ব্লগার অভিজিৎ হত্যার প্রতিবাদে নিউইয়র্কে প্রতিবাদ : জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী
- প্রকাশের সময় : ০৫:৪৮:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৫
- / ৭৯০ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্লগার অভিজিৎ রায়কে ঢাকায় নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে মুক্তমনা প্রবাসী বাংলাদেশীরা নিউইয়র্কে প্রতিবাদ সমাবেশ ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেছেন। প্রচন্ড শীতের মধ্যে গত ২৬ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর (স্থানীয় সময়) জ্যাকসন হাইটসের ৭৩ স্ট্রীটে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে নিউইয়র্কের লেখক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ প্রবাসী বাংলাদেশীরা অংশ নেন।
সমাবেশে বক্তারা অভিজিৎ রায় হত্যাকা-ের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং অভিজিৎ হত্যার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন। বক্তারা বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী চক্র একাত্তরের মতোই বাংলাদেশের তরুণ মেধাবীদের হত্যা করছে। বক্তারা দেশের জঙ্গি মৌলবাদী চক্রকে প্রতিহত করতে বাংলাদেশের লেখক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে একই প্ল্যাটফরমে শক্ত অবস্থানে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়। সমাবেশের শুরুতে প্রদীপ জ্বেলে অভিজিৎ রায় হত্যার প্রতিবাদ জানান প্রবাসী বাংলাদেশীরা।
সমাবেশে অন্যান্যের বক্তব্য রাখেন প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ, সাংবাদিক শরীফ সাহাবদ্দীন, মুজাহিদ আনসারী প্রমুখ। সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা কবীর আনোয়ার, সিনিয়র সাংবাদিক-লেখক নিনি ওয়াহেদ, টিভি অভিনেত্রী লুৎফুন নাহার লতা, সাংবাদিক আকবর হায়দার কিরণ, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট মিনহাজ আহমেদ সাম্মু, যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ডের সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী, সাংস্কৃতিক কর্মী গোপাল স্যানাল, তানভীর রাব্বানী, যুব নেতা শিবলী সাদেক, টি মোল্লা, কায়কোবাদ খান, নূরুজ্জামান সরদার, সুবল দেবনাথ, দুরুদ মিয়া রণেল, শাকিল মিয়া প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন মিথুন আহমেদ।
সমাবেশে সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, আমাদের আর আপোসের রাজনীতি করলে চলবে না। আমাদের স্পষ্টভাবে অঙ্গীকার করতে হবে এই বর্বরদের সঙ্গে আমাদের কোনো রাজনীতি নয়। বর্বরদের কোনো সমাজ নয়, সখ্যতা নয় এবং তাদের বয়কট করতে হবে। তিনি বলেন, এর আগে সন্ত্রাসীরা ব্লগার রাজীব এবং প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ূন আজাদকে হত্যা করেছে। তারা প্রখ্যাত কবি শামসুর রাহমানকে আঘাতের চেষ্টা করেছিল।
শরীফ সাহাবুদ্দীন বলেন, একে একে দেশের প্রগতিশীল মানুষদের উপর হামলা হচ্ছে। এভাবে চলতে পারে না।
মুজাহিদ আনসারী বলেন, অভিজিৎ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। এখন যুক্তরাষ্ট্র কি বলবে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দায়িত্ব কি? যুক্তরাষ্ট্র কি এখনো জঙ্গীবাদদের সমর্থন দেবে?
উল্লেখ্য, গত ২৬ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত নয়টার দিকে অমর একুশে বইমেলার সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন অভিজিৎ রায় ও তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা। এরপর রাত সোয়া ১০টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক অভিজিৎকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনায় মারাত্মক আহত রাফিদা আহমেদ বন্যাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হরয়েছে। তার হাতের আঙ্গুল কাটা পড়েছে।
আরো উল্লেখ্য, ১১ বছর আগে ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী বইমেলা থেকে ফেরার পথে টিএসসি সংলগ্ন পরমানু শক্তি কমিশনের সামনে হামলার শিকার হয়েছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবীদ ও লেখক ড. হুমায়ুন আজাদ। সেইসময়ও তাকে চাপাতি দিয়ে কোপানো হয়েছিলো। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে তার উপর হামলায় জঙ্গি সম্পৃক্ততার কথা উঠে এসেছিল। ১১ বছর পর আবার প্রায় একই জায়গায় ব্লগার অভিজিৎ রায়ের ওপরও একই কায়দায় জঙ্গী গোষ্ঠীর হামলা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে আনসার বাংলা নামের এক সংগঠন অভিজিৎকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে সর্বশেষ খবরে জানা গেছে।
অভিজিৎ রায় ও রাফিদা আহমেদ বন্যা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। অভিজিৎ ‘মুক্তমনা’ ব্লগের সম্পাদক ও লেখক। ‘কুসংস্কার ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে’ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৭ সালে জাহানারা ইমাম পদক পায় মুক্তমনা। তিনি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক অজয় রায়ের ছেলে। স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা লেখালেখি করেন বন্যা আহমেদ নামে।
অভিজিৎ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে পাস করার পর সেখানে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। আট বছর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সী অঙ্গরাজ্যের আটলান্টায় একটি প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০০৮ সালে তিনি রাফিদা আহমেদ বন্যাকে বিয়ে করেন। এটি অভিজিতের প্রথম বিয়ে হলেও বন্যার দ্বিতীয় বিয়ে। বন্যার আগের পক্ষের ১৪/১৫ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। তারা সবাই একসাথেই আটলান্টায় বসবাস করতেন বলে জানা গেছে। এ বছর অমর একুশের বইমেলায় তার নতুন বই প্রকাশ উপলক্ষ্যে তিনি ১৬ ফেব্রুয়ারী সপরিবারে নিয়ে দেশে যান। আগামী মাসে তাদের যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসার কথা ছিল। দুই ভাইয়ের মধ্যে অভিজিৎ বড়।