নিউইয়র্কে ৬৩ বছর বয়সী বাংলাদেশী গ্রেফতার
- প্রকাশের সময় : ০৮:৩৫:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫
- / ৯৭৪ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: মাত্র ১০ বছরের এক মেয়েকে শিশুকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন ৬৩ বছর বয়সী এক বাংলাদেশী বৃদ্ধ। ওজনপার্কে অবস্থিত ফুলতলী জামে মসজিদের বেইসমেন্টে দিনে দুপুরে তিনি তাকে আক্রমন করেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। ২৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার দুপুরে এই ঘঠনা ঘটেছে। অভিযুক্ত বাংলাদেশীকে ঐদিনই জনতা পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টে তার মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ৩০ আগষ্ট রোববার রাত পর্যন্ত তার জামিন হয়নি। অভিযুক্ত বাংলাদেশীর বিরুদ্ধে ফার্ষ্ট ডিগ্রি যৌন হয়রানীর মামলা হয়েছে। এজন্য ৪০ হাজার নগদ জামিন বন্ড ধার্য করা হয়েছে। সোমবার এই অর্থ যোগাড় করা সম্বভ হলে তিনি ছাড়া পেতে পারেন বলে জানা গেছে। দোষী সাব্যস্ত হলে ৭ বছরের কারাদন্ড হতে পারে তার।
অভিযুক্ত বাংলাদেশীর নাম শামস উদ্দীন বলে জানা গেছে। তার বাড়ী বড়লেখার চান্দগ্রামে বলে জানা গেছে। শামস উদ্দীন ৮ সন্তানের জনক। তার তিন ছেলে ওজনপার্কের বাসিন্দা। তাদের সাথেই তিনি অবস্থান করতেন। মাত্র সাড়ে তিন বছর আগে ইমিগ্র্যান্ট হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন শামস উদ্দীন। নিউইয়র্ক সিটির ওজনপার্কে সংগঠিত এই ঘটনায় এখন সবাই ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। একজন ৬৩ বছর বয়সী বৃদ্ধের হাতে ১০ বছরের শিশু নির্যাতনের ঘঠনা যুক্তরাষ্ট্রে এর আগে কখনো হয়েছে বলে কেউ জানেন না। অনেক অভিভাবক এধরনের ঘঠনা প্রতিরোধে বিভিন্ন ধর্মীয় সামাজিক প্রতিষ্টানে সতর্কতা ছাড়াও পেশাদার নজরদারীর দাবী তুলেছেন। ফুলতলী জামে মসজিদ ওজন পার্কের ১০১ এভিন্যু ৮৪ স্ট্রীটে অবস্থিত (৮৪-০৫,১০১ এভিন্যু)।
ঘটনার বিবরনে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (২৭ আগষ্ট) ফুলতলী জামে মসজিদে নিয়মিত ইসলামিক ক্লাশে অংশ নেয় স্থানীয় কিশোর কিশোরীদের অনেকে। জোহরের নামাজের সময় বৃটেন থেকে বেড়াতে আসা ১০ বছরের একটি মেয়ে বেইসমেন্টের বাথরুমে যায়। তখন সেখানে তেমন কেউ উপস্থিত ছিলেন না। এ সময়ই তাকে ধরে শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর অঙ্গ তিনি স্পর্শ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় তিনি তার চিবুক ও কপালে চুমু খাচ্ছেন এমন দৃশ্যও ক্যামেরাতে ধরা পড়েছে।
অভিযোগে প্রকাশ, ঘটনার পর পরিস্থিতির শিকার মেয়েটি ঘরে গিয়ে তার মাকে ঘঠনা জানায়। লন্ডন থেকে বেড়াতে আসা মা ঘঠনা শুনে বিস্ময়ে বিমুঢ় হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে তিনি তার ভাইদের ঘটনা জানালে তারা মসজিদে গিয়ে বিষয়টি তুলে ধরেন। এসময় কেউ কেউ এনিয়ে কথা না বলার দাবী তুলেন। এপর্যায়ে মসজিদের সিসি ক্যামেরায় এর কোন দৃশ্য আছে কিনা সেটা দেখার দাবী তুলেন কেউ কেউ।
এ পর্যায়ে ক্যামেরা অন করা হলে ভিডিও দেখে নির্বাক হয়ে যান অনেকে। এই ঘঠনার সাথে জড়িত শামস উদ্দীনের ছবিও সনাক্ত করা হয়। আসরের নামাজের সময় অভিযুক্তকে মসজিদ আল আমান থেকে ধরে আনেন ঘঠনার শিকার শিশুর মামা।
ফুলতলী মসজিদে নিয়ে আসার পর শামস উদ্দীনের উপর অনেকেই ছিলেন ক্ষুব্ধ। এই পর্যায়ে কেউ কেউ তাকে মারতে উদ্যত হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ ডাকা হয়। তাৎক্ষনিকভাবে পুলিশ এসে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টে।
ঘটনার শিকার শিশু মেয়েটি যাতে কোন ধরনের মানষিক বিপর্যয়ের শিকার না হয় এজন্য তার নানা তাকে নিয়ে মিশিগান চলে গেছেন বলে জানা গেছে।
এবিষয়ে কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট এটর্নঅ অফিস থেকে দেয়া এক প্রেস রিলিজে বলা হয়, স্থানীয় একটি মসজিদের বেইসমেন্টে ৬৩ বছরের এক অভিযুক্ত ১০ বছরের এক শিশুকে যৌন নির্যাতন করেছে। ধর্মীয় কোন প্রতিষ্ঠানে কেউ এধরনের ঘটনা ঘটালে যেন বিনা শাস্তিতে সে বেরিয়ে যেতে না পারে সেবিষয়ে কুইন্স ডিষ্ট্রিক্ট এটর্নী অফিস দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বলে হুশিয়ারী উচ্চারন করা হয়। যৌন নির্যাতনের পর বিষয়টি কাউকে না জানানোরও অনুরোধ করেন তিনি।
এবিষয়ে অভিযুক্ত শামস উদ্দীনের ছেলে নজরুল ইসলাম বলেন, আমার বাবা একজন বয়স্ক মানুষ। ইবাদত বন্দেগীতে ব্যস্ত সময় কাটে তার। গত কয়েক সপ্তাহ আগে তিনি নিউ ইয়র্ক এসেছেন। এর পর থেকেই তিনি মানষিকভাবে কিছুটা বিপর্যস্ত। তেমন কারো সাথে কথা বার্তা বলতে চান না। এধরনের ঘটনা তিনি করতে পারেন এটা আমরা বিশ্বাস করতে পারি না। আমার মনে হয় ভুলবোঝাবুঝি পুরো ঘঠনার নেপথ্য কারণ। বিচারের মাধ্যমে সত্য বেরিয়ে আসবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। রোববার সন্ধ্যায় ফুলতলী জামে মসজিদে গেলে সেখানে কেউ কথা বলতে রাজী হননি। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)