নিউইয়র্ক ০৬:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন : উডসাইড কেন্দ্রই বিজয় নিশ্চিত করলো ॥ ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেলের ঐতিহাসিক জয়

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৫:৫৮:৫০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ অক্টোবর ২০১৬
  • / ৮৬৯ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশীদের আমব্রেলা সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক’র বহুল আলোচিত নির্বাচনে ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়লাভ করেছে। সোসাইটির ইতিহাসে সর্বাধিক ১৮ হাজার ৫৫১জন ভোটারের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত শাসরুদ্ধকর ও ঐতিহাসিক এই নির্বাচনে কামাল আহমেদ সভাপতি ও রুহুল আমিন সিদ্দিকী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। আর সর্বাধিক ভোটের কেন্দ্র উডসাইডই ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেলের বিজয় নিশ্চিত করলো। ফলে সবমিমিলিয়ে ঐতিহাসিক জয় পেলো এই প্যানেল। উডসাইড কেন্দ্র ছাড়া অন্যান্য চারটি কেন্দ্রের ভোটের হিসেবে ‘কুনু-আজম’ প্যানেল খানিকটা এগিয়ে ছিলো। নির্বাচনে ‘কুনু-আজম’ ও ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেল সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এছাড়াও সভাপতি পদে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। সোসাইটির কার্যকরী পরিষদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ মোট ১৯টি পদে ৩৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ৫টি কেন্দ্রেই আইডি নির্ধারক মেশিন ও অদৃশ্যকালীর ব্যবস্থায় ভোট গ্রহণ এবং জিপকোড অনুযায়ী ভোটারদের কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়। ভোট চলাকালে কেন্দ্রগুলোতে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। খবর ইউএনএ’র।
kamal-ruhul-picনির্বাচনে ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ সহ ১৭টি পদে আর প্রতিদ্বন্দ্বি ‘কুনু-আজম’ প্যানেল দুটি পদে জয়লাভ করে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সোসাইটির ইতিহাসে এবারই সর্বাধিক সংখ্যক ১৮ হাজার ৫৫১ জন প্রবাসী বাংলাদেশী ভোটারের মধ্যে ১১ হাজার ১৫৭ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ২৩ অক্টোবর রোববার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়। নিউইয়র্ক সিটির পাঁচ বরোর মধ্যে চার বরোর ৫টি কেন্দ্রে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত টানা ১২ ঘণ্টা একটানা ভোট গ্রহণ চলে।
এদিকে নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরপরই বিজিত আজমল হোসেন কুনু বিজয়ী সভাপতি কামাল আহমেদকে ফুল দিয়ে বরণ করে তাকে অভিনন্দন জানিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। নির্বাচন কমিশন সহ সেখানে উপস্থিত সবাই এই দৃষ্টান্তকে সাধুবাদ জানান। উল্লেখ্য, সোসাইটির বিগত নির্বাচনে নব নির্বাচিত সভাপতি কামাল আহমেদের কাছে বর্তমান সভাপতি আজমল হোসেন কুনু পরাজিত হয়েছিলেন। তখন কামাল আহমেদ সোসাইটির সভাপতি ছিলেন। আর রোববারের নির্বাচনে কুনু পরাজিত হলেন কামালের কাছে। কামাল-কুনু সম্পর্কে মামা-ভাগে। তাদের উভয়ের বাড়ী সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলায়।
‘কামাল-রুহুল’ প্যানেলের বিজয়ী প্রার্থীরা হলেন: সভাপতি- কামাল আহমেদ, সিনিয়র সহ সভাপতি- আব্দুর রহিম হাওলাদার, সহ সভাপতি- আ. খালেক খায়ের, সাধারণ সম্পাদক- মোহাম্মদ রুহুল আমিন সিদ্দীকি, কোষাধ্যক্ষ- মোহাম্মদ আলী, সহ সাধারণ সম্পাদক- সৈয়দ এমকে জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক- আবুল কালাম ভুইয়া, সাংস্কৃতিক সম্পাদক- মনিকা রায়, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক- নাদির এ আইয়ুব, সাহিত্য সম্পাদক- নাসির উদ্দীন আহমদ, ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক- মোহাম্মদ এম হোসেন, স্কুল ও শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক- আহসান হাবিব, এবং কার্যকরী পরিষদ সদস্য- মোহাম্মদ সাদি মিন্টু, আবুল কাসেম চৌধুরী, ফারহান চৌধুরী, মোহাম্মদ আজাদ বাকির ও মাইনুদ্দীন মাহবুব।
‘কুনু-আজম’ প্যানেলের দুই বিজয় প্রার্থীরা হলেন: জনসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক- মোহাম্মদ রিজু এবং কার্যকরী পরিষদ সদস্য সরোয়ার খান বাবু।
bds-elec-final_tipu-sultanনির্বাচনের ভোট গণনা শেষে নির্বাচন কমিশন রোববার মধ্যরাতে বেসরকারী ফলাফল ঘোষণা করেন। মূল কেন্দ্র নিউইয়র্ক সিটির উডসাইডস্থ গুলশান টেরেসে ৫ কেন্দ্রের সকল ভোট গণনা শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সৈয়দ টিপু সুলতান ফল প্রকাশ করেন। এর আগে স্ব স্ব কেন্দ্রের ভোট গণনা শেষে সেখানেই ফলাফল প্রকাশ করা হয়। চুড়ান্ত ফল প্রকাশের সময় ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেলের সমর্থকরা মুর্হুমুহ শ্লোগন দেন এবং ভি চিহ্ন প্রদর্শন করে উল্লাস প্রকাশ করেন। পরে বিজয়ী প্রার্থীদের সঙ্গে বিজীত প্রার্থীরা আলিঙ্গন করেন। ফল ঘোষণার সময় নির্বাচন কমিশনের সদস্য যথাক্রমে মোহাম্মদ এ হাকিম মিয়া, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, মোহাম্মদ জামান তপন ও ইউনুছ সরকার এবং প্রিসাইডিং অফিসার সাইফ আজাদ ছাড়াও প্রায় সকল প্রার্থী, এজেন্ট, সমর্থক ও সোসাইটির সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কে কত ভোট পেলেন: নির্বাচন কমিশন ঘোষিত বেসরকারী ফলাফল অনুযায়ী ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেল থেকে সভাপতি পদে বিজয়ী কামাল আহমেদ পেয়েছেন ৫ হাজার ৭৪৪ ভোট, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি সোসাইটির বর্তমান সভাপতি আজমল হোসেন কুনুর প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৭৫৪ ভোট। স্বতস্ত্র সভাপতি পদপ্রার্থী ওসমান চৌধুরী পেয়েছেন ৩০৭ ভোট।
সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী রুহুল আমিন সিদ্দিকী পেয়েছেন ৫ হাজার ৫৮৪ ভোট। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্ধি কাজী সাখাওয়াত হোসেন আজমের প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৯৭৩ ভোট।
সিনিয়র সহ সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম হাওলাদার। তার প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৪৮১ ভোট। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি শাহ নেওয়াজ পেয়েছেন ৫ হাজার ৪২ ভোট।
সহ সভাপতি পদে নির্বাচিত আবদুল খালেক খায়ের পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৪৩ ভোট। তার একমাত্র নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি শফি আলম (লাল সফি)-এর প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৭৩২।
সহ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত সৈয়দ এম এ জামান পেয়েছেন ৫ হাজার ৪৪৪ ভোট। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি মফিজুল ইসলাম ভূইয়া রুমির প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৭৩০ ভোট।
কোষাধ্যক্ষ পদে পুন: নির্বাচিত মোহাম্মদ আলীর প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৬৪১। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি সোসাইটির সাবেক কোষাধ্যক্ষ নিশান রহিমের প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৭২।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন আবুল কালাম ভূঁইয়া। তার প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৪৪৪। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি রফিকুল ইসলাম ডালিমের প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৭৫০।
সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে পুন: নির্বাচিত হয়েছেন মনিকা রায়। তার প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৫৯২। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন সেলিম ইব্রাহীম।
জনসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক পদে নির্বাচিত রিজু মোহাম্মদের প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ১৫৮। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি সিরাজুল হক জালালের প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ১০৬।
সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত নাদির এ আইয়্যুব-এর প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৫৪৭। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি মোহাম্মদ টিপু খানের প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৭৩৪।
সাহিত্য সম্পাদক পদে নির্বাচিত নাসির উদ্দিন আহমেদের প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৩৬৩। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি শেখ হায়দার আলীর প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৭৯৮।
ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক পদে নির্বাচিত মোহাম্মদ নওশাদ হোসেনের প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৩৬৯। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি সম্রাট হোসেন এমিলির প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৮৭২।
স্কুল ও শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক পদে নির্বাচিত আহসান হাবিবের প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৪৩৯। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি ওয়াহিদ কাজি এলিনের প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৭১০।
কার্যকরী পরিষদের সদস্য পদে বিজয়ীরা হলেন (ছয়জন)- ফারহানা চৌধুরী (প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৫৫৫), মাইনুল উদ্দিন মাহবুব (প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৪১৮), মোহাম্মদ আজাদ বাকির (প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ২৯৩), মোহাম্মদ সাদী মিন্টু (প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ২৭৬), আবুল কাসেম চৌধুরী (প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ১০২) এবং সরোয়ার খান বাবু (প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৪৩)।
কার্যকরী পরিষদের সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী বিজিতরা হলেন- কাজী তোফায়েল ইসলাম, জসিম উদ্দিন, আশরাফ আলী খান লিটন, আবুল খায়ের আকন্দ, ডা. শাহনাজ লিপি ও মইনুল ইসলাম।
rezuনির্বাচনের ফল ঘোষণার পরপরই জনসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক পদপ্রার্থী রিজু মোহাম্মদ তার ভোট গণনা চ্যালেঞ্জ করেন নির্বাচন কমিশন তার চ্যালেঞ্জ আমলে নিয়ে পুনরায় ভোট গণনা করে রিজুকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। রোববার রাতে রিজু মোহাম্মদ ইউএনএ প্রতিনিধিকে বলেন, ভোট গণনায় ভুল করে আমার প্রতিদ্বন্দ্বিকে বিজয়ী ঘোষণা করে ইসি। কিন্তু সেই সময় তাৎক্ষনিকভাবে আমি আমার সকল কেন্দ্রের ভোট গণনা করে দেখি এবং আমার প্রতিদ্বন্দ্বির চেয়ে ৫২ ভোটে বেশী এগিয়ে থাকি। বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করলে ইসি সাথে সাথে আমাকেই বিজয়ী ঘোষণা করে এবং আমি ৫২ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হই। এদিকে কার্যকরী পরিষদের অন্যতম সদস্য পদপ্রার্থী মইনুল ইসলাম চ্যালেঞ্জ করে নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়ে তার ভোট পুন: গণনার দাবী জানিয়েছেন।
এদিকে নির্বচানের ফলাফল ঘোষণার পর পরই নব নির্বাচিত সভাপতি কামাল আহমদ তার বিজয়ের জন্য কমিউনিটির সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, সোসাইটিকে একা এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। এজন্য তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
বিজিত আজমল হোসেন কুনু নব নির্বাচিত সভাপতিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে গেলে শত মানুষের করতালীতে মুখরিত হয়ে উঠে গুলসান টেরেস। মধ্যরাতে এসময় এক অভাবনীয় দৃশ্যের অবতারনা হয়।
নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগে নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ টিপু সুলতান বলেন, একটি গ্রহনযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমাদের চেষ্টা ও আন্তরিকতার কোন কমতি ছিল না। নির্বাচন পরিচালনায় প্রার্থী ও মিডিয়াসহ কমিউনিটির সকলের সহযোগিতার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, একটি সুন্দর, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমরা বদ্ধপরিকর ছিলাম। এজন্য কোন ছাড় দেয়া হয়নি। এই কাজে সার্বিক সহযোগিতার জন্য তিনি নির্বাচন কমিশনের সকল সদস্যকে অভিনন্দন জানান।
অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের সদস্য আব্দুল হাকিম মিয়া, আনোয়ার হোসেন, জামান তপন, ইউনুস সরকার এবং প্রিসাইডিং অফিসার সাইফ আজাদ বক্তব্য রাখেন। তারা সকলেই নিজ নিজ কেন্দ্রের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেন।
এছাড়া একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠান সফলের জন্য উপস্থিত সকলেই নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ টিপু সুলতান সহ নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং অভিনন্দন জানান।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন : উডসাইড কেন্দ্রই বিজয় নিশ্চিত করলো ॥ ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেলের ঐতিহাসিক জয়

প্রকাশের সময় : ০৫:৫৮:৫০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ অক্টোবর ২০১৬

নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশীদের আমব্রেলা সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক’র বহুল আলোচিত নির্বাচনে ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়লাভ করেছে। সোসাইটির ইতিহাসে সর্বাধিক ১৮ হাজার ৫৫১জন ভোটারের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত শাসরুদ্ধকর ও ঐতিহাসিক এই নির্বাচনে কামাল আহমেদ সভাপতি ও রুহুল আমিন সিদ্দিকী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। আর সর্বাধিক ভোটের কেন্দ্র উডসাইডই ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেলের বিজয় নিশ্চিত করলো। ফলে সবমিমিলিয়ে ঐতিহাসিক জয় পেলো এই প্যানেল। উডসাইড কেন্দ্র ছাড়া অন্যান্য চারটি কেন্দ্রের ভোটের হিসেবে ‘কুনু-আজম’ প্যানেল খানিকটা এগিয়ে ছিলো। নির্বাচনে ‘কুনু-আজম’ ও ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেল সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এছাড়াও সভাপতি পদে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। সোসাইটির কার্যকরী পরিষদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ মোট ১৯টি পদে ৩৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ৫টি কেন্দ্রেই আইডি নির্ধারক মেশিন ও অদৃশ্যকালীর ব্যবস্থায় ভোট গ্রহণ এবং জিপকোড অনুযায়ী ভোটারদের কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়। ভোট চলাকালে কেন্দ্রগুলোতে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। খবর ইউএনএ’র।
kamal-ruhul-picনির্বাচনে ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ সহ ১৭টি পদে আর প্রতিদ্বন্দ্বি ‘কুনু-আজম’ প্যানেল দুটি পদে জয়লাভ করে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সোসাইটির ইতিহাসে এবারই সর্বাধিক সংখ্যক ১৮ হাজার ৫৫১ জন প্রবাসী বাংলাদেশী ভোটারের মধ্যে ১১ হাজার ১৫৭ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ২৩ অক্টোবর রোববার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়। নিউইয়র্ক সিটির পাঁচ বরোর মধ্যে চার বরোর ৫টি কেন্দ্রে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত টানা ১২ ঘণ্টা একটানা ভোট গ্রহণ চলে।
এদিকে নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরপরই বিজিত আজমল হোসেন কুনু বিজয়ী সভাপতি কামাল আহমেদকে ফুল দিয়ে বরণ করে তাকে অভিনন্দন জানিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। নির্বাচন কমিশন সহ সেখানে উপস্থিত সবাই এই দৃষ্টান্তকে সাধুবাদ জানান। উল্লেখ্য, সোসাইটির বিগত নির্বাচনে নব নির্বাচিত সভাপতি কামাল আহমেদের কাছে বর্তমান সভাপতি আজমল হোসেন কুনু পরাজিত হয়েছিলেন। তখন কামাল আহমেদ সোসাইটির সভাপতি ছিলেন। আর রোববারের নির্বাচনে কুনু পরাজিত হলেন কামালের কাছে। কামাল-কুনু সম্পর্কে মামা-ভাগে। তাদের উভয়ের বাড়ী সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলায়।
‘কামাল-রুহুল’ প্যানেলের বিজয়ী প্রার্থীরা হলেন: সভাপতি- কামাল আহমেদ, সিনিয়র সহ সভাপতি- আব্দুর রহিম হাওলাদার, সহ সভাপতি- আ. খালেক খায়ের, সাধারণ সম্পাদক- মোহাম্মদ রুহুল আমিন সিদ্দীকি, কোষাধ্যক্ষ- মোহাম্মদ আলী, সহ সাধারণ সম্পাদক- সৈয়দ এমকে জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক- আবুল কালাম ভুইয়া, সাংস্কৃতিক সম্পাদক- মনিকা রায়, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক- নাদির এ আইয়ুব, সাহিত্য সম্পাদক- নাসির উদ্দীন আহমদ, ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক- মোহাম্মদ এম হোসেন, স্কুল ও শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক- আহসান হাবিব, এবং কার্যকরী পরিষদ সদস্য- মোহাম্মদ সাদি মিন্টু, আবুল কাসেম চৌধুরী, ফারহান চৌধুরী, মোহাম্মদ আজাদ বাকির ও মাইনুদ্দীন মাহবুব।
‘কুনু-আজম’ প্যানেলের দুই বিজয় প্রার্থীরা হলেন: জনসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক- মোহাম্মদ রিজু এবং কার্যকরী পরিষদ সদস্য সরোয়ার খান বাবু।
bds-elec-final_tipu-sultanনির্বাচনের ভোট গণনা শেষে নির্বাচন কমিশন রোববার মধ্যরাতে বেসরকারী ফলাফল ঘোষণা করেন। মূল কেন্দ্র নিউইয়র্ক সিটির উডসাইডস্থ গুলশান টেরেসে ৫ কেন্দ্রের সকল ভোট গণনা শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সৈয়দ টিপু সুলতান ফল প্রকাশ করেন। এর আগে স্ব স্ব কেন্দ্রের ভোট গণনা শেষে সেখানেই ফলাফল প্রকাশ করা হয়। চুড়ান্ত ফল প্রকাশের সময় ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেলের সমর্থকরা মুর্হুমুহ শ্লোগন দেন এবং ভি চিহ্ন প্রদর্শন করে উল্লাস প্রকাশ করেন। পরে বিজয়ী প্রার্থীদের সঙ্গে বিজীত প্রার্থীরা আলিঙ্গন করেন। ফল ঘোষণার সময় নির্বাচন কমিশনের সদস্য যথাক্রমে মোহাম্মদ এ হাকিম মিয়া, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, মোহাম্মদ জামান তপন ও ইউনুছ সরকার এবং প্রিসাইডিং অফিসার সাইফ আজাদ ছাড়াও প্রায় সকল প্রার্থী, এজেন্ট, সমর্থক ও সোসাইটির সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কে কত ভোট পেলেন: নির্বাচন কমিশন ঘোষিত বেসরকারী ফলাফল অনুযায়ী ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেল থেকে সভাপতি পদে বিজয়ী কামাল আহমেদ পেয়েছেন ৫ হাজার ৭৪৪ ভোট, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি সোসাইটির বর্তমান সভাপতি আজমল হোসেন কুনুর প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৭৫৪ ভোট। স্বতস্ত্র সভাপতি পদপ্রার্থী ওসমান চৌধুরী পেয়েছেন ৩০৭ ভোট।
সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী রুহুল আমিন সিদ্দিকী পেয়েছেন ৫ হাজার ৫৮৪ ভোট। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্ধি কাজী সাখাওয়াত হোসেন আজমের প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৯৭৩ ভোট।
সিনিয়র সহ সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম হাওলাদার। তার প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৪৮১ ভোট। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি শাহ নেওয়াজ পেয়েছেন ৫ হাজার ৪২ ভোট।
সহ সভাপতি পদে নির্বাচিত আবদুল খালেক খায়ের পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৪৩ ভোট। তার একমাত্র নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি শফি আলম (লাল সফি)-এর প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৭৩২।
সহ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত সৈয়দ এম এ জামান পেয়েছেন ৫ হাজার ৪৪৪ ভোট। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি মফিজুল ইসলাম ভূইয়া রুমির প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৭৩০ ভোট।
কোষাধ্যক্ষ পদে পুন: নির্বাচিত মোহাম্মদ আলীর প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৬৪১। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি সোসাইটির সাবেক কোষাধ্যক্ষ নিশান রহিমের প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৭২।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন আবুল কালাম ভূঁইয়া। তার প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৪৪৪। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি রফিকুল ইসলাম ডালিমের প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৭৫০।
সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে পুন: নির্বাচিত হয়েছেন মনিকা রায়। তার প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৫৯২। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন সেলিম ইব্রাহীম।
জনসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক পদে নির্বাচিত রিজু মোহাম্মদের প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ১৫৮। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি সিরাজুল হক জালালের প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ১০৬।
সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত নাদির এ আইয়্যুব-এর প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৫৪৭। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি মোহাম্মদ টিপু খানের প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৭৩৪।
সাহিত্য সম্পাদক পদে নির্বাচিত নাসির উদ্দিন আহমেদের প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৩৬৩। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি শেখ হায়দার আলীর প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৭৯৮।
ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক পদে নির্বাচিত মোহাম্মদ নওশাদ হোসেনের প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৩৬৯। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি সম্রাট হোসেন এমিলির প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৮৭২।
স্কুল ও শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক পদে নির্বাচিত আহসান হাবিবের প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৪৩৯। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি ওয়াহিদ কাজি এলিনের প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৭১০।
কার্যকরী পরিষদের সদস্য পদে বিজয়ীরা হলেন (ছয়জন)- ফারহানা চৌধুরী (প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৫৫৫), মাইনুল উদ্দিন মাহবুব (প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৪১৮), মোহাম্মদ আজাদ বাকির (প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ২৯৩), মোহাম্মদ সাদী মিন্টু (প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ২৭৬), আবুল কাসেম চৌধুরী (প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ১০২) এবং সরোয়ার খান বাবু (প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৪৩)।
কার্যকরী পরিষদের সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী বিজিতরা হলেন- কাজী তোফায়েল ইসলাম, জসিম উদ্দিন, আশরাফ আলী খান লিটন, আবুল খায়ের আকন্দ, ডা. শাহনাজ লিপি ও মইনুল ইসলাম।
rezuনির্বাচনের ফল ঘোষণার পরপরই জনসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক পদপ্রার্থী রিজু মোহাম্মদ তার ভোট গণনা চ্যালেঞ্জ করেন নির্বাচন কমিশন তার চ্যালেঞ্জ আমলে নিয়ে পুনরায় ভোট গণনা করে রিজুকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। রোববার রাতে রিজু মোহাম্মদ ইউএনএ প্রতিনিধিকে বলেন, ভোট গণনায় ভুল করে আমার প্রতিদ্বন্দ্বিকে বিজয়ী ঘোষণা করে ইসি। কিন্তু সেই সময় তাৎক্ষনিকভাবে আমি আমার সকল কেন্দ্রের ভোট গণনা করে দেখি এবং আমার প্রতিদ্বন্দ্বির চেয়ে ৫২ ভোটে বেশী এগিয়ে থাকি। বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করলে ইসি সাথে সাথে আমাকেই বিজয়ী ঘোষণা করে এবং আমি ৫২ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হই। এদিকে কার্যকরী পরিষদের অন্যতম সদস্য পদপ্রার্থী মইনুল ইসলাম চ্যালেঞ্জ করে নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়ে তার ভোট পুন: গণনার দাবী জানিয়েছেন।
এদিকে নির্বচানের ফলাফল ঘোষণার পর পরই নব নির্বাচিত সভাপতি কামাল আহমদ তার বিজয়ের জন্য কমিউনিটির সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, সোসাইটিকে একা এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। এজন্য তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
বিজিত আজমল হোসেন কুনু নব নির্বাচিত সভাপতিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে গেলে শত মানুষের করতালীতে মুখরিত হয়ে উঠে গুলসান টেরেস। মধ্যরাতে এসময় এক অভাবনীয় দৃশ্যের অবতারনা হয়।
নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগে নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ টিপু সুলতান বলেন, একটি গ্রহনযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমাদের চেষ্টা ও আন্তরিকতার কোন কমতি ছিল না। নির্বাচন পরিচালনায় প্রার্থী ও মিডিয়াসহ কমিউনিটির সকলের সহযোগিতার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, একটি সুন্দর, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমরা বদ্ধপরিকর ছিলাম। এজন্য কোন ছাড় দেয়া হয়নি। এই কাজে সার্বিক সহযোগিতার জন্য তিনি নির্বাচন কমিশনের সকল সদস্যকে অভিনন্দন জানান।
অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের সদস্য আব্দুল হাকিম মিয়া, আনোয়ার হোসেন, জামান তপন, ইউনুস সরকার এবং প্রিসাইডিং অফিসার সাইফ আজাদ বক্তব্য রাখেন। তারা সকলেই নিজ নিজ কেন্দ্রের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেন।
এছাড়া একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠান সফলের জন্য উপস্থিত সকলেই নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ টিপু সুলতান সহ নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং অভিনন্দন জানান।