮৯৭ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: এফবিআইকে ঘুষের বিনিময়ে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় এক রাজনীতিকের সন্দেহজনক কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকার গোপন তথ্য ফাঁস এবং আরেক রাজনীতিকের বিরুদ্ধে চলমান মামলা খারিজের চেষ্টার চাঞ্চল্যকর এক মামলায় বাংলাদেশের নোয়াখালীর সন্তান ও বিএনপি সমর্থক রিজভী আহমেদ ওরফে সীজার (৩৬) কে ৪২ মাসের কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। একই মামলায় অভিযুক্ত মার্কিন সিটিজেন যোহানেস থেলার (৫২)কে ৩০ মাসের দন্ড প্রদান করা হয়েছে। ৪ মার্চ নিউইয়র্কের হোয়াইট প্লেইন্সে অবস্থিত ফেডারেল কোর্টের জজ ভিনসেন্ট এল ব্রিসেটি এই রায় প্রদান করেন। সীজারকে ২০ এপ্রিল বিচার বিভাগের নির্দেশ অনুযায়ী কারাগারে রিপোর্ট করতে হবে। সীজার বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। এ মামলার মূল আসামী এফবিআইয়ের সাবেক স্পেশাল এজেন্ট রবার্ট লাস্টিকও দোষ স্বীকার করেছেন। তাকে জেল-জরিমানা জানানো হবে একই আদালতে আগামী ৩০ এপ্রিল।
কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের ডেনবারীতে বসবাসরত যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সহ-সভাপতি ও জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের পুত্র সীজার বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার সন্দেহজনক তৎপরতাসহ ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য পাবার জন্যে মাসিক ৩০ হাজার মার্কিন ডলার প্রদানের চুক্তি করেন এফবিআইয়ের স্পেশাল এজেন্ট লাস্টিকের সাথে। এ জন্যে মধ্যস্থতা করেন কানেকটিকার্ট অঙ্গরাজ্যের নিউ ফেয়ারফিল্ডের অধিবাসী থেলার এবং সীজারের কর্মস্থলে থেলারের সাথে বন্ধুত্ব হয়। মাসিক চুক্তির প্রাক্কালে এককালিন ৪০ হাজার মার্কিন ডলার প্রদান করতে হয় লাস্টিক (৫২) ও থেলারকে। এরপর লাস্টিক বিচার বিভাগীয় কম্প্যুটার থেকে বাংলাদেশের ঐ রাজনীতিকের যাবতীয় তথ্য প্রদান করেন সীজারকে। এর পর সীজার আরো একটি কাজের অনুরোধ জানান লাস্টিককে। এ জন্যে আরো অর্থ দাবি করা হয়। এ অনুরোধটি ছিল, বিএনপির একজন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে চলমান গুরুতর অপরাধের মামলা খারিজ (ডিসমিশ) করার জন্যে মার্কিন প্রভাব খাটানো। অতিরিক্ত এ দায়িত্ব পালনকালেই বিরোধ সৃষ্টি হয় এবং সীজারের প্রতি লাস্টিকের সন্দেহ বাড়ে।
লাস্টিক মনে করেন যে, চুক্তি অনুযায়ী তাদেরকে অর্থ প্রদানে টালবাহানার মাঝে একই কাজের জন্যে সীজার অন্য কারোর দ্বারস্থ হয়েছেন। ক্ষোভের এ বহি:প্রকাশ ঘটে থেলারকে লাস্টিকের টেক্সট মেসেজে। লাস্টিক উল্লেখ করেন, ‘চুক্তির ৪০ হাজার ডলার আদায়ের জন্যে আমাদের চাপ দিতে হবে। আমি ঐ কাজ সম্পাদনের একেবারেই চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছি’। জবাবে থেলার লিখেন, আমি জানি, সবকিছু আমাদের সামনে ঘটছে। খুব শীঘ্র আমাদের সেই সমুদ্র তীরবর্তি রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবারের জন্যে মিলিত হবো এবং তখনই সবকিছু হবে।
২০১২ সালের জানুয়ারী মাসে প্রেরিত অপর এক টেক্সট মেসেজে লাস্টিক থেলারের কাছে লিখেন, আমি আহমেদকে হত্যা করতে চাই। আমি সর্বশক্তি নিয়োগ করেছি, অথচ এখন পর্যন্ত কিছুই পেলাম না। আহমেদকে বলো, আমি ঐ রাজনীতিকের নাম্বার পেয়েছি এবং আমি যে কোন সময় তার সাথে যোগাযোগ করতে পারি। আহমেদের দলীয় লোকের তদ্বিরের জন্যে যে কাজ শুরু করেছিলেন সেটি নখদর্পনে আসায়, তা বিরোধী ঐ নেতাকে প্রদানের হুমকি দেন লাস্টিক। মোদ্দা কথা হচ্ছে চুক্তি অনুযায়ী সমস্ত ডলার চাই।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১২ সালের মার্চ পর্যন্ত বিচার বিভাগের গোপন তথ্য পাচারের এ ষড়যন্ত্রের ঘটনা ঘটেছে। মামলার নথিতে আরো দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের ঐ নেতার ব্যক্তিগত গোপন তথ্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে ঐ নেতার সন্দেহজনক কর্মকান্ডের তথ্য সংগ্রহ করার পর ঐ নেতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার পাশাপাশি ঐ নেতার ঘনিষ্টদের হেয় করার অভিপ্রায়ে সীজার এ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।
লাস্টিক এফবিআইয়ের স্পেশাল এজেন্ট হিসেবে হোয়াইট প্লেইন্স রেসিডেন্ট এজেন্সিতে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স স্কোয়াডে কর্মরত ছিলেন। এ কারণে বিচার বিভাগের গোপন তথ্য খতিয়ে দেখার একটি সুযোগ তার ছিল।
সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউইয়র্কের ইউএস এটর্নী প্রিত ভ্যারারার অফিস থেকে ৪ মার্চ বুধবার সন্ধ্যায় জানানো হয়, গত বছরের ১৭ অক্টোবর থেলার ও সীজার দোষ স্বীকার করেন। এর আগে লাস্টিকসহ এ দু’জনকে গ্রেফতার করা হয় ২০১৩ সালের ১৩ সালের আগস্টে।