নিউইয়র্ক ১১:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

‘গণতন্ত্রকে হত্যা করে হাসিনা একদলীয় শাসন কায়েম করেছে’

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৪:০৪:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ নভেম্বর ২০১৫
  • / ১০৭৪ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: বাংলাদেশী-আমেরিকান জাতীয়তাবাদী ফোরাম ইনক’র নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ‘গণতন্ত্রকে হত্যা করে দেশে হাসিনার একদলীয় শাসন কায়েম করেছে। ‘অবৈধ সরকার’ প্রধান শেখ হাসিনা স্বাধীনতার চেতনা ও মূল্যবোধকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে গুম, খুন, মিথ্যা মামলা ও গণগ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে দেশকে শোষণ ও কারাগারে পরিণত করেছে। দেশের এমন পরিস্থিতিতে দেশে-প্রবাসে সকল জাতীয়তাবাদী শক্তির ঐক্যের বিকল্প নেই। সরকার দাবী না মানলে, সম্মিলিত উদ্যোগেই সরকার বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এদিকে ফোরামের নবনির্বাচিত সভাপতি নিয়াজ আহমেদ জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক বাকির আজাদ তাদের দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন। ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর আর ফোরামের নতুন সভাপতি-সম্পাদকের দায়িত্বগ্রহণ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে ফোরামের নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ফোরামের বিদায়ী কমিটি সভাপতি মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম নতুন সভাপতিকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন এবং একগুচ্ছ ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান। সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র সাবেক সহ সভাপতি সামসুল ইসলাম মজনু। এরপর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাকির আজাদ।
সাংবাদিক সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নিয়াজ আহমেদ জুয়েল। এসময় মঞ্চে উপবিস্ট ছিলেন জামালপুর আশেক মাহমুদ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক ভিপি আলমগীর খান ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি ডা. মোহাম্মদ তারিক হাসান।
এছাড়াও ফোরামের অন্যতম উপদেষ্টা এডভোকেট জামাল আহমেদ জনি ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ডা. জাহিদ দেওয়ার শামীম সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। খবর ইউএনএ’র।
সাংবাদিক সম্মেলনে পঠিত লিখিত বক্তব্যে বাকির আজাদ বাংলাদেশী-আমেরিকান জাতীয়তাবাদী ফোরাম ইন্ক এর প্রধান পৃষ্টপোষক মরহুম এনামুল মালিক এর আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে ফোরামের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, গত ৫ জানুয়ারী ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন একদলীয় প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য ‘অবৈধ সরকার’ প্রধান শেখ হাসিনা স্বাধীনতার চেতনা ও মূল্যবোধকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে গুম, খুন, মিথ্যা মামলা ও গণগ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে দেশকে শোষণ ও কারাগারে পরিণত করেছে। দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও সামরিক বাহিনীকে দলীয়করণের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে গলাটিকে হত্যা করে দেশে হাসিনার একদলীয় শাসন কায়েম করেছে। এই জন্য আজ দেশের মানুষের বিচার বিভাগের উপর আস্থা হারিয়েছে। তার ফলশ্রুতিতে দীপনের বাবা ছেলে হত্যার বিচার চায়না। ফোরামের পক্ষ থেকে এইসব অগণতান্ত্রিক ও অবৈধ আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী হাসিনার দেশে একদলীয় বাকশাল কায়েমের প্রধান বাধা বাংলাদেশ জাতীয়তবাদী দল ও জিয়া পরিবার। তাই বিএনপি ও জিয়া পরিবারের অভিভাবক সাবেক বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারপারসন তারেক জিয়ার উপর সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ ছাড়াই একের পর এক মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। মিথ্যা মামলার মাধ্যমে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী আদর্শ ও জিয়া পরিবারকে শেখ হাসিনা ধ্বংস করার পাশাপাশি খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়াকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করাই আসল উদ্দেশ্য। বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ বিএনপি ও জিয়া পরিবারের সাথে অতীতে ছিল এবং এখনো আছে তাই বর্তমান অবৈধ সরকারের সকল অসুভ চক্রান্ত দেশপ্রেমিক জনতা প্রতিহত করবে ইনশাল্লাহ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়: রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় চিরদিনের জন্য আকড়ে থাকার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম, স্থায়ী কমিটির অন্যতম সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম মহাসচিব ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রুহুল কবির রিজভী ও আমানুল্লাহ আমানসহ বিরোধীদলের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে মাসের পর মাস বিনা চিারে কারাগারে রাখা হয়েছে। শেখ হাসিনার দুঃশাসনে আজ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি এক বিচারহীনতার দেশে পরিণত হয়েছে। তাই পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ বিরোধী দল সরকার বিনা অপরাধে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামসহ সকল নেতাকর্মীকে বারবার জেলে যেতে হচ্ছে। এই জন্য বিচারহীনতার দেশে বিচারপ্রর্থীর পরিবার খুন, গুম, মিথ্যা মামলা ও গণগ্রেপ্তারসহ রাজনৈতিক মামলার বিচার চাই না বলে মন্তব্য করছেন। এটা দেশ ও জাতির জন্য চরম বিষ্ময় ও গভীর উদ্বেগের বিষয়। তাই আমরা অতিসত্বর সকল রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির পাশাপাশি মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি করছি।
ইতিপূর্বে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলী, ঢাকা মহানগরী কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলম, লাকসামের সাবেক সংসদ সদস্য জনাব হিরু এবং ছাত্রদল নেতা আনিসুর রহমান খোকনসহ অগনিত বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীকে তুলে নিয়ে গুম করা হয়েছে। আওয়ামী সরকারের শাসন আমলে ১৯৭২ সাল থেকে পরবর্তী কয়েক বছর তৎকালীন বাকশালী শাসন যুগেও ভিন্ন মতাবলম্বী নাগরিকদেরকে একই কায়দায় রক্ষীবাহিনী দিয়ে তুলে নিয়ে খুন ও গুম করে দেওয়ার মত ভয়ংকর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস জাতি দেখেছিল। আজ আবারও তারা সেই পুরনো পদ্ধতিতে গুম খুন চালিয়ে ভিন্নমত দমন করে একদল তথা এক ব্যক্তির শাসন শোষনকে দীর্ঘায়িত করার বর্বর পথ বেছে নিয়েছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রিয় মানুষ একবার জেগে উঠলে ক্ষমতা অপব্যবহারকারীদের পরিনাম কি ভয়াবহ হতে পারে তাহা ১৯৭১ ও ১৯৯০ সালে জনগণ প্রমাণ করে দিয়েছে। এ যাবত কালে সকল গুম করে দেওয়া বিরোধীদলের নেতাকর্মী ও দেশের নাগরিকদের তাদের পরিবারের কাছে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
বাকির আজাদ বলেন, সকল বিরোধীদের দেশপ্রেমিক জনতাকে সাথে নিয়ে মানুষের ভোটাধিকার ও দেশের গণতন্ত্র পূনরুদ্ধারে আন্দোলন করছে। বিরোধীদলের নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড আক্ষায়িত করার জন্য বর্তমান অবৈধ সরকার তাদের পেইড এজেন্ট দিয়ে সারা দেশে জালাও পোড়াও রাজনীতি শুরু করেছে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য হাসিনা ও তার কুলাঙ্গার ছেলে দেশকে সন্ত্রাসী ও মৌলবাদী রাষ্ট্র ঘোষনার মাধ্যমে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাই। অবৈধ সরকারের প্রধান হাসিনা ও তার দোসরদের এই অশুভ চক্রান্তের তীব্র প্রতিবাদ করার পাশাপাশি সকল দেশপ্রেমিক নাগরিককে এই ফ্যাসিষ্ট, স্বৈরাচারী ও গণবিরোধী সরকারকে সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করার আহ্বান জানাই।
তিনি বলেন, বর্তমান ‘অবৈধ নব্য স্বৈরশাসন’ শাসকদেরকে আমরা কেবল এই বলে হুশিয়ার করতে চাই যে, পতনের এই লগ্নে এসে খুন, গুম, মিথ্যা মামলা, জেল জুলুমসহ সকল নির্যাতনের পথ পরিহার করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সকল দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় সকল মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য বর্তমান অবৈধ সরকার ও তাদের দোসরদেরকে মূল্য দিতে হবে।
বাকির আজাদ বলেন, বাংলাদেশী আমেরিকান জাতীয়তবাদী ফোরাম ইন্ক একটি রেজিষ্ট্রার্ড সংগঠন এবং এই সংগঠনকে আমরা জাতীয়তাবাদী রাজনীতির পাইওনিয়ার সংগঠন হিসেবে দাবী করি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর বৈপ্লাবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। ঠিক তেমনি প্রবাসেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে বৈপ্লাবিক ভূমিকা রেখেছি এবং আগামীতেও রাখার আশাবাদী। জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে ভুইফোড় নেতাদের সমন্বয় গড়েছে, অবৈধ বা অঘোষিত আয়ের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা মূল চালিকা শক্তিতে ঘৃনাভাবে পরিচালিত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে যাহা কখনও কাম্য নহে। আমরা দলীয় রাজনীতির নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় বিশ্বাস করি। পরশ্রীকাতরে নয়, দল বা উপদল করে অপ রাজনীতি সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। ভাল কিছু করা সব সময় সম্মানের যদিও বা এটাকে খুব সহজ ভাবে দেখার অপেক্ষা রাখে না। মূল নেতৃত্বে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা আপেক্ষিক। যদি মুল নেতৃত্বে সুষ্ঠু রাজনীতির সুযোগ করে দেয় সেখানে অবস্থান যাই হোক সেটাকে মেনে নিয়ে আগামী দিনে এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতা সবারই থাকা উচিত।
সাংবাদিক সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে সামসুল ইসলাম মজনু বলেন, কেবলমাত্র জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রাজনীতির মাধ্যমে যারা বিএনপি’র রাজনীতি করছেন তারাই ফোরামের সদস্য হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। তিনি বলেন, জাতায়তাবাদী ফেরামে নেতৃত্বের কোন্দল নেই, নেই বিভেদ-ভেদাভেদ। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে ফোরামের নেতৃবৃন্দ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র সাথে ফোরামের কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই। ফোরাম বিএনপি’র সহযোগী শক্তি হিসেবে জাতীয়তাবাদী শক্তির পক্ষে কাজ করে যাবে। স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শের প্রচার, প্রচার ও বাস্তবায়নই ফোরামের মূল লক্ষ্য ও আদর্শ।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

‘গণতন্ত্রকে হত্যা করে হাসিনা একদলীয় শাসন কায়েম করেছে’

প্রকাশের সময় : ০৪:০৪:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ নভেম্বর ২০১৫

নিউইয়র্ক: বাংলাদেশী-আমেরিকান জাতীয়তাবাদী ফোরাম ইনক’র নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ‘গণতন্ত্রকে হত্যা করে দেশে হাসিনার একদলীয় শাসন কায়েম করেছে। ‘অবৈধ সরকার’ প্রধান শেখ হাসিনা স্বাধীনতার চেতনা ও মূল্যবোধকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে গুম, খুন, মিথ্যা মামলা ও গণগ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে দেশকে শোষণ ও কারাগারে পরিণত করেছে। দেশের এমন পরিস্থিতিতে দেশে-প্রবাসে সকল জাতীয়তাবাদী শক্তির ঐক্যের বিকল্প নেই। সরকার দাবী না মানলে, সম্মিলিত উদ্যোগেই সরকার বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এদিকে ফোরামের নবনির্বাচিত সভাপতি নিয়াজ আহমেদ জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক বাকির আজাদ তাদের দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন। ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর আর ফোরামের নতুন সভাপতি-সম্পাদকের দায়িত্বগ্রহণ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে ফোরামের নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ফোরামের বিদায়ী কমিটি সভাপতি মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম নতুন সভাপতিকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন এবং একগুচ্ছ ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান। সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র সাবেক সহ সভাপতি সামসুল ইসলাম মজনু। এরপর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাকির আজাদ।
সাংবাদিক সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নিয়াজ আহমেদ জুয়েল। এসময় মঞ্চে উপবিস্ট ছিলেন জামালপুর আশেক মাহমুদ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক ভিপি আলমগীর খান ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি ডা. মোহাম্মদ তারিক হাসান।
এছাড়াও ফোরামের অন্যতম উপদেষ্টা এডভোকেট জামাল আহমেদ জনি ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ডা. জাহিদ দেওয়ার শামীম সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। খবর ইউএনএ’র।
সাংবাদিক সম্মেলনে পঠিত লিখিত বক্তব্যে বাকির আজাদ বাংলাদেশী-আমেরিকান জাতীয়তাবাদী ফোরাম ইন্ক এর প্রধান পৃষ্টপোষক মরহুম এনামুল মালিক এর আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে ফোরামের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, গত ৫ জানুয়ারী ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন একদলীয় প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য ‘অবৈধ সরকার’ প্রধান শেখ হাসিনা স্বাধীনতার চেতনা ও মূল্যবোধকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে গুম, খুন, মিথ্যা মামলা ও গণগ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে দেশকে শোষণ ও কারাগারে পরিণত করেছে। দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও সামরিক বাহিনীকে দলীয়করণের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে গলাটিকে হত্যা করে দেশে হাসিনার একদলীয় শাসন কায়েম করেছে। এই জন্য আজ দেশের মানুষের বিচার বিভাগের উপর আস্থা হারিয়েছে। তার ফলশ্রুতিতে দীপনের বাবা ছেলে হত্যার বিচার চায়না। ফোরামের পক্ষ থেকে এইসব অগণতান্ত্রিক ও অবৈধ আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী হাসিনার দেশে একদলীয় বাকশাল কায়েমের প্রধান বাধা বাংলাদেশ জাতীয়তবাদী দল ও জিয়া পরিবার। তাই বিএনপি ও জিয়া পরিবারের অভিভাবক সাবেক বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারপারসন তারেক জিয়ার উপর সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ ছাড়াই একের পর এক মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। মিথ্যা মামলার মাধ্যমে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী আদর্শ ও জিয়া পরিবারকে শেখ হাসিনা ধ্বংস করার পাশাপাশি খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়াকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করাই আসল উদ্দেশ্য। বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ বিএনপি ও জিয়া পরিবারের সাথে অতীতে ছিল এবং এখনো আছে তাই বর্তমান অবৈধ সরকারের সকল অসুভ চক্রান্ত দেশপ্রেমিক জনতা প্রতিহত করবে ইনশাল্লাহ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়: রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় চিরদিনের জন্য আকড়ে থাকার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম, স্থায়ী কমিটির অন্যতম সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম মহাসচিব ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রুহুল কবির রিজভী ও আমানুল্লাহ আমানসহ বিরোধীদলের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে মাসের পর মাস বিনা চিারে কারাগারে রাখা হয়েছে। শেখ হাসিনার দুঃশাসনে আজ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি এক বিচারহীনতার দেশে পরিণত হয়েছে। তাই পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ বিরোধী দল সরকার বিনা অপরাধে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামসহ সকল নেতাকর্মীকে বারবার জেলে যেতে হচ্ছে। এই জন্য বিচারহীনতার দেশে বিচারপ্রর্থীর পরিবার খুন, গুম, মিথ্যা মামলা ও গণগ্রেপ্তারসহ রাজনৈতিক মামলার বিচার চাই না বলে মন্তব্য করছেন। এটা দেশ ও জাতির জন্য চরম বিষ্ময় ও গভীর উদ্বেগের বিষয়। তাই আমরা অতিসত্বর সকল রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির পাশাপাশি মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি করছি।
ইতিপূর্বে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলী, ঢাকা মহানগরী কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলম, লাকসামের সাবেক সংসদ সদস্য জনাব হিরু এবং ছাত্রদল নেতা আনিসুর রহমান খোকনসহ অগনিত বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীকে তুলে নিয়ে গুম করা হয়েছে। আওয়ামী সরকারের শাসন আমলে ১৯৭২ সাল থেকে পরবর্তী কয়েক বছর তৎকালীন বাকশালী শাসন যুগেও ভিন্ন মতাবলম্বী নাগরিকদেরকে একই কায়দায় রক্ষীবাহিনী দিয়ে তুলে নিয়ে খুন ও গুম করে দেওয়ার মত ভয়ংকর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস জাতি দেখেছিল। আজ আবারও তারা সেই পুরনো পদ্ধতিতে গুম খুন চালিয়ে ভিন্নমত দমন করে একদল তথা এক ব্যক্তির শাসন শোষনকে দীর্ঘায়িত করার বর্বর পথ বেছে নিয়েছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রিয় মানুষ একবার জেগে উঠলে ক্ষমতা অপব্যবহারকারীদের পরিনাম কি ভয়াবহ হতে পারে তাহা ১৯৭১ ও ১৯৯০ সালে জনগণ প্রমাণ করে দিয়েছে। এ যাবত কালে সকল গুম করে দেওয়া বিরোধীদলের নেতাকর্মী ও দেশের নাগরিকদের তাদের পরিবারের কাছে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
বাকির আজাদ বলেন, সকল বিরোধীদের দেশপ্রেমিক জনতাকে সাথে নিয়ে মানুষের ভোটাধিকার ও দেশের গণতন্ত্র পূনরুদ্ধারে আন্দোলন করছে। বিরোধীদলের নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড আক্ষায়িত করার জন্য বর্তমান অবৈধ সরকার তাদের পেইড এজেন্ট দিয়ে সারা দেশে জালাও পোড়াও রাজনীতি শুরু করেছে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য হাসিনা ও তার কুলাঙ্গার ছেলে দেশকে সন্ত্রাসী ও মৌলবাদী রাষ্ট্র ঘোষনার মাধ্যমে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাই। অবৈধ সরকারের প্রধান হাসিনা ও তার দোসরদের এই অশুভ চক্রান্তের তীব্র প্রতিবাদ করার পাশাপাশি সকল দেশপ্রেমিক নাগরিককে এই ফ্যাসিষ্ট, স্বৈরাচারী ও গণবিরোধী সরকারকে সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করার আহ্বান জানাই।
তিনি বলেন, বর্তমান ‘অবৈধ নব্য স্বৈরশাসন’ শাসকদেরকে আমরা কেবল এই বলে হুশিয়ার করতে চাই যে, পতনের এই লগ্নে এসে খুন, গুম, মিথ্যা মামলা, জেল জুলুমসহ সকল নির্যাতনের পথ পরিহার করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সকল দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় সকল মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য বর্তমান অবৈধ সরকার ও তাদের দোসরদেরকে মূল্য দিতে হবে।
বাকির আজাদ বলেন, বাংলাদেশী আমেরিকান জাতীয়তবাদী ফোরাম ইন্ক একটি রেজিষ্ট্রার্ড সংগঠন এবং এই সংগঠনকে আমরা জাতীয়তাবাদী রাজনীতির পাইওনিয়ার সংগঠন হিসেবে দাবী করি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর বৈপ্লাবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। ঠিক তেমনি প্রবাসেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে বৈপ্লাবিক ভূমিকা রেখেছি এবং আগামীতেও রাখার আশাবাদী। জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে ভুইফোড় নেতাদের সমন্বয় গড়েছে, অবৈধ বা অঘোষিত আয়ের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা মূল চালিকা শক্তিতে ঘৃনাভাবে পরিচালিত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে যাহা কখনও কাম্য নহে। আমরা দলীয় রাজনীতির নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় বিশ্বাস করি। পরশ্রীকাতরে নয়, দল বা উপদল করে অপ রাজনীতি সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। ভাল কিছু করা সব সময় সম্মানের যদিও বা এটাকে খুব সহজ ভাবে দেখার অপেক্ষা রাখে না। মূল নেতৃত্বে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা আপেক্ষিক। যদি মুল নেতৃত্বে সুষ্ঠু রাজনীতির সুযোগ করে দেয় সেখানে অবস্থান যাই হোক সেটাকে মেনে নিয়ে আগামী দিনে এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতা সবারই থাকা উচিত।
সাংবাদিক সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে সামসুল ইসলাম মজনু বলেন, কেবলমাত্র জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রাজনীতির মাধ্যমে যারা বিএনপি’র রাজনীতি করছেন তারাই ফোরামের সদস্য হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। তিনি বলেন, জাতায়তাবাদী ফেরামে নেতৃত্বের কোন্দল নেই, নেই বিভেদ-ভেদাভেদ। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে ফোরামের নেতৃবৃন্দ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র সাথে ফোরামের কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই। ফোরাম বিএনপি’র সহযোগী শক্তি হিসেবে জাতীয়তাবাদী শক্তির পক্ষে কাজ করে যাবে। স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শের প্রচার, প্রচার ও বাস্তবায়নই ফোরামের মূল লক্ষ্য ও আদর্শ।