যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় নিউইয়র্কসহ উত্তর আমেরিকায় পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত

- প্রকাশের সময় : ০৭:৫৮:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬
- / ১০০০ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: বিপুল উৎসাহে যথাযোগ্য মর্যাদা আর ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে নিউইয়র্কসহ উত্তর আমেরিকায় গত ১২ সেপ্টেম্বর সোমবার পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে। মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশে হযরত ইব্রাহীম (আ:) এর ত্যাগের মহিমায় চির ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আযহা। এদিন চমৎকার আবহাওয়ায় নিউইয়র্কসহ উত্তর আমেরিকার একাধিক খোলা মাঠ, মসজিদ আর কমিউনিটি সেন্টারে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করা হয়। ঈদের জামাত শেষে অনুষ্ঠিত বিশেষ মুনাজাতে সমগ্র মুসলিম উম্মাসহ দেশ-জাতির মঙ্গল ও সমৃদ্ধি এবং দেশে দেশে নিপীড়িত-নির্যাতিত মুসলমানদের রক্ষায় মহান আল্লাহতায়ালার রহমত কামনা করা হয়। এসময় ‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লাইলাহা ইল্লাহু, আল্লাহ আকবর, আল্লাহু আকবর, ওয়া লিল্লাহিল হামদ’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে মসজিদ আর ঈদ গাহ প্রাঙ্গণ। এদিকে ঈদ উপলক্ষ্যে সিটির পাবলিক স্কুলগুলোতে ছুটি থাকায় মুসলিম শিক্ষার্থীরা পরিবারের সাথে আনন্দে ঈদ উদযাপন করেছে। উল্লেখ্য, গত বছর থেকে নিউইয়র্ক সিটিতে দুই ঈদে পাবলিক স্কুলগুলোতে ছুটি পালিত হচ্ছে।
এদিকে প্রতি বছরের মতো এবারও পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ফাস্ট লেডী মিসেল ওবামা মুসলিম কমিউনিটিকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
নিউইয়র্ক সিটিতে বাংলাদেশীদের দ্বারা পরিচালিত বৃহত্তম মসজিদগুলোর অন্যতম কুইন্স বরোর জ্যামাইকায় অবস্থিত জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার (জেএমসি)-এর উদ্যোগে স্থানীয় জ্যামাইকা হাই স্কুল মাঠে সকাল পৌনে ৯টায় উত্তর আমেরিকার সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে শিশু-কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ সহ সর্বস্তরের ১০/১২ হাজার মুসলিম নর-নারী একত্রে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন বলে অনেকেই অভিমত প্রকাশ করেছেন। এদিকে নিউইয়র্ক সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাজিও ঈদের অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং ঈদের জামাতের আগে উপস্থিত হাজার হাজার মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। এই জামাতে ইমামতি করেন হাফেজ রফিকুল ইসলাম আর ঈদের খুৎবা পাঠ করেন ইমাম শামসি আলী। জেএমসি আয়োজিত ঈদুল আজহার নামাজের আগে জেএমসি’র কর্মকর্তা ও মূলধারার রাজনীতিকরা উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। খবর ইউএনএ’র।
জেএমসি’র বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেনের স্বাগত বক্তব্য ও অনুষ্ঠান পরিচালনায় শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন নতুন প্রজন্মের আসলাম। সকাল সোয়া ৮টার দিকে মেয়র বিল ডি ব্লাজিও ঈদের মাঠে এসে উপস্থিত হলে জেএমসি’র কর্মকর্তা ছাড়াও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ তাকে স্বাগত জানান এবং ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তিনি ৮টা ৩৫ মিনিটে মঞ্চে উঠেন এবং ৮টা ৩৭ মিনিটে তার বক্তব্য শুরু এবং শেষ করেন ৮টা ৪৩ মিনিটে।
মেয়র ব্লাজিওকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার পর মেয়র তার বক্তব্যের শুরুতেই ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে উপস্থিত বাংলাদেশী মুসিলিম কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ, জেএমসি’র কর্মকর্তা, সিটির অফিসিয়াল সহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মাত্র ছয় মিনিট বক্তব্যে মেয়র ব্লাজিও।
এর আগে উপস্থিত মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্রিক ৪০-এর অ্যাসেম্বলীম্যান রন কিম, অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্রিক ২৯-এর অ্যালেসিয়া হ্যান্ডম্যান, অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্রিক ২৪-এর অ্যাসেম্বলীম্যান ডেভিট ওয়েপ্রীন, সিটি কাউন্সিল ডিষ্ট্রিক ৮-এর মেলিসা মার্ক-ভিভেরিত, কাউন্সিল ডিষ্ট্রিক্ট ২৭-এর কাউন্সিলম্যান ড্যানিক মিলার, স্থানীয় (ডিষ্ট্রিক ২৯) কাউন্সিলম্যান ররি ল্যান্সম্যান, জেএমসি’র বিদায়ী সভাপতি ডা. ওয়াহিদুর রহমান, নবনির্বাচিত সভাপতি খাজা মিজান হাসান, নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মনজুর আহমেদ চৌধুরী।
নিউইয়র্ক সিটির সাবেক মেয়র প্রার্থী ও সিটির সাবেক কম্পট্রোলার জন লু’ও ঈদের মাঠে যোগ দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে নিযুক্ত কনসাল জেনারেল শামীম আহসান, সাবেক এমপি এম এম শাহীন এই ঈদের জামাতে নামাজ আদায় করেন।
এদিকে কানাডা ও ওয়াশিংটন ডিসিসহ যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সী, কানেকটিকাট, ম্যারিল্যান্ড, পেনসেলভেনিয়া, ভার্জেনিয়া, ওয়াহিও, ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোরিনা, সাউথ ক্যারোলিনা, জর্জিয়া, মিশিগান, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, প্রভৃতি অঙ্গরাজ্যে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এসব অঙ্গরাজ্যে বসবাসকারী বাংলাদেশীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এলাকার মসজিদ, কমিউনিটি সেন্টার ও খোলা মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করেন।
প্রতিটি ঈদের জামাত শেষে নবীন-প্রবীণ, ছোট-বড় সকলকে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ও কোলাকুলি করতে দেখা যায়। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদ পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে সর্বত্রই নেয়া হয় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সেই সাথে সিটি প্রশাসনেরও বিশেষ নিরাপত্তা লক্ষ্য করা যায়। ঈদের নামাজ আদায়ের স্থানগুলোর আশপাশের রাস্তায় ফ্রি গাড়ী পার্কিং এর ব্যবস্থা থাকায় দূর দূরান্ত থেকে শত শত ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা সপরিবারে ঈদের নামাজে শরীক হন। রং বেরং এর বাহারী পোশাক গায়ে নামাজিদের একত্রে ঈদের নামাজ আদায় ভীন দেশীদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে। সেই সাথে ঈদের মাঠে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ। ঈদের দিনটি উইক ডে সোমবার থাকার পরও ঈদের নামাজের জায়াতগুলোতে বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসলিম নর-নারীকে যোগ দিতে দেখা যায়। নামাজ আদায় করার পর অনেকেই কর্মস্থলে যোগ দেন। এজন্য কেউ কেউ বিলম্বে কর্মস্থলে পৌছান এবং এজন্য আগেভাগেই অংশিক ছুটি নিয়ে রাখেন। আর যারা ঈদের দিন ছুটি ভোগ কতে পেরেছেন তারা স্বপরিবারে আবার অনেকে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঘনিষ্টজনদের বাসা-বাড়ীতে গিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এছাড়া প্রবাসীরা ফোনে বাংলাদেশে ফোন করে স্বজনদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। শুভেচ্ছা বিনিময় হয় ফেসবুক আর টেক্স ম্যাসেজের মাধ্যমে।
নিউইয়র্কের উল্লেখযোগ্য ঈদের জামাতগুলোর মধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল জ্যাকসন হাইটসের ৭৩ ষ্ট্রীট ও ব্রডওয়ের কর্ণারে ডাইভারসিটি প্লাজায় খোলা রাস্তার উপর ঈদুল আজহার একাধিক জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ইষ্ট এলমহার্স্ট জামে মসজিদ এন্ড মুসলিম সেন্টারের উদ্যোগে স্থানীয় পিএস ২৭ স্কুলের প্লে গ্রাউন্ডসহ কুইন্সের জ্যামাইকার হাজী ক্যাম্প মসজিদ, দারুস সালাম মসজিদ, হিলসাইড ইসলামিক সেন্টার, ফুলতলী ইসলামিক সেন্টার এন্ড মসজিদ, জ্যাকসন হাইটসের জ্যাকসন হাইটস ইসলামিক সেন্টার, মসজিদ আবু হুরায়রা, মোহাম্মদী সেন্টার, ওজনপার্কের আল আমান জামে মসজিদ, দারুস সুন্নাহ মসজিদ, আল ফোরকান মসজিদ, ব্রুকলীনের বাংলাদেশ মসুলিম সেন্টার, বায়তুল জান্নাত জামে মসজিদ, ম্যানহাটানের মদিনা মসজিদ, আসসাফা মসজিদ, আমেরিকান মুসলিম সেন্টার, এস্টোরিয়ার আল আমীন মসজিদ, গাউছিয়া মসজিদ, ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টার জামে মসজিদ, বাংলাবাজার জামে মসজিদ, নর্থ ব্রঙ্কস জামে মসজিদ প্রভৃতি মসজিদের উদ্যোগে খোলা মাঠে বা মসজিদ ভবনে ঈদুল আজহার একাধিক জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
ঈদের নামাজ আদায় করেই অনেকে মুসল্লী ছুটে যান কোরবানী দিতে। এদিকে গ্রোসারীর মাধ্যমে অনেকেই কোরবানীর অর্ডার দেয়ায় ঈদের দিন কোরবানীর মাংস পেতে হিমশিম খেতে হয়। অধিকাংশ কোরবানীদাতাদের মধ্যে যারা খাসী কোরবানী দিয়েছেন তাদের অনেকেই সেই মাংস পেয়েছেন। আর যারা গরু কোরবানী দিয়েছেন তারা গরুর মাংস পেয়েছেন ঈদের পর দিন অথবা তারও পরদিন। কোরবানীর মাংস হাতে পাওয়ার পর সেই মাংস আত্বীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের বাসায় বাসায় গিয়ে বিতরণ করা হয়।