নিউইয়র্ক ০৪:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

তোপের মুখে পড়ার আশংকায় যুক্তরাষ্ট্র আ. লীগের প্রস্তুুতি সভা স্থগিত

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১০:৩২:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫
  • / ৭০৬ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: ‘বিগত দিনের অসাংগঠনিক কর্মকান্ডের জবাব চাইতে পারেন কর্মীরা-এ আশংকায় আকস্মিকভাবে বাতিল করা হলো যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রস্তুুতি সভা। এ সভা আহবান করা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিউইয়র্ক সফরকালে বিএনপি-জামাত-শিবিরের যে কোন অপতৎপরতা রুখে দেয়ার যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণের জন্যে।
গত ৭ সেপ্টেম্বর সোমবার অপরাহ্ন ৩টায় এই প্রস্তুতি সভা হবার কথা ছিল নিউইয়র্ক সিটির উডসাইডে ‘কুইন্স প্যালেস’ এর মিলনায়তনে। সে অনুযায়ী আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, কৃষক লীগ, বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগ, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জড়ো হন সভাস্থলে। এমনকি সভা আহবানকারী যুক্তরাষ্ট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিজাম চৌধুরী, সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান এবং জয়নাল আবদীন, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন দেওয়ান এবং আব্দুল হাসিব মামুনসহ শতাধিক নেতা-কর্মী সভাস্থলে হাজির হন। মঞ্চে ব্যানারও লাগানো হয়। কিন্তু সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান অনুপস্থিত। সে সময় তিনি এই সিটির ব্রুকলীনে বাংলাদেশী অধ্যুষিত চার্চ-ম্যাকডোনাল্ডে একটি রেস্টুরেন্টে বসে তার কয়েক সহকর্মীর সাথে আড্ডা দিচ্ছিলেন বলে সভায় উপস্থিত সকলে জানতে পারেন। আরো জানানো হয় যে, ৬ সেপ্টেম্বর দুপুরেই নাকি সভাপতি এই সভা স্থগিত ঘোষণা করেছেন। এরপরই সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এ সময় মাইকে গিয়ে সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্যে বলেন, ‘সভা স্থগিতের যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে সেটি সাংগঠনিক রীতি অনুযায়ী হয়নি। সভাপতি সাহেব আমাকেও জানাননি বা পরামর্শ করেননি স্থগিতের ব্যাপারে। এটি যেমন দু:খজনক, ঠিক একইভাবে ঘটনাটি সাংগঠনিক রীতির পরিপন্থি বটে। তবে, সংগঠনের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সফরকে সর্বাত্মক সাফল্যমন্ডিত করার স্বার্থে সকলকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে।’ সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী বলেন, ‘লন্ডনের মত পরিস্থিতি যাতে না হয় সে উদ্দেশ্যে আমরা সর্বস্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে প্রস্তুতি বৈঠক করতে চেয়েছিলাম। সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান এবং আমি মিলে এই প্রস্তুতি সভার ঘোষণা দিয়েছিলাম। ‘বিএনপি-জামাত-শিবিরের অপতৎপরতা শক্ত হাতে রুখে দিতে আমরা ইস্পাদত দৃঢ় ঐক্য রচনা করতে চাই। কারণ, প্রধানমন্ত্রী এবার নিউইয়র্কে ঈদ এবং জন্মদিন পালন করবেন। আমরা ঈদের আনন্দ কীভাবে ভাগাভাগি করতে পারি সেটিও ছিল আলোচ্যসূচিতে। কিন্তু সভাপতি সাহেব কেন একক সিদ্ধান্তে প্রস্তুতি সভা স্থগিত করেছেন সেটি সত্যি রহস্যজনক। তবে আমরা সভানেত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যার সফরের প্রতি খেয়াল রেখে সবধরনের জটিলতা পরিহার করতে বদ্ধ পরিকর।’ সাজ্জাদ আবারো মাইকে এসে বলেন, ‘সভাপতির প্রতি সম্মান জানিয়ে আমরা আজ আনুষ্ঠানিক কোন সভা না করলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে কথা বলবো।’ এ জন্যে মঞ্চে কেউই আসন না নিয়ে স্বইচ্ছায় একেক জন মাইকে এসে নিজ নিজ মতামত ব্যক্ত করেন। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী অগের মতই জেএফকে এয়ারপোর্ট, জাতিসংঘ সদর দফতর এবং সম্বর্ধনাস্থলের বাইরে বিএনপি-জামাতীদের রুখে দেয়ার সংকল্প ব্যক্ত করেন সকলে।
উল্লেখ্য, ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় শতাধিক সফরসঙ্গীসহ নিউইয়র্কে আসবেন শেখ হাসিনা। ১ অক্টোবর পর্যন্ত জাতিসংঘের অধিবেশনে অংশ নেবেন এবং বাংলাদেশের বক্তব্য উপস্থাপন করবেন। সে সময় প্রবাসীদের পক্ষ থেকে তাকে বিপুলভাবে সম্বর্ধনা প্রদানের কর্মসূচি রয়েছে। এছাড়া, জেএফকে এয়ারপোর্ট, জাতিসংঘের সামনে এবং হোটেলের বাইরে বিক্ষোভ করার যে কর্মসূচি রয়েছে তা শক্তহাতে প্রতিহত করার জন্যেই আওয়ামী লীগ এ প্রস্তুতি সভার ঘোষণা দেয়।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ এবং মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী মোর্শেদা জামান বলেন, ‘কয়েকমাস আগে রাষ্ট্রপতি এডভোকেট আব্দুল হামিদ নিউইয়র্কে এসেছিলেন। সে সময় তাকে সম্বর্ধনা প্রদানের জন্যে গঠিত একটি কমিটিতে একাত্তরের আলবদর এবং বিএনপির এক নেতাকে রাখা হয়েছিল। আমি আমার সংগঠনের উদ্যোগে ঐ ঘটনার প্রতিবাদ করেছিলাম এবং শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি সে অনুষ্ঠানে যাননি। এ জন্যে ড. সিদ্দিকুর রহমান আমার উপর ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ। আমাকে আওয়ামী লীগের কোন কর্মসূচিতে আসতে মানা করেছেন তিনি।’
যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহবায়ক ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ড. এম এ বাতেন বলেন, ‘রাষ্ট্রপতিকে সংবর্ধনা জ্ঞাপনের কমিটিতে রাজাকার; বদর আর শিবিরের লোকজন থাকায় আমরা নিন্দা ও প্রতিবাদ করেছিলাম। এ কারণে ড. সিদ্দিকুর রহমান তার অনুগত কয়েকজনকে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পাল্টা কমিটি করেছেন।’
যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নুরুজ্জামান সর্দার বলেন, ‘৩ বছর আগে নিউইয়র্ক সফরকালে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে আমি স্বেচ্ছাসেবক লীগের একটি সমাবেশ করেছি। সে জন্যে ড. সিদ্দিকুর রহমান আমার ওপর ক্ষেপে কেন্দ্রে বারংবার যোগাযোগ করছেন পাল্টা কমিটি করে দেয়ার জন্যে। কোন সাড়া না পেয়ে নিজেই একটি কমিটি ঘোষণা দিয়েছেন।’
নিউ্ইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরনবী কমান্ডার অভিযোগ করেন, ‘স্বেচ্ছাসেবক লীগের মত যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগ, মহিলা লীগ, যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু প্রজন্মলীগ, শ্রমিক লীগেও পাল্টা কমিটি হয়েছে ড. সিদ্দিকুর রহমানের মদদে। একইভাবে জননেত্রী শেখ হাসিনার নিউইয়র্ক সফরের সময় বিএনপি-জামাত-শিবিরের কর্মসূচির সমর্থনেই প্রকারান্তরে কাজ করছেন আওয়ামী লীগে নবাগত এই ড. সিদ্দিকুর রহমান।’
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জয়নুল আবদীন বলেন, ‘লন্ডন সফরের সময় জননেত্রীকে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। নিউইয়র্কে সেটি হতে দেব না বলেই আওয়ামী পরিবারে ইস্পাত দৃঢ় ঐক্য দরকার। কিন্তু ড. সিদ্দিকুর রহমানের তৎপরতায় মনে হচ্ছে যে, তিনি বিএনপি আর জামাত-শিবিরের এজেন্ট হিসেবে আওয়ামী লীগে ঢুকেছেন।’
সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হাসিব মামুন বলেন, ‘দলের পদ ও পদবী ভাঙ্গিয়ে ঢাকায় ব্যবসা করছেন ড. সিদ্দিকুর রহমান। বিপুল অর্থ পাচ্ছেন নিয়মিতভাবে সে ব্যবসা থেকে। আর এ ব্যবসাটি দিয়েছেন সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এতদসত্ত্বেও প্রতি বছর জননেত্রীকে নিউইয়র্কে সংবর্ধনার নামে লাখ লাখ ডলারের চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। সংগঠনের নামে তোলা চাঁদার অর্থের হিসাব আজ অবধি দেননি ড. সিদ্দিক।’
যুক্তরাষ্ট্র কৃষক লীগের সভাপতি হাজী নিজাম বলেন, ‘এবার সভানেত্রীকে সবকিছু জানাবো। দলের নাম ভাঙ্গিয়ে বছরের ৮ মাসই ঢাকায় থেকে ড. সিদ্দিকুর রহমান কাদের পারপাস সার্ভ করছেন?’ মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী বলেন, ‘বাঙালীর শেষ ঠিকানা-জননেত্রী শেখ হাসিনা।’ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাতিঘর শেখ হাসিনার নিউইয়র্ক সফর যাতে কোনভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সে ব্যাপারে আমাদেরকে অতন্দ্র প্রহরীর ভ’মিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। ‘যেখানে বিএনপি-সেখানেইপ্র্রতিরোধ’ কর্মসূচি জাগ্রত রাখতে হবে।’
যুক্তরাষ্ট্র মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নার্গিস আহমেদ বিউটি বলেন, ‘দলের পদ-পদবী ভাঙ্গিয়ে যারা টাকা বানাচ্ছেন আমরা তাদের মত নই। আমরা এখানে কাজ করছি কষ্টার্জিত অর্থ ব্যয়ে। তাই কারো কর্মচারি হিসেবে নয়, সহকর্মী হিসেবে মর্যাদা নিয়ে সংগঠন করতে চাই। তাই আমাদের প্রিয় নেত্রীর নিউইয়র্ক সফরকে সাফল্যমন্ডিত করতে যতটা সম্ভব ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত রয়েছি।’
ফ্লোরিডা স্টেট আওয়ামী লীগের নেতা আতিকুর রহমান বলেন, ‘কর্মীর সমর্থন ব্যতিত নেতা হওয়া যায় না। তাই কর্মীদের মূল্যায়ন না করলে নেতৃত্ব অটুট রাখা সম্ভব হবে না। কর্মীদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হবার আশংকায় যারা প্রস্তুতি সভা স্থগিত করেন তাদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের মত সংগঠন চলবে কী করে?’ আরো বক্তৃতা করেন রশীদ বখত নজরুল, বজলুর রহমান বজলু, ইমদাদ চৌধুরী, মোহাম্মদ হানিফ, মো. আব্দুল কাদের মিয়া প্রমুখ।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

তোপের মুখে পড়ার আশংকায় যুক্তরাষ্ট্র আ. লীগের প্রস্তুুতি সভা স্থগিত

প্রকাশের সময় : ১০:৩২:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

নিউইয়র্ক: ‘বিগত দিনের অসাংগঠনিক কর্মকান্ডের জবাব চাইতে পারেন কর্মীরা-এ আশংকায় আকস্মিকভাবে বাতিল করা হলো যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রস্তুুতি সভা। এ সভা আহবান করা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিউইয়র্ক সফরকালে বিএনপি-জামাত-শিবিরের যে কোন অপতৎপরতা রুখে দেয়ার যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণের জন্যে।
গত ৭ সেপ্টেম্বর সোমবার অপরাহ্ন ৩টায় এই প্রস্তুতি সভা হবার কথা ছিল নিউইয়র্ক সিটির উডসাইডে ‘কুইন্স প্যালেস’ এর মিলনায়তনে। সে অনুযায়ী আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, কৃষক লীগ, বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগ, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জড়ো হন সভাস্থলে। এমনকি সভা আহবানকারী যুক্তরাষ্ট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিজাম চৌধুরী, সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান এবং জয়নাল আবদীন, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন দেওয়ান এবং আব্দুল হাসিব মামুনসহ শতাধিক নেতা-কর্মী সভাস্থলে হাজির হন। মঞ্চে ব্যানারও লাগানো হয়। কিন্তু সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান অনুপস্থিত। সে সময় তিনি এই সিটির ব্রুকলীনে বাংলাদেশী অধ্যুষিত চার্চ-ম্যাকডোনাল্ডে একটি রেস্টুরেন্টে বসে তার কয়েক সহকর্মীর সাথে আড্ডা দিচ্ছিলেন বলে সভায় উপস্থিত সকলে জানতে পারেন। আরো জানানো হয় যে, ৬ সেপ্টেম্বর দুপুরেই নাকি সভাপতি এই সভা স্থগিত ঘোষণা করেছেন। এরপরই সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এ সময় মাইকে গিয়ে সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্যে বলেন, ‘সভা স্থগিতের যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে সেটি সাংগঠনিক রীতি অনুযায়ী হয়নি। সভাপতি সাহেব আমাকেও জানাননি বা পরামর্শ করেননি স্থগিতের ব্যাপারে। এটি যেমন দু:খজনক, ঠিক একইভাবে ঘটনাটি সাংগঠনিক রীতির পরিপন্থি বটে। তবে, সংগঠনের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সফরকে সর্বাত্মক সাফল্যমন্ডিত করার স্বার্থে সকলকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে।’ সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী বলেন, ‘লন্ডনের মত পরিস্থিতি যাতে না হয় সে উদ্দেশ্যে আমরা সর্বস্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে প্রস্তুতি বৈঠক করতে চেয়েছিলাম। সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান এবং আমি মিলে এই প্রস্তুতি সভার ঘোষণা দিয়েছিলাম। ‘বিএনপি-জামাত-শিবিরের অপতৎপরতা শক্ত হাতে রুখে দিতে আমরা ইস্পাদত দৃঢ় ঐক্য রচনা করতে চাই। কারণ, প্রধানমন্ত্রী এবার নিউইয়র্কে ঈদ এবং জন্মদিন পালন করবেন। আমরা ঈদের আনন্দ কীভাবে ভাগাভাগি করতে পারি সেটিও ছিল আলোচ্যসূচিতে। কিন্তু সভাপতি সাহেব কেন একক সিদ্ধান্তে প্রস্তুতি সভা স্থগিত করেছেন সেটি সত্যি রহস্যজনক। তবে আমরা সভানেত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যার সফরের প্রতি খেয়াল রেখে সবধরনের জটিলতা পরিহার করতে বদ্ধ পরিকর।’ সাজ্জাদ আবারো মাইকে এসে বলেন, ‘সভাপতির প্রতি সম্মান জানিয়ে আমরা আজ আনুষ্ঠানিক কোন সভা না করলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে কথা বলবো।’ এ জন্যে মঞ্চে কেউই আসন না নিয়ে স্বইচ্ছায় একেক জন মাইকে এসে নিজ নিজ মতামত ব্যক্ত করেন। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী অগের মতই জেএফকে এয়ারপোর্ট, জাতিসংঘ সদর দফতর এবং সম্বর্ধনাস্থলের বাইরে বিএনপি-জামাতীদের রুখে দেয়ার সংকল্প ব্যক্ত করেন সকলে।
উল্লেখ্য, ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় শতাধিক সফরসঙ্গীসহ নিউইয়র্কে আসবেন শেখ হাসিনা। ১ অক্টোবর পর্যন্ত জাতিসংঘের অধিবেশনে অংশ নেবেন এবং বাংলাদেশের বক্তব্য উপস্থাপন করবেন। সে সময় প্রবাসীদের পক্ষ থেকে তাকে বিপুলভাবে সম্বর্ধনা প্রদানের কর্মসূচি রয়েছে। এছাড়া, জেএফকে এয়ারপোর্ট, জাতিসংঘের সামনে এবং হোটেলের বাইরে বিক্ষোভ করার যে কর্মসূচি রয়েছে তা শক্তহাতে প্রতিহত করার জন্যেই আওয়ামী লীগ এ প্রস্তুতি সভার ঘোষণা দেয়।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ এবং মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী মোর্শেদা জামান বলেন, ‘কয়েকমাস আগে রাষ্ট্রপতি এডভোকেট আব্দুল হামিদ নিউইয়র্কে এসেছিলেন। সে সময় তাকে সম্বর্ধনা প্রদানের জন্যে গঠিত একটি কমিটিতে একাত্তরের আলবদর এবং বিএনপির এক নেতাকে রাখা হয়েছিল। আমি আমার সংগঠনের উদ্যোগে ঐ ঘটনার প্রতিবাদ করেছিলাম এবং শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি সে অনুষ্ঠানে যাননি। এ জন্যে ড. সিদ্দিকুর রহমান আমার উপর ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ। আমাকে আওয়ামী লীগের কোন কর্মসূচিতে আসতে মানা করেছেন তিনি।’
যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহবায়ক ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ড. এম এ বাতেন বলেন, ‘রাষ্ট্রপতিকে সংবর্ধনা জ্ঞাপনের কমিটিতে রাজাকার; বদর আর শিবিরের লোকজন থাকায় আমরা নিন্দা ও প্রতিবাদ করেছিলাম। এ কারণে ড. সিদ্দিকুর রহমান তার অনুগত কয়েকজনকে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পাল্টা কমিটি করেছেন।’
যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নুরুজ্জামান সর্দার বলেন, ‘৩ বছর আগে নিউইয়র্ক সফরকালে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে আমি স্বেচ্ছাসেবক লীগের একটি সমাবেশ করেছি। সে জন্যে ড. সিদ্দিকুর রহমান আমার ওপর ক্ষেপে কেন্দ্রে বারংবার যোগাযোগ করছেন পাল্টা কমিটি করে দেয়ার জন্যে। কোন সাড়া না পেয়ে নিজেই একটি কমিটি ঘোষণা দিয়েছেন।’
নিউ্ইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরনবী কমান্ডার অভিযোগ করেন, ‘স্বেচ্ছাসেবক লীগের মত যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগ, মহিলা লীগ, যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু প্রজন্মলীগ, শ্রমিক লীগেও পাল্টা কমিটি হয়েছে ড. সিদ্দিকুর রহমানের মদদে। একইভাবে জননেত্রী শেখ হাসিনার নিউইয়র্ক সফরের সময় বিএনপি-জামাত-শিবিরের কর্মসূচির সমর্থনেই প্রকারান্তরে কাজ করছেন আওয়ামী লীগে নবাগত এই ড. সিদ্দিকুর রহমান।’
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জয়নুল আবদীন বলেন, ‘লন্ডন সফরের সময় জননেত্রীকে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। নিউইয়র্কে সেটি হতে দেব না বলেই আওয়ামী পরিবারে ইস্পাত দৃঢ় ঐক্য দরকার। কিন্তু ড. সিদ্দিকুর রহমানের তৎপরতায় মনে হচ্ছে যে, তিনি বিএনপি আর জামাত-শিবিরের এজেন্ট হিসেবে আওয়ামী লীগে ঢুকেছেন।’
সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হাসিব মামুন বলেন, ‘দলের পদ ও পদবী ভাঙ্গিয়ে ঢাকায় ব্যবসা করছেন ড. সিদ্দিকুর রহমান। বিপুল অর্থ পাচ্ছেন নিয়মিতভাবে সে ব্যবসা থেকে। আর এ ব্যবসাটি দিয়েছেন সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এতদসত্ত্বেও প্রতি বছর জননেত্রীকে নিউইয়র্কে সংবর্ধনার নামে লাখ লাখ ডলারের চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। সংগঠনের নামে তোলা চাঁদার অর্থের হিসাব আজ অবধি দেননি ড. সিদ্দিক।’
যুক্তরাষ্ট্র কৃষক লীগের সভাপতি হাজী নিজাম বলেন, ‘এবার সভানেত্রীকে সবকিছু জানাবো। দলের নাম ভাঙ্গিয়ে বছরের ৮ মাসই ঢাকায় থেকে ড. সিদ্দিকুর রহমান কাদের পারপাস সার্ভ করছেন?’ মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী বলেন, ‘বাঙালীর শেষ ঠিকানা-জননেত্রী শেখ হাসিনা।’ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাতিঘর শেখ হাসিনার নিউইয়র্ক সফর যাতে কোনভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সে ব্যাপারে আমাদেরকে অতন্দ্র প্রহরীর ভ’মিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। ‘যেখানে বিএনপি-সেখানেইপ্র্রতিরোধ’ কর্মসূচি জাগ্রত রাখতে হবে।’
যুক্তরাষ্ট্র মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নার্গিস আহমেদ বিউটি বলেন, ‘দলের পদ-পদবী ভাঙ্গিয়ে যারা টাকা বানাচ্ছেন আমরা তাদের মত নই। আমরা এখানে কাজ করছি কষ্টার্জিত অর্থ ব্যয়ে। তাই কারো কর্মচারি হিসেবে নয়, সহকর্মী হিসেবে মর্যাদা নিয়ে সংগঠন করতে চাই। তাই আমাদের প্রিয় নেত্রীর নিউইয়র্ক সফরকে সাফল্যমন্ডিত করতে যতটা সম্ভব ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত রয়েছি।’
ফ্লোরিডা স্টেট আওয়ামী লীগের নেতা আতিকুর রহমান বলেন, ‘কর্মীর সমর্থন ব্যতিত নেতা হওয়া যায় না। তাই কর্মীদের মূল্যায়ন না করলে নেতৃত্ব অটুট রাখা সম্ভব হবে না। কর্মীদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হবার আশংকায় যারা প্রস্তুতি সভা স্থগিত করেন তাদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের মত সংগঠন চলবে কী করে?’ আরো বক্তৃতা করেন রশীদ বখত নজরুল, বজলুর রহমান বজলু, ইমদাদ চৌধুরী, মোহাম্মদ হানিফ, মো. আব্দুল কাদের মিয়া প্রমুখ।