নিউইয়র্ক ১১:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

‘নিউইয়ক-ঢাকা-নিউইয়র্ক’ রুটে বিমান চালু আর কমিউনিটি সেন্টার প্রতিষ্ঠায় কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার দাবী

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:৫১:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ জানুয়ারী ২০১৫
  • / ১০১২ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: বর্ণাঢ্য আয়োজনে অভিষিক্ত হলেন বাংলাদেশ সোসাইটি ইন্ক নিউইয়র্ক-এর নয়া কমিটির কর্মকর্তাবৃন্দ। এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দাবী উঠেছে বাংলাদেশ সোসাইটির দল-মতের উর্ধ্বে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সত্যিকারের নেতৃত্বদানকারী সামাজিক সংগঠনে পরিণত করার। সেই সাথে দাবী উঠেছে গতানুগতিক ধারায় না চলে প্রবাসীদের কল্যাণে সোসাইটিকে পরিচালিত করার। বিশেষ করে ‘নিউইয়ক-ঢাকা-নিউইয়র্ক’ রুটে বিমান চালু, কমিউনিটি সেন্টার প্রতিষ্ঠায় কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার।
সিটির উডসাইডস্থ কুইন্স প্যালেসে গত ৪ জানুয়ারী সন্ধ্যায় বাংলাদেশ সোসাইটির নবনির্বাচিত কার্যকরী পরিষদের (২০১৫-২০১৬) কর্মকর্তাদের অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আব্দুল মোমেন এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কন্স্যুলেটে নিযুক্ত কনসাল জেনারের শামীম আহসান।
দুই পর্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সোসাইটির বিদায়ী সভাপতি কামাল আহমেদ এবং দ্বিতীয় পর্বে সভাপতিত্ব করেন নবনির্বাচিত সভাপতি আজমল হোসেন কুনু। অনুষ্ঠান মঞ্চে উপবিস্ট ছিলেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য যথাক্রমে মোহাম্মদ এ হাকিম মিয়া ও আজমল আলী, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ও মোহাম্মদ আজিজ ।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বের শেষ পর্যায়ে নবনির্বাচিত কর্মকর্তাদের শপথ বাক্য পাঠ করান ট্রাষ্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সাবেক সভাপতি ডা. মইনুল ইসলাম মিয়া। এর আগে নির্বাচিত সকলের হাতে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানানো হয়। এছাড়া স্ব স্ব পদের কর্মকর্তাদের ব্যাজ পড়িয়ে দেন এবং সার্টিফিকেট প্রদান করেন বিদায়ী সভাপতি কামাল আহমেদ। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ডা. মিয়া সোসাইটির প্রতিষ্ঠাকালীন কর্মকর্তা ও সদস্যদেরকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ এবং গত বছর মৃত্যুবরণকারী কমিউনিটির পরিচিত মুখ রতন বড়–য়া, জাহাঙ্গীর আলম, রাসেল ঠাকুর  প্রমুখের বিদহী আতœার শান্তি কামনা করেন।
নব নির্বাচিত কর্মকর্তাদের শপথ গ্রহন শেষে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে সভাপতিত্ব করেন নয়া সভাপতি আজমল হোসেন কুনু। এই পর্ব পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহীম হাওলাদার। অনুষ্ঠানে সোসাইটির ওয়েব সাইট উদ্বোধন করা হয়।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সোসাইটির সাবেক সভাপতি ডা. ওয়াদুদ ভূইয়া, ডা. এম এম বিল্লাহ ও ডা. মোহাম্মদ হামিদুজ্জামান, ট্রাষ্টি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ডা. জহুরুল ইসলাম মানিকী, ট্রাষ্টি বোর্ডের সদস্য ও সাবেক সভাপতি এম আজিজ, ট্রাষ্টি বোর্ডের সদস্য নাসির আলী খান পল, এম এ কাইয়ুম, এডভোকেট জামাল আহমেদ জনি, রশীদ আহমদ, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইঞ্জিনিয়ার নূরুল হক, সহ সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম ও রানা ফেরদৌস চৌধুরী, ট্রাষ্টি বোর্ডের সাবেক সদস্য আলী ইমাম শিকদার, সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি ওয়াসি চৌধুরী, শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও সোসাইটির সিনিয়র সহ সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান, কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ও সোসাইটির বিদায়ী সহ সাধারণ সম্পাদক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ সোহাগ, ক্রীড়া সম্পাদক সৈয়দ এনায়েত আলী, সমাজকল্যাণ সম্পাদক তোফায়েল ইসলাম,  প্রচার সম্পাদক এম কে জামান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মোশাররফ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ রুহুল আমীন সিদ্দিকী, মূলধারার রাজনীতিক ক্যারোলিনা   প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন জে মোল্লা সানী।
অনুষ্ঠানে ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশ সোসাইটির আজকের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করলো প্রবাসীরা শুধু ভাঙতে নয়, গড়তেও জানে। সোসাইটির ফান্ডে ৯৩ হাজার ডলার খুশীর কথা। এখন সবাই এগিয়ে আসলে বাংলাদেশ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা কোন সমস্যা নয়। তিনি বলেন, প্রয়োজনে সরকার সোসাইটিকে সহযোগিতা দেবে। আমরা চাই বয়স্ক সেন্টার, চাই নতুন প্রজন্মের জন্য লাইব্রেরী, চাই খেলাধুলার ব্যবস্থা।
শামীম আহসান বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্যদিয়ে ফুল দিয়ে নতুন কমিটিকে বরণ করে বাংলাদেশ সোসাইটি বিরল ঘটনার জন্ম দিলো। বাংলাদেশ সোসাইটিই প্রবাসে বাংলাদেশীদের সর্ববৃহৎ সামাজিক সংগঠন। তিনি কমিউনিটির কল্যাণে সোসাইটির কর্মকর্তাদের অগ্রনী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। প্রসঙ্গত তিনি বলেন, ২০১৫ সালের ২৪নভেম্বরের পর থেকে হাতে লেখা পাসপোর্ট চলবে না। তাই সংশ্লিষ্ট সকলকে তিনি মেশিন রিডেবল পার্সপোর্ট গ্রহণের পরামর্শ দেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা সোসাইটির নবনির্বাচিত কর্মকর্তাদের শুভেচ্ছা জানান এবং সোসাইটির সাবেক কর্মকর্তা বিশেষ করে ইউসুফ, জাকারিয়া প্রমুখকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন এবং সোসাইটির দায়িত্ব পালনে নানা অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।
ডা. ওয়াদুদ ভূইয়া, বলেন, সোসাইটি রাইট ট্রাকে ফিরছে। আজকের অনুষ্ঠানে সাবেক কর্মকর্তা আর বিপুল সংখ্যক প্রবাসীর উপস্থিতিই তাই প্রমান করে।
ডা. মোহাম্মদ হামিদুজ্জামান বলেন, সোসাইটির অনেক উন্নতি হয়েছে। তিনি সোসাইটি ভবন প্রতিষ্ঠার ইতিহাস তুলে ধরেন এবং আগামী লক্ষ্য হোক কমিউনিটি সেন্টার। তিনি একাধিক সাব কমিটি গঠন করে কমিউনিটিতে সক্রিয় করে সোসাইটির কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন কমিটির প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমাদের নতুন প্রজন্মকে সোসাইটির নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্য করে তুলতে হবে।
ডা. জহুরুল ইসলাম মানিকী মূলধারায় কাউন্সিলম্যান হওয়ার জন্য নিজেদের গড়ে তোলা, লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা আর কমিউনিটি সেন্টার প্রতিষ্ঠার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
এম অজিজ বলেন, আমার সহযোগিতায় ফখরুল আলম ও আজহারুল হক মিলন অক্সোন থেকে সোসাইটি ভবনটি রক্ষা করেন। আমি ৩৫ হাজার ডলার অনুদান দিয়েছি। পুনরায় বাংলা স্কুল ও ইরেজী শিক্ষা চালু করার জন্য নতুন কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, আমি আপনাদের সাথে থাকবো, সোসাইটির জন্য কাজ করবো।
ফখরুল আলম বলেন, ১৯৭৫-এর নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ সোসাইটির প্রতিষ্ঠা। হাটি হাটি পা পা করে সোসাইটি আজ সাগরের মত বিশাল হয়েছে। সোসাটিকে সম্মিলিত উদ্যোকে আরো শক্তিশালী করার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, সোসাইটিকে সকল বাংলাদেশীর প্রতিনিধিত্বকারী সামাজিক সংগঠনের পরিণত করতে হবে, সোসাইটির সদস্য সংখ্য বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি ‘নিউইয়ক-ঢাকা-নিউইয়র্ক’ রুটে পুনরায় বিমান চালুর ব্যাপারে একটি কমিটি গঠন করে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য নবাগত কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
আলী ইমাম শিকদার তার বক্তব্যে বাংলাদেশ সোসাইটিকে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ‘মিনি পার্লামেন্ট’ আখ্যায়িত করেন এবং বাংলাদেশে প্রবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আন্দোলন গড়ে তোলার দাবী জানান।
নাসির আলী খান পল বলেন, আমরা বোর্ড অব ট্রাষ্টির সদস্য হিসেবে আমাদেরকে সোসাইটির কোন কাজে উপদেশ নেয়া হয় না।
জামাল আহমেদ জনি বলেন, সোসাইটির নির্বাচিত কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বিমত থাকতে পারে কিন্তু আগামী দুই বছর কাদা ছোড়াছুড়ি দেখতে চাই না।
ইঞ্জিনিয়ার নূরুল হক বলেন, সোসাইটির এবারের নির্বাচন ছিলো সত্যিই ব্যতিক্রমী। তিনি বলেন, নির্বাচনে কেই দুই ভোেেটও পরাজিত হয়েছেন। একটি পদে দুই প্রার্থী সমান ভোট পাওয়ায় নির্বাচন কমিশনের ভোটে একজনকে নির্বাচিত করতে হয়েছে। তিনি নির্বাচন কমিশনের ভোট প্রথা বাতিল আর ভোট কেন্দ্র স্থাপন সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের জন্য সোসাইটির কর্তকর্তাদের প্রতি পরামর্শ দেন।
সিরাজ উদ্দিন আহমেদ সোহাগ বলেন, সোসাইটিকে সুন্দর করতে হলে কমিউনিটির সুন্দর মনের মানুষকে নেতৃত্বে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে সোসাইটি কারো পকেটের সংগঠন নয়, সবার সংগঠন।
কামাল আহমেদ সোসাইটির প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে ৩৫ বছরের কর্মকান্ডে যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে সোসাইটি আজকের পর্যায়ে এসেছে তার জন্য সকল কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ আর নবনির্বাচিত কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, বিগত দুই বছরে সোসাইটিতে যা ভালো কাজ হয়েছে তার কৃতিত্ব আমার নয়, এই কৃতিত্ব সোসাইটির কার্যকরী কমিটির ১৯জন কর্মকর্তার। তিনি বলেন, সোসাইাটর মাধ্যমে কনস্যুলেট সেবা প্রধান, ব্যবসায়ীদের মতবিনিময়, আজীবন সদস্য সংগ্রহ অভিযান, অভ্যন্তরীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন, বাংলা স্কুল প্রভৃতি কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন।
আব্দুর রহীম হাওলাদার বলেন, এবার নিয়ে পাঁচবার সোসাইটির বিভিন্ন পদে তাকে নির্বাচিত করায় ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, কাজের মাধ্যমে এই সম্মানের মূল্যায়ন করা হবে। তিনি সোসাইটি ও নির্বাচন পরিচালনাসহ সোসাইটির সাবেক ও বর্তমান সকল কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং অতি সত্তর বাংলা স্কুল চালুর প্রতিশ্রুতি দেন এবং সোসাইটির বিভিন্ন কর্মকান্ড তুলে ধরেন। তিনি বলেন সবার সহযোগিতা পেলে নতুন কমিটি প্রবাসীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আজমল হোসেন কুনু বলেন, প্রবাসীদের সহযোগিতা পেলে আমি আমার নেয়া শপথ পালন করতে পারবো। নির্বাচন শেষ আজ থেকে আমরা সবাই এক প্যানেলের মানুষ। আমরা নতুন-পুরাতন সবাই মিলে কাজ করবো। আমাদের মধ্যে কোন বাধা থাকবে না। আমরা ১৯জন নয় ৩৮জনকে নিয়ে সোসাইটি পরিচালনা করবো। তিনি বলেন, প্রবাসীদের অর্থে দেশের অর্থনীতি সচল থাকে। তাই সরকারকে প্রবাসীদের সমস্যা বুঝতে হবে। প্রবাসীদের প্রাণের দাবী ‘নিউইয়র্ক-ঢাকা-নিউইয়র্ক’ রুটে পুনরায় বিমান চালু হোক। এছাড়াও প্রবাসীদের চাকুরী, স্বাস্থ্য, ইমিগ্রেশন প্রভৃতি বিষয়ে নানা সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন এবং ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান নবনির্বাচিত সভাপতি আজমল হোসেন কুনু।
সবশেষে ছিলো মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীরা সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন।
ঠান্ড আর প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে সর্বস্তরের প্রবাসী বাংলাদেশীদের উপস্থিতিতে কুইন্স প্যালেস ছিলো কানায় কানায় পূর্ণ। অনেকেই স্বপরিবারে অংশ নেন।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

‘নিউইয়ক-ঢাকা-নিউইয়র্ক’ রুটে বিমান চালু আর কমিউনিটি সেন্টার প্রতিষ্ঠায় কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার দাবী

প্রকাশের সময় : ১১:৫১:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ জানুয়ারী ২০১৫

নিউইয়র্ক: বর্ণাঢ্য আয়োজনে অভিষিক্ত হলেন বাংলাদেশ সোসাইটি ইন্ক নিউইয়র্ক-এর নয়া কমিটির কর্মকর্তাবৃন্দ। এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দাবী উঠেছে বাংলাদেশ সোসাইটির দল-মতের উর্ধ্বে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সত্যিকারের নেতৃত্বদানকারী সামাজিক সংগঠনে পরিণত করার। সেই সাথে দাবী উঠেছে গতানুগতিক ধারায় না চলে প্রবাসীদের কল্যাণে সোসাইটিকে পরিচালিত করার। বিশেষ করে ‘নিউইয়ক-ঢাকা-নিউইয়র্ক’ রুটে বিমান চালু, কমিউনিটি সেন্টার প্রতিষ্ঠায় কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার।
সিটির উডসাইডস্থ কুইন্স প্যালেসে গত ৪ জানুয়ারী সন্ধ্যায় বাংলাদেশ সোসাইটির নবনির্বাচিত কার্যকরী পরিষদের (২০১৫-২০১৬) কর্মকর্তাদের অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আব্দুল মোমেন এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কন্স্যুলেটে নিযুক্ত কনসাল জেনারের শামীম আহসান।
দুই পর্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সোসাইটির বিদায়ী সভাপতি কামাল আহমেদ এবং দ্বিতীয় পর্বে সভাপতিত্ব করেন নবনির্বাচিত সভাপতি আজমল হোসেন কুনু। অনুষ্ঠান মঞ্চে উপবিস্ট ছিলেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য যথাক্রমে মোহাম্মদ এ হাকিম মিয়া ও আজমল আলী, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ও মোহাম্মদ আজিজ ।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বের শেষ পর্যায়ে নবনির্বাচিত কর্মকর্তাদের শপথ বাক্য পাঠ করান ট্রাষ্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সাবেক সভাপতি ডা. মইনুল ইসলাম মিয়া। এর আগে নির্বাচিত সকলের হাতে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানানো হয়। এছাড়া স্ব স্ব পদের কর্মকর্তাদের ব্যাজ পড়িয়ে দেন এবং সার্টিফিকেট প্রদান করেন বিদায়ী সভাপতি কামাল আহমেদ। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ডা. মিয়া সোসাইটির প্রতিষ্ঠাকালীন কর্মকর্তা ও সদস্যদেরকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ এবং গত বছর মৃত্যুবরণকারী কমিউনিটির পরিচিত মুখ রতন বড়–য়া, জাহাঙ্গীর আলম, রাসেল ঠাকুর  প্রমুখের বিদহী আতœার শান্তি কামনা করেন।
নব নির্বাচিত কর্মকর্তাদের শপথ গ্রহন শেষে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে সভাপতিত্ব করেন নয়া সভাপতি আজমল হোসেন কুনু। এই পর্ব পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহীম হাওলাদার। অনুষ্ঠানে সোসাইটির ওয়েব সাইট উদ্বোধন করা হয়।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সোসাইটির সাবেক সভাপতি ডা. ওয়াদুদ ভূইয়া, ডা. এম এম বিল্লাহ ও ডা. মোহাম্মদ হামিদুজ্জামান, ট্রাষ্টি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ডা. জহুরুল ইসলাম মানিকী, ট্রাষ্টি বোর্ডের সদস্য ও সাবেক সভাপতি এম আজিজ, ট্রাষ্টি বোর্ডের সদস্য নাসির আলী খান পল, এম এ কাইয়ুম, এডভোকেট জামাল আহমেদ জনি, রশীদ আহমদ, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইঞ্জিনিয়ার নূরুল হক, সহ সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম ও রানা ফেরদৌস চৌধুরী, ট্রাষ্টি বোর্ডের সাবেক সদস্য আলী ইমাম শিকদার, সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি ওয়াসি চৌধুরী, শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও সোসাইটির সিনিয়র সহ সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান, কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ও সোসাইটির বিদায়ী সহ সাধারণ সম্পাদক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ সোহাগ, ক্রীড়া সম্পাদক সৈয়দ এনায়েত আলী, সমাজকল্যাণ সম্পাদক তোফায়েল ইসলাম,  প্রচার সম্পাদক এম কে জামান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মোশাররফ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ রুহুল আমীন সিদ্দিকী, মূলধারার রাজনীতিক ক্যারোলিনা   প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন জে মোল্লা সানী।
অনুষ্ঠানে ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশ সোসাইটির আজকের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করলো প্রবাসীরা শুধু ভাঙতে নয়, গড়তেও জানে। সোসাইটির ফান্ডে ৯৩ হাজার ডলার খুশীর কথা। এখন সবাই এগিয়ে আসলে বাংলাদেশ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা কোন সমস্যা নয়। তিনি বলেন, প্রয়োজনে সরকার সোসাইটিকে সহযোগিতা দেবে। আমরা চাই বয়স্ক সেন্টার, চাই নতুন প্রজন্মের জন্য লাইব্রেরী, চাই খেলাধুলার ব্যবস্থা।
শামীম আহসান বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্যদিয়ে ফুল দিয়ে নতুন কমিটিকে বরণ করে বাংলাদেশ সোসাইটি বিরল ঘটনার জন্ম দিলো। বাংলাদেশ সোসাইটিই প্রবাসে বাংলাদেশীদের সর্ববৃহৎ সামাজিক সংগঠন। তিনি কমিউনিটির কল্যাণে সোসাইটির কর্মকর্তাদের অগ্রনী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। প্রসঙ্গত তিনি বলেন, ২০১৫ সালের ২৪নভেম্বরের পর থেকে হাতে লেখা পাসপোর্ট চলবে না। তাই সংশ্লিষ্ট সকলকে তিনি মেশিন রিডেবল পার্সপোর্ট গ্রহণের পরামর্শ দেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা সোসাইটির নবনির্বাচিত কর্মকর্তাদের শুভেচ্ছা জানান এবং সোসাইটির সাবেক কর্মকর্তা বিশেষ করে ইউসুফ, জাকারিয়া প্রমুখকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন এবং সোসাইটির দায়িত্ব পালনে নানা অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।
ডা. ওয়াদুদ ভূইয়া, বলেন, সোসাইটি রাইট ট্রাকে ফিরছে। আজকের অনুষ্ঠানে সাবেক কর্মকর্তা আর বিপুল সংখ্যক প্রবাসীর উপস্থিতিই তাই প্রমান করে।
ডা. মোহাম্মদ হামিদুজ্জামান বলেন, সোসাইটির অনেক উন্নতি হয়েছে। তিনি সোসাইটি ভবন প্রতিষ্ঠার ইতিহাস তুলে ধরেন এবং আগামী লক্ষ্য হোক কমিউনিটি সেন্টার। তিনি একাধিক সাব কমিটি গঠন করে কমিউনিটিতে সক্রিয় করে সোসাইটির কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন কমিটির প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমাদের নতুন প্রজন্মকে সোসাইটির নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্য করে তুলতে হবে।
ডা. জহুরুল ইসলাম মানিকী মূলধারায় কাউন্সিলম্যান হওয়ার জন্য নিজেদের গড়ে তোলা, লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা আর কমিউনিটি সেন্টার প্রতিষ্ঠার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
এম অজিজ বলেন, আমার সহযোগিতায় ফখরুল আলম ও আজহারুল হক মিলন অক্সোন থেকে সোসাইটি ভবনটি রক্ষা করেন। আমি ৩৫ হাজার ডলার অনুদান দিয়েছি। পুনরায় বাংলা স্কুল ও ইরেজী শিক্ষা চালু করার জন্য নতুন কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, আমি আপনাদের সাথে থাকবো, সোসাইটির জন্য কাজ করবো।
ফখরুল আলম বলেন, ১৯৭৫-এর নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ সোসাইটির প্রতিষ্ঠা। হাটি হাটি পা পা করে সোসাইটি আজ সাগরের মত বিশাল হয়েছে। সোসাটিকে সম্মিলিত উদ্যোকে আরো শক্তিশালী করার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, সোসাইটিকে সকল বাংলাদেশীর প্রতিনিধিত্বকারী সামাজিক সংগঠনের পরিণত করতে হবে, সোসাইটির সদস্য সংখ্য বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি ‘নিউইয়ক-ঢাকা-নিউইয়র্ক’ রুটে পুনরায় বিমান চালুর ব্যাপারে একটি কমিটি গঠন করে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য নবাগত কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
আলী ইমাম শিকদার তার বক্তব্যে বাংলাদেশ সোসাইটিকে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ‘মিনি পার্লামেন্ট’ আখ্যায়িত করেন এবং বাংলাদেশে প্রবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আন্দোলন গড়ে তোলার দাবী জানান।
নাসির আলী খান পল বলেন, আমরা বোর্ড অব ট্রাষ্টির সদস্য হিসেবে আমাদেরকে সোসাইটির কোন কাজে উপদেশ নেয়া হয় না।
জামাল আহমেদ জনি বলেন, সোসাইটির নির্বাচিত কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বিমত থাকতে পারে কিন্তু আগামী দুই বছর কাদা ছোড়াছুড়ি দেখতে চাই না।
ইঞ্জিনিয়ার নূরুল হক বলেন, সোসাইটির এবারের নির্বাচন ছিলো সত্যিই ব্যতিক্রমী। তিনি বলেন, নির্বাচনে কেই দুই ভোেেটও পরাজিত হয়েছেন। একটি পদে দুই প্রার্থী সমান ভোট পাওয়ায় নির্বাচন কমিশনের ভোটে একজনকে নির্বাচিত করতে হয়েছে। তিনি নির্বাচন কমিশনের ভোট প্রথা বাতিল আর ভোট কেন্দ্র স্থাপন সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের জন্য সোসাইটির কর্তকর্তাদের প্রতি পরামর্শ দেন।
সিরাজ উদ্দিন আহমেদ সোহাগ বলেন, সোসাইটিকে সুন্দর করতে হলে কমিউনিটির সুন্দর মনের মানুষকে নেতৃত্বে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে সোসাইটি কারো পকেটের সংগঠন নয়, সবার সংগঠন।
কামাল আহমেদ সোসাইটির প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে ৩৫ বছরের কর্মকান্ডে যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে সোসাইটি আজকের পর্যায়ে এসেছে তার জন্য সকল কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ আর নবনির্বাচিত কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, বিগত দুই বছরে সোসাইটিতে যা ভালো কাজ হয়েছে তার কৃতিত্ব আমার নয়, এই কৃতিত্ব সোসাইটির কার্যকরী কমিটির ১৯জন কর্মকর্তার। তিনি বলেন, সোসাইাটর মাধ্যমে কনস্যুলেট সেবা প্রধান, ব্যবসায়ীদের মতবিনিময়, আজীবন সদস্য সংগ্রহ অভিযান, অভ্যন্তরীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন, বাংলা স্কুল প্রভৃতি কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন।
আব্দুর রহীম হাওলাদার বলেন, এবার নিয়ে পাঁচবার সোসাইটির বিভিন্ন পদে তাকে নির্বাচিত করায় ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, কাজের মাধ্যমে এই সম্মানের মূল্যায়ন করা হবে। তিনি সোসাইটি ও নির্বাচন পরিচালনাসহ সোসাইটির সাবেক ও বর্তমান সকল কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং অতি সত্তর বাংলা স্কুল চালুর প্রতিশ্রুতি দেন এবং সোসাইটির বিভিন্ন কর্মকান্ড তুলে ধরেন। তিনি বলেন সবার সহযোগিতা পেলে নতুন কমিটি প্রবাসীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আজমল হোসেন কুনু বলেন, প্রবাসীদের সহযোগিতা পেলে আমি আমার নেয়া শপথ পালন করতে পারবো। নির্বাচন শেষ আজ থেকে আমরা সবাই এক প্যানেলের মানুষ। আমরা নতুন-পুরাতন সবাই মিলে কাজ করবো। আমাদের মধ্যে কোন বাধা থাকবে না। আমরা ১৯জন নয় ৩৮জনকে নিয়ে সোসাইটি পরিচালনা করবো। তিনি বলেন, প্রবাসীদের অর্থে দেশের অর্থনীতি সচল থাকে। তাই সরকারকে প্রবাসীদের সমস্যা বুঝতে হবে। প্রবাসীদের প্রাণের দাবী ‘নিউইয়র্ক-ঢাকা-নিউইয়র্ক’ রুটে পুনরায় বিমান চালু হোক। এছাড়াও প্রবাসীদের চাকুরী, স্বাস্থ্য, ইমিগ্রেশন প্রভৃতি বিষয়ে নানা সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন এবং ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান নবনির্বাচিত সভাপতি আজমল হোসেন কুনু।
সবশেষে ছিলো মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীরা সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন।
ঠান্ড আর প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে সর্বস্তরের প্রবাসী বাংলাদেশীদের উপস্থিতিতে কুইন্স প্যালেস ছিলো কানায় কানায় পূর্ণ। অনেকেই স্বপরিবারে অংশ নেন।