নিউইয়র্ক ০৮:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বৃহত্তর বরিশাল ভিত্তিক সংগঠন : ব্যক্তি স্বার্থ রক্ষা আর ক্ষমতার মোহে অনৈক্য

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৫:১২:৪০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ জানুয়ারী ২০১৫
  • / ১৩৪২ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের সাতটি বিভাগের মধ্যে বরিশালে শিক্ষিতের হার সব’চে বেশী। স্বাধীনতার আগে ও পরে সরকার তথা প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে বৃহত্তর বরিশালের বাসিন্দাদের অবস্থান অনেক মজবুত। প্রজাতন্ত্রের উচ্চ পর্যায়েও রয়েছে অত্র অঞ্চলের বেশ প্রভাব। কিন্তু বিধি বাম। শিক্ষিত একটি অঞ্চলের প্রবাসীদের মধ্যে ঢুকে পড়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ব্যক্তি স্বার্থ রক্ষার বিভাজন। যুক্তরাষ্ট্র তথা উত্তর আমেরিকায় বসবাসকারি বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত বৃহত্তর বরিশাল ভিত্তিক অভিবাসীর সংখ্যা এখন অসংখ্য বলা যায়। সামাজিক, সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে নিজের পরিচয় তুলতে ধরতে গঠিত হয় সমিতি ও সংগঠন। বরিশাল ভিত্তিক প্রবাসীদের গড়া এসব সংগঠনের শুরুটা ভালো হলেও শেষ পরিণতি ভয়াবহ। যার ফলশ্রুতিতেই একে একে গড়ে উঠে একই নাম কিংবা এলাকা ভিত্তিক বেশ কয়েকটি সমিতি।
বরিশাল বিভাগে রয়েছে মোট ৬টি জেলা। বরিশাল (সদর), বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠি, পটুয়াখালি এবং পিরোজপুর। আর উপজেলা রয়েছে ৪১ টি। প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে বৃহত্তর বরিশালের প্রায় সব কটি অঞ্চলের বাসিন্দারাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। উত্তর আমেরিকা বসবাসকারি প্রবাসীরাও তাদের মধ্যে অন্যতম। আর এসব প্রবাসীরাই গড়ে তুলেছেন অঞ্চল ভিত্তিক বেশ কয়েকটি সংগঠন। সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে গঠন করা হয় ‘বৃহত্তর বরিশাল কল্যাণ সমিতি’। বিভাগ হওয়ার পর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘প্রবাসী বরিশাল বিভাগ সমিতি’। মতের অমিল থাকায় ক্ষমতার মোহে সৃষ্ট ভাঙ্গনে গঠন হয় ‘বরিশাল বিভাগীয় কল্যাণ সমিতি’। তাও আবার দু ভাগ হয়ে যায়। একটা ‘বরিশাল বিভাগ সমিতি’ (লুৎফর রহমান লাতু’র নেতৃত্বে¡), বরিশাল বিভাগীয় সমিতি (মোহাম্মদ আবদুল কাদের খান’র নেতৃতত্বে)  আর অন্যটি হচ্ছে  ‘বরিশাল বিভাগীয় সোসাইটি’।
কেউ কেউ বলছেন, বৃহত্তর বরিশালের প্রবাসীদের নিয়ে গঠন হয় ‘প্রবাসী বরিশাল বিভাগ সমিতি’। উক্ত সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতাকালিন কার্যনির্বাহীর নেতৃত্বে ছিলেন আজাদ তালুকদার। যদিও পরবর্তীতে তার দায়িত্ব নিয়েছিলেন মোহাম্মদ শাহ আলম। মুলত তখন থেকেই উৎপত্তি ঘটে বিভাজনের বীজ। ভাঙ্গা-গড়ার খেলায় মেতে উঠে বরিশাল ভিত্তিক সাংগঠনিক নেতারা। ‘প্রবাসী বরিশাল সমিতি’ থেকে বেরিয়ে লুৎফর রহমান লাতু’র নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠা লাভ করে ‘বরিশাল বিভাগীয় কল্যাণ সমিতি’। সময়ের পালাবদলে সেখান থেকে বেরিয়ে ড. সবুরের নেতৃত্বে জন্ম নেয় আরেকটি সংগঠন। যার নাম ‘সন্মিলিত বরিশাল বিভাগীয় সমিতি’। খুব বেশী সময় না যেতেই নেতৃত্ব আর ক্ষমতার মোহে সৃষ্টি হয় আরো একটি বিভাজনের। ‘সম্মিলিত থেকে সম্মিলিত’ শুধু এই টুকু নামের (ন+ম এবং ম+ম) যুক্তবর্ণের ব্যবধান। প্রায় একই নামে গঠন হয় ‘সম্মিলিত বরিশাল বিভাগীয় সমিতি’। যার নেতৃত্ব দেন মোহাম্মদ এল গাজী।
এভাবেই বৃহত্তর বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার নামে গড়ে উঠে অসংখ্য সমিতি। প্রবাসীদের মনে প্রশ্ন উঠে বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দুরে অবস্থান করেও ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্মে আবদ্ধ নেই প্রবাসীরা! কিন্তু কেন? একটি শিক্ষিত এবং নদীমাতৃক ইতিহাস ঐতিহ্য নির্ভর অঞ্চলের মানুষের এই বিভাজনে উঠে আসে নানা তথ্য। যার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে, ক্ষমতার দ্বম্ভ, রাজনৈতিক মতপার্থক্য, পদ-পদবীর মোহ। ফলে একের পর এক অঞ্চল ভেদে একটি ভেঙ্গে গড়ছে আরেকটি সংগঠন। যার প্রভাব পড়ছে এখানকার বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমেরিকান নতুন প্রজন্মের মাঝেও। এসব ভাঙ্গা-গড়ার খেলার নেতিবাচক মনোভাবে বাংলাদেশী প্রবাসীরা এখানকার মূলধারার কাছে পরিণত হচ্ছে হাসির পাত্রে। শিক্ষার আলো ছড়িয়ে বরিশাল অঞ্চলের প্রবাসীরা যদি একই ছাদের নীচে থাকতো তাহলে মুলধারায় আমাদের গ্রহণযোগ্যতা আরো সুদৃঢ় হতে পারতো বলে মনে করেন অনেকেই। তারা বলেন, ‘আমরা পরিশ্রমী ও সাহসী জাতি। জাতি হিসেবে আমাদের এইটুকু আত্মসম্মানবোধ নেই বলেই আজকে এতগুলো সংগঠনের উৎপত্তি।’।
এ বিষয়ে কথা বলেন, ‘প্রবাসী বরিশাল বিভাগীয় কল্যাণ সমিতি’র সাবেক সভাপতি বর্তমান উপদেষ্টা মোহাম্মদ শাহ আলম। তিনি জানান আমরা মূলত সবাই মিলে একটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম যে বৃহত্তর বরিশালকে একটি জায়গায় নিয়ে আসতে। যেহেতু আমাদের উদ্দেশ্য বৃহত্তর বরিশালের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করা। তাই একটি মোর্চ্চা গঠন করি। ঐক্যের ডাকে সাড়া দেন অনেকইে। দু:খের সাথে বলতে হয় যখন ঐক্যের ডাক দিলাম আমরা ঠিক তখনই আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে মতানৈক্য সৃষ্টি হয়। সেখান থেকে বেরিয়ে যান অনেকেই। গড়ে তোলেন সম্মিলিত এবং সন্মিলিত সমিতি। আমরা ব্যর্থ হলেও এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আসলে আমরা চাইছি ঐক্য গড়তে কিন্তু আমাদের মধ্যে কিছু কিছু ব্যক্তি রয়েছেন যারা নেতৃত্বের স্বাদ নিতে চান। পদ-পদবীর মোহে বিভাজনের অন্যতম কারণ এটি বলতে পারেন। ৯৪ সালে প্রতিষ্ঠাকালিন সময়ে গড়া সংগঠন আমরা ধরে রেখেছি। ‘প্রবাসী বরিশাল বিভাগ সমিতি’কে ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্মে নিয়ে আসতে চাইছি। সামাজিক ও পারিবারিক ভাবে বরিশাল’সহ বিভিন্ন জেলার উন্নয়ন মূলক কাজ এখনো অব্যাহত রেখেছি আমরা’।
নিউইয়র্কে প্রতিষ্ঠিত ‘বরিশাল বিভাগীয় সমিতি’ ২টি। একটির নেতৃত্বে আছেন লুৎফর রহমান লাতু আর অন্যটির মোহাম্মদ আবদুল কাদের খান। বিভাজন নিয়ে কথা হয় ‘বরিশাল বিভাগীয় সমিতি’র একাংশের সভাপতি মোহাম্মদ আবদুল কাদের খান এর। কাদের খান বলেন, ‘বিভাজন হচ্ছে অযোগ্যতার অন্যতম কারণ। ক্ষমতায় আসীন হয়ে পরবর্তীতে নেতৃত্ব ছাড়তে রাজি নন অনেকেই। আর আমাদের আঞ্চলিকতার দৈন্যতার প্রভাবও রয়েছে প্রকট। ‘বরিশাইল্যা’ ভাষায় আমরা অনেক কিছু বলি। বাস্তবে তার কিছুই নই আমরা। যেমন মুই … অমুক … মোরে চেনো … ইত্যাদি। এখানেই আমাদের যোগ্যতার মাপকাঠি প্রশ্নবিদ্ধ। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে গড়ে উঠা আমাদের সংগঠনের তথাকথিত এবং সুবিধাভোগি অনেক উপদেষ্টারা এই বিভাজনের জন্য দায়ী। তারা নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থকে চাপিয়ে দিতেই বিভাজন সৃষ্টি করেছেন। যা আমাদের জন্য কাম্য নয়’। প্রশ্ন ছিল আপনার সংগঠনের সাংগঠনিক অবস্থান কী? এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ আবদুল কাদের খান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই দেশে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত ছিলাম। ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা বৃত্তি দিয়েছি। এত কিছুর করেও প্রাপ্য সম্মান পাইনি। তাই বর্তমানে আমার সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছি’।
মোহাম্মদ গাজীর নেতৃত্বে গড়া ‘সম্মিলিতি বরিশাল বিভাগীয় সমিতি’র ভাইস-প্রেসিডেন্ট কেএ নাসিম সানি। প্রশ্ন শিক্ষিত অঞ্চলের মানুষ হয়েও বৃহত্তর বরিশালের সাংগঠনিক বিভাজন কেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনি ঠিকই বলেছেন। সত্যিই এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং নিন্দনীয়। যা আমার আগামীর জন্য ভালো কোন ফল বয়ে আনবে না। একই নামের একটি অক্ষরের ব্যবধানে দুটো সমিতি হয়েও ভাঙ্গন বন্ধ হয়নি। বরং তা অব্যাহত রয়েছে। ‘সম্মিলিতি বরিশাল বিভাগীয় সমিতি’র শুরুর দিকে নেতৃত্বে ছিলেন গাজী-রব। গণতান্ত্রিক কোন ধারা তো নেই বরং নির্বাচন বিহীন অতি সম্প্রতি দায়িত্ব নিয়েছেন শহীদ-আমিন। দুঃখের বিষয় শহীদুল ইসলাম সভাপতি এবং রহুল আমিন সাধারণ সম্পাদক বর্তমানে আমাদের সংগঠনের দায়িত্বে আছেন ঠিকই কিন্তু এখানেও আশঙ্কা করছি ফের ভাঙ্গনের’!
কেএ নাসিম সানি আরো জানান, ‘দেখুন আমি শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের দৌহিত্র (নাতী)। প্রবাসে আমাদের এই অনৈক্যের বীজ দেখে আমি মর্মাহত। এর থেকে উত্তরণের পথ একটাই। সবাই ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্মে চলে আসা। আর এজন্য প্রয়োজন হবে ছাড় দেয়ার মানসিকতা। কারণ, আমাদের বরিশালের বেশিরভাগই হচ্ছেন শিক্ষিত। বলতে পারেন- সবাই সেই বৃটিশ আমল থেকে মন্ত্রী-মিনিস্টার। রয়েছে অন্যান্য শিক্ষার উন্নয়নের অংশীদার। আর এ জন্যই আমাদের সবার উচিত হবে প্রবাসী বরিশাল বাসীর বৃহত্তর স্বার্থে  ক্ষুদ্র এবং ব্যক্তি স্বার্থকে ত্যাগ করতে হবে। মতের অমিল ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ভুলে ঐক্যবদ্ধ জাতিতে পরিণত হতে পারলেই আমরা সফল হবো। তুলে ধরতে পারবো আমাদের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের গুনাগুন। অন্যথায় আগামী প্রজন্মের কাছে আমরা অভিশপ্ত জাতিতে পরিণত হবো’।
এক নজরে বিভিন্ন সময়ে গড়ে উঠা বৃহত্তর বরিশাল ভিত্তিক সংগঠন সমূহ: (১) বৃহত্তর বরিশাল কল্যাণ সমিতি বিভাগ হওয়ার পর নাম পরিবর্তন হয়ে ‘প্রবাসী বরিশাল বিভাগ সমিতি’। (২ বরিশাল বিভাগীয় কল্যাণ সমিতি। (৩) বরিশাল বিভাগ সমিতি (লুৎফর রহমান লাতু’র নেতৃত্বে¡)। (৪) বরিশাল বিভাগীয় সমিতি (মোহাম্মদ আবদুল কাদের খান’র নেতৃতত্বে)। (৫) বরিশাল বিভাগীয় সোসাইটি। (৬) প্রবাসী বরিশাল সমিতি। (৭) সন্মিলিত বরিশাল বিভাগীয় সমিতি। (৮) সম্মিলিত বরিশাল বিভাগীয় সমিতি। (৯) সম্মিলিত বরিশাল বিভাগবাসী ইউএসএ ইনক.। (১০) বরিশাল বিভাগীয় এসোসিয়েশন ইউএসএ ইনক.। (১১) বৃহত্তর বরিশাল ফ্রেন্ডস সোসাইটি। এছাড়াও ব্যক্তি ও এলাকা ভিত্তিক এরকম অসংখ্য সংগঠন গঠিত হয়েছে নানা সময়ে। বছরে একটা সভা-সেমিনার (বনভোজণ), ইফতার পার্টির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও অনেক প্রতিষ্ঠান নামেই আছে। যাদের নেই কোন সাংগঠনিক কর্মকান্ড কিংবা সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান।
শুধু বৃহত্তর বরিশাল বিভাগ নয়; রয়েছে প্রায় প্রতিটি অঞ্চলের জেলা ও উপজেলা ভিত্তিক একই নামে কিংবা কাছি-কাছি নামের একাধিক সংগঠন। আর এসব জেলা ভিত্তিক সংগঠনের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পটুয়াখালি, ঝালকাঠি, বরগুনা ও ভোলা। সূত্রে জানান যায়, ‘ভোলা ডিস্ট্রিক্ট এসোসিয়েশন অব ইউএসএ’। রয়েছে আরো একটি সংগঠন। যার কার্যক্রম বন্ধ বলা যায়। বাংলা পত্রিকার সাথে কথা হয় ‘ভোলা ডিস্ট্রিক্ট এসোসিয়েশন অব ইউএসএ’র সভাপতি প্রবীর কুমার রয়ে’র। তিনি বলেন, ‘‘যত মত, তত পথ। আমরা যদি আমাদের অতীত ইতিহাস দেখি। তাহলে তৎকালিন বাংলার দুইটা জিনিস দেখবেন। প্রাকৃতিক এবং ব্যক্তি কেন্দ্রিক। দুইটাই বিপরীতমুখি। এই বাংলার মাটি খুব উর্বর। প্রাকৃতিকগত দিক থেকে জীব বৈচিত্রে আমরা অনেক উন্নত। কিন্তু ব্যক্তি? সেটা হচ্ছে অনুকুলে থাকলে আছি; প্রতিকুলে হলে নাই। উদাহরণ স্বরূপ-আমাদের দেশের মানুষের মনে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, বিভেদ ও হিংসা এটা আদিকাল থেকেই আমরা দেখি এসেছি। সমষ্টিগত কিংবা ও দেশের বৃহত্তর স্বার্থ আমাদের কাছে মুখ্য নয়। আমরাদের কাছে বড় হচ্ছে ব্যক্তি স্বার্থ। এটাই আমাদের জন্য বড় বেদনার। তাই বাংলাদেশ এখন দ্বিধা বিভক্তির জাতিতে পরিণত হয়েছে। যার প্রভাব এখানেও রয়েছে। আমরা প্রবাসে বসবাস করেও নিজেদের পরিবর্তন করতে পারেনি। এটা আমাদের বাংলাদেশীদের প্রাচীনতম স্বভাব। অহমিকা এবং পদ-পদবীর লোভে আমরা কাবু। যা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্য বলে আমি মনে করি’’।
thবৃহত্তর বরিশালের ইতিকথা:  বরিশাল নামকরণ সম্পর্কে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। এক কিংবদন্তি থেকে জানা যায় যে, পূর্বে এখানে খুব বড় বড় শাল গাছ জন্মাতো, আর এই সুবিশাল শাল গাছের কারণে (বড়+শাল) বরিশাল নামের উৎপত্তি। কেউ কেউ দাবি করেন, পর্তুগীজ বেরি ও শেলির প্রেমকাহিনীর জন্য বরিশাল নামকরণ করা হয়েছে। অন্য এক কিংবদন্তি থেকে জানা যায় যে, গিরদে বন্দরে (গ্রেট বন্দর) ঢাকা নবাবদের বড় বড় লবণের গোলা ও চৌকি ছিল। ইংরেজ ও পর্তুগীজ বণিকরা বড় বড় লবণের চৌকিকে ‘বরিসল্ট’ বলতো। অথাৎ বরি (বড়)+ সল্ট(লবণ)= বরিসল্ট। আবার অনেকের ধারণা এখানকার লবণের দানাগুলো বড় বড় ছিল বলে ‘বরিসল্ট’ বলা হতো । পরবর্তিতে বরিসল্ট শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে বরিশাল নামে পরিচিতি লাভ করে। বরিশাল বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি শহর। প্রাচ্যের ভেনিস নামে পরিচিত এ শহরটি বরিশাল জেলায় অবস্থিত ও এটি বরিশাল বিভাগের সদর দপ্তর। এটি বাংলাদেশ-এর একটি অন্যতম সুন্দর শহর। কীর্তনখোলা নদীর তীরে অবস্থিত এই শহরের পুরাতন নাম চন্দ্রদ্বীপ। দেশের খাদ্যশস্য উৎপাদনের একটি মূল উৎস এই বৃহত্তর বরিশাল। বরিশালে একটি নদীবন্দর রয়েছে যেটি দেশের অন্যতম প্রাচীন, দ্বিতীয় বৃহত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ একটি নদীবন্দর।
বৃহত্তর বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলার অন্তর্গত উপজেলা হচ্ছে: আগৈলঝারা, বাবুগঞ্জ, বাকেরগঞ্জ, বানারিপাড়া, গৌরনদী, হিজলা, বরিশাল সদর, মেহেন্দিগঞ্জ, মুলাদি ও উজিরপুর।
বরগুনা জেলার অন্তর্গত উপজেলা: আমতলী, তালতলী, বামনা, বরগুনা সদর, বেতাগি ও পাথরঘাটা।
ভোলা জেলার অন্তর্গত উপজেলা: ভোলা সদর, বোরহানউদ্দিন, চরফ্যাশন, দৌলতখান, লালমোহন, মনপুরা ও তজমুদ্দিন।
ঝালকাঠি জেলাধীন উপজেলা: কাঁঠালিয়া, ঝালকাঠি সদর, নলছিটি ও রাজাপুর
পটুয়াখালী জেলার অন্তর্গত উপজেলা: বাউফল, দশমিনা, গলাচিপা, কলাপাড়া, মির্জাগঞ্জ, পটুয়াখালী সদর ও দুমকি।
পিরোজপুর জেলা: ভান্ডারিয়া, কাউখালী, মঠবাড়িয়া, নাজিরপুর, পিরোজপুর সদর, নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) এবং জিয়ানগর।
এছাড়াও বরিশাল জেলায় রয়েছে ৩৮টি থানা, ৩শ ২৩টি ইউনিয়ন, ৩ হাজার ২শ ৩৭টি গ্রাম এবং ১১টি পৌরসভা। জনসংখ্যার দিক থেকে বরিশাল মেট্রোপলিটন শহরে বসবাসরত জনসংখ্যা প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার ৩শ ৭৪ জন। মহানগরীয় অঞ্চলে বসবাসরত জনসংখ্যা ৩,৮৫৩,০৯৩ জন। মোট জনসংখ্যার ৫৩.২৮% পুরুষ এবং নারী ৪৬.৭২%। এলাকাটিতে মোট জনসংখ্যা এবং ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে উপাসনালয়। বরিশালের মোট জনসংখ্যার ৯০.৬৪% মুসলিম, ৮.৩৮% হিন্দু, খ্রিষ্টান ০.৯৮%। মসজিদ এর সংখ্যা প্রায় ১শ ৫০, চার্চ এর সংখ্যা ৫, মন্দিরের সংখ্যা ১০-র উপরে।
প্রাচীন চিত্তাকর্ষক স্থান: এবাদল্লাহ মসজিদ, অশ্বিনীকুমার টাউনহল, দুর্গাসাগর দিঘী, মুকুন্দ দাসের কালিবাড়ী, পাষাণময়ী কালী মন্দির, বরিশাল মহাশ্মশান, বিবির পুকুর পাড়, গুঠিয়া মসজিদ, মাহিলারা মঠ, ৩০ গোডাউন, বিআইউটিএ এর মাঠ, বেলস্ পার্ক, পরেশ সাগর দীঘি, চাখার শেরে বাংলা যাদুঘর, গাজি-কালু মসজিদ বড়াকোঠা, মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, গজনী দীঘি অন্যতম।
বিখ্যাত ব্যাক্তি: বিপ্লবী দেবেন্দ্রনাথ ঘোষ, আগা বাকের, চারণ কবি মুকুন্দদাস, অশ্বিনীকুমার দত্ত, আরজ আলী মাতুব্বর, আবু জাফর ওবায়দল্লাহ, কবি রবীন সমাদ্দার, সাংবাদিক ও আইনজীবী মিহিরলাল দত্ত, রাজনীতিবিদ শরত্চন্দ্র গুহ, শিক্ষাবিদ কালীচন্দ্র ঘোষ, চারুশিল্পী বলহরি, বিজয় গুপ্ত, কবি সুফিয়া কামাল, কুসুমকুমারী দাশ, কামিনী রায়, সরদার ফজলুল করিম, শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক, জীবনানন্দ দাশ, শহীদ আলতাফ মাহমুদ, মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর, মেজর জলিল, সালমান খান, বি ডি হাবিবল্লাহ, আবদুল জব্বার, সুরকার আবদুল লতিফ, কবি আসাদ চৌধুরী, কবি মুকুন্দ দাস, মিঠুন চক্রবর্তী, হানিফ সংকেত, আবদুর রহমান বিশ্বাস, ড.কামাল হোসেন, মনোরমা বসু, কবি মোজাম্মেল হক প্রমুখ।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

বৃহত্তর বরিশাল ভিত্তিক সংগঠন : ব্যক্তি স্বার্থ রক্ষা আর ক্ষমতার মোহে অনৈক্য

প্রকাশের সময় : ০৫:১২:৪০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ জানুয়ারী ২০১৫

নিউইয়র্ক: বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের সাতটি বিভাগের মধ্যে বরিশালে শিক্ষিতের হার সব’চে বেশী। স্বাধীনতার আগে ও পরে সরকার তথা প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে বৃহত্তর বরিশালের বাসিন্দাদের অবস্থান অনেক মজবুত। প্রজাতন্ত্রের উচ্চ পর্যায়েও রয়েছে অত্র অঞ্চলের বেশ প্রভাব। কিন্তু বিধি বাম। শিক্ষিত একটি অঞ্চলের প্রবাসীদের মধ্যে ঢুকে পড়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ব্যক্তি স্বার্থ রক্ষার বিভাজন। যুক্তরাষ্ট্র তথা উত্তর আমেরিকায় বসবাসকারি বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত বৃহত্তর বরিশাল ভিত্তিক অভিবাসীর সংখ্যা এখন অসংখ্য বলা যায়। সামাজিক, সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে নিজের পরিচয় তুলতে ধরতে গঠিত হয় সমিতি ও সংগঠন। বরিশাল ভিত্তিক প্রবাসীদের গড়া এসব সংগঠনের শুরুটা ভালো হলেও শেষ পরিণতি ভয়াবহ। যার ফলশ্রুতিতেই একে একে গড়ে উঠে একই নাম কিংবা এলাকা ভিত্তিক বেশ কয়েকটি সমিতি।
বরিশাল বিভাগে রয়েছে মোট ৬টি জেলা। বরিশাল (সদর), বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠি, পটুয়াখালি এবং পিরোজপুর। আর উপজেলা রয়েছে ৪১ টি। প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে বৃহত্তর বরিশালের প্রায় সব কটি অঞ্চলের বাসিন্দারাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। উত্তর আমেরিকা বসবাসকারি প্রবাসীরাও তাদের মধ্যে অন্যতম। আর এসব প্রবাসীরাই গড়ে তুলেছেন অঞ্চল ভিত্তিক বেশ কয়েকটি সংগঠন। সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে গঠন করা হয় ‘বৃহত্তর বরিশাল কল্যাণ সমিতি’। বিভাগ হওয়ার পর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘প্রবাসী বরিশাল বিভাগ সমিতি’। মতের অমিল থাকায় ক্ষমতার মোহে সৃষ্ট ভাঙ্গনে গঠন হয় ‘বরিশাল বিভাগীয় কল্যাণ সমিতি’। তাও আবার দু ভাগ হয়ে যায়। একটা ‘বরিশাল বিভাগ সমিতি’ (লুৎফর রহমান লাতু’র নেতৃত্বে¡), বরিশাল বিভাগীয় সমিতি (মোহাম্মদ আবদুল কাদের খান’র নেতৃতত্বে)  আর অন্যটি হচ্ছে  ‘বরিশাল বিভাগীয় সোসাইটি’।
কেউ কেউ বলছেন, বৃহত্তর বরিশালের প্রবাসীদের নিয়ে গঠন হয় ‘প্রবাসী বরিশাল বিভাগ সমিতি’। উক্ত সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতাকালিন কার্যনির্বাহীর নেতৃত্বে ছিলেন আজাদ তালুকদার। যদিও পরবর্তীতে তার দায়িত্ব নিয়েছিলেন মোহাম্মদ শাহ আলম। মুলত তখন থেকেই উৎপত্তি ঘটে বিভাজনের বীজ। ভাঙ্গা-গড়ার খেলায় মেতে উঠে বরিশাল ভিত্তিক সাংগঠনিক নেতারা। ‘প্রবাসী বরিশাল সমিতি’ থেকে বেরিয়ে লুৎফর রহমান লাতু’র নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠা লাভ করে ‘বরিশাল বিভাগীয় কল্যাণ সমিতি’। সময়ের পালাবদলে সেখান থেকে বেরিয়ে ড. সবুরের নেতৃত্বে জন্ম নেয় আরেকটি সংগঠন। যার নাম ‘সন্মিলিত বরিশাল বিভাগীয় সমিতি’। খুব বেশী সময় না যেতেই নেতৃত্ব আর ক্ষমতার মোহে সৃষ্টি হয় আরো একটি বিভাজনের। ‘সম্মিলিত থেকে সম্মিলিত’ শুধু এই টুকু নামের (ন+ম এবং ম+ম) যুক্তবর্ণের ব্যবধান। প্রায় একই নামে গঠন হয় ‘সম্মিলিত বরিশাল বিভাগীয় সমিতি’। যার নেতৃত্ব দেন মোহাম্মদ এল গাজী।
এভাবেই বৃহত্তর বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার নামে গড়ে উঠে অসংখ্য সমিতি। প্রবাসীদের মনে প্রশ্ন উঠে বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দুরে অবস্থান করেও ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্মে আবদ্ধ নেই প্রবাসীরা! কিন্তু কেন? একটি শিক্ষিত এবং নদীমাতৃক ইতিহাস ঐতিহ্য নির্ভর অঞ্চলের মানুষের এই বিভাজনে উঠে আসে নানা তথ্য। যার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে, ক্ষমতার দ্বম্ভ, রাজনৈতিক মতপার্থক্য, পদ-পদবীর মোহ। ফলে একের পর এক অঞ্চল ভেদে একটি ভেঙ্গে গড়ছে আরেকটি সংগঠন। যার প্রভাব পড়ছে এখানকার বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমেরিকান নতুন প্রজন্মের মাঝেও। এসব ভাঙ্গা-গড়ার খেলার নেতিবাচক মনোভাবে বাংলাদেশী প্রবাসীরা এখানকার মূলধারার কাছে পরিণত হচ্ছে হাসির পাত্রে। শিক্ষার আলো ছড়িয়ে বরিশাল অঞ্চলের প্রবাসীরা যদি একই ছাদের নীচে থাকতো তাহলে মুলধারায় আমাদের গ্রহণযোগ্যতা আরো সুদৃঢ় হতে পারতো বলে মনে করেন অনেকেই। তারা বলেন, ‘আমরা পরিশ্রমী ও সাহসী জাতি। জাতি হিসেবে আমাদের এইটুকু আত্মসম্মানবোধ নেই বলেই আজকে এতগুলো সংগঠনের উৎপত্তি।’।
এ বিষয়ে কথা বলেন, ‘প্রবাসী বরিশাল বিভাগীয় কল্যাণ সমিতি’র সাবেক সভাপতি বর্তমান উপদেষ্টা মোহাম্মদ শাহ আলম। তিনি জানান আমরা মূলত সবাই মিলে একটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম যে বৃহত্তর বরিশালকে একটি জায়গায় নিয়ে আসতে। যেহেতু আমাদের উদ্দেশ্য বৃহত্তর বরিশালের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করা। তাই একটি মোর্চ্চা গঠন করি। ঐক্যের ডাকে সাড়া দেন অনেকইে। দু:খের সাথে বলতে হয় যখন ঐক্যের ডাক দিলাম আমরা ঠিক তখনই আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে মতানৈক্য সৃষ্টি হয়। সেখান থেকে বেরিয়ে যান অনেকেই। গড়ে তোলেন সম্মিলিত এবং সন্মিলিত সমিতি। আমরা ব্যর্থ হলেও এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আসলে আমরা চাইছি ঐক্য গড়তে কিন্তু আমাদের মধ্যে কিছু কিছু ব্যক্তি রয়েছেন যারা নেতৃত্বের স্বাদ নিতে চান। পদ-পদবীর মোহে বিভাজনের অন্যতম কারণ এটি বলতে পারেন। ৯৪ সালে প্রতিষ্ঠাকালিন সময়ে গড়া সংগঠন আমরা ধরে রেখেছি। ‘প্রবাসী বরিশাল বিভাগ সমিতি’কে ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্মে নিয়ে আসতে চাইছি। সামাজিক ও পারিবারিক ভাবে বরিশাল’সহ বিভিন্ন জেলার উন্নয়ন মূলক কাজ এখনো অব্যাহত রেখেছি আমরা’।
নিউইয়র্কে প্রতিষ্ঠিত ‘বরিশাল বিভাগীয় সমিতি’ ২টি। একটির নেতৃত্বে আছেন লুৎফর রহমান লাতু আর অন্যটির মোহাম্মদ আবদুল কাদের খান। বিভাজন নিয়ে কথা হয় ‘বরিশাল বিভাগীয় সমিতি’র একাংশের সভাপতি মোহাম্মদ আবদুল কাদের খান এর। কাদের খান বলেন, ‘বিভাজন হচ্ছে অযোগ্যতার অন্যতম কারণ। ক্ষমতায় আসীন হয়ে পরবর্তীতে নেতৃত্ব ছাড়তে রাজি নন অনেকেই। আর আমাদের আঞ্চলিকতার দৈন্যতার প্রভাবও রয়েছে প্রকট। ‘বরিশাইল্যা’ ভাষায় আমরা অনেক কিছু বলি। বাস্তবে তার কিছুই নই আমরা। যেমন মুই … অমুক … মোরে চেনো … ইত্যাদি। এখানেই আমাদের যোগ্যতার মাপকাঠি প্রশ্নবিদ্ধ। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে গড়ে উঠা আমাদের সংগঠনের তথাকথিত এবং সুবিধাভোগি অনেক উপদেষ্টারা এই বিভাজনের জন্য দায়ী। তারা নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থকে চাপিয়ে দিতেই বিভাজন সৃষ্টি করেছেন। যা আমাদের জন্য কাম্য নয়’। প্রশ্ন ছিল আপনার সংগঠনের সাংগঠনিক অবস্থান কী? এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ আবদুল কাদের খান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই দেশে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত ছিলাম। ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা বৃত্তি দিয়েছি। এত কিছুর করেও প্রাপ্য সম্মান পাইনি। তাই বর্তমানে আমার সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছি’।
মোহাম্মদ গাজীর নেতৃত্বে গড়া ‘সম্মিলিতি বরিশাল বিভাগীয় সমিতি’র ভাইস-প্রেসিডেন্ট কেএ নাসিম সানি। প্রশ্ন শিক্ষিত অঞ্চলের মানুষ হয়েও বৃহত্তর বরিশালের সাংগঠনিক বিভাজন কেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনি ঠিকই বলেছেন। সত্যিই এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং নিন্দনীয়। যা আমার আগামীর জন্য ভালো কোন ফল বয়ে আনবে না। একই নামের একটি অক্ষরের ব্যবধানে দুটো সমিতি হয়েও ভাঙ্গন বন্ধ হয়নি। বরং তা অব্যাহত রয়েছে। ‘সম্মিলিতি বরিশাল বিভাগীয় সমিতি’র শুরুর দিকে নেতৃত্বে ছিলেন গাজী-রব। গণতান্ত্রিক কোন ধারা তো নেই বরং নির্বাচন বিহীন অতি সম্প্রতি দায়িত্ব নিয়েছেন শহীদ-আমিন। দুঃখের বিষয় শহীদুল ইসলাম সভাপতি এবং রহুল আমিন সাধারণ সম্পাদক বর্তমানে আমাদের সংগঠনের দায়িত্বে আছেন ঠিকই কিন্তু এখানেও আশঙ্কা করছি ফের ভাঙ্গনের’!
কেএ নাসিম সানি আরো জানান, ‘দেখুন আমি শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের দৌহিত্র (নাতী)। প্রবাসে আমাদের এই অনৈক্যের বীজ দেখে আমি মর্মাহত। এর থেকে উত্তরণের পথ একটাই। সবাই ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্মে চলে আসা। আর এজন্য প্রয়োজন হবে ছাড় দেয়ার মানসিকতা। কারণ, আমাদের বরিশালের বেশিরভাগই হচ্ছেন শিক্ষিত। বলতে পারেন- সবাই সেই বৃটিশ আমল থেকে মন্ত্রী-মিনিস্টার। রয়েছে অন্যান্য শিক্ষার উন্নয়নের অংশীদার। আর এ জন্যই আমাদের সবার উচিত হবে প্রবাসী বরিশাল বাসীর বৃহত্তর স্বার্থে  ক্ষুদ্র এবং ব্যক্তি স্বার্থকে ত্যাগ করতে হবে। মতের অমিল ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ভুলে ঐক্যবদ্ধ জাতিতে পরিণত হতে পারলেই আমরা সফল হবো। তুলে ধরতে পারবো আমাদের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের গুনাগুন। অন্যথায় আগামী প্রজন্মের কাছে আমরা অভিশপ্ত জাতিতে পরিণত হবো’।
এক নজরে বিভিন্ন সময়ে গড়ে উঠা বৃহত্তর বরিশাল ভিত্তিক সংগঠন সমূহ: (১) বৃহত্তর বরিশাল কল্যাণ সমিতি বিভাগ হওয়ার পর নাম পরিবর্তন হয়ে ‘প্রবাসী বরিশাল বিভাগ সমিতি’। (২ বরিশাল বিভাগীয় কল্যাণ সমিতি। (৩) বরিশাল বিভাগ সমিতি (লুৎফর রহমান লাতু’র নেতৃত্বে¡)। (৪) বরিশাল বিভাগীয় সমিতি (মোহাম্মদ আবদুল কাদের খান’র নেতৃতত্বে)। (৫) বরিশাল বিভাগীয় সোসাইটি। (৬) প্রবাসী বরিশাল সমিতি। (৭) সন্মিলিত বরিশাল বিভাগীয় সমিতি। (৮) সম্মিলিত বরিশাল বিভাগীয় সমিতি। (৯) সম্মিলিত বরিশাল বিভাগবাসী ইউএসএ ইনক.। (১০) বরিশাল বিভাগীয় এসোসিয়েশন ইউএসএ ইনক.। (১১) বৃহত্তর বরিশাল ফ্রেন্ডস সোসাইটি। এছাড়াও ব্যক্তি ও এলাকা ভিত্তিক এরকম অসংখ্য সংগঠন গঠিত হয়েছে নানা সময়ে। বছরে একটা সভা-সেমিনার (বনভোজণ), ইফতার পার্টির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও অনেক প্রতিষ্ঠান নামেই আছে। যাদের নেই কোন সাংগঠনিক কর্মকান্ড কিংবা সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান।
শুধু বৃহত্তর বরিশাল বিভাগ নয়; রয়েছে প্রায় প্রতিটি অঞ্চলের জেলা ও উপজেলা ভিত্তিক একই নামে কিংবা কাছি-কাছি নামের একাধিক সংগঠন। আর এসব জেলা ভিত্তিক সংগঠনের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পটুয়াখালি, ঝালকাঠি, বরগুনা ও ভোলা। সূত্রে জানান যায়, ‘ভোলা ডিস্ট্রিক্ট এসোসিয়েশন অব ইউএসএ’। রয়েছে আরো একটি সংগঠন। যার কার্যক্রম বন্ধ বলা যায়। বাংলা পত্রিকার সাথে কথা হয় ‘ভোলা ডিস্ট্রিক্ট এসোসিয়েশন অব ইউএসএ’র সভাপতি প্রবীর কুমার রয়ে’র। তিনি বলেন, ‘‘যত মত, তত পথ। আমরা যদি আমাদের অতীত ইতিহাস দেখি। তাহলে তৎকালিন বাংলার দুইটা জিনিস দেখবেন। প্রাকৃতিক এবং ব্যক্তি কেন্দ্রিক। দুইটাই বিপরীতমুখি। এই বাংলার মাটি খুব উর্বর। প্রাকৃতিকগত দিক থেকে জীব বৈচিত্রে আমরা অনেক উন্নত। কিন্তু ব্যক্তি? সেটা হচ্ছে অনুকুলে থাকলে আছি; প্রতিকুলে হলে নাই। উদাহরণ স্বরূপ-আমাদের দেশের মানুষের মনে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, বিভেদ ও হিংসা এটা আদিকাল থেকেই আমরা দেখি এসেছি। সমষ্টিগত কিংবা ও দেশের বৃহত্তর স্বার্থ আমাদের কাছে মুখ্য নয়। আমরাদের কাছে বড় হচ্ছে ব্যক্তি স্বার্থ। এটাই আমাদের জন্য বড় বেদনার। তাই বাংলাদেশ এখন দ্বিধা বিভক্তির জাতিতে পরিণত হয়েছে। যার প্রভাব এখানেও রয়েছে। আমরা প্রবাসে বসবাস করেও নিজেদের পরিবর্তন করতে পারেনি। এটা আমাদের বাংলাদেশীদের প্রাচীনতম স্বভাব। অহমিকা এবং পদ-পদবীর লোভে আমরা কাবু। যা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্য বলে আমি মনে করি’’।
thবৃহত্তর বরিশালের ইতিকথা:  বরিশাল নামকরণ সম্পর্কে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। এক কিংবদন্তি থেকে জানা যায় যে, পূর্বে এখানে খুব বড় বড় শাল গাছ জন্মাতো, আর এই সুবিশাল শাল গাছের কারণে (বড়+শাল) বরিশাল নামের উৎপত্তি। কেউ কেউ দাবি করেন, পর্তুগীজ বেরি ও শেলির প্রেমকাহিনীর জন্য বরিশাল নামকরণ করা হয়েছে। অন্য এক কিংবদন্তি থেকে জানা যায় যে, গিরদে বন্দরে (গ্রেট বন্দর) ঢাকা নবাবদের বড় বড় লবণের গোলা ও চৌকি ছিল। ইংরেজ ও পর্তুগীজ বণিকরা বড় বড় লবণের চৌকিকে ‘বরিসল্ট’ বলতো। অথাৎ বরি (বড়)+ সল্ট(লবণ)= বরিসল্ট। আবার অনেকের ধারণা এখানকার লবণের দানাগুলো বড় বড় ছিল বলে ‘বরিসল্ট’ বলা হতো । পরবর্তিতে বরিসল্ট শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে বরিশাল নামে পরিচিতি লাভ করে। বরিশাল বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি শহর। প্রাচ্যের ভেনিস নামে পরিচিত এ শহরটি বরিশাল জেলায় অবস্থিত ও এটি বরিশাল বিভাগের সদর দপ্তর। এটি বাংলাদেশ-এর একটি অন্যতম সুন্দর শহর। কীর্তনখোলা নদীর তীরে অবস্থিত এই শহরের পুরাতন নাম চন্দ্রদ্বীপ। দেশের খাদ্যশস্য উৎপাদনের একটি মূল উৎস এই বৃহত্তর বরিশাল। বরিশালে একটি নদীবন্দর রয়েছে যেটি দেশের অন্যতম প্রাচীন, দ্বিতীয় বৃহত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ একটি নদীবন্দর।
বৃহত্তর বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলার অন্তর্গত উপজেলা হচ্ছে: আগৈলঝারা, বাবুগঞ্জ, বাকেরগঞ্জ, বানারিপাড়া, গৌরনদী, হিজলা, বরিশাল সদর, মেহেন্দিগঞ্জ, মুলাদি ও উজিরপুর।
বরগুনা জেলার অন্তর্গত উপজেলা: আমতলী, তালতলী, বামনা, বরগুনা সদর, বেতাগি ও পাথরঘাটা।
ভোলা জেলার অন্তর্গত উপজেলা: ভোলা সদর, বোরহানউদ্দিন, চরফ্যাশন, দৌলতখান, লালমোহন, মনপুরা ও তজমুদ্দিন।
ঝালকাঠি জেলাধীন উপজেলা: কাঁঠালিয়া, ঝালকাঠি সদর, নলছিটি ও রাজাপুর
পটুয়াখালী জেলার অন্তর্গত উপজেলা: বাউফল, দশমিনা, গলাচিপা, কলাপাড়া, মির্জাগঞ্জ, পটুয়াখালী সদর ও দুমকি।
পিরোজপুর জেলা: ভান্ডারিয়া, কাউখালী, মঠবাড়িয়া, নাজিরপুর, পিরোজপুর সদর, নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) এবং জিয়ানগর।
এছাড়াও বরিশাল জেলায় রয়েছে ৩৮টি থানা, ৩শ ২৩টি ইউনিয়ন, ৩ হাজার ২শ ৩৭টি গ্রাম এবং ১১টি পৌরসভা। জনসংখ্যার দিক থেকে বরিশাল মেট্রোপলিটন শহরে বসবাসরত জনসংখ্যা প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার ৩শ ৭৪ জন। মহানগরীয় অঞ্চলে বসবাসরত জনসংখ্যা ৩,৮৫৩,০৯৩ জন। মোট জনসংখ্যার ৫৩.২৮% পুরুষ এবং নারী ৪৬.৭২%। এলাকাটিতে মোট জনসংখ্যা এবং ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে উপাসনালয়। বরিশালের মোট জনসংখ্যার ৯০.৬৪% মুসলিম, ৮.৩৮% হিন্দু, খ্রিষ্টান ০.৯৮%। মসজিদ এর সংখ্যা প্রায় ১শ ৫০, চার্চ এর সংখ্যা ৫, মন্দিরের সংখ্যা ১০-র উপরে।
প্রাচীন চিত্তাকর্ষক স্থান: এবাদল্লাহ মসজিদ, অশ্বিনীকুমার টাউনহল, দুর্গাসাগর দিঘী, মুকুন্দ দাসের কালিবাড়ী, পাষাণময়ী কালী মন্দির, বরিশাল মহাশ্মশান, বিবির পুকুর পাড়, গুঠিয়া মসজিদ, মাহিলারা মঠ, ৩০ গোডাউন, বিআইউটিএ এর মাঠ, বেলস্ পার্ক, পরেশ সাগর দীঘি, চাখার শেরে বাংলা যাদুঘর, গাজি-কালু মসজিদ বড়াকোঠা, মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, গজনী দীঘি অন্যতম।
বিখ্যাত ব্যাক্তি: বিপ্লবী দেবেন্দ্রনাথ ঘোষ, আগা বাকের, চারণ কবি মুকুন্দদাস, অশ্বিনীকুমার দত্ত, আরজ আলী মাতুব্বর, আবু জাফর ওবায়দল্লাহ, কবি রবীন সমাদ্দার, সাংবাদিক ও আইনজীবী মিহিরলাল দত্ত, রাজনীতিবিদ শরত্চন্দ্র গুহ, শিক্ষাবিদ কালীচন্দ্র ঘোষ, চারুশিল্পী বলহরি, বিজয় গুপ্ত, কবি সুফিয়া কামাল, কুসুমকুমারী দাশ, কামিনী রায়, সরদার ফজলুল করিম, শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক, জীবনানন্দ দাশ, শহীদ আলতাফ মাহমুদ, মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর, মেজর জলিল, সালমান খান, বি ডি হাবিবল্লাহ, আবদুল জব্বার, সুরকার আবদুল লতিফ, কবি আসাদ চৌধুরী, কবি মুকুন্দ দাস, মিঠুন চক্রবর্তী, হানিফ সংকেত, আবদুর রহমান বিশ্বাস, ড.কামাল হোসেন, মনোরমা বসু, কবি মোজাম্মেল হক প্রমুখ।