নিউইয়র্ক ১০:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বাংলাদেশীদের পছন্দের কাজ মিলছে না নিউইয়র্কে

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৮:০২:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর ২০১৫
  • / ১৭৫৫ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: জালাল উদ্দিন আহমেদ। বাংলাদেশের একটি গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠানে মাঝারি মানের কর্মকর্তা ছিলেন। বেতনও ৪০ হাজার টাকার উপরে ছিল। অবিবাহিত জালাল উদ্দিনের দিন ভালোই চলছিল বাংলাদেশে। বড়ো ভাই কামাল উদ্দিন আহমেদের কারণে ইমিগ্র্যান্ট হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন মে মাসের শেষ সপ্তাহে। নিউইর্য়কে এসে জ্যামাইকার এক মামার বাসায় উঠেছিলেন। কাগজ পত্র সবই আছেন। ধারনা ছিল না নিউইয়র্কে এসে কি ধরনের কাজ মিলবে। ভাই এবং পরিবারের সদস্যরাও কোন ধরনের ধারণা দেয়নি।
জালাল উদ্দিন আহমেদ নিউইয়র্কে এসে কাজ খোঁজা শুরু করেন। পরিচিত এবং আত্মীয়দের মাধ্যমে খোঁজতে থাকেন পছন্দের কাজ। এভাবে তার কেটে গেলে প্রায় দু‘ই মাস। ততদিনে বাংলাদেশ থেকে আনা হাজার ডলারের উপরে খরচ যায় জালাল উদ্দিনের। দুই মাস পরে একটি কাজ মিললো জ্যামাইকা এভিনিউতে একটি ফ্রাইড চিকেনের দোকানে। ওই দোকানের মালিক বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ ও চেয়ারম্যানের ছেলে। এ দোকানে জালাল উদ্দিন আহমেদ কাজ শুরু করেন। প্রথম দিনে তার কাজ ছিলো কিচেনে (রান্না ঘর)। ৮ বক্স কাটা মুরগি পরিস্কার, দেড়শো পিজা বানানোসহ সব করা হলো। পুরো দিন কাজ করে মিললো মাত্র ৭০ ডলার। ঘন্টার হিসেবে ধরা গেলে জালাল কাজ করেছেন ১২ ঘন্টার উপরে।
একদিন কাজ করে জালাল আবারো বেকার। দুই সপ্তাহ পরে একটি বাংলাদেশী মালিকানাধীন মিনি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে কাজ শুরু করেন। সপ্তাহে কাজ ৬০ ঘন্টার। টাকার হিসেবে পুরো সপ্তাহে চারশ ডলার। প্রথম দিন গিয়ে ফ্যাক্টরি ম্যানেজার যা খাটালেন তাতেই জালালের পক্ষে আর কন্টিউনি করা সম্ভব হয়নি। পরের ঘটনা হলো ৬ মাস পরে জালাল বাংলাদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
জালালের মতো আরো অনেকে আছেন বাংলাদেশ থেকে যারা এসেছেন স্বপ্নের নিউইয়র্কে নিজেদের জীবন মান উন্নয়নের। এর মধ্যে আছেন বাংলাদেশে একটি রিয়েলস্টেট কোম্পানীর শীর্ষ একজন কর্মকর্ত। তিন সন্তান নিয়ে ওই কর্মকর্তা থাকতেন শ্যামলীতে। বর্তমানে তিনি নিউইয়র্কের বাসিন্দা এবং একটি গ্যাস স্টেশনে কাজ করেন। নাম প্রকাশ না করে ওই কর্মকর্তা বলেন, পছন্দের কাজ না পাওয়ার কারণে গ্যাস স্টেশনে কাজ করতে হচ্ছে।
কিন্তু কেন কাজ মিলছে না এমন প্রশ্নে কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট নাসির আলী খান পল বলেন, ‘আপনি যে দু’জনের কেস স্টাডি বললেন এটা আসলে বাস্তব।’ নিউইয়র্কে যারা প্রথমে আসেন তাদের এ ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ অধিকাংশ লোকজন আসেন প্রকৃত তথ্য না জেনে। নিউইয়র্কে বসবাস করতে হলে এ ধরনের পরিস্থিতি মেনে চলতে হবে।
আসলেই কি? কাজ মিলছে এমন উত্তর মেলে অনেকে কাছ থেকে। তাদের মতে, নিউইয়র্ক সিটিতে যেসব কাজ বাংলাদেশীরা পেয়ে থাকেন সেগুলো হলো; বাংলাদেশী গ্রোসারীতে। কেউ করেন ফ্লরের কাজ, কেউ বা রেজিষ্ট্রারে। এছাড়া কিছু লোক কাজ করেন গিফট শপে। আর গ্যাস স্টেশন এবং সিকিউরিটির কাজও করেন অনেকে। তবে একটি বড়ো অংশ ক্যাব চালিয়ে থাকেন।
পছন্দের কাজ কেন মিলছে না এমন প্রশ্নে কমিউনিটির নেতারা বলেন, পছন্দের কোন শেষ নেই। আসলে পছন্দ বলতে তিনি বাংলাদেশে যে ধরনের প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন সে ধরনের বুঝলে ভুল করবেন। এখানে যদি পছন্দের কাজ পেতে হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোর্স করতে হবে। অন্যতায় পছন্দের কাজ পাওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
তারা বলেন, নিউইয়র্কে পছন্দের কাজের কথা বলা যাবে কিন্তু এখানে সব কাজই সম্মানের।
কমিউনিটি নেতাদের কথার সঙ্গে যারা এক হয়েছেন তাদের মধ্যে জ্যাকসন হাইটসের একটি গ্রোসারীর রেজিষ্টারে কাজ করছেন সেই নঈম উদ্দিন। তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশে শিক্ষকতা করতাম। কিন্তু এখানে কি শিক্ষকতা করতে পারবো? আর যদি তা করতে হয় তাহলে সময় লাগবে, কিন্তু এখন কিছুই করার নেই, কাজ করতেই হবে।
প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য, নিউইয়র্কে বর্তমানে চার লাখের মতো বাংলাদেশী বসবাস করেন। প্রতি বছর ৩০ হাজার বাংলাদেশী অভিবাসী হয়ে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রে। বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান বাড়ছে কিন্তু সেভাবে কর্মক্ষেত্র সম্প্রসারিত হচ্ছে না। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

বাংলাদেশীদের পছন্দের কাজ মিলছে না নিউইয়র্কে

প্রকাশের সময় : ০৮:০২:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর ২০১৫

নিউইয়র্ক: জালাল উদ্দিন আহমেদ। বাংলাদেশের একটি গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠানে মাঝারি মানের কর্মকর্তা ছিলেন। বেতনও ৪০ হাজার টাকার উপরে ছিল। অবিবাহিত জালাল উদ্দিনের দিন ভালোই চলছিল বাংলাদেশে। বড়ো ভাই কামাল উদ্দিন আহমেদের কারণে ইমিগ্র্যান্ট হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন মে মাসের শেষ সপ্তাহে। নিউইর্য়কে এসে জ্যামাইকার এক মামার বাসায় উঠেছিলেন। কাগজ পত্র সবই আছেন। ধারনা ছিল না নিউইয়র্কে এসে কি ধরনের কাজ মিলবে। ভাই এবং পরিবারের সদস্যরাও কোন ধরনের ধারণা দেয়নি।
জালাল উদ্দিন আহমেদ নিউইয়র্কে এসে কাজ খোঁজা শুরু করেন। পরিচিত এবং আত্মীয়দের মাধ্যমে খোঁজতে থাকেন পছন্দের কাজ। এভাবে তার কেটে গেলে প্রায় দু‘ই মাস। ততদিনে বাংলাদেশ থেকে আনা হাজার ডলারের উপরে খরচ যায় জালাল উদ্দিনের। দুই মাস পরে একটি কাজ মিললো জ্যামাইকা এভিনিউতে একটি ফ্রাইড চিকেনের দোকানে। ওই দোকানের মালিক বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ ও চেয়ারম্যানের ছেলে। এ দোকানে জালাল উদ্দিন আহমেদ কাজ শুরু করেন। প্রথম দিনে তার কাজ ছিলো কিচেনে (রান্না ঘর)। ৮ বক্স কাটা মুরগি পরিস্কার, দেড়শো পিজা বানানোসহ সব করা হলো। পুরো দিন কাজ করে মিললো মাত্র ৭০ ডলার। ঘন্টার হিসেবে ধরা গেলে জালাল কাজ করেছেন ১২ ঘন্টার উপরে।
একদিন কাজ করে জালাল আবারো বেকার। দুই সপ্তাহ পরে একটি বাংলাদেশী মালিকানাধীন মিনি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে কাজ শুরু করেন। সপ্তাহে কাজ ৬০ ঘন্টার। টাকার হিসেবে পুরো সপ্তাহে চারশ ডলার। প্রথম দিন গিয়ে ফ্যাক্টরি ম্যানেজার যা খাটালেন তাতেই জালালের পক্ষে আর কন্টিউনি করা সম্ভব হয়নি। পরের ঘটনা হলো ৬ মাস পরে জালাল বাংলাদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
জালালের মতো আরো অনেকে আছেন বাংলাদেশ থেকে যারা এসেছেন স্বপ্নের নিউইয়র্কে নিজেদের জীবন মান উন্নয়নের। এর মধ্যে আছেন বাংলাদেশে একটি রিয়েলস্টেট কোম্পানীর শীর্ষ একজন কর্মকর্ত। তিন সন্তান নিয়ে ওই কর্মকর্তা থাকতেন শ্যামলীতে। বর্তমানে তিনি নিউইয়র্কের বাসিন্দা এবং একটি গ্যাস স্টেশনে কাজ করেন। নাম প্রকাশ না করে ওই কর্মকর্তা বলেন, পছন্দের কাজ না পাওয়ার কারণে গ্যাস স্টেশনে কাজ করতে হচ্ছে।
কিন্তু কেন কাজ মিলছে না এমন প্রশ্নে কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট নাসির আলী খান পল বলেন, ‘আপনি যে দু’জনের কেস স্টাডি বললেন এটা আসলে বাস্তব।’ নিউইয়র্কে যারা প্রথমে আসেন তাদের এ ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ অধিকাংশ লোকজন আসেন প্রকৃত তথ্য না জেনে। নিউইয়র্কে বসবাস করতে হলে এ ধরনের পরিস্থিতি মেনে চলতে হবে।
আসলেই কি? কাজ মিলছে এমন উত্তর মেলে অনেকে কাছ থেকে। তাদের মতে, নিউইয়র্ক সিটিতে যেসব কাজ বাংলাদেশীরা পেয়ে থাকেন সেগুলো হলো; বাংলাদেশী গ্রোসারীতে। কেউ করেন ফ্লরের কাজ, কেউ বা রেজিষ্ট্রারে। এছাড়া কিছু লোক কাজ করেন গিফট শপে। আর গ্যাস স্টেশন এবং সিকিউরিটির কাজও করেন অনেকে। তবে একটি বড়ো অংশ ক্যাব চালিয়ে থাকেন।
পছন্দের কাজ কেন মিলছে না এমন প্রশ্নে কমিউনিটির নেতারা বলেন, পছন্দের কোন শেষ নেই। আসলে পছন্দ বলতে তিনি বাংলাদেশে যে ধরনের প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন সে ধরনের বুঝলে ভুল করবেন। এখানে যদি পছন্দের কাজ পেতে হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোর্স করতে হবে। অন্যতায় পছন্দের কাজ পাওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
তারা বলেন, নিউইয়র্কে পছন্দের কাজের কথা বলা যাবে কিন্তু এখানে সব কাজই সম্মানের।
কমিউনিটি নেতাদের কথার সঙ্গে যারা এক হয়েছেন তাদের মধ্যে জ্যাকসন হাইটসের একটি গ্রোসারীর রেজিষ্টারে কাজ করছেন সেই নঈম উদ্দিন। তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশে শিক্ষকতা করতাম। কিন্তু এখানে কি শিক্ষকতা করতে পারবো? আর যদি তা করতে হয় তাহলে সময় লাগবে, কিন্তু এখন কিছুই করার নেই, কাজ করতেই হবে।
প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য, নিউইয়র্কে বর্তমানে চার লাখের মতো বাংলাদেশী বসবাস করেন। প্রতি বছর ৩০ হাজার বাংলাদেশী অভিবাসী হয়ে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রে। বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান বাড়ছে কিন্তু সেভাবে কর্মক্ষেত্র সম্প্রসারিত হচ্ছে না। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)