ফিরে গেলেন গাফফার চৌধুরী : প্রতিবাদ-প্রতিরোধের মুখে ব্রুকলীনের অনুষ্ঠানও হলো না
- প্রকাশের সময় : ১০:৫৮:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ জুলাই ২০১৫
- / ১১৯১ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: ধর্মপ্রাণ প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতিবাদ-প্রতিরোধের মুখে ব্রুকলীনে আয়োজিত কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরীর অনুষ্ঠান শেষ পর্যন্ত হলো না। ফিরে যেতে হলো তাকে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী পরিবারের নামে রোববার জ্যামাইকাস্থ তাজমহল পার্টি সেন্টারে আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হলেও রেষ্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ অপ্রীতিকর ঘটনার আশংকায় এই মাহফিল বাতিল করলে সভাটি ব্রুকলীনে আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু তৌহদী জনতার প্রতিরোদের মুখে সভাটি হতে পারেনি।
গত ৩ জুলাই জাতিসংঘের বাংলাদেশ মিশনে প্রদত্ত আব্দুল গাফফার চৌধুরীর বক্তব্যে কমিউনিটিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হলে রোববার অপরাহ্নে তাজমহল পার্টি সেন্টার কর্তৃপক্ষ আলোচনা সভাটি বাতিল করার পর আয়োজকরা ব্রুকলীনে সভাটি করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই খবর পেয়ে তৌহিদী জনতা সেখানে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তারা ‘নারায়ে তাকবীর’,‘আল্লাহু আকবর’ শ্লোগান তুলে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। প্রতিবাদকারীরা জুতাও প্রদর্শন করে। উদ্ভুত পরিস্থিতে আওয়ামী সমর্থকরা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলার সৃষ্টি করলে স্থানীয় ম্যাকডোনাল্ড এভিনিউতে ‘মারমুখী’ অবস্থার সৃষ্টি হয়। পুলিশও অবস্থান নেয় স্থানটিতে।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র সাকেক যুগ্ম সম্পাদক বায়তুল জান্নাহ মসজিদ পরিচালনা কমিটি সহ সভাপতি হেলাল উদ্দিন ও সেক্রেটারী আব্দুর রহিম, প্রোগ্রেসিভ ফোরাম ইউএসএ’র সভাপতি অধ্যাপক নূরুল ইসলাম ও সেক্রেটারী মাহবুবুল রহমান, মওলানা ইব্রাহীম প্রমুখ ব্রুকলীনের প্রতিরোধ সমাবেশে নেতৃত্ব দেন।
উদ্ধুত পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ করি। ধর্মকে অসম্মানিত করা আমাদের কাজ নয়। যারা আওয়ামী লীগের নামে আলোচনা সভা ডেকে জ্যামাইকার তাজমহল আর ব্রুকলীনে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করলো তারা কারা। তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। তিনি বলেন, পবিত্র হজ আর ইসলাম সম্পর্কে কথা বলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাৎক্ষনিকভাবে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। আব্দুল গাফফার চৌধুরী তেমন কিছু বলে তাকলে তা খতিয়ে দেখে আমরা পরবর্তীতে পদক্ষেপ নেবো।
পরবর্তীতে পুলিশী হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং শেষ পর্যন্ত কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরীকে নিয়ে ব্রুকলীনেও আওয়ামী পরিবারের আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল মুলত: পন্ড হয়ে যায়। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্বকে বাইরে রেখে ‘যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী পরিবার’ নামে আওয়ামী লীগের নেতা-সমর্থকরা এই সভার আয়োজন করেছিলেন। এনিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক নেতা এই প্রতিবেদককে বলেন, দলের নেতৃত্বের বাইরে গিয়ে সভার আয়োজন করায় আজ তা পন্ড হলো। দলের মধ্যে ঐক্য থাকলে এমনটি হতো বা কেউ এর প্রতিবাদ করা সাহস পেতো না।
জানা গেছে, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন প্রধানের বাসায় অবস্থানকারী গাফফার চৌধুরী ব্রুকলীনের সভায় যোগ দিতে ব্রুকলীনে পৌছেন। কিন্তু প্রতিবাদের মুখে তিনি গাড়ী থেকে না নেমেই ফিরে যান।
এদিকে বাংলাদেশী মালিকানাধীন নিউইয়র্কের টাইম টিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আব্দুল গাফফার চৌধুরী বলেন, আমার বক্তব্য না বুঝেই বিভ্রান্তকর বক্তব্য দেয়া হচ্ছে। আমি ইসলাম বিরোধী কোন বক্তব্য দেই নি। একাডেমিক সেমিনারে আমি আমার বক্তব্য ব্যাখা দিয়ে বলার চেষ্টা করেছি। বিএনপি-জামায়াতিরা আমার বক্তব্যের ভুল ব্যাখা দিচ্ছে। তিনি বলেন, যারা আমার বক্তব্যের বিরোধীতা করছেন তারা পুরো বক্তব্য না শুনেই ভুল বলছেন। তিনি সকলকে তার বক্তব্য পুরোপুরি শুনার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘যারা আমার বক্তব্য না বুঝে প্রতিবাদ করে তাদের চেয়েও বড় মুসলমান আমি’।