নিউইয়র্ক ০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

‘যারা মুজিবনগর দিবস পালন করে না তাদের আওয়ামী লীগ করার অধিকার নেই’

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৭:১৫:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ এপ্রিল ২০১৭
  • / ৫৮৪ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, ২১ ফেব্রুয়ারী, সাতই মার্চ, ১৬ মার্চ, ১৭ এপ্রিল, ১৫ আগষ্ট, ১৬ ডিসেম্বর প্রভৃতি দিন ও দিবস আমাদের জাতীয় জীবনের অবিচ্ছেদ্ধ অংশ। আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসের অংশ। যারা মুজিবনগর দিবস পালন করে না তাদের আওয়ামী লীগ করার অধিকার নেই।
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উদ্যোগে গত ১৭ এপ্রিল সোমবার সন্ধ্যায় সিটির জ্যাকসন হাইটসস্থ নিউ মেজবান পার্টি হলে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মান্নান এমপি। এছাড়া বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের হুইপ মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন ও হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট আবু জাহির এমপি।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত এবং ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ জাতীয় চার নেতার বিদেহী আতœার শান্তি কামনায় বিশেষ দোয়া পরিচালনা করেন ইমাম কাজী কাইয়্যুম এবং গীতা থেকে পাঠ করেন সবিতা দাস। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও জাতীয় চার নেতা সহ স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের বিদেহী আতœার শান্তি কামনায় এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদের পরিচালনায় আলোচনা পর্বের শুরুতেই বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি নুরুজ্জামান সর্দার। সভায় সৃষ্ট অপ্রীতিকর ঘটনা এবং সময় স্বল্পতার কারণে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সভা সংক্ষিপ্ত করে সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক (প্রথম) ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরীর বক্তব্যের পর যুগ্ম সম্পাদক আইরীন পারভীন ও সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদকে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেয়া হয়। এরপর বক্তব্য রাখেন এডভোকেট আবু জাহির এমপি ও আব্দুল মান্নান এমপি। খবর ইউএনএ’র।
সভায় আব্দুল মান্নান এমপি তার বক্তব্যে ভারত উপমহাদের শাসনের ইতিহাস সহ মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠাসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন-অগ্রগতির কর্মকান্ড তুলে ধরে বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারী, সাতই মার্চ, ১৬ মার্চ, ১৭ এপ্রিল, ১৫ আগষ্ট, ১৬ ডিসেম্বর আমাদের জাতীয় জীবনের অবিচ্ছেদ্ধ অংশ। যারা এসব দিবস পালন করে না তাদের আওয়ামী লীগ করার অধিকার নেই। মুজিবনগর দিবস ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অসম্পূর্ণ। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মতো বড় দলে ভুল বুঝাবুঝি, মতবিরোধ থাকবে, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু সাংগঠনিক নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। ঐক্যের বিকল্প নেই। তিনি বলেন, যারা কোন্দল করে, গ্রুপিংয়ের মাধ্যমে বিশেষ মহলের পারপাস সার্ভ করতে চায়, তাদের দলে থাকার অধিকার নেই।
আব্দুল মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় আমাদের গর্বের ধন। তিনিই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ পরিচালনা করেন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ পরিচালিত হয় দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক আর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ পরিচালিত হয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা আর সজিব ওয়াজেদ জয়ের নির্দেশে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কারো কোন কথা বা আপত্তি থাকলে তা সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও জয়কে পারেন। জোর করে বা মাসল খাটিয়ে আওয়ামী লীগ করার সুযোগ নেই।
আবু জাহির এমপি তার বক্তব্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে মুজিবনগর সরকার ও মুজিবনগর দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ সরকারের প্রথম দিন হিসেবে ১৭ এপ্রিল একটি ঐতিহাসিক দিন। আর তাই মুজিবনগর দিবস পালন করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। তিনি বলেন, হবিগঞ্জেই প্রথম অস্থায়ী সরকার গঠনের কথা ছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে সেই সরকার কুষ্টিয়ার মেহেরপুরে গঠিত হয়। তিনি বলেন, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস পালন করলে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস পালন করতে হবে। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, জাতীয় চার নেতা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা উল্লেখ করে বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের আমলেই সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ কিবরিয়া হত্যার বিচার সহ দেশের সকল চাঞ্চল্যকর হত্যারও বিচার হবে। তিনি সকল দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে দলীয় নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
নিজাম চৌধুরী বলেন, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের সমাবেশ যারা বানচালের ষড়যন্ত্র করেছে, তারা কখনোই আওয়ামী লীগের লোক নয়, ওরা খোন্দকার মোশতাকের দোসর, জামায়াত-শিবিরের এজেন্ট। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে কোন কর্মী নেই, সবাই নেতা। তাই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কোন গঠনতন্ত্র নেই। কারণ, এর গঠনতন্ত্র হচ্ছে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ। আমরা ১৯৮৯ সালের ১৭মে থেকেই তার নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করছি। এ নিয়ে বাদানুবাদের সুযোগ নেই। তিনি বলেন, আমরাও শোকজপ্রাপ্ত ছিলাম, কিন্তু চর দখলের মতো দলের সভা দখল করতে আসিনি। সজিব ওয়াজেদ জয়ের নির্দেশেই সাজ্জাদুর রহসান সাজ্জাদ বহিস্কার হয়েছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী পরিচালিত হচ্ছে সরাসরি সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং সজীব ওয়াজেদ জয়ের দিক-নির্দেশনায়। এটি যারা মানতে পারবে না, তাদের আওয়ামী লীগে থাকার অধিকার নেই।
নিজাম চৌধুরী বলেন, ড. সিদ্দিকুর রহমান জননেত্রী শেখ হাসিনা মনোনীত সভাপতি। এটা আমরা সবাই মানি। তাকে (ড. সিদ্দিক) উঠানো বা নামানোর কিছুই নেই। সজিব ওয়াজেদ জয় যতদিন চাইবেন ড. সিদ্দিক ততদিন সভাপতি থাকবেন, তার নেতৃত্বেই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ পরিচালিত হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ড. সিদ্দিকুর রহমানের উপর খুশী বলেই দলের বিগত জাতীয় কাউন্সিলে, জাতীয় শোক দিবসের সভায় তাকে (ড. সিদ্দিক) মঞ্চে ডেকে বক্তব্য রাখার সুযোগ করে দিয়ে সম্মানিত করেছেন। তার মতো এই সম্মান যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগেরও।
তিনি বলেন, যারা মুজিবনগর দিবসের সভায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য তিনি তদন্ত কমিটি গঠনের দাবী জানান। সাজ্জাদের নেতৃত্বে যারা মাস্তানী করেছেন আজকের দায় তাদেরকেই নিতে হবে।
ডা. সিদ্দিকুর রহমান ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করে মুজিবনগর দিবস পালন করা এবং আলোচনা সভা সফল করার জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ঐক্যবদ্ধ আছে, ভবিষ্যতেও ঐক্যবদ্ধ থাকবে।
সভায় উল্লেখযোগ্য দলীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আকতার হোসেন, সৈয়দ বসারত আলী, মাহবুবুর রহমান, লুৎফুল করিম, সামসুদ্দীন আজাদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন দেওয়ান ও আব্দুল হাসিব মামুন, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক এমদাদ চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কৃষি সম্পাদক আশরাফুজ্জামান, শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক ফরিদ আলম, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক মিসবাহ আহমেদ, সহ প্রচার সম্পাদক তৈয়বুর রহমান টনি, যুক্তরাষ্ট্র মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী মমতাজ শাহানাজ, আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য শাহানারা রহমান, ডেনী চৌধুরী, খোরশেদ খন্দকার প্রমুখ সহ যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ছাড়াও অন্য সকল সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, দলীয় অভ্যন্তরীন কোন্দল আর বিভক্তির জের হিসেবে ‘ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস’ পালন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সমাবেশে দু’দফা চরম হট্টগোল আর হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। প্রথম দফায় দলের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদের নেতৃত্বে ক্ষুব্ধ একদল নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের প্রতিবাদ এবং দলের দুই এমপি’র উপস্থিতিতে দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের বিবদমান দুই গ্রুপের বাদ-প্রতিবাদের ঘটনায় এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে পুলিশী হস্তক্ষেপের ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে এবং প্রথম দফায় মুজিবনগর দিবসের আলোচনা সভা বাতিল হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ব নির্ধারিত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখিত ঘটনার জন্য দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়ের নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কৃত সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ সহ সংগঠনের দফতর সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহিম বাদশাহ, আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট শাহ বখতিয়ার, জনসংযোগ সম্পাদক কাজী কয়েস প্রমুখকে ‘জামায়াত-শিবির’ আর ‘খোন্দকার মুশতাকের দোসর’ হিসেবে অভিহিত করে ‘অপ্রীতিকর ঘটনা’র জন্য দায়ী এবং তদন্ত কমিটি গঠন করে অবিলম্বে তাদেরকে বহিষ্কারের দাবি করা হয়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

‘যারা মুজিবনগর দিবস পালন করে না তাদের আওয়ামী লীগ করার অধিকার নেই’

প্রকাশের সময় : ০৭:১৫:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ এপ্রিল ২০১৭

নিউইয়র্ক: ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, ২১ ফেব্রুয়ারী, সাতই মার্চ, ১৬ মার্চ, ১৭ এপ্রিল, ১৫ আগষ্ট, ১৬ ডিসেম্বর প্রভৃতি দিন ও দিবস আমাদের জাতীয় জীবনের অবিচ্ছেদ্ধ অংশ। আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসের অংশ। যারা মুজিবনগর দিবস পালন করে না তাদের আওয়ামী লীগ করার অধিকার নেই।
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উদ্যোগে গত ১৭ এপ্রিল সোমবার সন্ধ্যায় সিটির জ্যাকসন হাইটসস্থ নিউ মেজবান পার্টি হলে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মান্নান এমপি। এছাড়া বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের হুইপ মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন ও হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট আবু জাহির এমপি।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত এবং ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ জাতীয় চার নেতার বিদেহী আতœার শান্তি কামনায় বিশেষ দোয়া পরিচালনা করেন ইমাম কাজী কাইয়্যুম এবং গীতা থেকে পাঠ করেন সবিতা দাস। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও জাতীয় চার নেতা সহ স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের বিদেহী আতœার শান্তি কামনায় এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদের পরিচালনায় আলোচনা পর্বের শুরুতেই বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি নুরুজ্জামান সর্দার। সভায় সৃষ্ট অপ্রীতিকর ঘটনা এবং সময় স্বল্পতার কারণে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সভা সংক্ষিপ্ত করে সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক (প্রথম) ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরীর বক্তব্যের পর যুগ্ম সম্পাদক আইরীন পারভীন ও সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদকে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেয়া হয়। এরপর বক্তব্য রাখেন এডভোকেট আবু জাহির এমপি ও আব্দুল মান্নান এমপি। খবর ইউএনএ’র।
সভায় আব্দুল মান্নান এমপি তার বক্তব্যে ভারত উপমহাদের শাসনের ইতিহাস সহ মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠাসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন-অগ্রগতির কর্মকান্ড তুলে ধরে বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারী, সাতই মার্চ, ১৬ মার্চ, ১৭ এপ্রিল, ১৫ আগষ্ট, ১৬ ডিসেম্বর আমাদের জাতীয় জীবনের অবিচ্ছেদ্ধ অংশ। যারা এসব দিবস পালন করে না তাদের আওয়ামী লীগ করার অধিকার নেই। মুজিবনগর দিবস ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অসম্পূর্ণ। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মতো বড় দলে ভুল বুঝাবুঝি, মতবিরোধ থাকবে, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু সাংগঠনিক নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। ঐক্যের বিকল্প নেই। তিনি বলেন, যারা কোন্দল করে, গ্রুপিংয়ের মাধ্যমে বিশেষ মহলের পারপাস সার্ভ করতে চায়, তাদের দলে থাকার অধিকার নেই।
আব্দুল মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় আমাদের গর্বের ধন। তিনিই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ পরিচালনা করেন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ পরিচালিত হয় দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক আর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ পরিচালিত হয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা আর সজিব ওয়াজেদ জয়ের নির্দেশে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কারো কোন কথা বা আপত্তি থাকলে তা সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও জয়কে পারেন। জোর করে বা মাসল খাটিয়ে আওয়ামী লীগ করার সুযোগ নেই।
আবু জাহির এমপি তার বক্তব্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে মুজিবনগর সরকার ও মুজিবনগর দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ সরকারের প্রথম দিন হিসেবে ১৭ এপ্রিল একটি ঐতিহাসিক দিন। আর তাই মুজিবনগর দিবস পালন করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। তিনি বলেন, হবিগঞ্জেই প্রথম অস্থায়ী সরকার গঠনের কথা ছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে সেই সরকার কুষ্টিয়ার মেহেরপুরে গঠিত হয়। তিনি বলেন, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস পালন করলে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস পালন করতে হবে। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, জাতীয় চার নেতা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা উল্লেখ করে বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের আমলেই সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ কিবরিয়া হত্যার বিচার সহ দেশের সকল চাঞ্চল্যকর হত্যারও বিচার হবে। তিনি সকল দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে দলীয় নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
নিজাম চৌধুরী বলেন, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের সমাবেশ যারা বানচালের ষড়যন্ত্র করেছে, তারা কখনোই আওয়ামী লীগের লোক নয়, ওরা খোন্দকার মোশতাকের দোসর, জামায়াত-শিবিরের এজেন্ট। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে কোন কর্মী নেই, সবাই নেতা। তাই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কোন গঠনতন্ত্র নেই। কারণ, এর গঠনতন্ত্র হচ্ছে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ। আমরা ১৯৮৯ সালের ১৭মে থেকেই তার নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করছি। এ নিয়ে বাদানুবাদের সুযোগ নেই। তিনি বলেন, আমরাও শোকজপ্রাপ্ত ছিলাম, কিন্তু চর দখলের মতো দলের সভা দখল করতে আসিনি। সজিব ওয়াজেদ জয়ের নির্দেশেই সাজ্জাদুর রহসান সাজ্জাদ বহিস্কার হয়েছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী পরিচালিত হচ্ছে সরাসরি সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং সজীব ওয়াজেদ জয়ের দিক-নির্দেশনায়। এটি যারা মানতে পারবে না, তাদের আওয়ামী লীগে থাকার অধিকার নেই।
নিজাম চৌধুরী বলেন, ড. সিদ্দিকুর রহমান জননেত্রী শেখ হাসিনা মনোনীত সভাপতি। এটা আমরা সবাই মানি। তাকে (ড. সিদ্দিক) উঠানো বা নামানোর কিছুই নেই। সজিব ওয়াজেদ জয় যতদিন চাইবেন ড. সিদ্দিক ততদিন সভাপতি থাকবেন, তার নেতৃত্বেই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ পরিচালিত হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ড. সিদ্দিকুর রহমানের উপর খুশী বলেই দলের বিগত জাতীয় কাউন্সিলে, জাতীয় শোক দিবসের সভায় তাকে (ড. সিদ্দিক) মঞ্চে ডেকে বক্তব্য রাখার সুযোগ করে দিয়ে সম্মানিত করেছেন। তার মতো এই সম্মান যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগেরও।
তিনি বলেন, যারা মুজিবনগর দিবসের সভায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য তিনি তদন্ত কমিটি গঠনের দাবী জানান। সাজ্জাদের নেতৃত্বে যারা মাস্তানী করেছেন আজকের দায় তাদেরকেই নিতে হবে।
ডা. সিদ্দিকুর রহমান ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করে মুজিবনগর দিবস পালন করা এবং আলোচনা সভা সফল করার জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ঐক্যবদ্ধ আছে, ভবিষ্যতেও ঐক্যবদ্ধ থাকবে।
সভায় উল্লেখযোগ্য দলীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আকতার হোসেন, সৈয়দ বসারত আলী, মাহবুবুর রহমান, লুৎফুল করিম, সামসুদ্দীন আজাদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন দেওয়ান ও আব্দুল হাসিব মামুন, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক এমদাদ চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কৃষি সম্পাদক আশরাফুজ্জামান, শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক ফরিদ আলম, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক মিসবাহ আহমেদ, সহ প্রচার সম্পাদক তৈয়বুর রহমান টনি, যুক্তরাষ্ট্র মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী মমতাজ শাহানাজ, আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য শাহানারা রহমান, ডেনী চৌধুরী, খোরশেদ খন্দকার প্রমুখ সহ যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ছাড়াও অন্য সকল সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, দলীয় অভ্যন্তরীন কোন্দল আর বিভক্তির জের হিসেবে ‘ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস’ পালন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সমাবেশে দু’দফা চরম হট্টগোল আর হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। প্রথম দফায় দলের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদের নেতৃত্বে ক্ষুব্ধ একদল নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের প্রতিবাদ এবং দলের দুই এমপি’র উপস্থিতিতে দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের বিবদমান দুই গ্রুপের বাদ-প্রতিবাদের ঘটনায় এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে পুলিশী হস্তক্ষেপের ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে এবং প্রথম দফায় মুজিবনগর দিবসের আলোচনা সভা বাতিল হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ব নির্ধারিত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখিত ঘটনার জন্য দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়ের নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কৃত সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ সহ সংগঠনের দফতর সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহিম বাদশাহ, আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট শাহ বখতিয়ার, জনসংযোগ সম্পাদক কাজী কয়েস প্রমুখকে ‘জামায়াত-শিবির’ আর ‘খোন্দকার মুশতাকের দোসর’ হিসেবে অভিহিত করে ‘অপ্রীতিকর ঘটনা’র জন্য দায়ী এবং তদন্ত কমিটি গঠন করে অবিলম্বে তাদেরকে বহিষ্কারের দাবি করা হয়।