ক্ষমতায় গেলে বিডিআর হত্যাকান্ডের বিচার করা হবে: সাদেক হোসেন খোকা

- প্রকাশের সময় : ০৮:১৩:৫৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ মার্চ ২০১৫
- / ৯২৮ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: বাংলাদেশের পিলখানায় বিডিআর হত্যাকান্ড তথা ‘শহীদ সেনা দিবস’ উপলক্ষ্যে ‘হিউম্যান রাইটস্ ডেভলপমেন্ট ফর বাংলাদেশ-এইচআরডিবি’ আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা বলেন, পিলখানার হত্যাকান্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বহু আগেই সুপরিকল্পিতভাবে এই হত্যাযজ্ঞের পরিকল্পনা করা হয়েছিলো। এজন্য বক্তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগগেই দায়ী করেন। সভায় কেন্দ্রীয় বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রী ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বিডিআর হত্যাকান্ডের বিচার করা হবে।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারী শনিবার বিকেলে বাংলাদেশী অধ্যুষিত জ্যাকস হাইটস জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা। আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন মওলানা ভাসানী ফাইন্ডেশন নিউইয়র্ক-এর সভাপতি অধ্যাপক দেওয়ান শামসুল আরেফীন, কানাডার মন্ট্রিলের ডাউসন কলেজের অধ্যাপক আবিদ বাহার ও বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সাবেক ইউং কমান্ডার সালাহউদ্দিন চৌধুরী। সেমিনারের শুরুতেই পিলখানা হত্যাকান্ডে নিহত ৫৭ সেনা অফিসারের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং বিডিআর বিদ্রোহ’সহ জওয়ানদের নির্মম হত্যাকান্ডের উপর নির্মিত একটি ভিডিওচিত্র (প্রামাণ্য চিত্র) প্রদর্শন করা হয়। তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এই প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। যাতে পিলখানায় সংঘটিত সেই হৃদয়বিদারক ঘটনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। প্রামাণ্য চিত্রে সরকারের কেিয়কজন মন্ত্রী-এমপি’সহ সংশ্লিষ্টদের এই হত্যাকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত থাকার কথাও তুলে ধরা হয় ।
‘হিউম্যান রাইটস্ ডেভলপমেন্ট ফর বাংলাদেশ-এইচআরডিবি’র সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মওলানা ভাসানী ফাইন্ডেশন নিউইয়র্ক-এর সেক্রেটারী আলী ইমাম, সাবেক সংসদ সদস্য আনিসুজ্জামান খোকন, সাংবাদিক জয়নাল আবেদীন, অধ্যাপক নূরুল ইসলাম, আবু সামিয়া, খন্দকার ফরহাদ, মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রমুখ।
সেমিনারে সাদেক হোসেন খোকা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে ধ্বংস আর দেশকে মেধাশূন্য করতেই এই হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে। পিলখানার মত নৃশংস ঘটনা বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন। সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট থেকে শুরু করে মেজর জেনারেল র্যাঙ্কের ৫৭ জন অফিসারকে রাজধানী ঢাকা শহরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই নৃশংসতা বিচ্ছিন্ন কোনো জনপদে হয়নি যেখানে লোক পাঠানো বা সেনা পাঠানো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার ছিল। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এবং সাভার ক্যান্টনমেন্ট ঢাকা শহরের পিলখানায় পৌঁছাতে আধা ঘন্টা থেকে ৪৫ মিনিটেরও পথ নয়। সেখানে সরকার নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করলো। যে কোন বিবেচানায় এটা বলা যায়, এই হত্যাকান্ড পরিকল্পিত এবং এখানে সরকারের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ছিল।
সাদেক হোসেন খোকা বলেন, গত ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন সারা বিশ্বের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু ভারতের তৎকালীন সরকার তার পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংকে পাঠিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উপর চাপ প্রয়োগ করে প্রহসনের নির্বাচন করে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ভারতের তাবেদার সরকার। বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থের প্রতি তাদের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে টানা ৫৫ দিন অরবোধ চলছে, যা উপমহাদেশের ইতিহাসে বিরল। তিনি বলেন, হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করে যদি কখনো আমরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে পারি, আমাদের প্রধান দায়িত্ব হবে পিলখানার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের জনসম্মুখে হাজির করা এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া।
অধ্যাপক দেওয়ান শামসুল আরেফীন বলেন, পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বিডিআর সদর দপ্তরে, যে লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছিলো, তার শিকার ছিলো ৫৭ মেধাবী সেনা কর্মকর্তা। সেদিনের ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত এবং এর সঙ্গে আওয়ামী লীগের সরাসরি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তোলেন তিনি।
প্রফেসর আবিদ বাহার বলেন, বিডিআর হত্যাকান্ডটি যে পরিকল্পিত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বর্তমান যে সময়ের মধ্য দিয়ে দেশ অতিবাহিত হচ্ছে এইটাই তার প্রমাণ। এই হত্যাকান্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং এর বীজ বোপন করা হয়েছিলো বহু আগেই। ইন্দিরা-মুজিব এর ‘গোলামী’র চুক্তি, ফারাক্কা চুক্তি কি আমাদের জন্য কম হত্যার বিষয়। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার যতদিন পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে ততদিন বিডিআর বিদ্রোহের মুল হোতাদের বিচার হবে না। এছাড়াও সরকারের সংশ্লিষ্টতা ছাড়াও এ ঘটনা অসম্ভব বলেও জানান তিনি।
সেমিনারের শেষ পর্বে পিলখানার ঘটনায় যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন ফজলুল করিম।