নিউইয়র্ক: বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ। দিনটি জাতীয় দিবস। আজ থেকে ৪৪ বছর আগে ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের বুকে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্থান করে নেয় ‘বাংলাদেশ’। আকাশে উড়ে সবুজে ঘেরা লাল পতাকা। লাখো আতœত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনে বীর বাঙালীরা। একাত্তরের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বাঙালী জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে আকস্মিকভাবে ‘অপারেশন সার্চ লাইট’-এর নামে নিরস্ত্র বাঙালীদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলায়। প্রতিবাদে গর্জে উঠে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সর্বস্তরের ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক-জনতা। শুরু হয় সশ¯্র মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাসে মরণপণ লড়াইয়ের মাধ্যমে বাংলার দামাল সন্তানেরা ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’ সে যুদ্ধে বিজয় লাভ করে স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনে। বাঙালী জাতির বীর সেনানী আর ৩০ লাখ শহীদের রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধের সূচনার দিন ২৬ মার্চ। হাজার বছরের শোষণ-বঞ্চনার কবল থেকে মুক্ত হওয়ার দিন।
স্বাধীনতার এই দিনে গভীর শ্রদ্ধার সাথে সমগ্র জাতি স্মরণ করবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা, মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, স্বাধীনতার স্থপতি ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান (বীরোত্তম), স্বাধীনতার সেনাপতি জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীসহ জাতীয় বীরদের।
দিবসটি উপলক্ষে দেশের ন্যায় নিউইয়র্ক তথা উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশী বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন ও বাংলাদেশ কনস্যুলেটেও স্বাধীনতা দিবস পালনের কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি সহ রাজনৈতিক দলগুলোও আলোচনা সভার আয়োজনের কর্মসূচী নিয়েছে।
এদিকে প্রতিবছরের মতো এবারও নিউইয়র্ক সিটি হলে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে। গত ১৬ মার্চ সোমবার সন্ধ্যায় সিটি হলের কাউন্সিল চেম্বারে ‘সেলিব্রেশন অব বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্টস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অপরদিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে বিগত কয়েক বছরের মতো এবছরও ২৪ মার্চ নিউইয়র্কের রাজধানী আলবেনীতে ‘বাংলাদেশ ডে’ পালন করা হয়। ষ্টেট সিনেটর রুবিন দিয়াজ ও ষ্টেট অ্যাসেম্বলীম্যান লুইস সেপুভেদা বাংলাদেশ ডে’র মূল উদ্যোক্তা।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ২৪ মার্চ সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের পালকি পার্টি সেন্টারে আলোচনা সভার আয়োজন করে।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে জেনোসাইড ৭১ ফাউন্ডেশন ইউএসএ’র ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের পালকি পার্টি সেন্টারে আলোচনা সভার আয়োজন করে।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে আমেরিকায় মদিনার আলো ও রাইট অফ দ্যা আর্থ ইউএসএ আয়োজিত আলোচনা, মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে ২৬ মার্চ সন্ধ্যা ৬টায় জ্যাকসন হাইটসের পালকি পার্টি সেন্টারে।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে শিল্পকলা একাডেমী ইউএসএ ইন্্ক আয়োজিত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ২৭ মার্চ সন্ধ্যা ৭টায় জ্যাকসন হাইটসের পালকি পার্টি সেন্টারে।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে রূপসী চাঁদপুর ফাউন্ডেশন ইন্্ক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ২৮ মার্চ সন্ধ্যা ৬টায় জ্যাকসন হাইটস্থ পালকি পার্টি সেন্টারে।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ সোসাইটি ইন্্ক নিউইয়র্ক আয়োজিত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ২৯ মার্চ সন্ধ্যা ৬টায় ব্রুকলীনের স্যাসন ভি সিমচা মিলনায়তনে (১২২৩ কনি আইল্যান্ড অ্যাভিনিউ, ব্রুকলীন, নিউইয়র্ক ১১২৩০, অ্যাভিনিউ এইচ এন্ড অ্যাভিনিউ আই’র মাঝে)।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইন্্ক’র আলোচনা সভায় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ২৯ মার্চ সন্ধ্যা ৬টায় নিউজার্সীর ২৩৬ ইউনিয়ন অ্যাভিনিউ মিলনায়তনে।
বাংলাদেশে স্বাধীনতা দিবস সরকারি ছুটি। এদিন সূর্যোদয়ের সময় তেজগাঁও পুরনো বিমানবন্দর এলাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচী শুরু হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ছাড়াও বিভিন্ন সড়ক ও সড়কদ্বীপকে জাতীয় ও রঙিন পতাকায় সজ্জিত করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতেও থাকবে আলোকসজ্জা। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার, বিরোধীদলীয় নেতা সাভার স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এ ছাড়াও বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধাগণ, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশী কূটনীতিকগণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সাধারণ জনগণ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। আয়োজন করা হবে শিশু-কিশোর সমাবেশ ও কুচকাওয়াজ। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে এবং সরকারি ও বেসরকারি বেতার ও টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেবে। জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রমসহ এ ধরনের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।