নিউইয়র্ক ১০:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

‘জামায়াতের সাথে ওলামা লীগ নিষিদ্ধের দাবী ॥ হিন্দুদের জমি দখলে আ.লীগ-বিএনপি ভাই ভাই’

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১০:২৮:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী ২০১৬
  • / ২০০১ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: বাংলাদেশ মাইনরিটি রাইটস মুভমেন্ট, ইউএসএ’র সাংবাদিক সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ-এর সাথে আওয়ামী ওলামা লীগ নিষিদ্ধের দাবী জানিয়ে বলেছেন, সারাদেশেই সংখ্যালঘুদের উপর নিপিড়ীন-নির্যাতন বেড়েছে, জায়গা-জমি দখল করা হচ্ছে। দেশের সব সরকারের সময়েই এমন সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হয়েছেন, ঘরবাড়ী-জমিজমা হারিয়েছেন। সরকারের মন্ত্রী-এমপিসহ প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ এমন কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকায় কোন প্রতিকার হচ্ছে না। তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘হিন্দুদের জমি দখলে আ.লীগ-বিএনপি ভাই ভাই’। নেতৃবৃন্দ আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের অভিযোগের বিরুদ্ধে অন্তত একটি দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে সরকার প্রমান করুক যে তারা (বাংলাদেশ সরকার) সংখ্যালঘুদের সমস্যা সমাধানে সত্যিকার অর্থেই আন্তরিক।
সিটির জ্যাকসন হাইটস্থ একটি রেষ্টেুরেন্টে গত ৯ জানুয়ারী রাতে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিতাংশু গুহ। এছাড়া লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুভাশীষ রায় শুভ। এরপর বাংলাদেশ মাইনরিটি রাইটস মুভমেন্ট-এর বক্তব্যের সমর্থনে বক্তব্য রাখেন সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ, সুব্রত বিশ্বাস ও মিথুন আহমেদ। পরে তারা উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। সাংবাদিক সম্মেলনে কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে অধ্যাপক নুবেন্দু বিশ্বাস, সুশিল সাহা, রিতেন্দ্র দেব ও মনিকা রায় উপস্থিত ছিলেন। খবর ইউএনএ’র।
সাংবাদিক পঠিত লিখিত বক্তব্যে সুভাশীষ রায় শুভ বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন একটি দৈনন্দিন ঘটনা। আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হিন্দুরা অপেক্ষাকৃত কম নির্যাতিত হতো, এখন সব আমলেই সমান। গত সাত বছরে সংখ্যালঘুর ওপর অত্যাচার যেকোন আমলের থেকে খুব একটা কম নয়। বিদায়ী বছরে এমন একটি দিনও হয়ত পাওয়া যাবে না যেদিন কোন না মিডিয়ায় দেশের কোথাও না কোথাও হিন্দু মন্দির বা মূর্তি ভাঙচুর, হিন্দুর জমি দখল, নাবালিকা ধর্ষণ ও ধর্মান্তরিতকরণ বা দেশত্যাগের হুমকী ইত্যাদি খবর প্রকাশিত হয়নি।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়: সদ্য অনুষ্ঠেয় পৌরসভা বা স্থানীয় নির্বাচনে আমরা খুশী যদিও কোন দলই হিন্দুদের তেমন মনোনয়ন দেয়নি, তাই দু’চারজন হাতেগোনা ব্যতীত কেউ জেতেওনি। ব্লগার হত্যার বিচারে আমরা আনন্দিত এবং আশা করবো এই বিচারটি ত্বরান্বিত হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাক এবং দেশে সব খুনের বিচার হোক আমরা তা চাই। দেশে প্রথম আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে আমরা শঙ্কিত। দেশ সন্ত্রাসমুক্ত হোক আমরা কামনা করি। আমরা জামায়াতের সাথে সাথে আওয়ামী ওলামা লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানাই। বাংলাদেশ ১৯৭২ সংবিধানের আলোকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশ হোক আমরা তা চাই।
লিখিত বক্তব্যে গত ডিসেম্বর’২০১৫-তে সংঘটিত কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করে বলা হয়: আমাদের দাবী সরকার ৩১ মার্চ ২০১৬-এর মধ্যে অন্তত: যেকোন একটি অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে বা বিচার করে প্রমান করুন তারা (সরকার) সংখ্যালঘু সমস্যা সমাধানে সত্যিকার অর্থেই আন্তরিক।
লিখিত বক্তব্যে শুভ আরো বলেন, বাংলাদেশে বিচার না হওয়ার ট্র্যাডিশন নুতন নয়, ভিকটিম যখন সংখ্যালঘু তো, প্রশাসন উল্টোমুখে তাকিয়ে থাকে। ২০০১ সালের অত্যাচারের বিচার আমরা পাইনি। বাংলাদেশে হাজার হাজার মুর্তি-মন্দির ভাঙ্গা হলেও আজ পর্যন্ত একজনের বিচার হয়নি, বা কেউ শাস্তি পায়নি। আমরা তাই সরকারের সদিচ্ছার প্রমান চাই। সরকারের বিরুদ্ধে ক্রসফায়ারের অগণিত অভিযোগ আছে, কিন্তু কোন ধর্ষক বা হিন্দু নির্যাতনকারী ক্রসফায়ারে পড়েছেন এমনটা দেখিনি।
সাংবাদিক সম্মেলনে উল্লেখ করা গত ডিসেম্বর ২০১৫-এর উল্লেখযোগ্য ঘটনার মধ্যে রয়েছে: কুমিল্ল¬ায় মায়ের কাছ থেকে মেয়েকে নিয়ে ধর্ষণ করলেন খোরশেদ আলম চেয়ারম্যান। ২৪ ডিসেম্বর দেবিদ্বার উপজেলার ৯নং উত্তর গুনাইঘর ইউনিয়নের, খোরশেদ আলম এই ইউনিয়নেরই চেয়ারম্যান। মামলা হয়েছে। (পিএনএস নিউজ ডট কম)
পৌর নির্বাচন: সংখ্যালঘুদের হাত-পা ভেঙে হাসপাতালে পাঠানো হবে! অভিযোগ রয়েছে, নৌকায় ভোট না দিলে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে নির্বাচনের পর হাত-পা ভেঙে হাসপাতালে পাঠাবে বলে হুমকি দিয়েছে। (বাংলা মেইল ২৪ ডট কম)
দলীয় নির্যাতনের দ্রুত বিচার নিশ্চিতকরণের সুপারিশ: গণ শুনানিতে মর্মান্তিক বর্ণনা: ২৩ ডিসেম্বর নওগাঁর হালঘোষ পাড়ার দলিত সম্প্রদায়ের অজয় রবিদাস তার বসতভিটা দখল করার উদ্দেশ্যে দুর্বৃত্তদের হামলার করুণ বর্ণনা দেন। (দৈনিক ইত্তেফাক)
হিন্দু ভোটারদের বাড়ির সামনে রক্ত: ভোলা পৌরসভায় দুর্বৃত্তরা গত রোববার দিবাগত রাতে হিন্দু ভোটারদের বাড়ি-ঘরের সামনে রক্ত ছিটিয়ে দিয়েছে। (প্রথম আলো)
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে মন্দিরে ঢুকে প্রতিমা ভাঙচুর: কুড়িগ্রামের রৌমারীতে মন্দিরে ঢুকে কালী, লক্ষ্মী ও শিবের মূর্তি ভাঙচুর করে। (দৈনিক কালের কন্ঠ)
Land grabbers force 2 Hindu families out of home: 12 people belonging to two Hindu families of Alipur village in Kalapara upazila under the district had to leave their houses following threat from alleged land grabbers who also kidnapped the head of one of the families on December 8. (Daily Star, 16 December)
Bomb blasts near Kantaji Temple, 6 hurt at Jatra pandal. (the daily star)
গোপালগঞ্জে দুই মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুর: গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় দুটি মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ফরিদপুরের মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর: (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: ১৮ ডিসেম্বর)
ফরিদপুরের নগরকান্দায় একটি মন্দিরে দুর্বৃত্তরা প্রতিমা ভাঙচুর করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: ১৮ ডিসেম্বর)
কাপ্তাইয়ে পাহাড়ি কিশোরী ধর্ষিত: রাঙামাটির কাপ্তাই উপজলায় পাহাড়ি এক কিশোরী ধর্ষিত হয়েছে। নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া ওই কিশোরীর মা কাপ্তাই থানায় একটি মামলা করেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, ১৭ ডিসেম্বর)
চিরিরবন্দরে গুলিবিদ্ধ ইসকনের সভাপতি: দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে গত সোমবার রাতে বীরেন্দ্রনাথ রায় (৬৪) নামের এক হোমিও চিকিৎসক দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হয়েছেন। তিনি আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) দিনাজপুর জেলা কমিটির সভাপতি। (প্রথম আলো ডিসেম্বর ০২, ২০১৫)
Bannerসাংবাদিক সম্মেলনে দাবী করা হয় যে, বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ মাইনরিটি রাইটস ম্যুভেমন্ট-এর কর্মকান্ড ছড়িয়ে পড়েছে এবং এই কর্মকান্ডের সাথে যারা জড়িত। তাদের মধ্যে রয়েছেন: পুস্পিতা গুপ্ত, লন্ডন (সভাপতি, স্যেকুলার বাংলাদেশ মুভমেন্ট, ইউকে এবং সিওআরএমবি), চিত্রা পাল, সুইডেন (সভাপতি, হিন্দু ফোরাম সুইডেন), তরুণ চৌধুরী, সুইডেন (সভাপতি, ইউরোপীয় ঐক্য পরিষদ), অরুণ বড়ুয়া, জেনেভা (সভাপতি, বাংলাদেশ মাইনরিটি কাউন্সিল), উদয়ন বড়ুয়া, প্যারিস (সভাপতি, ইউরোপীয় ঐক্য পরিষদ), স্বদেশ বড়ুয়া, ফ্রান্স (সভাপতি, ফ্রান্স ঐক্য পরিষদ), দিলীপ কর্মকার, মন্ট্রিল (উপদেষ্টা, কানাডা ঐক্য পরিষদ), ড: মোহিত রায়, কোলকাতা (সভাপতি, ক্যাম্ব (ক্যাম্পেন এগেনস্ট এট্রসিটিস্ অন মাইনরিটিস অব বাংলাদেশ), প্রফেসর চন্দন সরকার, ঢাকা (সভপতি, আরইএস (রিসার্স এন্ড এম্পাওয়ারমেন্ট), রিপন দে, ঢাকা, অরুন কে দত্ত (কনভেনর), সুশীল পাল (কো-কনভেনর), ডা: সুশীতল চৌধুরী (মেম্বার সেক্রেটারী, বাংলাদেশ মাইনরিটি রাইটস এল্যায়েন্স, টরন্টো, কানাডা) সরোজ দাস (সেক্রেটারী, কানাডা ঐক্য পরিষদ), প্রদীপ সরকার দোলন, মন্ট্রিল (কানাডা), তুষার কান্তি সরকার, ফিনল্যান্ড, বিপুল রানা ধর (কনভেনর, ঐক্য পরিষদ, ইতালি), তাপস নন্দী, সিঙ্গাপুর (হিন্দু গ্র্যান্ড এল্যায়েন্স), বিজন সাহা (ডিএসসি, রাশিয়া), প্রবীর মৈত্র (অস্ট্রেলিয়া), প্রবীর সরকার ও রবিন গুহ (মস্কো, রাশিয়া), তাপস কে চৌধুরী, (মালয়েশিয়া, সংখ্যালঘু স্বার্থ সংরক্ষণ ও অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ, বাংলাদেশ) শুভাশীষ রায় (নিউইয়র্ক, বাংলাদেশ মাইনরিটি রাইটস ম্যুভেমন্ট, ইউএসএ), সুশীল সাহা (নিউইয়র্ক, বাংলাদেশ মাইনরিটি রাইটস ম্যুভ্মেন্ট, ইউএসএ) ও শিতাংশু গুহ (নিউইয়র্ক, টাইমলাইন বাংলাদেশ)।
সাংবাদিক সম্মেলনে শিতাংশু গুহ বলেন, বাংলাদেশের মাইনরিটিরা বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ নানাভাবে নিপিড়ীত-নির্যারিত হচ্ছেন। অথচ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার মাইনরিটিদের পক্ষের সরকার বলেই আমরা জানি। তিনি বলেন, আমরা সরকারের কাছে ন্যায় বিচার চাই, নির্যাতিতদের পক্ষে সরকারের সদিচ্ছা দেখতে চাই। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর হিন্দুদের সম্পত্তি-বাড়ী দখল বা নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরকারের ব্যবস্থা নেয়ার কোন দৃষ্টান্ত নেই।
শিতাংশু গুহ দাবী করেন যে, তাদের দাবীর সাথে ঐক্যমত পোষণ করে আজ একই দিনে এক ডজনের বেশি দেশে সভা-সমাবেশ বা সাংবাদিক সম্মেলন হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মাইনরিটিদের দাবীর সমর্থনে আমাদের উদ্যোগ মূলত: সারা বিশ্বের বাংলাদেশী বংশদ্ভোত সংখ্যালঘুদের একটি সমন্বিত প্রয়াস।
সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবেই বাংলাদেশের জন্ম। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। সেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাবস্থায় মাইনরিটি নির্যাতনের ঘটনা লজ্জাজনক। তিনি বাংলাদেশে মাইনরিটিদের বাড়ী-জমি-সম্পদ দখল আর নির্যাতনের নিন্দা জানিয়ে বলেন, এসব ঘটনার মধ্যে অনেকগুলোই সামাজিক ঘটনা। দেশের সামাজিক অবক্ষয় এর কারণ। ইতিপূর্বে দেশে মন্দির ভাঙচুরের ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে কোন ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা আমাদের জানা নেই। তিনি বলেন, সরকারের মন্ত্রী সংখ্যালঘুদের সম্পদ দখল করা দূর্বৃত্তায়ন, দু:খজনক কেলেঙ্কারী। এর কোন প্রতিকার নেই।
সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক দল। আর দেশেন অন্যদলগুলো রাষ্ট্রীয়ভাবেই সাম্প্রদায়িক। তিনি বলেন, এখন ঠেকায় পড়ে দেশে সংখ্যালঘুরা আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন বাড়লেও তাদেরকে চাকুরীতে নিয়োগের সুযোগ প্রশংসার দাবী রাখে। তিনি ৩১ মার্চের মধ্যে অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে সরকারের আন্তরিকতা প্রমাণের দাবী জানান।
সুব্রত বিশ্বাস বলেন, দেশে সংখ্যালঘুদের উপর নিপিড়ন-নির্যাতন নিত্য-নৈমিত্যিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। কোন বিচার হচ্ছে না। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সরকারের পর আওয়ামী লীগ সরকারের সময় একটি টিম গঠনের মাধ্যমে ২০ হাজার ঘটনার মধ্যে শীর্ষ স্থানীয় ৫ হাজার ঘটনাকে চিহ্নিত করা হলেও তারও বিচার হচ্ছে না। তিনি বলেন, সরকারের মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ৭০ কোটি টাকা মূল্যের বাড়ী দখল করেছেন। স্থানীয়ভাবে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অভিযোগ করা হয়েছে, কিন্তু কাজ হচ্ছে না। পার্বত্য শান্তি চুক্তিও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হচ্ছে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগে রাজাকার আছে। প্রসঙ্গত তিনি বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও ১৯৯০/৯১ সালে সিলেট শহরে দখল হওয়া আমার জমি মামলা-মোকদ্দমা করেও উদ্ধার করতে পারিনি। ঐ জমি উদ্ধার করতে দেশে গেলে আমাকে প্রাণনাশের হুমকী পর্যন্ত দেয়া হয়েছে।
মিথুন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে শুধু সংখ্যালঘুরাই নিপিড়ন-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে না। ঢাকায় তাজিয়া মিছিল আর শিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদে হামলা হয়েছে। তিনি বলেন, ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে নয়, মানুষ হিসেবে সবার অবস্থানকে বড় করে দেখতে হবে। দেশের রাজনীতিকরা ভোটের জন্য হিন্দুদের ব্যবহার করেন বলেই তাদের পক্ষে সংখ্যালঘুদের সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামাজিক আন্দোলন ছাড়া দেশের সংখ্যালঘুদের উপর নিপিড়ন-নির্যাতন বন্ধ হবে না।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশ সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমেই দেশে সংখ্যালঘু সৃষ্টি করা হয়েছে। অথচ ৭২-এর সংবিধানে সংখ্যালঘু বলতে কিছু নেই। বাংলাদেশের মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান, পাহাড়ী সবাই ভাই ভাই। তবে ‘হিন্দুদের জমি দখলে আ.লীগ-বিএনপি ভাই ভাই’।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে সুব্রত বিশ্বাস বলেন, আওয়ামী লীগ ওলামা লীগের বক্তব্য, কর্মকান্ড সাম্প্রদায়িক। এই সংগঠন জামায়াতের পক্ষেই কাজ করছে তাই ওলামা লীগ নিষিদ্ধের দাবী করছি।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে শিতাংশু গুহ বলেন, বাংলাদেশ মাইনরিটি রাইটস মুভমেন্ট, ইউএসএ পৃথক সংগঠন। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাথে এর কোন বিরোধ নেই। দেশের সংখ্যালঘুদের পক্ষে প্রয়োজনে উভয় সংগঠন ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে। ছবি: ইউএনএ

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

‘জামায়াতের সাথে ওলামা লীগ নিষিদ্ধের দাবী ॥ হিন্দুদের জমি দখলে আ.লীগ-বিএনপি ভাই ভাই’

প্রকাশের সময় : ১০:২৮:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী ২০১৬

নিউইয়র্ক: বাংলাদেশ মাইনরিটি রাইটস মুভমেন্ট, ইউএসএ’র সাংবাদিক সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ-এর সাথে আওয়ামী ওলামা লীগ নিষিদ্ধের দাবী জানিয়ে বলেছেন, সারাদেশেই সংখ্যালঘুদের উপর নিপিড়ীন-নির্যাতন বেড়েছে, জায়গা-জমি দখল করা হচ্ছে। দেশের সব সরকারের সময়েই এমন সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হয়েছেন, ঘরবাড়ী-জমিজমা হারিয়েছেন। সরকারের মন্ত্রী-এমপিসহ প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ এমন কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকায় কোন প্রতিকার হচ্ছে না। তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘হিন্দুদের জমি দখলে আ.লীগ-বিএনপি ভাই ভাই’। নেতৃবৃন্দ আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের অভিযোগের বিরুদ্ধে অন্তত একটি দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে সরকার প্রমান করুক যে তারা (বাংলাদেশ সরকার) সংখ্যালঘুদের সমস্যা সমাধানে সত্যিকার অর্থেই আন্তরিক।
সিটির জ্যাকসন হাইটস্থ একটি রেষ্টেুরেন্টে গত ৯ জানুয়ারী রাতে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিতাংশু গুহ। এছাড়া লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুভাশীষ রায় শুভ। এরপর বাংলাদেশ মাইনরিটি রাইটস মুভমেন্ট-এর বক্তব্যের সমর্থনে বক্তব্য রাখেন সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ, সুব্রত বিশ্বাস ও মিথুন আহমেদ। পরে তারা উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। সাংবাদিক সম্মেলনে কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে অধ্যাপক নুবেন্দু বিশ্বাস, সুশিল সাহা, রিতেন্দ্র দেব ও মনিকা রায় উপস্থিত ছিলেন। খবর ইউএনএ’র।
সাংবাদিক পঠিত লিখিত বক্তব্যে সুভাশীষ রায় শুভ বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন একটি দৈনন্দিন ঘটনা। আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হিন্দুরা অপেক্ষাকৃত কম নির্যাতিত হতো, এখন সব আমলেই সমান। গত সাত বছরে সংখ্যালঘুর ওপর অত্যাচার যেকোন আমলের থেকে খুব একটা কম নয়। বিদায়ী বছরে এমন একটি দিনও হয়ত পাওয়া যাবে না যেদিন কোন না মিডিয়ায় দেশের কোথাও না কোথাও হিন্দু মন্দির বা মূর্তি ভাঙচুর, হিন্দুর জমি দখল, নাবালিকা ধর্ষণ ও ধর্মান্তরিতকরণ বা দেশত্যাগের হুমকী ইত্যাদি খবর প্রকাশিত হয়নি।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়: সদ্য অনুষ্ঠেয় পৌরসভা বা স্থানীয় নির্বাচনে আমরা খুশী যদিও কোন দলই হিন্দুদের তেমন মনোনয়ন দেয়নি, তাই দু’চারজন হাতেগোনা ব্যতীত কেউ জেতেওনি। ব্লগার হত্যার বিচারে আমরা আনন্দিত এবং আশা করবো এই বিচারটি ত্বরান্বিত হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাক এবং দেশে সব খুনের বিচার হোক আমরা তা চাই। দেশে প্রথম আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে আমরা শঙ্কিত। দেশ সন্ত্রাসমুক্ত হোক আমরা কামনা করি। আমরা জামায়াতের সাথে সাথে আওয়ামী ওলামা লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানাই। বাংলাদেশ ১৯৭২ সংবিধানের আলোকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশ হোক আমরা তা চাই।
লিখিত বক্তব্যে গত ডিসেম্বর’২০১৫-তে সংঘটিত কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করে বলা হয়: আমাদের দাবী সরকার ৩১ মার্চ ২০১৬-এর মধ্যে অন্তত: যেকোন একটি অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে বা বিচার করে প্রমান করুন তারা (সরকার) সংখ্যালঘু সমস্যা সমাধানে সত্যিকার অর্থেই আন্তরিক।
লিখিত বক্তব্যে শুভ আরো বলেন, বাংলাদেশে বিচার না হওয়ার ট্র্যাডিশন নুতন নয়, ভিকটিম যখন সংখ্যালঘু তো, প্রশাসন উল্টোমুখে তাকিয়ে থাকে। ২০০১ সালের অত্যাচারের বিচার আমরা পাইনি। বাংলাদেশে হাজার হাজার মুর্তি-মন্দির ভাঙ্গা হলেও আজ পর্যন্ত একজনের বিচার হয়নি, বা কেউ শাস্তি পায়নি। আমরা তাই সরকারের সদিচ্ছার প্রমান চাই। সরকারের বিরুদ্ধে ক্রসফায়ারের অগণিত অভিযোগ আছে, কিন্তু কোন ধর্ষক বা হিন্দু নির্যাতনকারী ক্রসফায়ারে পড়েছেন এমনটা দেখিনি।
সাংবাদিক সম্মেলনে উল্লেখ করা গত ডিসেম্বর ২০১৫-এর উল্লেখযোগ্য ঘটনার মধ্যে রয়েছে: কুমিল্ল¬ায় মায়ের কাছ থেকে মেয়েকে নিয়ে ধর্ষণ করলেন খোরশেদ আলম চেয়ারম্যান। ২৪ ডিসেম্বর দেবিদ্বার উপজেলার ৯নং উত্তর গুনাইঘর ইউনিয়নের, খোরশেদ আলম এই ইউনিয়নেরই চেয়ারম্যান। মামলা হয়েছে। (পিএনএস নিউজ ডট কম)
পৌর নির্বাচন: সংখ্যালঘুদের হাত-পা ভেঙে হাসপাতালে পাঠানো হবে! অভিযোগ রয়েছে, নৌকায় ভোট না দিলে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে নির্বাচনের পর হাত-পা ভেঙে হাসপাতালে পাঠাবে বলে হুমকি দিয়েছে। (বাংলা মেইল ২৪ ডট কম)
দলীয় নির্যাতনের দ্রুত বিচার নিশ্চিতকরণের সুপারিশ: গণ শুনানিতে মর্মান্তিক বর্ণনা: ২৩ ডিসেম্বর নওগাঁর হালঘোষ পাড়ার দলিত সম্প্রদায়ের অজয় রবিদাস তার বসতভিটা দখল করার উদ্দেশ্যে দুর্বৃত্তদের হামলার করুণ বর্ণনা দেন। (দৈনিক ইত্তেফাক)
হিন্দু ভোটারদের বাড়ির সামনে রক্ত: ভোলা পৌরসভায় দুর্বৃত্তরা গত রোববার দিবাগত রাতে হিন্দু ভোটারদের বাড়ি-ঘরের সামনে রক্ত ছিটিয়ে দিয়েছে। (প্রথম আলো)
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে মন্দিরে ঢুকে প্রতিমা ভাঙচুর: কুড়িগ্রামের রৌমারীতে মন্দিরে ঢুকে কালী, লক্ষ্মী ও শিবের মূর্তি ভাঙচুর করে। (দৈনিক কালের কন্ঠ)
Land grabbers force 2 Hindu families out of home: 12 people belonging to two Hindu families of Alipur village in Kalapara upazila under the district had to leave their houses following threat from alleged land grabbers who also kidnapped the head of one of the families on December 8. (Daily Star, 16 December)
Bomb blasts near Kantaji Temple, 6 hurt at Jatra pandal. (the daily star)
গোপালগঞ্জে দুই মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুর: গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় দুটি মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ফরিদপুরের মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর: (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: ১৮ ডিসেম্বর)
ফরিদপুরের নগরকান্দায় একটি মন্দিরে দুর্বৃত্তরা প্রতিমা ভাঙচুর করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: ১৮ ডিসেম্বর)
কাপ্তাইয়ে পাহাড়ি কিশোরী ধর্ষিত: রাঙামাটির কাপ্তাই উপজলায় পাহাড়ি এক কিশোরী ধর্ষিত হয়েছে। নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া ওই কিশোরীর মা কাপ্তাই থানায় একটি মামলা করেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, ১৭ ডিসেম্বর)
চিরিরবন্দরে গুলিবিদ্ধ ইসকনের সভাপতি: দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে গত সোমবার রাতে বীরেন্দ্রনাথ রায় (৬৪) নামের এক হোমিও চিকিৎসক দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হয়েছেন। তিনি আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) দিনাজপুর জেলা কমিটির সভাপতি। (প্রথম আলো ডিসেম্বর ০২, ২০১৫)
Bannerসাংবাদিক সম্মেলনে দাবী করা হয় যে, বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ মাইনরিটি রাইটস ম্যুভেমন্ট-এর কর্মকান্ড ছড়িয়ে পড়েছে এবং এই কর্মকান্ডের সাথে যারা জড়িত। তাদের মধ্যে রয়েছেন: পুস্পিতা গুপ্ত, লন্ডন (সভাপতি, স্যেকুলার বাংলাদেশ মুভমেন্ট, ইউকে এবং সিওআরএমবি), চিত্রা পাল, সুইডেন (সভাপতি, হিন্দু ফোরাম সুইডেন), তরুণ চৌধুরী, সুইডেন (সভাপতি, ইউরোপীয় ঐক্য পরিষদ), অরুণ বড়ুয়া, জেনেভা (সভাপতি, বাংলাদেশ মাইনরিটি কাউন্সিল), উদয়ন বড়ুয়া, প্যারিস (সভাপতি, ইউরোপীয় ঐক্য পরিষদ), স্বদেশ বড়ুয়া, ফ্রান্স (সভাপতি, ফ্রান্স ঐক্য পরিষদ), দিলীপ কর্মকার, মন্ট্রিল (উপদেষ্টা, কানাডা ঐক্য পরিষদ), ড: মোহিত রায়, কোলকাতা (সভাপতি, ক্যাম্ব (ক্যাম্পেন এগেনস্ট এট্রসিটিস্ অন মাইনরিটিস অব বাংলাদেশ), প্রফেসর চন্দন সরকার, ঢাকা (সভপতি, আরইএস (রিসার্স এন্ড এম্পাওয়ারমেন্ট), রিপন দে, ঢাকা, অরুন কে দত্ত (কনভেনর), সুশীল পাল (কো-কনভেনর), ডা: সুশীতল চৌধুরী (মেম্বার সেক্রেটারী, বাংলাদেশ মাইনরিটি রাইটস এল্যায়েন্স, টরন্টো, কানাডা) সরোজ দাস (সেক্রেটারী, কানাডা ঐক্য পরিষদ), প্রদীপ সরকার দোলন, মন্ট্রিল (কানাডা), তুষার কান্তি সরকার, ফিনল্যান্ড, বিপুল রানা ধর (কনভেনর, ঐক্য পরিষদ, ইতালি), তাপস নন্দী, সিঙ্গাপুর (হিন্দু গ্র্যান্ড এল্যায়েন্স), বিজন সাহা (ডিএসসি, রাশিয়া), প্রবীর মৈত্র (অস্ট্রেলিয়া), প্রবীর সরকার ও রবিন গুহ (মস্কো, রাশিয়া), তাপস কে চৌধুরী, (মালয়েশিয়া, সংখ্যালঘু স্বার্থ সংরক্ষণ ও অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ, বাংলাদেশ) শুভাশীষ রায় (নিউইয়র্ক, বাংলাদেশ মাইনরিটি রাইটস ম্যুভেমন্ট, ইউএসএ), সুশীল সাহা (নিউইয়র্ক, বাংলাদেশ মাইনরিটি রাইটস ম্যুভ্মেন্ট, ইউএসএ) ও শিতাংশু গুহ (নিউইয়র্ক, টাইমলাইন বাংলাদেশ)।
সাংবাদিক সম্মেলনে শিতাংশু গুহ বলেন, বাংলাদেশের মাইনরিটিরা বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ নানাভাবে নিপিড়ীত-নির্যারিত হচ্ছেন। অথচ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার মাইনরিটিদের পক্ষের সরকার বলেই আমরা জানি। তিনি বলেন, আমরা সরকারের কাছে ন্যায় বিচার চাই, নির্যাতিতদের পক্ষে সরকারের সদিচ্ছা দেখতে চাই। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর হিন্দুদের সম্পত্তি-বাড়ী দখল বা নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরকারের ব্যবস্থা নেয়ার কোন দৃষ্টান্ত নেই।
শিতাংশু গুহ দাবী করেন যে, তাদের দাবীর সাথে ঐক্যমত পোষণ করে আজ একই দিনে এক ডজনের বেশি দেশে সভা-সমাবেশ বা সাংবাদিক সম্মেলন হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মাইনরিটিদের দাবীর সমর্থনে আমাদের উদ্যোগ মূলত: সারা বিশ্বের বাংলাদেশী বংশদ্ভোত সংখ্যালঘুদের একটি সমন্বিত প্রয়াস।
সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবেই বাংলাদেশের জন্ম। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। সেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাবস্থায় মাইনরিটি নির্যাতনের ঘটনা লজ্জাজনক। তিনি বাংলাদেশে মাইনরিটিদের বাড়ী-জমি-সম্পদ দখল আর নির্যাতনের নিন্দা জানিয়ে বলেন, এসব ঘটনার মধ্যে অনেকগুলোই সামাজিক ঘটনা। দেশের সামাজিক অবক্ষয় এর কারণ। ইতিপূর্বে দেশে মন্দির ভাঙচুরের ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে কোন ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা আমাদের জানা নেই। তিনি বলেন, সরকারের মন্ত্রী সংখ্যালঘুদের সম্পদ দখল করা দূর্বৃত্তায়ন, দু:খজনক কেলেঙ্কারী। এর কোন প্রতিকার নেই।
সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক দল। আর দেশেন অন্যদলগুলো রাষ্ট্রীয়ভাবেই সাম্প্রদায়িক। তিনি বলেন, এখন ঠেকায় পড়ে দেশে সংখ্যালঘুরা আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন বাড়লেও তাদেরকে চাকুরীতে নিয়োগের সুযোগ প্রশংসার দাবী রাখে। তিনি ৩১ মার্চের মধ্যে অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে সরকারের আন্তরিকতা প্রমাণের দাবী জানান।
সুব্রত বিশ্বাস বলেন, দেশে সংখ্যালঘুদের উপর নিপিড়ন-নির্যাতন নিত্য-নৈমিত্যিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। কোন বিচার হচ্ছে না। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সরকারের পর আওয়ামী লীগ সরকারের সময় একটি টিম গঠনের মাধ্যমে ২০ হাজার ঘটনার মধ্যে শীর্ষ স্থানীয় ৫ হাজার ঘটনাকে চিহ্নিত করা হলেও তারও বিচার হচ্ছে না। তিনি বলেন, সরকারের মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ৭০ কোটি টাকা মূল্যের বাড়ী দখল করেছেন। স্থানীয়ভাবে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অভিযোগ করা হয়েছে, কিন্তু কাজ হচ্ছে না। পার্বত্য শান্তি চুক্তিও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হচ্ছে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগে রাজাকার আছে। প্রসঙ্গত তিনি বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও ১৯৯০/৯১ সালে সিলেট শহরে দখল হওয়া আমার জমি মামলা-মোকদ্দমা করেও উদ্ধার করতে পারিনি। ঐ জমি উদ্ধার করতে দেশে গেলে আমাকে প্রাণনাশের হুমকী পর্যন্ত দেয়া হয়েছে।
মিথুন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে শুধু সংখ্যালঘুরাই নিপিড়ন-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে না। ঢাকায় তাজিয়া মিছিল আর শিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদে হামলা হয়েছে। তিনি বলেন, ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে নয়, মানুষ হিসেবে সবার অবস্থানকে বড় করে দেখতে হবে। দেশের রাজনীতিকরা ভোটের জন্য হিন্দুদের ব্যবহার করেন বলেই তাদের পক্ষে সংখ্যালঘুদের সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামাজিক আন্দোলন ছাড়া দেশের সংখ্যালঘুদের উপর নিপিড়ন-নির্যাতন বন্ধ হবে না।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশ সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমেই দেশে সংখ্যালঘু সৃষ্টি করা হয়েছে। অথচ ৭২-এর সংবিধানে সংখ্যালঘু বলতে কিছু নেই। বাংলাদেশের মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান, পাহাড়ী সবাই ভাই ভাই। তবে ‘হিন্দুদের জমি দখলে আ.লীগ-বিএনপি ভাই ভাই’।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে সুব্রত বিশ্বাস বলেন, আওয়ামী লীগ ওলামা লীগের বক্তব্য, কর্মকান্ড সাম্প্রদায়িক। এই সংগঠন জামায়াতের পক্ষেই কাজ করছে তাই ওলামা লীগ নিষিদ্ধের দাবী করছি।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে শিতাংশু গুহ বলেন, বাংলাদেশ মাইনরিটি রাইটস মুভমেন্ট, ইউএসএ পৃথক সংগঠন। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাথে এর কোন বিরোধ নেই। দেশের সংখ্যালঘুদের পক্ষে প্রয়োজনে উভয় সংগঠন ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে। ছবি: ইউএনএ