বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা
- প্রকাশের সময় : ০২:৩১:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩১ অক্টোবর ২০১৬
- / ৮২৭ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক’র দ্বি-বার্ষিক (২০১৭-২০১৮) নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ৩০ আক্টোবর রোববার বিকেলে সোসাইটির নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ টিপু সুলতান এই ফলাফল ঘোষণা করেন এবং প্রার্থীদের হাতে ফলাফলের কপি ও সার্টিফিকেট তুলে দেন। এসময় নির্বাচন কমিশনের সদস্যবৃন্দ যথাক্রমে আবদুল হাকিম, আনোয়ার হোসেন, জামান তপন, ইউনুস সরকার ছাড়াও নবনির্বাচিত সভাপতি কামাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী, সিনিয়র সহ সভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদারসহ অন্য প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকরাও উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, গত ২৩ অক্টোবর রোববার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেল সোসাইটির কার্যকরী পরিষদের ১৯টি পদের মধ্যে ১৭টিতে জয় লাভ করে। অপর দুটি পদ পায় ‘কুনু-আজম’ প্যানেলের দুই প্রার্থী। নির্বাচনে ১৮ হাজার ৫৫১ জন ভোটারের মধ্যে ১১ হাজার ১৫৭ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। নির্বাচনে ১৯ পদে ৩৯জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে সভাপতি পদে প্রার্থী ছিলেন তিনজন। খবর ইউএনএ’র।
অনুষ্ঠানে টিপু সুলতান গণমাধ্যমসহ প্রার্থী এবং ভোটারদের আন্তরিক সহযোগিতায় একটি সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়া সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ সোসাইটির ইতিহাসে স্মরণকালের সবচেয়ে রেকর্ড পরিমাণ ভোটার নিয়ে এবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকলের ঐকান্তিক চেষ্টায় কোন ধরনের সমস্যা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, এই নির্বাচন দুর্দান্ত প্রতিযোগিতামূলক ছিলো। নির্বাচনে ভূমিধ্বস বিজয় নয়, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিলো। কেননা, বিজয়ী ও বিজিত প্রার্থীদের মধ্যে ভোটের ব্যবধান ছিলো কম।
অনুষ্ঠানে নবনির্বাচিত সভাপতি কামাল আহমেদ ও নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন সিদ্দিকীও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। এসময় তারা প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের নিয়ে সোসাইটিকে আরো শক্তিশালী করার অঙ্গীকার পুনব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে প্রতিদ্বন্দ্বী ‘কুনু-আজম’ প্যানেলের বিজয়ী দুই প্রার্থী ছাড়া এই প্যানেলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী বা তাদের প্রতিনিধি সহ অন্য কেউ উপস্থিত না থাকার বিষয়ে কেউ কেউ উম্মা প্রকাশ এবং সমালোচনা করেন।
অনুষ্ঠানে কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে আজিমুর রহমান বুরহান, মকবুল রহিম চুনুই, ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, সাজ্জাদ হোসাইন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ টিপু সুলতান প্রথমে সভাপতি কামাল আহমেদের হাতে ফলাফলের কপি ও কমিশনের সার্টিফিকেট তুলে দেন। এরপর পর্যায়ক্রমে সিনিয়র সহ সভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদার, সহ সভাপতি আব্দুল খালেক খায়ের, সাধারণ সম্পাদক মো: রুহুল আমিন সিদ্দিকী সহ অন্যান্য পদে বিজয়ী প্রার্থীদের হাতে ফলাফলের কপি ও কমিশনের সার্টিফিকেট তুলে দেন।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত অনুষ্ঠানিক ফলাফল অনুযায়ী ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেল থেকে সভাপতি পদে বিজয়ী কামাল আহমেদ পেয়েছেন ৫ হাজার ৭৪৪ ভোট, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি সোসাইটির বর্তমান সভাপতি আজমল হোসেন কুনুর প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৭৫৪ ভোট। স্বতস্ত্র সভাপতি পদপ্রার্থী ওসমান চৌধুরী পেয়েছেন ৩০৭ ভোট।
সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী রুহুল আমিন সিদ্দিকী পেয়েছেন ৫ হাজার ৫৮৪ ভোট। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্ধি কাজী সাখাওয়াত হোসেন আজমের প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৯৭৩ ভোট।
সিনিয়র সহ সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম হাওলাদার। তার প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৪৮১ ভোট। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্ধি শাহ নেওয়াজ পেয়েছেন ৫ হাজার ৪২ ভোট।
সহ সভাপতি পদে নির্বাচিত আবদুল খালেক খায়ের পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৪৩ ভোট। তার একমাত্র নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি শফি আলম (লাল সফি)-এর প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৭৩২।
সহ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত সৈয়দ এম কে জামান পেয়েছেন ৫ হাজার ৪৪৪ ভোট। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি মফিজুল ইসলাম ভূইয়া রুমির প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৭৩০ ভোট।
কোষাধ্যক্ষ পদে পুন: নির্বাচিত মোহাম্মদ আলীর প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৬৪১। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি সোসাইটির সাবেক কোষাধ্যক্ষ নিশান রহিমের প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৭২।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন আবুল কালাম ভূঁইয়া। তার প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৪৪৪। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি রফিকুল ইসলাম ডালিমের প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৭৫০।
সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে পুন: নির্বাচিত হয়েছেন মনিকা রায়। তার প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৫৯২। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন সেলিম ইব্রাহীমের প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৬৮৬।
জনসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক পদে নির্বাচিত রিজু মোহাম্মদের প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ১৫৮। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি সিরাজুল হক জালালের প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ১০৬।
সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত নাদির এ আইয়্যুব-এর প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৫৪৭। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি মোহাম্মদ টিপু খানের প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৭৩৪।
সাহিত্য সম্পাদক পদে নির্বাচিত নাসির উদ্দিন আহমেদের প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৩৬৩। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি শেখ হায়দার আলীর প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৭৯৮।
ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক পদে নির্বাচিত মোহাম্মদ নওশাদ হোসেনের প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৩৬৯। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি সম্রাট হোসেন এমিলির প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৮৭২।
স্কুল ও শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক পদে নির্বাচিত আহসান হাবিবের প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৪৩৯। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি ওয়াহিদ কাজি এলিনের প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৭১০।
কার্যকরী পরিষদের সদস্য পদে বিজয়ীরা হলেন (ছয়জন)- ফারহানা চৌধুরী (প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৫৫৫), মাইনুল উদ্দিন মাহবুব (প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৪১৮), মোহাম্মদ আজাদ বাকির (প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ২৯৩), মোহাম্মদ সাদী মিন্টু (প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ২৭৬), আবুল কাসেম চৌধুরী (প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ১০২) এবং সরোয়ার খান বাবু (প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৪৩)।
কার্যকরী পরিষদের সদস্য পদে পরাজিত প্রার্থীরা হলেন- মনিরুল ইসলাম (প্রাপ্ত ভোট ৫হাজার ২৭), ডা. শাহনাজ (প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ২১), কাজী তোফায়েল ইসলাম (প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৬৬৩), মো: জসীম উদ্দিন (প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৫৩২), আশরাফ আলী খান লিটন (প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৪১০) ও খায়ের আকন্দ (প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ২৯২)।
আরো উল্লেখ্য, সোসাইটির নির্বাচনে বিজয়ী ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেলের নির্বাচনী শ্লোগান ছিলো- ‘ঐক্যবদ্ধ কমিউনিটি ও মূলধারায় অবস্থান সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে জণকল্যানে পরিক্ষিত সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সার্বজনীন পরিষদ’। এই প্যানেলের নির্বাচনী এজেন্ডার মধ্যে রয়েছে: ১. নির্বাচিত হওয়ার তিন মাসের মধ্যে সদস্য ফি ১০ ডলারের স্থলে ৫ডলার নির্ধারণ। ২. বয়স্ক শিক্ষা, বাংলা শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা ও ইমিগ্রেশনের জন্য সোসাইটির শাখা অফিস স্থাপন। ৩. মূলধারায় বাংলাদেশীদের সম্পৃক্ত করতে কাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ। ৪. বাংলাদেশীদের জন্য ফেডারেল, ষ্টেট ও সিটি প্রশাসনে চাকুরী, কর্মসংস্থান, চিকিৎসা ও ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা আদায়ে ব্যবস্থা গ্রহণ। ৫. আঞ্চলিক সংগঠনের সমন্বয়ে ‘প্রবাসী কল্যাণ ফান্ড’ গঠন ও ‘লিগ্যাল এইড সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা। ৬. প্রবাসী বাংলাদেশীদের নিরাপত্তা, সম্পত্তি রক্ষা সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা আদায়ে বাংলাদেশ সরকারের ফলপ্রসু আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ। ৭. নিউইয়র্ক-ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে বিমান চালুর ব্যবস্থা। ৮. বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ সমস্যার সমাধানের জন্য জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সাথে জোর লবিং-এর ব্যবস্থা এবং দেশের সকল জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা। ৯. বাংলাদেশ লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা ছাড়াও নতুন প্রজন্মের জন্য প্রতিযোগিতামূলক বৃত্তি প্রদান ও মেধা বিকাশের উদ্যোগ গ্রহণ। ১০. স্থায়ী বাংলাদেশ ভবন ও শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠা, ডে প্যারেড আয়োজন এবং সোসাইটিকে জবাবদিহিমূলক বাংলাদেশী পার্লামেন্টে রূপান্তর। ১১. অনলাইনে সদস্যপদ গ্রহণ ও সহজকরণ। ১২. সোসাইটির সকল কর্মকান্ডে সাবেক কর্মকর্তাদের সম্পৃক্তকরণ এবং তাদের অবদান সংরক্ষণ। ১৩. হেইট ক্রাইম প্রতিরোধ এবং এমন ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সুবিচার ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের পদক্ষেপ। ১৪. নবাগত প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য ‘ওয়েলকাম সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা ও চাকুরীর ব্যবস্থা এবং ১৫. ডাটাবেজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করার জন্য তথ্যবহুল ওয়েবসাইট চালুর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ।