নিউইয়র্কের বাংলাদেশী ব্যবসায়ী মাহবুব জামান দোষী সাব্যস্ত
- প্রকাশের সময় : ১১:৩৩:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০১৪
- / ১১৩৩ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: জালিয়াতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ১৫টি ব্যাংক থেকে ৮০ লাখ ডলার হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে বাংলাদেশী এক ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত। টানা দুই সপ্তাহ শুনানির পর গত ১৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার জুরি বোর্ড মাহাবুব জামান (৪২) নামের ওই বাংলাদেশীকে দোষী সাব্যস্ত করে।
বিচারকরা বলছেন, মাহবুব ১৬ সদস্যের একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক দলের নেতা ছিলেন। ওই দলটির বাকি সদস্যরাও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী অভিবাসী।
ফেডারেল জজ এলিসন জে নাথানের এজলাসে ওই প্রতারণা মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। যার বিস্তারিত তথ্যে দেখা যায়, ২০০৮ সাল থেকে ২০১২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সংঘবদ্ধ দলটি এই প্রতারণা করে আসছিল।
আদালতের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মাহবুব ও তার দল ভুয়া কোম্পানির নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, জাল সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বর এবং পরিচয়পত্র, জাল বাংলাদেশী পাসপোর্ট তৈরির পর তাতে যুক্তরাষ্ট্রের জাল ভিসার সিল এবং চেক জালের মাধ্যমে নিউইয়র্কের ১৫টি ব্যাংক থেকে ওই ৮০ লাখ ডলার হাতিয়ে নেয়।
আর প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়ার সময় মাহবুবসহ দলের অনেকেই বেশ কয়েকবার নিজের নামও পরিবর্তন করেন বলে বিচারকরা প্রমাণ পেয়েছেন।
আগামী বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারী মাহবুবের সাজার মেয়াদ ঘোষণা করবে আদালত। প্রসিকিউটররা জানান, মাহাবুবের সর্বোচ্চ ৫৫ বছরের কারাদন্ড হতে পারে।
প্রতারক দলের বাকিরা কে কোথায়?
মাহবুব ও তার দলের জালিয়াতির নেটওয়ার্ক নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল বলে আদালত প্রমাণ পেয়েছে। ম্যানহাটানের ইউএস অ্যাটর্নি প্রীত ভারারা জানান, ১৬ সদস্যের সংঘবদ্ধ দলটির ‘নেতা’ ছিলেন মাহাবুব জামান, যার গ্রামের বাড়ি বাংলাদেশের যশোরে।
তিনি বলেন, ‘প্রতারক চক্রের হোতাকে দোষী সাব্যস্ত করায় সবার বিরুদ্ধে শাস্তি প্রদানের পথ সুগম হল। কারণ অপর ১৫ জনের ১১ জন আগেই নিজেদের দোষ স্বীকার করেছেন।’
অ্যাটর্নি প্রীত ভারারা জানান, এই চক্রের এক সদস্য সাঈদ আল হোসেন ওরফে সুমনকে (৪৭) গত বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি গ্রেপ্তার করা হয়।
হামিদ খান ওরফে আব্দুল হামিদ (৪৩) নামের আরেক অভিযুক্ত এখনও বাংলাদেশে পালিয়ে আছেন বলে জানান তিনি।
প্রীত ভারারা বলেন, এছাড়া খায়রুল ইসলাম (৫৮), আব্দুর রাজ্জাক (৫৪) এবং আকতার রহমান (৪৮) নামের তিনজন এখনও পলাতক রয়েছেন। বাকি বাংলাদেশীরা গ্রেপ্তার রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে কী রায় হবে, তার ধারণা পাওয়া যায়নি। তবে মাহাবুব জামানের মতো অন্যদের বিরুদ্ধেও রায় ঘোষণা করবে একই আদালত।
যেভাবে জালিয়াতি করা হয়েছে: ফেডারেল কোর্টের তথ্য অনুযায়ী, প্রতারণা করতে প্রথমে মাহবুব জামানের নেতৃত্বাধীন দলটির সদস্যরা ব্যাংকের আস্থা অর্জনের কাজ করে। তারা ভুয়া কোম্পানির নামে অ্যাকাউন্ট খুলে তাতে মোটা অঙ্কের লেনদেন করে ব্যাংক কর্মকর্তাদের আস্থা অর্জনের পরপরই জাল চেক জমা দেয়। সুযোগ বুঝে এমন দিনেই ওই জাল চেকগুলো প্রতারকরা জমা দেন, যেদিন চেকের সত্যাসত্য যাচাইয়ে ব্যাংকে শৈথিল্য ছিল। জাল চেকের বিপরীতে মোটা অংকের অর্থ একইসঙ্গে তোলার জন্য তারা বেছে নেন নিউজার্সি রাজ্যের ‘ক্যাসিনো সিটি’ হিসেবে পরিচিত আটলান্টিক সিটির এটিএম মেশিনকে। বাকি অঞ্চলের এটিএম বুথ থেকে ১০ হাজার ডলারের বেশি তোলা না গেলেও আটলান্টিক সিটিতে যত খুশি তত ডলার তোলার সুযোগ রয়েছে। এভাবেই তারা মোট ১৫টি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলে এবং জালিয়াতি করে। একই সময়ে জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে সংঘবদ্ধ এ চক্রটি বাড়িঘর কেনার কথা বলেও ঋণ বরাদ্দের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের ডলার হাতিয়ে নিয়েছে।
এছাড়া ক্রেডিট কার্ড বানিয়েও এই চক্র মোটা অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে পুলিশের অভিযোগ রয়েছে।
ফেডারেল আদালতের বিচারকরা বলেছেন, মাহাবুব জামান এবং তার সহযোগীরা ভুয়া সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বর, ভুয়া পরিচয়পত্রও তৈরি করেন। এমনকি তারা বাংলাদেশী পাসপোর্টও জাল করেন। জাল পাসপোর্টে যুক্তরাষ্ট্রের জাল ভিসাও ইস্যু করা হয়।