নিউইয়র্ক ১২:১৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বৃহত্তর কুমিল্লার সংগঠনের ছড়াছড়ি : ক্ষমতার মোহ এবং আর্থিক দুর্নীতিতে বাড়ছে বিভাজন

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:২১:৩৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪
  • / ১০৫৪ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারি প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে ৬৪টি জেলার বাসিন্দারাই আজ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রেরর বিভিন্ন রাজ্যে। কেউ ব্যবসা বাণিজ্য করছেন কেউবা আবার কাজ করছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। রয়েছেন নানা সামাজিক কর্মকান্ড’সহ রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্বেও। আর এসব প্রবাসী বাংলাদেশীদের বেশীরভাগই বসবাস করেন উত্তর আমেরিকায় (নিউজার্সি এবং নিউইয়র্ক)। বিশ্বের সবচে বড় অভিবাসীর দেশ আমেরিকা। তাই এখানে বাংলাদেশ’সহ সাউথ এশিয়ার ইন্ডিয়া,পাকিস্তান, নেপার,ভূটাণ’সহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের বসবাস। বিশ্বের অন্যতম জনসংখ্যার দেশ চীনের অবস্থানও বেশ শক্ত বলা যায়। এতসব দেশের মাঝে কমিউনিটি সভা-সমিতি’সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ততা বলা যায় সবচে বেশী বাংলাদেশীদের। তাদের সরব উপস্থিতি এবং সাংগঠনিক ভিত্তির অবস্থানও চোখে পড়ার মতো। এর ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠা এসব সংগঠনগুলোর ভালো কাজের পাশাপাশি জড়িয়ে পড়ছেন বিভিন্ন কোন্দলে। ক্ষমতার দ্বম্ভ, রাজনৈতিক মতপার্থক্য, পদ-পদবী এবং অঞ্চল ভেদে একটি ভেঙ্গে গড়ছে আরেকটি সংগঠন। যার প্রভাব পড়ছে এখানকার বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমেরিকান নতুন প্রজন্মের মধ্যে। একটি ভেঙ্গে আরেকটি গড়ার এসব নেতিবাচক মনোভাবে বাংলাদেশী প্রবাসীরা এখানকার মূলধারার কাছে পরিণত হচ্ছে হাসির পাত্রে।
উত্তর আমেরিকায় বিভিন্ন সময়ে গড়ে উঠা, সামাজিক, রাজনীতিক ও আঞ্চলিক সংগঠনের চালচিত্র নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবদেন পাঠকদের কাছে বেশ আগ্রহের সৃষ্টি করে। প্রথম পর্ব ছিল ক্যাবিদের সংগঠন আর দ্বিতীয় পর্বে উঠে বৃহত্তর সন্দ্বীপ বাসীর সংগঠন নিয়ে। প্রতিবেদনে উঠে আসে বিভিন্ন সময়ে গড়ে উঠা এসব সংগঠনের শুরুটা ভালো হলেও শেষ পরিণতি ভয়াবহ। ব্যক্তি স্বার্থ, আধিপত্য বিস্তার, পদ-পদবি, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মতপার্থক্য প্রবাসেও বাংলাদেশীদের  দ্বিধাবিভক্তির জাতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছায় হোক সামাজিক দায়বদ্ধতা দিয়ে শুরু করা এসব সংগঠনের শেষটা চলে ভাঙ্গনের দিকে।  যার ফলে একে গড়ে উঠছে বিভাগীয়, জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন তথা গ্রাম পর্যায়ের একই নামের বিভিন্ন সংগঠন। আর বিভিন্ন নামে গড়ে উঠা এসব সংগঠন বছরে একবার প্রীতিভোজ এবং রমজানের ইফতার আয়োজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। যা মূলত কমিউনিটির গণমাধ্যম
পাঠকদের জন্য এবারের আয়োজন হচ্ছে বৃহত্তর কুমিল্লাবাসীর সংগঠনের চালচিত্র। নব্বই দশকের শুরুতে প্রথম প্রতিষ্ঠা লাভ করে বৃহত্তর কুমিল্লাবাসীর সামাজিক সংগঠন ‘দি গ্রেটার কুমিল্লা সঞ্চয় ইনক’ তৎকালিন উদ্যোক্তাদের লক্ষ্য ছিল মাসিক সঞ্চয় দিয়ে বড় অঙ্কের ফান্ড রাইজিং করা। যা দিয়ে বৃহত্তর কুমিল্লাবাসীর সমস্যা ও সম্ভাবনাময় খাতে ব্যয় করা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ‘গ্রেটার কুমিল্লা সঞ্চয় ইনক’-এর পরিকল্পনা মতে- প্রতিমাসে ১ হাজার ডলার করে জমা দেয় সদস্যরা। প্রায় ১শ জনের মত সদস্যদের দেয়া  জমাকৃত অর্থে কেনা হয় একটি বাড়ি। সে সময়ে  ব্রুকলিনের সার্চ ম্যাকডোনাল্ডেস ক্রয়কৃত বাড়িটির মূল্য ছিল বেশ। পরবর্তী সময়ে সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্টরা নিজেদের স্বার্থে বাড়িটিকে নির্মাণের নামে ঋণে ফেলে দেয়। এরপর আর আলোর মুখ দেখেনি। ১ হাজার ডলার করে চাঁদা দেয়া সদস্যরা ১৫ বছর পরে ফিরে পান ৩শ ৮৪ ডলার। যা সত্যিই দু:খজনক বলে মনে করেন কেউ কেউ। অনেকে বলছেন, ‘ব্যক্তি স্বার্থ এর অভ্যন্তরীণ কোন্দলই এর বড় কারণ। নির্মাণের উদ্যোগ না নিয়ে বাড়িটি বিক্রি করেও বহু টাকা আয় করা সম্ভব ছিল বলে দাবি তৎকালিন সদস্যদের।
গ্রেটার কুমিল্লা সঞ্চয় ইনক’-এর সময়ে নব্বই দশকে প্রতিষ্ঠা লাভ করে বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতির সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন হাজী আলী আক্কাস। উত্তর আমেরিকায় বসবাসকারি কুমিল্লা-চাঁদপুর- ব্রাহ্মণবাড়িয়া’র প্রবাসী বাংলাদেশীদের নিয়েই গঠন হয় এই সংগঠনটি। কিন্তু সময়ের পথ পরিক্রমায় একটি থেকে গড়ে উঠে আরো বেশ কয়েকটি। (১) বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতি। (২) কুমল্লিা সোসাইটি অব নর্থ আমেরিকা ইনক। (৩) কুমিল্লা সোসাইটি অব ইউএসএ ইনক। (৪) কুমিল্লা জেলা সোসাইটি। (৫) ব্রাহ্মণবাড়িয়া কমিউনিটি। (৬) ব্রাহ্মণবাড়িয়া সোসাইটি ইউএসএ ইনক। (৭) রুপসী চাঁদপুর ফাউন্ডেশন।  (৮) গ্রেটার কুমিল্লা সোসাইটি এইএসএ ইনক। (৯) গ্রেটার কুমিল্লা ফাউন্ডেশন নর্থ আমেরিকা।
এদিক, শুধুমাত্র নামে চলছে আরো বেশ ক’টি সংগঠন। যারা বছরে একবার হলেও বণভোজন কিংবা সভা-সেমিনার করছে। আর এস সংগঠনের মধ্যে রয়েছে। (১০) গ্রেটার লাকশাম সোসাইটি ইউএসএ ইনক। (১১) কসবা সোসাইটি ইউএসএ ইনক। (১২) দেবিদ্বার সোসাইটি ইউএসএ ইনক (১২) চান্দিানা সোসাইটি ইউএসএ ইনক। (১৩) বৃহত্তর দাউদকান্দি সোসাইটি ইউএসএস ইনক। (১৪) মতলব আরবান সোসাইটি ইউএসএ ইনক। (১৫) চৌদ্দগ্রাম সোসাইটি ইউএসএ ইনক অন্যতম। যাদের মধ্যে কয়েকটি কার্যক্রম চললেও রেজিস্ট্রেশন বিহীন কমিটি রয়েছে।
অন্যদিকে, প্রথমে হাঁক-ডাক দিয়ে শুরু হওয়া যেসব সংগঠন সৃষ্টি হয়েছে বৃহত্তর কুমিল্লার; বর্তমারে বলা যায় বিলুপ্ত তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- (১৬) কুমিল্লা সঞ্চয় ইনক।  (১৭) কুমিল্লা উন্নয়ন সোসাইটি। (১৯) গ্রেটার কুমিল্লা ফাউন্ডেশন ইউএসএ ইনক। (২০) গ্রেটার কুমিল্লা সোসাইটি অব নর্থ আমেরিকা। এসব সংগঠন শুধু মাত্র গড়ে উঠেছে বৃহত্তর কুমিল্লাকে ঘিরে ও তার আশে পাশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলাকে কেন্দ্র করে। শুরুতে কার্যক্রম থাকলেও বর্তমানে তাদের কোন সাংগঠনিক কাঠামো নেই। বাংলা পত্রিকার সরেজমিন প্রতিবেদন তা উঠে আসে।
বৃহত্তর কুমিল্লাকে ঘিরে গড়ে উঠা প্রায় কড়ি’র অধিক সংগঠনের নেতাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও অনেককে পাওয়া যায়নি। বাংলা পত্রিকার সাথে কথা হয় কুমিল্লা সোসাইটি অব ইউএসএ ইনক-এর সাবেক প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল খালেকের। প্রশ্ন ছিল বৃহত্তর কুমিল্লার একটি সংগঠন কেন নয়? তিনি জানান, ‘আসলে এর জন্য আমরাই দায়ি। প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত যতগুলো সংগঠন ভাঙ্গা-গড়ার আবর্তে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে তার অন্যতম কারণ হচ্ছে অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি এবং ক্ষমতার দ্বম্ভ’।
তিনি আরো বলেন, ‘ধরুণ শুরু দিকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি নির্বাচন কিংবা আহ্বায়ক কিমিট দিয়ে গঠন হয় সংগঠন। এরপর চাঁদা আদায়ে হিসেব ভান্ডারে জমাও হয় বেশ অর্থ। ঠিক যখন নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা এসে যায়; তখনই বেঁকে বসে দায়িত্বে থাকা নেতারা। যিনি ক্ষমতায় থাকেন, তিনি তা ছাড়তে চান না। এটাই হচ্ছে প্রথম কারণ। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে ফান্ড নিয়ে দুর্নীতি।
ইঞ্জিনিয়ার খালেকের কাছে জানতে চাওয়া হয় এসব সংগঠনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা বিষয়ে। জবাবে তিনি জানান, ‘আসলে এখানে গড়ে উঠা সমিতিরগুলোর গঠনমুলক কার্যক্রম হচ্ছে বছরে দুবার। কোন কোন ক্ষেত্রে একবারই সীমাবদ্ধ। বছর শেষে একটি পিকনিক আর রমজানের ইফতার পার্টির মধ্যেই এসব সংগঠনের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ। তখন কমিউনিটির পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ এতেই তুষ্টি আমাদের প্রবাসীরা। তবে, আমি যখন একটি সংগঠনের দায়িত্বে আসি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হই। তখন চেষ্টা করি বৃহত্তর কুমল্লিার একটি সংগঠন করতে। আহ্বান জানাই আমি দায়িত্ব ছেড়ে দেবো তবুও আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। দু:খের বিষয় কোন সাড়া পাইনি। আসলে পদ-পদবী এবং ফেইস ভ্যালু নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে একটা ভেঙ্গে আরেকটি গড়ে নেতা সেজে বসে থাকাটাই মুখ্য। এ ছাড়া আর কিছুই নয়। যা আসলে আমাদেরে এখানকার প্রজন্মের কাছে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে আমি মনে করি’।
একই অঞ্চলের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের একাধিক সংগঠন গড়ার কারন সম্পর্কে বাংলা পত্রিকার কাছে তুলে ধরেন ‘কুমিল্লা সোসাইটি অব ইউএসএ ইনক’র সাবেক সভাপতি শাহ্ আলম। তিনি জানান, ‘মূলত আমাদের প্রতিষ্ঠাকালিন লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য থাকে সামাজিক দ্বায়বদ্ধতা নিয়ে সংগঠন গড়া। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস পরবর্তীতে এসে আমরা আমাদের কমিটমেন্ট ধরে রাখতে পারি না। প্রবাসেও আমার জড়িয়ে পড়ি অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর পদ-পদবীর লোভের দিকে। যার ফলশ্রুতিতে একটি থেকে আরেকটি সংগঠনের জন্ম নেয়া’।
বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতির সাথেও সম্পৃক্ত থাকা শাহ্ আলম আরো বলেন, ‘আপনি ঠিকই বলেছেন। আসলে আমরা বাংলাদেশীরা ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম তৈরীতে পুরোপুরি ব্যর্থ। এখানে অন্যান্য দেশ ও জাতির বসবাস। আমাদের মত তাদের এতগুলো সংগঠন নেই। এটা সত্যিই দু:খজনক। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এসব সমাধানে কারা উদ্যোগ নিবে। এখানকার প্রবাসী যারা মুলধারার সাথে সম্পৃক্ত; তারা সভা-সমিতি এড়িয়ে চলেন। কমিউনিটি থেকে আলাদা বসবাস করছেন। তাই ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় হোক বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতি থেকে পথচলা শুরু হয়ে আমাদের আজ একই অঞ্চলের এতগুলো সংগঠন’। তিনি বলেন, ‘কুমল্লিা সোসাইটি অব নর্থ আমেরিকা ইনক. নেতৃত্ব ভাগ হয়ে যায়। গড়ে উঠে কুমিল্লা সোসাইটি অব ইউএসএ ইনক.। এর সেটা ভেঙ্গে জন্ম নেয় কুমিল্লা জেলা সোসাইটি। এছাড়াও আমাদের পাশের রয়েছে আরো তিনটি সংগঠন। যার মধ্যে হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কমিউনিটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সোসাইটি ইউএসএ ইনক, রুপসী চাঁদপুর ফাউন্ডেশন’।
এতকিছুর পরও বৃহত্তর কুমিল্লার বাসিন্দা এবং প্রবাসী বাংলাদেশী অনেকেই আশা করছেন, ‘বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতি যদি একটি হতো তাহলে হয়তো আমাদের অঞ্চলের প্রবাসীদের জন্য বড় কোন ভূমিকা রাখতে পারতাম। আমরা পিকনিকগুলোতে কুমল্লিা বাসির মিলণ-মেলায় পরিণত হই ঠিকই; কিন্তু পরে তা ভুলে যাই’।
মূলধারার সাথে সম্পৃক্ত একজন প্রবাসী বাংলাদেশী ও কমিউনিটি এক্টিভিটস বাংলা পত্রিকার সাথে তার হতাশার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আসলে আমরা দেশেও দ্বিধাবিভক্ত জাতিতে পরিণত হয়েছি। ক্ষমতার মোহে অন্ধ আমরা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এখানে সংগঠন করে এটার সভাপতি কিংবা সেক্রেটারি হলে আমাদের জাতি কিংবা প্রবাসীদের কী লাভ? আমারও প্রশ্ন। পুরো যুক্তরাষ্ট্রে একটি সংগঠন থাকতে পারে। যা পুরো বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। তা স্বপ্নই রয়ে গেল বাস্তবে সম্ভব হবে না হয়তো। আর রাজনীতির সংগঠনের কথা কী বলবো। আমরা সত্যিই নিজেদের মূল্যায়ন করতে জানি না। এর খেসারত দিতে হবে আজন্ম’।
thকুমিল্লার ইতিহাস:
কুমিল্লার মোট আয়তন ২৮০ কিলোমিটার। এর উত্তরে বুড়িচং ও ত্রিপুরা, দক্ষিণে লাকসাম ও চৌদ্দগ্রাম এবং পশ্চিমে বরুড়া অবস্থিত। কুমিল্লার উপর দিয়ে যেসব নদী প্রবাহমান, সেগুলোর মধ্যে গোমতি ও ছোট ফেনী উল্লেখযোগ্য। কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়। (বাংলা পত্রিকা)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

বৃহত্তর কুমিল্লার সংগঠনের ছড়াছড়ি : ক্ষমতার মোহ এবং আর্থিক দুর্নীতিতে বাড়ছে বিভাজন

প্রকাশের সময় : ১১:২১:৩৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪

নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারি প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে ৬৪টি জেলার বাসিন্দারাই আজ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রেরর বিভিন্ন রাজ্যে। কেউ ব্যবসা বাণিজ্য করছেন কেউবা আবার কাজ করছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। রয়েছেন নানা সামাজিক কর্মকান্ড’সহ রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্বেও। আর এসব প্রবাসী বাংলাদেশীদের বেশীরভাগই বসবাস করেন উত্তর আমেরিকায় (নিউজার্সি এবং নিউইয়র্ক)। বিশ্বের সবচে বড় অভিবাসীর দেশ আমেরিকা। তাই এখানে বাংলাদেশ’সহ সাউথ এশিয়ার ইন্ডিয়া,পাকিস্তান, নেপার,ভূটাণ’সহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের বসবাস। বিশ্বের অন্যতম জনসংখ্যার দেশ চীনের অবস্থানও বেশ শক্ত বলা যায়। এতসব দেশের মাঝে কমিউনিটি সভা-সমিতি’সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ততা বলা যায় সবচে বেশী বাংলাদেশীদের। তাদের সরব উপস্থিতি এবং সাংগঠনিক ভিত্তির অবস্থানও চোখে পড়ার মতো। এর ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠা এসব সংগঠনগুলোর ভালো কাজের পাশাপাশি জড়িয়ে পড়ছেন বিভিন্ন কোন্দলে। ক্ষমতার দ্বম্ভ, রাজনৈতিক মতপার্থক্য, পদ-পদবী এবং অঞ্চল ভেদে একটি ভেঙ্গে গড়ছে আরেকটি সংগঠন। যার প্রভাব পড়ছে এখানকার বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমেরিকান নতুন প্রজন্মের মধ্যে। একটি ভেঙ্গে আরেকটি গড়ার এসব নেতিবাচক মনোভাবে বাংলাদেশী প্রবাসীরা এখানকার মূলধারার কাছে পরিণত হচ্ছে হাসির পাত্রে।
উত্তর আমেরিকায় বিভিন্ন সময়ে গড়ে উঠা, সামাজিক, রাজনীতিক ও আঞ্চলিক সংগঠনের চালচিত্র নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবদেন পাঠকদের কাছে বেশ আগ্রহের সৃষ্টি করে। প্রথম পর্ব ছিল ক্যাবিদের সংগঠন আর দ্বিতীয় পর্বে উঠে বৃহত্তর সন্দ্বীপ বাসীর সংগঠন নিয়ে। প্রতিবেদনে উঠে আসে বিভিন্ন সময়ে গড়ে উঠা এসব সংগঠনের শুরুটা ভালো হলেও শেষ পরিণতি ভয়াবহ। ব্যক্তি স্বার্থ, আধিপত্য বিস্তার, পদ-পদবি, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মতপার্থক্য প্রবাসেও বাংলাদেশীদের  দ্বিধাবিভক্তির জাতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছায় হোক সামাজিক দায়বদ্ধতা দিয়ে শুরু করা এসব সংগঠনের শেষটা চলে ভাঙ্গনের দিকে।  যার ফলে একে গড়ে উঠছে বিভাগীয়, জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন তথা গ্রাম পর্যায়ের একই নামের বিভিন্ন সংগঠন। আর বিভিন্ন নামে গড়ে উঠা এসব সংগঠন বছরে একবার প্রীতিভোজ এবং রমজানের ইফতার আয়োজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। যা মূলত কমিউনিটির গণমাধ্যম
পাঠকদের জন্য এবারের আয়োজন হচ্ছে বৃহত্তর কুমিল্লাবাসীর সংগঠনের চালচিত্র। নব্বই দশকের শুরুতে প্রথম প্রতিষ্ঠা লাভ করে বৃহত্তর কুমিল্লাবাসীর সামাজিক সংগঠন ‘দি গ্রেটার কুমিল্লা সঞ্চয় ইনক’ তৎকালিন উদ্যোক্তাদের লক্ষ্য ছিল মাসিক সঞ্চয় দিয়ে বড় অঙ্কের ফান্ড রাইজিং করা। যা দিয়ে বৃহত্তর কুমিল্লাবাসীর সমস্যা ও সম্ভাবনাময় খাতে ব্যয় করা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ‘গ্রেটার কুমিল্লা সঞ্চয় ইনক’-এর পরিকল্পনা মতে- প্রতিমাসে ১ হাজার ডলার করে জমা দেয় সদস্যরা। প্রায় ১শ জনের মত সদস্যদের দেয়া  জমাকৃত অর্থে কেনা হয় একটি বাড়ি। সে সময়ে  ব্রুকলিনের সার্চ ম্যাকডোনাল্ডেস ক্রয়কৃত বাড়িটির মূল্য ছিল বেশ। পরবর্তী সময়ে সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্টরা নিজেদের স্বার্থে বাড়িটিকে নির্মাণের নামে ঋণে ফেলে দেয়। এরপর আর আলোর মুখ দেখেনি। ১ হাজার ডলার করে চাঁদা দেয়া সদস্যরা ১৫ বছর পরে ফিরে পান ৩শ ৮৪ ডলার। যা সত্যিই দু:খজনক বলে মনে করেন কেউ কেউ। অনেকে বলছেন, ‘ব্যক্তি স্বার্থ এর অভ্যন্তরীণ কোন্দলই এর বড় কারণ। নির্মাণের উদ্যোগ না নিয়ে বাড়িটি বিক্রি করেও বহু টাকা আয় করা সম্ভব ছিল বলে দাবি তৎকালিন সদস্যদের।
গ্রেটার কুমিল্লা সঞ্চয় ইনক’-এর সময়ে নব্বই দশকে প্রতিষ্ঠা লাভ করে বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতির সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন হাজী আলী আক্কাস। উত্তর আমেরিকায় বসবাসকারি কুমিল্লা-চাঁদপুর- ব্রাহ্মণবাড়িয়া’র প্রবাসী বাংলাদেশীদের নিয়েই গঠন হয় এই সংগঠনটি। কিন্তু সময়ের পথ পরিক্রমায় একটি থেকে গড়ে উঠে আরো বেশ কয়েকটি। (১) বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতি। (২) কুমল্লিা সোসাইটি অব নর্থ আমেরিকা ইনক। (৩) কুমিল্লা সোসাইটি অব ইউএসএ ইনক। (৪) কুমিল্লা জেলা সোসাইটি। (৫) ব্রাহ্মণবাড়িয়া কমিউনিটি। (৬) ব্রাহ্মণবাড়িয়া সোসাইটি ইউএসএ ইনক। (৭) রুপসী চাঁদপুর ফাউন্ডেশন।  (৮) গ্রেটার কুমিল্লা সোসাইটি এইএসএ ইনক। (৯) গ্রেটার কুমিল্লা ফাউন্ডেশন নর্থ আমেরিকা।
এদিক, শুধুমাত্র নামে চলছে আরো বেশ ক’টি সংগঠন। যারা বছরে একবার হলেও বণভোজন কিংবা সভা-সেমিনার করছে। আর এস সংগঠনের মধ্যে রয়েছে। (১০) গ্রেটার লাকশাম সোসাইটি ইউএসএ ইনক। (১১) কসবা সোসাইটি ইউএসএ ইনক। (১২) দেবিদ্বার সোসাইটি ইউএসএ ইনক (১২) চান্দিানা সোসাইটি ইউএসএ ইনক। (১৩) বৃহত্তর দাউদকান্দি সোসাইটি ইউএসএস ইনক। (১৪) মতলব আরবান সোসাইটি ইউএসএ ইনক। (১৫) চৌদ্দগ্রাম সোসাইটি ইউএসএ ইনক অন্যতম। যাদের মধ্যে কয়েকটি কার্যক্রম চললেও রেজিস্ট্রেশন বিহীন কমিটি রয়েছে।
অন্যদিকে, প্রথমে হাঁক-ডাক দিয়ে শুরু হওয়া যেসব সংগঠন সৃষ্টি হয়েছে বৃহত্তর কুমিল্লার; বর্তমারে বলা যায় বিলুপ্ত তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- (১৬) কুমিল্লা সঞ্চয় ইনক।  (১৭) কুমিল্লা উন্নয়ন সোসাইটি। (১৯) গ্রেটার কুমিল্লা ফাউন্ডেশন ইউএসএ ইনক। (২০) গ্রেটার কুমিল্লা সোসাইটি অব নর্থ আমেরিকা। এসব সংগঠন শুধু মাত্র গড়ে উঠেছে বৃহত্তর কুমিল্লাকে ঘিরে ও তার আশে পাশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলাকে কেন্দ্র করে। শুরুতে কার্যক্রম থাকলেও বর্তমানে তাদের কোন সাংগঠনিক কাঠামো নেই। বাংলা পত্রিকার সরেজমিন প্রতিবেদন তা উঠে আসে।
বৃহত্তর কুমিল্লাকে ঘিরে গড়ে উঠা প্রায় কড়ি’র অধিক সংগঠনের নেতাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও অনেককে পাওয়া যায়নি। বাংলা পত্রিকার সাথে কথা হয় কুমিল্লা সোসাইটি অব ইউএসএ ইনক-এর সাবেক প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল খালেকের। প্রশ্ন ছিল বৃহত্তর কুমিল্লার একটি সংগঠন কেন নয়? তিনি জানান, ‘আসলে এর জন্য আমরাই দায়ি। প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত যতগুলো সংগঠন ভাঙ্গা-গড়ার আবর্তে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে তার অন্যতম কারণ হচ্ছে অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি এবং ক্ষমতার দ্বম্ভ’।
তিনি আরো বলেন, ‘ধরুণ শুরু দিকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি নির্বাচন কিংবা আহ্বায়ক কিমিট দিয়ে গঠন হয় সংগঠন। এরপর চাঁদা আদায়ে হিসেব ভান্ডারে জমাও হয় বেশ অর্থ। ঠিক যখন নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা এসে যায়; তখনই বেঁকে বসে দায়িত্বে থাকা নেতারা। যিনি ক্ষমতায় থাকেন, তিনি তা ছাড়তে চান না। এটাই হচ্ছে প্রথম কারণ। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে ফান্ড নিয়ে দুর্নীতি।
ইঞ্জিনিয়ার খালেকের কাছে জানতে চাওয়া হয় এসব সংগঠনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা বিষয়ে। জবাবে তিনি জানান, ‘আসলে এখানে গড়ে উঠা সমিতিরগুলোর গঠনমুলক কার্যক্রম হচ্ছে বছরে দুবার। কোন কোন ক্ষেত্রে একবারই সীমাবদ্ধ। বছর শেষে একটি পিকনিক আর রমজানের ইফতার পার্টির মধ্যেই এসব সংগঠনের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ। তখন কমিউনিটির পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ এতেই তুষ্টি আমাদের প্রবাসীরা। তবে, আমি যখন একটি সংগঠনের দায়িত্বে আসি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হই। তখন চেষ্টা করি বৃহত্তর কুমল্লিার একটি সংগঠন করতে। আহ্বান জানাই আমি দায়িত্ব ছেড়ে দেবো তবুও আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। দু:খের বিষয় কোন সাড়া পাইনি। আসলে পদ-পদবী এবং ফেইস ভ্যালু নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে একটা ভেঙ্গে আরেকটি গড়ে নেতা সেজে বসে থাকাটাই মুখ্য। এ ছাড়া আর কিছুই নয়। যা আসলে আমাদেরে এখানকার প্রজন্মের কাছে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে আমি মনে করি’।
একই অঞ্চলের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের একাধিক সংগঠন গড়ার কারন সম্পর্কে বাংলা পত্রিকার কাছে তুলে ধরেন ‘কুমিল্লা সোসাইটি অব ইউএসএ ইনক’র সাবেক সভাপতি শাহ্ আলম। তিনি জানান, ‘মূলত আমাদের প্রতিষ্ঠাকালিন লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য থাকে সামাজিক দ্বায়বদ্ধতা নিয়ে সংগঠন গড়া। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস পরবর্তীতে এসে আমরা আমাদের কমিটমেন্ট ধরে রাখতে পারি না। প্রবাসেও আমার জড়িয়ে পড়ি অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর পদ-পদবীর লোভের দিকে। যার ফলশ্রুতিতে একটি থেকে আরেকটি সংগঠনের জন্ম নেয়া’।
বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতির সাথেও সম্পৃক্ত থাকা শাহ্ আলম আরো বলেন, ‘আপনি ঠিকই বলেছেন। আসলে আমরা বাংলাদেশীরা ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম তৈরীতে পুরোপুরি ব্যর্থ। এখানে অন্যান্য দেশ ও জাতির বসবাস। আমাদের মত তাদের এতগুলো সংগঠন নেই। এটা সত্যিই দু:খজনক। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এসব সমাধানে কারা উদ্যোগ নিবে। এখানকার প্রবাসী যারা মুলধারার সাথে সম্পৃক্ত; তারা সভা-সমিতি এড়িয়ে চলেন। কমিউনিটি থেকে আলাদা বসবাস করছেন। তাই ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় হোক বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতি থেকে পথচলা শুরু হয়ে আমাদের আজ একই অঞ্চলের এতগুলো সংগঠন’। তিনি বলেন, ‘কুমল্লিা সোসাইটি অব নর্থ আমেরিকা ইনক. নেতৃত্ব ভাগ হয়ে যায়। গড়ে উঠে কুমিল্লা সোসাইটি অব ইউএসএ ইনক.। এর সেটা ভেঙ্গে জন্ম নেয় কুমিল্লা জেলা সোসাইটি। এছাড়াও আমাদের পাশের রয়েছে আরো তিনটি সংগঠন। যার মধ্যে হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কমিউনিটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সোসাইটি ইউএসএ ইনক, রুপসী চাঁদপুর ফাউন্ডেশন’।
এতকিছুর পরও বৃহত্তর কুমিল্লার বাসিন্দা এবং প্রবাসী বাংলাদেশী অনেকেই আশা করছেন, ‘বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতি যদি একটি হতো তাহলে হয়তো আমাদের অঞ্চলের প্রবাসীদের জন্য বড় কোন ভূমিকা রাখতে পারতাম। আমরা পিকনিকগুলোতে কুমল্লিা বাসির মিলণ-মেলায় পরিণত হই ঠিকই; কিন্তু পরে তা ভুলে যাই’।
মূলধারার সাথে সম্পৃক্ত একজন প্রবাসী বাংলাদেশী ও কমিউনিটি এক্টিভিটস বাংলা পত্রিকার সাথে তার হতাশার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আসলে আমরা দেশেও দ্বিধাবিভক্ত জাতিতে পরিণত হয়েছি। ক্ষমতার মোহে অন্ধ আমরা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এখানে সংগঠন করে এটার সভাপতি কিংবা সেক্রেটারি হলে আমাদের জাতি কিংবা প্রবাসীদের কী লাভ? আমারও প্রশ্ন। পুরো যুক্তরাষ্ট্রে একটি সংগঠন থাকতে পারে। যা পুরো বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। তা স্বপ্নই রয়ে গেল বাস্তবে সম্ভব হবে না হয়তো। আর রাজনীতির সংগঠনের কথা কী বলবো। আমরা সত্যিই নিজেদের মূল্যায়ন করতে জানি না। এর খেসারত দিতে হবে আজন্ম’।
thকুমিল্লার ইতিহাস:
কুমিল্লার মোট আয়তন ২৮০ কিলোমিটার। এর উত্তরে বুড়িচং ও ত্রিপুরা, দক্ষিণে লাকসাম ও চৌদ্দগ্রাম এবং পশ্চিমে বরুড়া অবস্থিত। কুমিল্লার উপর দিয়ে যেসব নদী প্রবাহমান, সেগুলোর মধ্যে গোমতি ও ছোট ফেনী উল্লেখযোগ্য। কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়। (বাংলা পত্রিকা)