নিউইয়র্ক ০৩:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

প্রজন্মের সাথে বাড়ছে দূরত্ব ॥ বাড়ছে পারিবারিক অশান্তি

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৭:৪৬:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০১৯
  • / ২৩৪ বার পঠিত

হককথা ডেস্ক: নিউইয়র্কে বাংলাদেশী কমিউনিটি বৃদ্ধির পাশাপাশি একদিকে যেমন সুখবর বাড়ছে, তেমনী খারাপ খবরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নানা সমস্যার কারণে নতুন প্রজন্মের সাথে অভিভাবকদের বাড়ছে দূরত্ব, বাড়ছে পারিবারিক অশান্তি। সুখবরগুলোর মধ্যে বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত নতুন প্রজন্মের অধিকাংশই শিক্ষা ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল, দেশীয় রাজনীর মোহ ছেড়ে মূলধারারার রাজনীতির প্রতি অনেকের আগ্রহ, এনওয়াইপিডি সহ সিটি, ষ্টেট ও ফেডারেল জব প্রভৃতিতে আশার আলো থাকলেও কমিউনিটিতে বড় সমস্যা হচ্ছে নানা কারনেই ‘পারিবারিক বন্ধন’ ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে বাড়ছে বিভেদ-বিভক্তি, পরকীয়া, নেশায় আসক্ত, লিভ টুগেদারের মতো অনৈতিকতায় আবদ্ধ প্রভৃতি আশঙ্কার খবর। এছাড়াও বাংলাদেশী-আমেরিকান পরিবারের কোন কোন সন্তান ‘গে’ চিন্তা-চেতনাতেও আসক্ত হয়ে পড়েছে বলে অবিশ্বাস্যরকম তথ্য পাওয়া গেছে। ফলে গভীর উদ্বেগে সময় কাটছে অভিভাবকগন।
এসবের বাইরেও বাংলাদেশী কমিউনিটির অনেক ব্যবসায়ী সহ পেশাজীবী অনেক ব্যক্তিবর্গও নানা অনৈতিকতার পথ ধরে ‘দ্রুত বড়লোক’ হওয়ার বাসনায় আইনের হাতে ধরা পড়ে নিজের দূর্নামের পাশাপাশি কমিউনিটি তথা জন্মভূমি বাংলাদেশ-এরও দূর্নাম বাড়িয়ে তুলছেন। অনেকে নিউইয়র্কের ঘটনায় নিজের দূর্নাম ঘোচাতে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য রাজ্যে গিয়ে সপরিবারে বসবাস করছেন। আবার কেউ কেউ আইনের কাছে ধরা পড়ে জেল-জুলুম খাটার সময়টুকু দেশে বেড়াতে গিয়েছেন বলে নিজের পক্ষে সাফাই গেয়েও চলেছেন বলে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিউইয়র্ক সিটির বাংলাদেশী অধ্যুষিত কুইন্স, ব্রুকলীন ও ব্রঙ্কসের বিভিন্ন এলাকায় প্রবাসীদের বসবাস ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এইসব পরিবারে এক প্রজন্ম থেকে শুরু করে কোন কোন পরিবারে তৃতীয় প্রজন্মও রয়েছেন। কিন্তু মিশ্র সংস্কৃতির প্রভাব সহ ধর্মীয় অনুশাসনের অভাব, আর্থিক অভাব-অনটন, উচ্চাকাংখা বা উচ্চাবিলাস প্রভৃতি কারণে বাংলাদেশী কমিউনিটির ঘরে ঘরে অশান্তি বেড়েই চলেছে। সমাজবিজ্ঞানীতের মতে কমিউনিটির এই সমস্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে চলেছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, কমিউনিটিতে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা হচ্ছে পরকিয়া আর নতুন প্রজন্মের তথা সন্তান-সন্ততীদের বিপথগামিতা। বিশেষ করে আর্থিক অভাব-অনটন আর কাজ-কর্মের চাপে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্কের অবনতির সুযোগে এক শ্রেনীর অভিবাসী পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ছেন। ফলে বিবাহ বিচ্ছেদের মতো ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। আর এর প্রভাব পড়ছে সন্তানদের উপর। যদিও এসবের সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই।
অপরদিকে নতুন প্রজন্ম বেড়ে উঠার সাথে সাথে বয়সের কারণে তথা কথিত ‘স্বাবলম্বী’ হওয়ার নামে ক্রমশ: দূরে চলে যাচ্ছে মা-বাবার আদর-¯েœহ তথা পারিবারিক বন্ধন থেকে। নতুন প্রজন্মের একটি অংশ স্কুল বয়সেই মাদকের মতো নেশার পাশাপাশি ‘বয়ফেন্ড/গার্লফেন্ড’ নিয়ে সময় অতিবাহিত করাছে। এনিয়ে উদ্বিগ্ন অভিবাবকগণ। নাম প্রকাশে একাধিক অভিভাবক জানান এব্যাপারে সন্তানদের কিছু বলতে গেলেই তারা এক কথায় এর উঠে ‘হু কেয়ার্স’, ‘ইউ ডু ইয়র জব’ প্রভৃতি ডায়লগ।
কমিউনিটির এসব সমস্যার ব্যাপারে বিশিষ্ট এটর্নী মঈন চৌধুরী বলেন, একজন আইনের মানুষ হিসেবে আইনগত সমাধানের লক্ষ্যে নানান সমস্যার কথা নিয়ে অনেকেই আসেন। তবে কমিউনিটির অনেকেই নানা সমস্যায় ভুগছেন এটা সত্য। আবার অনেকে এমন সব সমস্যা নিয়েও তারা আসেন তা আমরা বাইরে থেকে কল্পনাও করতে পারি না। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে ‘ধর্মীয় দিক আর পারিবারিক বন্ধন’-কে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকি। এব্যাপারে সামাজিকভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি খুবই জরুরী। তা নাহলে সমস্যাগুলো ক্যান্সারের মতো কমিউনিটির সর্বনাশ করবে।
বিশিষ্ট মনরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মুনিবুর খান জানান, পারিবারিক সমস্যার কারণে বাংলাদেশী কমিউনিটির অনেকেই নানা মানসিক রোগে ভুগছেন। তিনি জানান, রোগীদের সাথে আলাপ করে এমন সব তথ্য পাওয়া যায় যা চমকে দেওয়ার মতো। তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রের চাপা, পারিবারিক অশান্তি, সন্তান-সন্ততিদের বিপথগামীতা, আর্থিক অভাব-অনটন প্রভৃতি কারণে মানসিক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তার মতে সমস্যার শুরুতেই সংশ্লিস্টদের চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া দরকার। সেই সাথে যেকোন সমস্যার সমাধানের জন্য তা নিজের কাছে পুষে না রেখে ঘনিষ্টজন আর চিকিৎসকদের সাথে খোলামেলা কথা বলা উচিৎ। (বাংলা পত্রিকা)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

প্রজন্মের সাথে বাড়ছে দূরত্ব ॥ বাড়ছে পারিবারিক অশান্তি

প্রকাশের সময় : ০৭:৪৬:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০১৯

হককথা ডেস্ক: নিউইয়র্কে বাংলাদেশী কমিউনিটি বৃদ্ধির পাশাপাশি একদিকে যেমন সুখবর বাড়ছে, তেমনী খারাপ খবরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নানা সমস্যার কারণে নতুন প্রজন্মের সাথে অভিভাবকদের বাড়ছে দূরত্ব, বাড়ছে পারিবারিক অশান্তি। সুখবরগুলোর মধ্যে বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত নতুন প্রজন্মের অধিকাংশই শিক্ষা ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল, দেশীয় রাজনীর মোহ ছেড়ে মূলধারারার রাজনীতির প্রতি অনেকের আগ্রহ, এনওয়াইপিডি সহ সিটি, ষ্টেট ও ফেডারেল জব প্রভৃতিতে আশার আলো থাকলেও কমিউনিটিতে বড় সমস্যা হচ্ছে নানা কারনেই ‘পারিবারিক বন্ধন’ ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে বাড়ছে বিভেদ-বিভক্তি, পরকীয়া, নেশায় আসক্ত, লিভ টুগেদারের মতো অনৈতিকতায় আবদ্ধ প্রভৃতি আশঙ্কার খবর। এছাড়াও বাংলাদেশী-আমেরিকান পরিবারের কোন কোন সন্তান ‘গে’ চিন্তা-চেতনাতেও আসক্ত হয়ে পড়েছে বলে অবিশ্বাস্যরকম তথ্য পাওয়া গেছে। ফলে গভীর উদ্বেগে সময় কাটছে অভিভাবকগন।
এসবের বাইরেও বাংলাদেশী কমিউনিটির অনেক ব্যবসায়ী সহ পেশাজীবী অনেক ব্যক্তিবর্গও নানা অনৈতিকতার পথ ধরে ‘দ্রুত বড়লোক’ হওয়ার বাসনায় আইনের হাতে ধরা পড়ে নিজের দূর্নামের পাশাপাশি কমিউনিটি তথা জন্মভূমি বাংলাদেশ-এরও দূর্নাম বাড়িয়ে তুলছেন। অনেকে নিউইয়র্কের ঘটনায় নিজের দূর্নাম ঘোচাতে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য রাজ্যে গিয়ে সপরিবারে বসবাস করছেন। আবার কেউ কেউ আইনের কাছে ধরা পড়ে জেল-জুলুম খাটার সময়টুকু দেশে বেড়াতে গিয়েছেন বলে নিজের পক্ষে সাফাই গেয়েও চলেছেন বলে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিউইয়র্ক সিটির বাংলাদেশী অধ্যুষিত কুইন্স, ব্রুকলীন ও ব্রঙ্কসের বিভিন্ন এলাকায় প্রবাসীদের বসবাস ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এইসব পরিবারে এক প্রজন্ম থেকে শুরু করে কোন কোন পরিবারে তৃতীয় প্রজন্মও রয়েছেন। কিন্তু মিশ্র সংস্কৃতির প্রভাব সহ ধর্মীয় অনুশাসনের অভাব, আর্থিক অভাব-অনটন, উচ্চাকাংখা বা উচ্চাবিলাস প্রভৃতি কারণে বাংলাদেশী কমিউনিটির ঘরে ঘরে অশান্তি বেড়েই চলেছে। সমাজবিজ্ঞানীতের মতে কমিউনিটির এই সমস্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে চলেছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, কমিউনিটিতে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা হচ্ছে পরকিয়া আর নতুন প্রজন্মের তথা সন্তান-সন্ততীদের বিপথগামিতা। বিশেষ করে আর্থিক অভাব-অনটন আর কাজ-কর্মের চাপে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্কের অবনতির সুযোগে এক শ্রেনীর অভিবাসী পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ছেন। ফলে বিবাহ বিচ্ছেদের মতো ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। আর এর প্রভাব পড়ছে সন্তানদের উপর। যদিও এসবের সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই।
অপরদিকে নতুন প্রজন্ম বেড়ে উঠার সাথে সাথে বয়সের কারণে তথা কথিত ‘স্বাবলম্বী’ হওয়ার নামে ক্রমশ: দূরে চলে যাচ্ছে মা-বাবার আদর-¯েœহ তথা পারিবারিক বন্ধন থেকে। নতুন প্রজন্মের একটি অংশ স্কুল বয়সেই মাদকের মতো নেশার পাশাপাশি ‘বয়ফেন্ড/গার্লফেন্ড’ নিয়ে সময় অতিবাহিত করাছে। এনিয়ে উদ্বিগ্ন অভিবাবকগণ। নাম প্রকাশে একাধিক অভিভাবক জানান এব্যাপারে সন্তানদের কিছু বলতে গেলেই তারা এক কথায় এর উঠে ‘হু কেয়ার্স’, ‘ইউ ডু ইয়র জব’ প্রভৃতি ডায়লগ।
কমিউনিটির এসব সমস্যার ব্যাপারে বিশিষ্ট এটর্নী মঈন চৌধুরী বলেন, একজন আইনের মানুষ হিসেবে আইনগত সমাধানের লক্ষ্যে নানান সমস্যার কথা নিয়ে অনেকেই আসেন। তবে কমিউনিটির অনেকেই নানা সমস্যায় ভুগছেন এটা সত্য। আবার অনেকে এমন সব সমস্যা নিয়েও তারা আসেন তা আমরা বাইরে থেকে কল্পনাও করতে পারি না। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে ‘ধর্মীয় দিক আর পারিবারিক বন্ধন’-কে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকি। এব্যাপারে সামাজিকভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি খুবই জরুরী। তা নাহলে সমস্যাগুলো ক্যান্সারের মতো কমিউনিটির সর্বনাশ করবে।
বিশিষ্ট মনরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মুনিবুর খান জানান, পারিবারিক সমস্যার কারণে বাংলাদেশী কমিউনিটির অনেকেই নানা মানসিক রোগে ভুগছেন। তিনি জানান, রোগীদের সাথে আলাপ করে এমন সব তথ্য পাওয়া যায় যা চমকে দেওয়ার মতো। তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রের চাপা, পারিবারিক অশান্তি, সন্তান-সন্ততিদের বিপথগামীতা, আর্থিক অভাব-অনটন প্রভৃতি কারণে মানসিক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তার মতে সমস্যার শুরুতেই সংশ্লিস্টদের চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া দরকার। সেই সাথে যেকোন সমস্যার সমাধানের জন্য তা নিজের কাছে পুষে না রেখে ঘনিষ্টজন আর চিকিৎসকদের সাথে খোলামেলা কথা বলা উচিৎ। (বাংলা পত্রিকা)