নিউইয়র্ক ১০:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

যুক্তরাষ্ট্র আ. লীগ ও বিএনপি’র প্রতিযোগিতামূলক কর্মসূচী

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৪:০৩:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৫
  • / ৭১৩ বার পঠিত

নিউইয়র্র্ক: যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আর যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিতে রাজনৈতিক অবস্থান শোডাউনের লক্ষ্যে উভয় দলে চলছে প্রতিযোগিতামূলক রাজনৈতিক কর্মসূচী। বাংলাদেশী অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটস থেকে শুরু করে জাতিসংঘ ভবন, ষ্টেট ডিপার্টমেন্ট আর ওয়াইট হাউজ পর্যন্ত চলছে আওয়ামী লীগ-বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচী। বিশেষ করে দেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রতি সপ্তাহেই দল দু’টি ছাড়াও তাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে লাগাতারভাবে চলছে নানা কর্মসূচী। আর এসব কর্মসূচী বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেপথ্যে রয়েছেন দলের সভাপতি ড. সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান। অপরদিকে কমিটি না থাকায় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কর্মসূচী সফল করার নেপথ্যে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের অন্যতম উপদেষ্টা, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. ওসমান ফারুক এবং দলের অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। এদিকে ড. সিদ্দিকুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে বড় ধরণের বিভেদ-বিভক্তি না থাকলেও দলের ক্ষুদ্র একটি অংশের বিরোধীতা রয়েছে তিন বছর ধরে বিদ্যমান বর্তমান সিদ্দিক-সাজ্জাদ নেতৃত্বের প্রতি। অপরদিকে বিগত তিন বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র কমিটি না থাকায় দলের মধ্যকার দ্বিধা-বিভক্তি চরম আকার ধারণ করেছে। বিএনপি’র দ্বিধা-বিভক্তি দূর করে দলীয় নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখার নেপথ্যে কাজ করছেন কেন্দ্রীয় দুই নেতা ওসমান-খোকা।
জানা গেছে, কেন্দ্রীয় বিএনপি’র পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে লবিং করতে দায়িত্ব দেয়া ড. ওসমান ফারুক যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিতে ঐক্য প্রতিষ্ঠায়ও ভূমিকা রাখছেন। অপরদিকে দলের ঐক্য সুদৃঢ় করতে নেপথ্যে কাজ করছেন ক্যান্সারে আক্রান্ত চিকিৎসাধীন কেন্দ্রীয় নেতা সাদেক হোসেন খোকা। তবে নানা কারণেই ওসমান-খোকার ঐক্য প্রক্রিয়া সফল হচ্ছে না। অনুসন্ধানে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র কতিপয় নেতার ব্যক্তিগত ইগো সমস্যা আর মানসিক দদ্বের কারণে দলের মধ্যে ঐক্য হচ্ছে না। এজন্য ক্ষুব্ধ ওসমান-খোকা যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র ৪/৫জন নেতাকে দায়ী করেছেন। অপরদিকে সম্প্রতি ৫জন ইউএস কংগ্রেসম্যানের নামে ভূয়া বিবৃতির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের পক্স থেকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না নেওয়ায় ক্ষুদ্ধ দলের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী। যা যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র কোন্দলেও ভূমিকা রাখছে বলে জানা গেছে।
সূত্র মতে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির অনৈক্যের প্রেক্ষাপটে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন সময় নিজেকে জাহির করা এক নেতাকে সম্প্রতি সাদেক হোসেন খোকা তার বাসায় ‘বকুনী’ দিয়েছেন। আর কেন্দ্রীয় নেতার বকুনী খেয়ে ঐ নেতা বিক্ষুব্ধ হন এবং বিএনপি সমর্থক সাংবাদিকদের সাথে তার সখ্যতার সুযোগে সাদেক হোসেন খোকার বিরুদ্ধে স্থানীয় মিডিয়ায় ‘মনগড়া’ প্রতিবেদন প্রকাশে অপচেষ্টায় লিপ্ত হন। সর্বশেষ গত রোববার জ্যাকসন হাইটসের ডাইভাসিটি প্লাজায় শহীদ জিয়া ও খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর গায়েবানা জানাজার পর যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির ঐ নেতাকে সাদেক হোসেন খোকা সম্পর্কে প্রকাশ্যেই তীর্যক মন্তব্য করতে দেখা যায়।
যুক্তরাস্ট্র বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে দলের কমিটির প্রত্যাশায় থাকলেও কমিটি না হওয়ায় দলের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্ধ¦ ও বিভক্তি দিন দিন বাড়ছে। পাশাপাশি বাড়ছে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা। অনেকে এই প্রবাসে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির প্রতি অনাগ্রহীও হয়ে পড়ছেন। বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে একাধিকবার কেন্দ্রীয় বিএনপি সহ লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানকে অবহিত করা হলেও সহসা যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি হওয়ার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তারপরও কেন্দ্রীয় নেতা ওসমান-খোকা নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে নেপথ্যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অপরদিকে তিন বছর আগে গঠিত যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটি দলের ইতিহাসে সবচেয়ে সুসংগঠিত বলে দলীয় মূল্যায়নে অভিমত উঠে এসেছে। এজন্য সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বকেই বিবেচনা করা হচ্ছে। সূত্র জানায়. ড. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্ব দলীয় সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়ের ব্যাপক দৃষ্টি আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। যেকারণে গত বছর রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সম্বর্ধনা বাতিল হওয়ার পরও অনেকে ধারণা ব্যর্থ করে ড. সিদ্দিক-সাজ্জাদ নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও তাদের কমিটি এখনো বহাল রয়েছে। যদিও সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে ঠান্ডা লড়াই লক্ষ্য করা গেলেও দৃশ্যত উভয়ের মধ্যে ঐক্য বিরাজমান।
সূত্রমতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কমিটির ঘোষণার পর দলের একটি ক্ষুদ্র অংশ ড. সিদ্দিক-সাজ্জাদের নেতৃত্বের সমালোচনায় লিপ্ত হওয়া সহ বিরোধীতা করলেও তাদের নেতৃত্বে কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। তাদের ধারণা ছিলো নিউইয়র্কে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সম্বর্ধনা বাতিল হওয়ার দায়ে ড. সিদ্দিক-সাজ্জাদ নেতৃত্বাধীন কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। বরং আরো শক্ত অবস্থানে বহাল রয়েছেন সিদ্দিক-সাজ্জাদ নেতৃত্ব। কারণ হিসেবে জানা গেছে, ওয়াশিংটনে ৫ জানুয়ারীর সমাবেশ ছাড়াও ইতিপূর্বে বিশ্বব্যাংক ঘেরাও ও জাতিসংঘ ভবনের সামনে সমাবেশ আর মূলধারায় আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে ড. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কর্মকান্ড কেন্দ্রের প্রতি আস্থা তৈরী করেছে। এছাড়া প্রতিকুল আবহাওয়ায় তুষার পাতের মধ্যে ২৬ জানুয়ারী জাতিসংঘের সামনে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ‘গ্র্যান্ড রালী’ দলকে আরো চাঙ্গা করেছে। উল্লেখ্য, ৫ জানুয়ারী ওয়াশিংটনের সমাবেশে প্রায় এক হাজার অপরদিকে ২৬ জানুয়ারী জাতিসংঘের সামনে দেড় শতাধিক নেতা-কর্মীর উপস্থিতি ঘটে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
অপরদিকে তৎকালীন মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর নিউইয়র্কে বিতর্কিত বক্তব্যে কেন্দ্র করে অনেকেই ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চেয়েছেন। দলের ভেতরের কেউ কেউ এনিয়ে ড. সিদ্দিকের নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছেন। তাদের সাথে অন্যতম ভূমিকায় ছিলেন জাতিসংঘের বাংলাদেশ মিশনে নিযুক্ত বিদায়ী ফাস্ট সেক্রেটারী (প্রেস) মামুন-অর রশীদ বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মূল্যায়নে সবমিলিয়ে ড. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভা-সমাবেশ কর্মসূচী বিরোধী রাজনীতিকদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছে বলে জানা গেছে। ওয়াশিংটনের সফল সমাবেশের পর সাংবাদিক সম্মেলনে ড. সিদ্দিকুর রহমান যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেছেন, যারা সত্যিকারের অসুস্থ্যতা ছাড়া অসুস্থ্যতার অজুহাতে ওয়াশিংটনের স্মরণীয় সমাবেশে যোগ দেননি তারা দলের প্রতি ‘অনুগত’ নন।
সাম্প্রতিক সময়ে ওয়াশিংটনে ৫ জানুয়ারীর সমাবেশ ও ২৬ জানুয়ারী জাতিসংঘের সামনে সফল সমাবেশের ফলে ড. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্ব অনেক সুসংহত হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী পরিবারে কথা হচ্ছে। অপরদিকে যারা তার বিরোধীতা করেছেন তারা দূর্বল হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, শিকাগোতে ‘জিয়াউর রহমান ওয়ে’র ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কেন্দ্র থেকে ড. সিদ্দিকুর রহমানকে নতুন করে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত ড. সিদ্দিকুর রহমানের প্রতি আস্থারই বহি:প্রকাশ বলে তার অনুসারীরা মনে করছেন।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র সাম্প্রতিক রাজনৈতিক কর্মকান্ড পার্যালোচনায় দেখা যায় ড. সিদ্দিক-সাজ্জাদের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত দলে পরিণত হয়েছে। যা প্রবাসে বাঙালী জাতীয়তাবাদ তথা মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষদের আশ্বস্থ করেছে। অপরদিকে কমিটি না থাকা আরা নেতৃত্বের অভাবে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি কোন্দল, বিভাজন, বিভক্তির শিকারে পরিণত হয়েছে। যা প্রবাসে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী রাজনীতির আদর্শের মানুষদের হতাশ করছে। (সাপ্তাহিক পরিচয়)

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

যুক্তরাষ্ট্র আ. লীগ ও বিএনপি’র প্রতিযোগিতামূলক কর্মসূচী

প্রকাশের সময় : ০৪:০৩:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৫

নিউইয়র্র্ক: যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আর যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিতে রাজনৈতিক অবস্থান শোডাউনের লক্ষ্যে উভয় দলে চলছে প্রতিযোগিতামূলক রাজনৈতিক কর্মসূচী। বাংলাদেশী অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটস থেকে শুরু করে জাতিসংঘ ভবন, ষ্টেট ডিপার্টমেন্ট আর ওয়াইট হাউজ পর্যন্ত চলছে আওয়ামী লীগ-বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচী। বিশেষ করে দেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রতি সপ্তাহেই দল দু’টি ছাড়াও তাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে লাগাতারভাবে চলছে নানা কর্মসূচী। আর এসব কর্মসূচী বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেপথ্যে রয়েছেন দলের সভাপতি ড. সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান। অপরদিকে কমিটি না থাকায় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কর্মসূচী সফল করার নেপথ্যে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের অন্যতম উপদেষ্টা, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. ওসমান ফারুক এবং দলের অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। এদিকে ড. সিদ্দিকুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে বড় ধরণের বিভেদ-বিভক্তি না থাকলেও দলের ক্ষুদ্র একটি অংশের বিরোধীতা রয়েছে তিন বছর ধরে বিদ্যমান বর্তমান সিদ্দিক-সাজ্জাদ নেতৃত্বের প্রতি। অপরদিকে বিগত তিন বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র কমিটি না থাকায় দলের মধ্যকার দ্বিধা-বিভক্তি চরম আকার ধারণ করেছে। বিএনপি’র দ্বিধা-বিভক্তি দূর করে দলীয় নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখার নেপথ্যে কাজ করছেন কেন্দ্রীয় দুই নেতা ওসমান-খোকা।
জানা গেছে, কেন্দ্রীয় বিএনপি’র পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে লবিং করতে দায়িত্ব দেয়া ড. ওসমান ফারুক যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিতে ঐক্য প্রতিষ্ঠায়ও ভূমিকা রাখছেন। অপরদিকে দলের ঐক্য সুদৃঢ় করতে নেপথ্যে কাজ করছেন ক্যান্সারে আক্রান্ত চিকিৎসাধীন কেন্দ্রীয় নেতা সাদেক হোসেন খোকা। তবে নানা কারণেই ওসমান-খোকার ঐক্য প্রক্রিয়া সফল হচ্ছে না। অনুসন্ধানে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র কতিপয় নেতার ব্যক্তিগত ইগো সমস্যা আর মানসিক দদ্বের কারণে দলের মধ্যে ঐক্য হচ্ছে না। এজন্য ক্ষুব্ধ ওসমান-খোকা যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র ৪/৫জন নেতাকে দায়ী করেছেন। অপরদিকে সম্প্রতি ৫জন ইউএস কংগ্রেসম্যানের নামে ভূয়া বিবৃতির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের পক্স থেকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না নেওয়ায় ক্ষুদ্ধ দলের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী। যা যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র কোন্দলেও ভূমিকা রাখছে বলে জানা গেছে।
সূত্র মতে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির অনৈক্যের প্রেক্ষাপটে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন সময় নিজেকে জাহির করা এক নেতাকে সম্প্রতি সাদেক হোসেন খোকা তার বাসায় ‘বকুনী’ দিয়েছেন। আর কেন্দ্রীয় নেতার বকুনী খেয়ে ঐ নেতা বিক্ষুব্ধ হন এবং বিএনপি সমর্থক সাংবাদিকদের সাথে তার সখ্যতার সুযোগে সাদেক হোসেন খোকার বিরুদ্ধে স্থানীয় মিডিয়ায় ‘মনগড়া’ প্রতিবেদন প্রকাশে অপচেষ্টায় লিপ্ত হন। সর্বশেষ গত রোববার জ্যাকসন হাইটসের ডাইভাসিটি প্লাজায় শহীদ জিয়া ও খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর গায়েবানা জানাজার পর যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির ঐ নেতাকে সাদেক হোসেন খোকা সম্পর্কে প্রকাশ্যেই তীর্যক মন্তব্য করতে দেখা যায়।
যুক্তরাস্ট্র বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে দলের কমিটির প্রত্যাশায় থাকলেও কমিটি না হওয়ায় দলের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্ধ¦ ও বিভক্তি দিন দিন বাড়ছে। পাশাপাশি বাড়ছে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা। অনেকে এই প্রবাসে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির প্রতি অনাগ্রহীও হয়ে পড়ছেন। বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে একাধিকবার কেন্দ্রীয় বিএনপি সহ লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানকে অবহিত করা হলেও সহসা যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি হওয়ার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তারপরও কেন্দ্রীয় নেতা ওসমান-খোকা নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে নেপথ্যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অপরদিকে তিন বছর আগে গঠিত যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটি দলের ইতিহাসে সবচেয়ে সুসংগঠিত বলে দলীয় মূল্যায়নে অভিমত উঠে এসেছে। এজন্য সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বকেই বিবেচনা করা হচ্ছে। সূত্র জানায়. ড. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্ব দলীয় সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়ের ব্যাপক দৃষ্টি আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। যেকারণে গত বছর রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সম্বর্ধনা বাতিল হওয়ার পরও অনেকে ধারণা ব্যর্থ করে ড. সিদ্দিক-সাজ্জাদ নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও তাদের কমিটি এখনো বহাল রয়েছে। যদিও সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে ঠান্ডা লড়াই লক্ষ্য করা গেলেও দৃশ্যত উভয়ের মধ্যে ঐক্য বিরাজমান।
সূত্রমতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কমিটির ঘোষণার পর দলের একটি ক্ষুদ্র অংশ ড. সিদ্দিক-সাজ্জাদের নেতৃত্বের সমালোচনায় লিপ্ত হওয়া সহ বিরোধীতা করলেও তাদের নেতৃত্বে কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। তাদের ধারণা ছিলো নিউইয়র্কে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সম্বর্ধনা বাতিল হওয়ার দায়ে ড. সিদ্দিক-সাজ্জাদ নেতৃত্বাধীন কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। বরং আরো শক্ত অবস্থানে বহাল রয়েছেন সিদ্দিক-সাজ্জাদ নেতৃত্ব। কারণ হিসেবে জানা গেছে, ওয়াশিংটনে ৫ জানুয়ারীর সমাবেশ ছাড়াও ইতিপূর্বে বিশ্বব্যাংক ঘেরাও ও জাতিসংঘ ভবনের সামনে সমাবেশ আর মূলধারায় আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে ড. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কর্মকান্ড কেন্দ্রের প্রতি আস্থা তৈরী করেছে। এছাড়া প্রতিকুল আবহাওয়ায় তুষার পাতের মধ্যে ২৬ জানুয়ারী জাতিসংঘের সামনে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ‘গ্র্যান্ড রালী’ দলকে আরো চাঙ্গা করেছে। উল্লেখ্য, ৫ জানুয়ারী ওয়াশিংটনের সমাবেশে প্রায় এক হাজার অপরদিকে ২৬ জানুয়ারী জাতিসংঘের সামনে দেড় শতাধিক নেতা-কর্মীর উপস্থিতি ঘটে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
অপরদিকে তৎকালীন মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর নিউইয়র্কে বিতর্কিত বক্তব্যে কেন্দ্র করে অনেকেই ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চেয়েছেন। দলের ভেতরের কেউ কেউ এনিয়ে ড. সিদ্দিকের নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছেন। তাদের সাথে অন্যতম ভূমিকায় ছিলেন জাতিসংঘের বাংলাদেশ মিশনে নিযুক্ত বিদায়ী ফাস্ট সেক্রেটারী (প্রেস) মামুন-অর রশীদ বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মূল্যায়নে সবমিলিয়ে ড. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভা-সমাবেশ কর্মসূচী বিরোধী রাজনীতিকদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছে বলে জানা গেছে। ওয়াশিংটনের সফল সমাবেশের পর সাংবাদিক সম্মেলনে ড. সিদ্দিকুর রহমান যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেছেন, যারা সত্যিকারের অসুস্থ্যতা ছাড়া অসুস্থ্যতার অজুহাতে ওয়াশিংটনের স্মরণীয় সমাবেশে যোগ দেননি তারা দলের প্রতি ‘অনুগত’ নন।
সাম্প্রতিক সময়ে ওয়াশিংটনে ৫ জানুয়ারীর সমাবেশ ও ২৬ জানুয়ারী জাতিসংঘের সামনে সফল সমাবেশের ফলে ড. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্ব অনেক সুসংহত হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী পরিবারে কথা হচ্ছে। অপরদিকে যারা তার বিরোধীতা করেছেন তারা দূর্বল হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, শিকাগোতে ‘জিয়াউর রহমান ওয়ে’র ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কেন্দ্র থেকে ড. সিদ্দিকুর রহমানকে নতুন করে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত ড. সিদ্দিকুর রহমানের প্রতি আস্থারই বহি:প্রকাশ বলে তার অনুসারীরা মনে করছেন।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র সাম্প্রতিক রাজনৈতিক কর্মকান্ড পার্যালোচনায় দেখা যায় ড. সিদ্দিক-সাজ্জাদের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত দলে পরিণত হয়েছে। যা প্রবাসে বাঙালী জাতীয়তাবাদ তথা মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষদের আশ্বস্থ করেছে। অপরদিকে কমিটি না থাকা আরা নেতৃত্বের অভাবে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি কোন্দল, বিভাজন, বিভক্তির শিকারে পরিণত হয়েছে। যা প্রবাসে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী রাজনীতির আদর্শের মানুষদের হতাশ করছে। (সাপ্তাহিক পরিচয়)