নিউইয়র্ক ১২:১৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

ফুডস্ট্যাম্প জালিয়াতদের বাসায় বাসায় অভিযান

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১০:১৩:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৪
  • / ৭৭৯ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত খাদ্য সহযোগীতা ‘ফুড স্ট্যাম্প’ নামে বহুল পরিচিত। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সচ্ছল হিসাবে পরিচালিত এলাকাগুলোতেই এখন ফুড স্ট্যাম্প গ্রহীতার সংখ্যা অনেক। এক হিসেব মতে প্রতি ৮ জন বয়স্ক নাগরিকদের মধ্যে ১ জন এবং প্রতি চারজন শিশুর মধ্যে একজন ফুড স্ট্যাম্প গ্রহীতা। এর পরিমান যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনগোষ্ঠীর ১২ শতাংশ। কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের মধ্যে ফুডস্ট্যাম্প গ্রহনের হার সর্বোচ্চ ২৮ শতাংশ। ল্যাতিনোদের মধ্যে ১৫ শতাংশ এবং শেতাঙ্গদের মধ্যে ৮ শতাংশ এখন ফুড স্ট্যাম্প গ্রহীতা।
১৯৬৪ সালে জনএফ কেনেডী প্রেসিডেন্ট হয়ে এই ফুডস্ট্যাম্প প্রবর্তনের ঘোষণা দেন। প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সময় এই কর্মসূচী ব্যাপকভাবে চালু হয়। রক্ষনশীলদের তীব্র বিরোধীতা সত্বেও সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ এ কর্মসূচি বিস্তৃত করেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় ফুড স্ট্যাম্প দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য একটি নিরাপত্তা কর্মসূচী হিসেবে গুরুত্ব পায়। ২০০৭ সালে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তীব্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য সরকারগুলো কেন্দ্র থেকে বর্ধিত বরাদ্দ পাওয়া শুরু করে।
তবে এই ফুড স্ট্যাম্প কারা পাবেন এজন্য ফেডারেল সরকারের একটা নীতিমালা রয়েছে। এতে আছে ১ সদস্যের পরিবারের মাসিক গ্রস আয় ১২৬৫ ডলার (৯৭৩ ডলার নেট), ২ সদস্যের ১৭০৫ ডলার গ্রস (১৩১২ ডলার নেট), ৩ সদস্যের ২১৪৪ ডলার গ্রস (১৬৫০ ডলার নেট), ৪ সদস্যের ২৫৮৪ ডলার গ্রস (১৯৮৬ ডলার নেট), ৫ সদস্যের ৩০২৪ ডলার গ্রস (২৩২৬ ডলার নেট) আয় থাকলে তারা ফুড স্ট্যাম্প বা খাদ্য সহায়তা পাবার উপযুক্ত (এর বেশী সদস্যের পরিবারের জন্য পোভার্টি গাইড ২০১৪-১৫ দেখুন)।
ফুড স্ট্যাম্প আবেদনের সময় বা রি-সার্টিফিকেশনের সময় আবেদনকারীকে তার মাসিক আয়ের প্রমাণ সহকারে পে-ষ্টাব অথবা নিয়োগকর্তার চিঠি আবেদনের সাথে দাখিল করতে হয়। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে সরকারের এই খাদ্য সহায়তা লাভের জন্য উচ্চ আয়ের ব্যক্তিরাও মিথ্যা প্রমাণপত্র দাখিল করে যুগ যুগ ধরে এই সাহায্য গ্রহন করে আসছেন।
এই ফুড স্ট্যাম্প কর্মসূচীর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রেই একটি মহল বরাবরই খুবই স্বোচ্চার। তাদের মতে এই প্রকল্প অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে আরও কর্মবিমুখ করে। খয়রাতি বরাদ্দের এই ব্যয়বহুল চক্রে ব্যয় হচ্ছে কর্মক্ষম ও করদাতা নাগরিকদের উপার্জনের অর্থ।
রক্ষনশীলদের সমালোচনার কারণেই হোক অথবা সরকারের ব্যয় সংকোচনের প্রয়োজনেই হোক অন্যান্য অনেক সিটির মত ইউ ইয়র্ক সিটিও এই খাতে খরচ কমানোর সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে। যারা দীর্ঘদিন থেকে ফুড স্ট্যাম্প গ্রহন করছে তাদেরকে কর্মমূখী করার পরিকল্পনা নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। প্রত্যেককেই চিঠি দিয়ে নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ সেন্টারে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে। তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে পাঠানো হচ্ছে। এদিকে যারা কাজে যোগ দিচ্ছে তাদের আর ফুড স্ট্যাম্প দিচ্ছে না। অপর দিকে যারা প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছে না তাদেরও এই অর্থ প্রদান থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
অপরদিকে হিউম্যান রিসোর্স সেন্টার কর্মক্ষেত্রে প্রতিটি ফুড স্ট্যাম্প গ্রহীতার সঠিক আয় খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের কর্মক্ষেত্রে খোঁজ খবর নেয়াসহ ব্যাংক স্টেটমেন্ট পরীক্ষার কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। যাদের আবেদনের সাথে প্রকৃত আয়ের অমিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে তাদের ফুড স্ট্যাম্প বাতিল করে অতীতের কয়েক বছরের অর্থ ফেরত দানের জন্য চিঠি পাঠানো হচ্ছে।
সম্প্রতি এক বাংলাদেশীর কাছে চিঠি এসেছে ১৯৯৯ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ফুড স্ট্যাম্প বাবদ পাওয়া ১ লক্ষ ৫৪ হাজার ডলার ফেরত দানের জন্য। এছাড়াও আরো কয়েকজন বাংলাদেশীর কাছে চিঠি এসেছে ফুডস্ট্যাম্প বাবদ গৃহীত ১ লক্ষ ৪৩ হাজার, ৯২ হাজার এবং ৫৪ হাজার ডলার ফেরত দানের জন্য।
যাদের কাছে চিঠি এসেছে তারা হয়তো আইনজীবির সহায়তায় তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করার সুযোগ পাবেন। আলাপ-আলোচনা করে অর্থের পরিমান কমিয়ে আনার সুযোগও পেতে পারেন। কিন্তু অনেকে আবার এ ধরণের সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। ডিষ্ট্রিক্ট এটর্নী অফিস হিউম্যান রিসোর্স সেন্টার থেকে ফুড স্ট্যাম্প জালিয়াতদের তালিকা নিয়ে সরাসরি হানা দিচ্ছে বাসায়। ভোররাতে দরজায় নক করে হ্যান্ড কাফ পরিয়ে নিয়ে আসছে থানায়। পরে কোর্টের মাধ্যমে তাদের ছাড়িয়ে আনতে হচ্ছে।
সম্প্রতি এমনি একটা ঘটনা ঘটেছে কুইন্সের এক বাংলাদেশী পরিবারে। ভোর রাতে দরজা নক করায় পরিবারের সবাই হঠাৎ জেগে যান। বাসায় সবাই যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেন বা গ্রীনকার্ড হোল্ডার। কারো বিরুদ্ধে ডিপোর্টেশন অর্ডার বা মামলা মোকদ্দমাও ছিলো না। তাই তারা প্রথমে ডাকাত ভেবে ভুল করেছিলেন। পরে পুলিশ পরিচয় জানায় দরজা খুলে দেখতে পান ডিষ্ট্রিক্ট এটর্নী অফিসের একজন কর্মকর্তা পুলিশ নিয়ে হাজির। তারা ফুড স্ট্যাম্প জালিয়াতের অভিযোগে বাড়ীর কর্তাব্যক্তিকে আটক করে নিয়ে যান। পরে অবশ্য তাকে কোর্ট থেকে জামিন দিয়ে বের করে এনেছেন তার স্বজনরা।
শুধু ফুড স্ট্যাম্প জালিয়াতির ঘটনা নয়, মেডিকেইড আবেদনও যারা ভুল তথ্য দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে চলছে সাড়াশি অভিযান। নিউ ইয়র্ক টাইমস এর এক রিপোর্টে এমনি তথ্য উঠে এসেছে। তাতে উল্লেখ করা হয়, ষ্টিফেন কালুসি নামে এক ব্যক্তি তার মেডিকেইড আবেদনে মাসিক ৫ হাজার ডলার আয়ের কথা উল্লেখ করেন। অথচ হ্যাম্টনসে তার দুটি ওয়াটার ফ্রন্ট হাউজ রয়েছে যার ভাড়া বাবদ তিনি ২০০৫সালে ৫৮ হাজার ডলার এবং ২০০৬ সালে ৬৫ হাজার ডলার আয় করেছেন।
এছাড়া ব্রিয়ান বোমিসলারে নামে এক দম্পত্তি তাদের মেডিকেইড আবেদনে লিখেছিলেন তাদের মাসিক আয় মাত্র ২২০০ ডলার। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে লোয়ার ম্যানহাটনে তাদের দুটি এপার্টমেন্ট রয়েছে যার প্রতিটির মূল্য ১ মিলিয়ন ডলারের উপরে। এদের প্রত্যেকের নামে ম্যানহাটন ষ্টেট সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছে।
হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে বাংলাদেশীদের ফুড স্ট্যাম্প এবং মেডিকেইড পাওয়ার ব্যাপারে সহায়তা করে থাকেন এমন একজন বাংলাদেশী কবির চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, হিউম্যান রিসোর্স সেন্টার থেকে কাউকে চিঠি দিলে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তি অভিযোগের বিপরীতে তার ব্যাখ্যা দিতে পারেন। তবে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই এ ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য হয় না। কারণ তারা প্রমাণ পত্র হাতে নিয়েই সংশ্লিস্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেন।
তবে অভিযোগ প্রমাণ হলেও সেটেলমেন্টের সুযোগ থাকে। সাধারণতঃ ৩৫% এর বেশী ডিসকাউন্ট দেয়া হয় না। সেটেলমেন্ট না হলে ব্যাপারটি কোর্টের কাছে সিদ্ধান্তের জন্য ছেড়ে দেয়া হয়। তবে সেটেলমেন্ট হলেও বাকী অর্থ জমা দেয়ার জন্য ২ বছরের বেশী সময় দেয়া হয় না।
সামর্থ থাকা সত্বেও ভূয়া তথ্য দিয়ে যে কোন ধরণের সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করা এদেশে আইনের দৃষ্টিতে বড় অপরাধ। সেটা ফুড স্ট্যাম্প, মেডিকেইড, নগদ সাহায্য, ট্যাক্স ফাইল ইত্যাদি যাই হোকনা কেন? আগে ভাগে সতর্ক না হলে এজন্য চরম মূল্য দিতে হতে পারে বলেও তারা উল্লেখ করেন। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

ফুডস্ট্যাম্প জালিয়াতদের বাসায় বাসায় অভিযান

প্রকাশের সময় : ১০:১৩:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৪

নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত খাদ্য সহযোগীতা ‘ফুড স্ট্যাম্প’ নামে বহুল পরিচিত। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সচ্ছল হিসাবে পরিচালিত এলাকাগুলোতেই এখন ফুড স্ট্যাম্প গ্রহীতার সংখ্যা অনেক। এক হিসেব মতে প্রতি ৮ জন বয়স্ক নাগরিকদের মধ্যে ১ জন এবং প্রতি চারজন শিশুর মধ্যে একজন ফুড স্ট্যাম্প গ্রহীতা। এর পরিমান যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনগোষ্ঠীর ১২ শতাংশ। কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের মধ্যে ফুডস্ট্যাম্প গ্রহনের হার সর্বোচ্চ ২৮ শতাংশ। ল্যাতিনোদের মধ্যে ১৫ শতাংশ এবং শেতাঙ্গদের মধ্যে ৮ শতাংশ এখন ফুড স্ট্যাম্প গ্রহীতা।
১৯৬৪ সালে জনএফ কেনেডী প্রেসিডেন্ট হয়ে এই ফুডস্ট্যাম্প প্রবর্তনের ঘোষণা দেন। প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সময় এই কর্মসূচী ব্যাপকভাবে চালু হয়। রক্ষনশীলদের তীব্র বিরোধীতা সত্বেও সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ এ কর্মসূচি বিস্তৃত করেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় ফুড স্ট্যাম্প দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য একটি নিরাপত্তা কর্মসূচী হিসেবে গুরুত্ব পায়। ২০০৭ সালে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তীব্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য সরকারগুলো কেন্দ্র থেকে বর্ধিত বরাদ্দ পাওয়া শুরু করে।
তবে এই ফুড স্ট্যাম্প কারা পাবেন এজন্য ফেডারেল সরকারের একটা নীতিমালা রয়েছে। এতে আছে ১ সদস্যের পরিবারের মাসিক গ্রস আয় ১২৬৫ ডলার (৯৭৩ ডলার নেট), ২ সদস্যের ১৭০৫ ডলার গ্রস (১৩১২ ডলার নেট), ৩ সদস্যের ২১৪৪ ডলার গ্রস (১৬৫০ ডলার নেট), ৪ সদস্যের ২৫৮৪ ডলার গ্রস (১৯৮৬ ডলার নেট), ৫ সদস্যের ৩০২৪ ডলার গ্রস (২৩২৬ ডলার নেট) আয় থাকলে তারা ফুড স্ট্যাম্প বা খাদ্য সহায়তা পাবার উপযুক্ত (এর বেশী সদস্যের পরিবারের জন্য পোভার্টি গাইড ২০১৪-১৫ দেখুন)।
ফুড স্ট্যাম্প আবেদনের সময় বা রি-সার্টিফিকেশনের সময় আবেদনকারীকে তার মাসিক আয়ের প্রমাণ সহকারে পে-ষ্টাব অথবা নিয়োগকর্তার চিঠি আবেদনের সাথে দাখিল করতে হয়। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে সরকারের এই খাদ্য সহায়তা লাভের জন্য উচ্চ আয়ের ব্যক্তিরাও মিথ্যা প্রমাণপত্র দাখিল করে যুগ যুগ ধরে এই সাহায্য গ্রহন করে আসছেন।
এই ফুড স্ট্যাম্প কর্মসূচীর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রেই একটি মহল বরাবরই খুবই স্বোচ্চার। তাদের মতে এই প্রকল্প অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে আরও কর্মবিমুখ করে। খয়রাতি বরাদ্দের এই ব্যয়বহুল চক্রে ব্যয় হচ্ছে কর্মক্ষম ও করদাতা নাগরিকদের উপার্জনের অর্থ।
রক্ষনশীলদের সমালোচনার কারণেই হোক অথবা সরকারের ব্যয় সংকোচনের প্রয়োজনেই হোক অন্যান্য অনেক সিটির মত ইউ ইয়র্ক সিটিও এই খাতে খরচ কমানোর সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে। যারা দীর্ঘদিন থেকে ফুড স্ট্যাম্প গ্রহন করছে তাদেরকে কর্মমূখী করার পরিকল্পনা নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। প্রত্যেককেই চিঠি দিয়ে নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ সেন্টারে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে। তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে পাঠানো হচ্ছে। এদিকে যারা কাজে যোগ দিচ্ছে তাদের আর ফুড স্ট্যাম্প দিচ্ছে না। অপর দিকে যারা প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছে না তাদেরও এই অর্থ প্রদান থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
অপরদিকে হিউম্যান রিসোর্স সেন্টার কর্মক্ষেত্রে প্রতিটি ফুড স্ট্যাম্প গ্রহীতার সঠিক আয় খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের কর্মক্ষেত্রে খোঁজ খবর নেয়াসহ ব্যাংক স্টেটমেন্ট পরীক্ষার কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। যাদের আবেদনের সাথে প্রকৃত আয়ের অমিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে তাদের ফুড স্ট্যাম্প বাতিল করে অতীতের কয়েক বছরের অর্থ ফেরত দানের জন্য চিঠি পাঠানো হচ্ছে।
সম্প্রতি এক বাংলাদেশীর কাছে চিঠি এসেছে ১৯৯৯ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ফুড স্ট্যাম্প বাবদ পাওয়া ১ লক্ষ ৫৪ হাজার ডলার ফেরত দানের জন্য। এছাড়াও আরো কয়েকজন বাংলাদেশীর কাছে চিঠি এসেছে ফুডস্ট্যাম্প বাবদ গৃহীত ১ লক্ষ ৪৩ হাজার, ৯২ হাজার এবং ৫৪ হাজার ডলার ফেরত দানের জন্য।
যাদের কাছে চিঠি এসেছে তারা হয়তো আইনজীবির সহায়তায় তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করার সুযোগ পাবেন। আলাপ-আলোচনা করে অর্থের পরিমান কমিয়ে আনার সুযোগও পেতে পারেন। কিন্তু অনেকে আবার এ ধরণের সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। ডিষ্ট্রিক্ট এটর্নী অফিস হিউম্যান রিসোর্স সেন্টার থেকে ফুড স্ট্যাম্প জালিয়াতদের তালিকা নিয়ে সরাসরি হানা দিচ্ছে বাসায়। ভোররাতে দরজায় নক করে হ্যান্ড কাফ পরিয়ে নিয়ে আসছে থানায়। পরে কোর্টের মাধ্যমে তাদের ছাড়িয়ে আনতে হচ্ছে।
সম্প্রতি এমনি একটা ঘটনা ঘটেছে কুইন্সের এক বাংলাদেশী পরিবারে। ভোর রাতে দরজা নক করায় পরিবারের সবাই হঠাৎ জেগে যান। বাসায় সবাই যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেন বা গ্রীনকার্ড হোল্ডার। কারো বিরুদ্ধে ডিপোর্টেশন অর্ডার বা মামলা মোকদ্দমাও ছিলো না। তাই তারা প্রথমে ডাকাত ভেবে ভুল করেছিলেন। পরে পুলিশ পরিচয় জানায় দরজা খুলে দেখতে পান ডিষ্ট্রিক্ট এটর্নী অফিসের একজন কর্মকর্তা পুলিশ নিয়ে হাজির। তারা ফুড স্ট্যাম্প জালিয়াতের অভিযোগে বাড়ীর কর্তাব্যক্তিকে আটক করে নিয়ে যান। পরে অবশ্য তাকে কোর্ট থেকে জামিন দিয়ে বের করে এনেছেন তার স্বজনরা।
শুধু ফুড স্ট্যাম্প জালিয়াতির ঘটনা নয়, মেডিকেইড আবেদনও যারা ভুল তথ্য দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে চলছে সাড়াশি অভিযান। নিউ ইয়র্ক টাইমস এর এক রিপোর্টে এমনি তথ্য উঠে এসেছে। তাতে উল্লেখ করা হয়, ষ্টিফেন কালুসি নামে এক ব্যক্তি তার মেডিকেইড আবেদনে মাসিক ৫ হাজার ডলার আয়ের কথা উল্লেখ করেন। অথচ হ্যাম্টনসে তার দুটি ওয়াটার ফ্রন্ট হাউজ রয়েছে যার ভাড়া বাবদ তিনি ২০০৫সালে ৫৮ হাজার ডলার এবং ২০০৬ সালে ৬৫ হাজার ডলার আয় করেছেন।
এছাড়া ব্রিয়ান বোমিসলারে নামে এক দম্পত্তি তাদের মেডিকেইড আবেদনে লিখেছিলেন তাদের মাসিক আয় মাত্র ২২০০ ডলার। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে লোয়ার ম্যানহাটনে তাদের দুটি এপার্টমেন্ট রয়েছে যার প্রতিটির মূল্য ১ মিলিয়ন ডলারের উপরে। এদের প্রত্যেকের নামে ম্যানহাটন ষ্টেট সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছে।
হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে বাংলাদেশীদের ফুড স্ট্যাম্প এবং মেডিকেইড পাওয়ার ব্যাপারে সহায়তা করে থাকেন এমন একজন বাংলাদেশী কবির চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, হিউম্যান রিসোর্স সেন্টার থেকে কাউকে চিঠি দিলে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তি অভিযোগের বিপরীতে তার ব্যাখ্যা দিতে পারেন। তবে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই এ ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য হয় না। কারণ তারা প্রমাণ পত্র হাতে নিয়েই সংশ্লিস্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেন।
তবে অভিযোগ প্রমাণ হলেও সেটেলমেন্টের সুযোগ থাকে। সাধারণতঃ ৩৫% এর বেশী ডিসকাউন্ট দেয়া হয় না। সেটেলমেন্ট না হলে ব্যাপারটি কোর্টের কাছে সিদ্ধান্তের জন্য ছেড়ে দেয়া হয়। তবে সেটেলমেন্ট হলেও বাকী অর্থ জমা দেয়ার জন্য ২ বছরের বেশী সময় দেয়া হয় না।
সামর্থ থাকা সত্বেও ভূয়া তথ্য দিয়ে যে কোন ধরণের সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করা এদেশে আইনের দৃষ্টিতে বড় অপরাধ। সেটা ফুড স্ট্যাম্প, মেডিকেইড, নগদ সাহায্য, ট্যাক্স ফাইল ইত্যাদি যাই হোকনা কেন? আগে ভাগে সতর্ক না হলে এজন্য চরম মূল্য দিতে হতে পারে বলেও তারা উল্লেখ করেন। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)