নিউইয়র্ক ০৯:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

কোচিং সেন্টারগুলোতে উৎসবমূখর পরিবেশ ॥ অভিভাবকদের মুখে হাসি ॥ স্পেশালাইজড স্কুলে ভর্তি পরীক্ষায় বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জয়জয়কার

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০১:০৩:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ মার্চ ২০১৬
  • / ১০২৮ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: নিউইয়র্ক সিটির স্পেশালাইজড হাইস্কুলে আগামী বছর ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশিত হয়েছে। ৪ মার্চ শুক্রবার স্পেশালাইজড হাইস্কুল এডমিশন্স টেস্ট (এসএইচএসএটি-স্যাট)-এর ফল প্রকাশিত হয়। ফলাফলে দেখা গেছে, ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে এবারও বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জয়জয়কার। সিটির স্পেশালাইজড স্কুলসমূহের মধ্যে স্টাইভস্যান্ট, ব্রঙ্কস সায়েন্স, ব্রুকলীন টেক, স্ট্যাটেন আইল্যান্ড টেক, ব্রুকলীন ল্যাটিন, লাগোর্ডিয়া হাই স্কুল অব মিউজিক এন্ড আর্টস, হাইস্কুল ফর ম্যাথ, সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিটি কলেজ), হাইস্কুল অব আমেরিকান স্টাডিজ এট লিম্যান কলেজ, কুইন্স হাইস্কুল ফর দ্য সায়েন্স এট ইয়র্ক কলেজ প্রভৃতি স্কুলে পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশী-আমেরিকান শিক্ষার্থী ভর্র্তির সুযোগ পেয়েছে বলে বাংলাদেশী মালিকানাধীন ও পরিচালিত বিভিন্ন কোচিং সেন্টার সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নিউইয়র্ক সিটির লক্ষাধিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থীরাই স্পেশালাইজড স্কুলে এই ভর্তির সুযোগ পায়। চলতি বছর যারা পরীক্ষা দিয়েছে তাদের মধ্যে ৩৪% এশিয়ান, ২৯% সাদা, ৫.৩% হিসপানিক, এবং ৩.৬% আফ্রিকান-আমেরিকান শিক্ষার্থী ভর্তির অফার লাভ করে। এদিকে চলতি বছর বাংলাদেশী পরিচালিত খানস টিউটোরিয়ালের ৩২৫, মামুন টউটোরিয়ালের ৪৮, ববি-তারেক সেন্টারের ৩৭, স্কলাস্টিকা’র ৮জন শিক্ষার্থী’র ভর্তির সুযোগ পেয়েছে বলে জানা গেছে। খবর ইউএনএ’র।
Khun Tutorial pic 3গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট শিক্ষাবীদ (মরহুম) ড. মনসুর খান প্রতিষ্ঠিত খানস টিউটোরিয়াল থেকে কোচিং নেয়া শিক্ষার্থীরা রবাবরের মতো এবছরও র্শীর্ষে অবস্থান করছে। এই কোচিং সেন্টার থেকে ২৮৮ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন স্পেশালাইজড স্কুলে ভর্তির সুযোগ পয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নাইমা খান এবং সিইও ডা. ইভান খান। এরমধ্যে স্টাইভস্যান্ট হাই স্কুলে ৬৪ জন, ব্রঙ্কস হাই স্কুল এন্ড সায়েন্সে ৯৯ জন, ব্রুকলীন টেকনিকাল হাই স্কুলে ১২০ জন, ব্রুকলীন লেটিন স্কুলে ২৪ জন, এইএস ফর ম্যাথ সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ৬ জন, লেম্যান কলেজে ৪ জন, কুইন্স এইচএস ফর দ্য সায়েন্স এট ইয়র্ক কলেজে ৫ জন এবং লাগোর্ডিয়া এইচএস-এ ৩ জন ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। খান টিউটোরিয়াল থেকে গত বছর সর্বোচ্চ ২৫৪ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন স্পেশালাইজড স্কুলে ভর্তির সুযোগ পয়েছিলো।
খানস টিউটোরিয়ালের মিলনমেলায় উপস্থিত শিক্ষার্থী আর অভিবাবক সকলেই ছিলেন উচ্ছসিত। প্রতিষ্ঠানটির দুই কর্ণধার নাঈমা খান আর ডা. ইভান খান সহ অন্যান্য শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের চোখে-মুখে ছিলো আনন্দের বন্যা। অনুষ্ঠানে নাঈমা খান তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আজকের দিনটি ঈদের দিনের চেয়েও অনেক আনন্দের। আমি প্রতি বছর এই দিনটির (স্যাট পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন) জন্য অপেক্ষায় থাকি। কেননা, এই দিনে আমার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সহ অভিভাবকদের মুখে হাসি দেখতে পাই। তিনি বলেন, আমার শিক্ষার্থীরা আমার কাছে আমার সন্তানের মতো। তিনি খানস টিউটোরিয়ালের প্রতিষ্ঠাতা ড. মনসুর খানকে স্মরণ করে বলেন, তার স্বপ্ন সফল করতে পেয়ে আমরাও আনন্দিত। খানস টিউটোরিয়ালের শিক্ষার্থী অনেকেই আজ ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হয়ে ভালো ভালো প্রফেশনে অধিষ্ঠিত। এটাই আমাদের সাফল্য।
ডা. ইভান খান তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি। খানস টিউটোরিয়ালের শিক্ষক-শিক্ষার্থী আর অভিভাবকদের সম্মিলিত চেষ্টায় এই সাফল্য।
অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, খানস টিউটোরিয়ালের নাঈমা খান এখানকার শিক্ষার্থীদের নিজের সন্তানের মতো দেখেন বলেই তারা ভালো ফল করছে, ভালো স্কুলে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত সম্পর্কে তারা বলেন, ওরা ভালো স্কুলে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। এখন ওদের পছন্দ মতো ওরা এগিয়ে যাবে। ওদের জীবন ওরাই গড়তে পরবে। প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় অনেক অভিবাবক-অভিভাবিকা তাদের সন্তানদের সাফল্যে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।
এদিকে খানস টিউটোরিয়ালের এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে এই প্রতিষ্ঠান থেকে এপর্যন্ত ২১৬৭ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন স্পেশালাইজড স্কুলে ভর্তির সুযোগ পয়েছে। ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিগত ২১ বছর ধরে ধরে স্পেশালাইজড স্কুলে ভর্তির ব্যাপারে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের কোচিং-এর মাধ্যমে সেবা দিয়ে আসছে। বর্তমানে এর ১০টি শাখার মাধ্য ২,৬০০ শিক্ষার্থীকে কোচিং দেয়া হচ্ছে। জ্যাকসন হাইটস ছাড়াও খানস টিউটোরিয়ালের শাখাগুলো হচ্ছে ব্রুকলীন, ব্রঙ্কস, জ্যামাইকা, এস্টোরিয়া, ওজনপার্ক আর ফ্লোরাল পার্ক।
খানস টিউটোরিয়ালের পরেই রয়েছে মামুন টিউটোরিয়ালে শিক্ষার্থীদেও স্থান। এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন স্পেশালাইজড স্কুলে ভর্তির সুযোগ পয়েছে বলে জানিয়েছেন মামুন টিউটোরিয়ালের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও শেখ আল মামুন। গত বছর মামুন টিউটোরিয়াল থেকে ৪৮ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন স্পেশালাইজড স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলো।
এছাড়া ববি-তারেক লার্নিং সেন্টার থেকে ৩৭জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন স্পেশালাইজড স্কুলে ভর্তির সুযোগ পয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির দুই প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জনিয়ার খোকন উদ্দিন ববি ও তারিক হুসেন। ববি-তারেক লার্নিং সেন্টার থেকে চলতি বছর একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ৬৭৮ স্কোর পেয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন।
স্কলাস্টিকা টিউটোরিয়াল থেকে চলতি বছর ৮জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন স্পেশালাইজড স্কুলে ভর্তির সুযোগ পয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক রেজা রশীদ। এই ৮ জনের মধ্যে তিন জন ব্রঙ্কস সায়েন্স ও ব্রুকলীন টেক-এ আর একজন করে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে স্টাইভস্যান্ট ও ব্রুকলীন ল্যাটিনে।
এদিকে বিভিন্ন স্পেশালাইজড স্কুলে ভর্তির ফলাফল প্রকাশের পরপরই বাংলাদেশী মালিকানাধীন বিভিন্ন কোচিং সেন্টারগুলোতে উৎসবমূখর পরিবেশ বিরাজ করছে। হাসি ফুটে উঠেছে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের মুখে। কেননা, স্পেশালাইজড স্কুলে ভর্তির সুযোগ পাওয়া মানে জীবনের সাফল্য অর্জন করা। আর এই সাফল্য অর্জনের জন্য কোচিং সেন্টারগুলোর অব্যাহত সহযোগিতা, শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে হয়েছে। সেজন্যই সংশ্লিস্ট সবার মুখে আসি।
স্পেশালাইজড স্কুলে ভর্তির ফল প্রকাশের পর পরই খানস টিউটোরিয়াল জ্যাকসন হাইটস্থ প্রধান শাখায় ৫ মার্চ শনিবার সন্ধ্যায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মিলনমেলার আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে স্বাগত জানান প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নাইমা খান এবং সিইও ডা. ইভান খান। টাইম টেলিভিশন অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে।
অপরদিকে সিটির স্পেশালাইজড হাইস্কুলের ভর্তি পরীক্ষায় সফলতা অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের তাৎক্ষনিক সংর্বধনার আয়োজন করে মামুন’স টিউটোরিয়াল। ব্রঙ্কসের স্টারলিং এভিনিউতে গড়ে উঠা মামুন’স টিউটোরিয়ালে ৫ মার্চ শনিবার সন্ধ্যায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে বাংলাদেশী শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং টিউটোরিয়াল সংশ্লিষ্টরা। অনুষ্ঠানে পিতৃহারা শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নেয়া মামুন’স টিউটোরিয়ালের কর্ণধার শেখ আল মামুনকে ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন স্পেশালাইজড স্কুলে যোগত্যা অর্জনকারি হৃদিতা দত্তের মা। ভালো ফলাফলের এই আনন্দের মাঝে খানিকটা স্তব্ধ যায় পুরো আয়োজন।
হৃদিতা দত্তের মা মেয়ের সাফল্যে অনুষ্ঠানে আবেগাপ্লুত হয়ে কান্নাজরিত কন্ঠে বলেন, হৃদিতার বাবা মারা যাওয়ার পর ভেবেছিলাম ওর (মেয়ে) লেখাপড়া হবেনা। ভালো কোন স্কুলে ভর্তি হতে পারবে না। এরপর শেখ আল মামুনের কাছে এসে আর্থিক অবস্থার কথা জানালে তিনি (শেখ আল মামুন) আমার মেয়েকে বিনা পয়সায় টিচিং দিয়েছেন। তার এই মহানুভবতার কথা আমি ভুলবো না। আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ। এসময় শেখ আল মানুমসহ উপস্থিত বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
শেখ আল-মামুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বাংলাদেশী প্রজন্মের অভাবনীয় সাফল্যের অনুভূতি তুলে ধরেন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা। এবারের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা সিটির নামকরা স্কুলগুলোর মধ্যে স্ট্যাইভিসেন্ট, ব্রঙ্কস সায়েন্স ও ব্রুকলীন টেক’সহ ন’টি স্পেশালাইজড স্কুলেই অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। মাত্র দুটি শাখা নিয়েও মামুন’স টিটোরিয়ালের প্রায় ৫০জন শিক্ষার্থীর বেশীর ভাগই সুযোগ পেয়েছে ব্রঙ্কস সায়েন্স-এ।
অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাদেও প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখে গালিব, সাজিদ, কানিজ ফাতেমা, আদনান, অহনা, ওআসিকা প্রমুখ। এছাড়া অভিভাবকদের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন রফিকুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে শেখ আল মামুন বলেন, সবার সহযোগিতায় মামুনস টিউটোরিয়ালের শিক্ষার্থীরা সাফল্য অর্জন করেছে। আমাদের সাফল্য প্রতি বছরই বাড়ছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা ভালো করছে। তাদের এই সাফল্য আমাদের কমিউনিটিরও সাফল্য। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

কোচিং সেন্টারগুলোতে উৎসবমূখর পরিবেশ ॥ অভিভাবকদের মুখে হাসি ॥ স্পেশালাইজড স্কুলে ভর্তি পরীক্ষায় বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জয়জয়কার

প্রকাশের সময় : ০১:০৩:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ মার্চ ২০১৬

নিউইয়র্ক: নিউইয়র্ক সিটির স্পেশালাইজড হাইস্কুলে আগামী বছর ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশিত হয়েছে। ৪ মার্চ শুক্রবার স্পেশালাইজড হাইস্কুল এডমিশন্স টেস্ট (এসএইচএসএটি-স্যাট)-এর ফল প্রকাশিত হয়। ফলাফলে দেখা গেছে, ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে এবারও বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জয়জয়কার। সিটির স্পেশালাইজড স্কুলসমূহের মধ্যে স্টাইভস্যান্ট, ব্রঙ্কস সায়েন্স, ব্রুকলীন টেক, স্ট্যাটেন আইল্যান্ড টেক, ব্রুকলীন ল্যাটিন, লাগোর্ডিয়া হাই স্কুল অব মিউজিক এন্ড আর্টস, হাইস্কুল ফর ম্যাথ, সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিটি কলেজ), হাইস্কুল অব আমেরিকান স্টাডিজ এট লিম্যান কলেজ, কুইন্স হাইস্কুল ফর দ্য সায়েন্স এট ইয়র্ক কলেজ প্রভৃতি স্কুলে পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশী-আমেরিকান শিক্ষার্থী ভর্র্তির সুযোগ পেয়েছে বলে বাংলাদেশী মালিকানাধীন ও পরিচালিত বিভিন্ন কোচিং সেন্টার সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নিউইয়র্ক সিটির লক্ষাধিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থীরাই স্পেশালাইজড স্কুলে এই ভর্তির সুযোগ পায়। চলতি বছর যারা পরীক্ষা দিয়েছে তাদের মধ্যে ৩৪% এশিয়ান, ২৯% সাদা, ৫.৩% হিসপানিক, এবং ৩.৬% আফ্রিকান-আমেরিকান শিক্ষার্থী ভর্তির অফার লাভ করে। এদিকে চলতি বছর বাংলাদেশী পরিচালিত খানস টিউটোরিয়ালের ৩২৫, মামুন টউটোরিয়ালের ৪৮, ববি-তারেক সেন্টারের ৩৭, স্কলাস্টিকা’র ৮জন শিক্ষার্থী’র ভর্তির সুযোগ পেয়েছে বলে জানা গেছে। খবর ইউএনএ’র।
Khun Tutorial pic 3গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট শিক্ষাবীদ (মরহুম) ড. মনসুর খান প্রতিষ্ঠিত খানস টিউটোরিয়াল থেকে কোচিং নেয়া শিক্ষার্থীরা রবাবরের মতো এবছরও র্শীর্ষে অবস্থান করছে। এই কোচিং সেন্টার থেকে ২৮৮ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন স্পেশালাইজড স্কুলে ভর্তির সুযোগ পয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নাইমা খান এবং সিইও ডা. ইভান খান। এরমধ্যে স্টাইভস্যান্ট হাই স্কুলে ৬৪ জন, ব্রঙ্কস হাই স্কুল এন্ড সায়েন্সে ৯৯ জন, ব্রুকলীন টেকনিকাল হাই স্কুলে ১২০ জন, ব্রুকলীন লেটিন স্কুলে ২৪ জন, এইএস ফর ম্যাথ সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ৬ জন, লেম্যান কলেজে ৪ জন, কুইন্স এইচএস ফর দ্য সায়েন্স এট ইয়র্ক কলেজে ৫ জন এবং লাগোর্ডিয়া এইচএস-এ ৩ জন ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। খান টিউটোরিয়াল থেকে গত বছর সর্বোচ্চ ২৫৪ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন স্পেশালাইজড স্কুলে ভর্তির সুযোগ পয়েছিলো।
খানস টিউটোরিয়ালের মিলনমেলায় উপস্থিত শিক্ষার্থী আর অভিবাবক সকলেই ছিলেন উচ্ছসিত। প্রতিষ্ঠানটির দুই কর্ণধার নাঈমা খান আর ডা. ইভান খান সহ অন্যান্য শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের চোখে-মুখে ছিলো আনন্দের বন্যা। অনুষ্ঠানে নাঈমা খান তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আজকের দিনটি ঈদের দিনের চেয়েও অনেক আনন্দের। আমি প্রতি বছর এই দিনটির (স্যাট পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন) জন্য অপেক্ষায় থাকি। কেননা, এই দিনে আমার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সহ অভিভাবকদের মুখে হাসি দেখতে পাই। তিনি বলেন, আমার শিক্ষার্থীরা আমার কাছে আমার সন্তানের মতো। তিনি খানস টিউটোরিয়ালের প্রতিষ্ঠাতা ড. মনসুর খানকে স্মরণ করে বলেন, তার স্বপ্ন সফল করতে পেয়ে আমরাও আনন্দিত। খানস টিউটোরিয়ালের শিক্ষার্থী অনেকেই আজ ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হয়ে ভালো ভালো প্রফেশনে অধিষ্ঠিত। এটাই আমাদের সাফল্য।
ডা. ইভান খান তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি। খানস টিউটোরিয়ালের শিক্ষক-শিক্ষার্থী আর অভিভাবকদের সম্মিলিত চেষ্টায় এই সাফল্য।
অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, খানস টিউটোরিয়ালের নাঈমা খান এখানকার শিক্ষার্থীদের নিজের সন্তানের মতো দেখেন বলেই তারা ভালো ফল করছে, ভালো স্কুলে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত সম্পর্কে তারা বলেন, ওরা ভালো স্কুলে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। এখন ওদের পছন্দ মতো ওরা এগিয়ে যাবে। ওদের জীবন ওরাই গড়তে পরবে। প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় অনেক অভিবাবক-অভিভাবিকা তাদের সন্তানদের সাফল্যে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।
এদিকে খানস টিউটোরিয়ালের এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে এই প্রতিষ্ঠান থেকে এপর্যন্ত ২১৬৭ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন স্পেশালাইজড স্কুলে ভর্তির সুযোগ পয়েছে। ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিগত ২১ বছর ধরে ধরে স্পেশালাইজড স্কুলে ভর্তির ব্যাপারে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের কোচিং-এর মাধ্যমে সেবা দিয়ে আসছে। বর্তমানে এর ১০টি শাখার মাধ্য ২,৬০০ শিক্ষার্থীকে কোচিং দেয়া হচ্ছে। জ্যাকসন হাইটস ছাড়াও খানস টিউটোরিয়ালের শাখাগুলো হচ্ছে ব্রুকলীন, ব্রঙ্কস, জ্যামাইকা, এস্টোরিয়া, ওজনপার্ক আর ফ্লোরাল পার্ক।
খানস টিউটোরিয়ালের পরেই রয়েছে মামুন টিউটোরিয়ালে শিক্ষার্থীদেও স্থান। এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন স্পেশালাইজড স্কুলে ভর্তির সুযোগ পয়েছে বলে জানিয়েছেন মামুন টিউটোরিয়ালের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও শেখ আল মামুন। গত বছর মামুন টিউটোরিয়াল থেকে ৪৮ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন স্পেশালাইজড স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলো।
এছাড়া ববি-তারেক লার্নিং সেন্টার থেকে ৩৭জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন স্পেশালাইজড স্কুলে ভর্তির সুযোগ পয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির দুই প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জনিয়ার খোকন উদ্দিন ববি ও তারিক হুসেন। ববি-তারেক লার্নিং সেন্টার থেকে চলতি বছর একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ৬৭৮ স্কোর পেয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন।
স্কলাস্টিকা টিউটোরিয়াল থেকে চলতি বছর ৮জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন স্পেশালাইজড স্কুলে ভর্তির সুযোগ পয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক রেজা রশীদ। এই ৮ জনের মধ্যে তিন জন ব্রঙ্কস সায়েন্স ও ব্রুকলীন টেক-এ আর একজন করে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে স্টাইভস্যান্ট ও ব্রুকলীন ল্যাটিনে।
এদিকে বিভিন্ন স্পেশালাইজড স্কুলে ভর্তির ফলাফল প্রকাশের পরপরই বাংলাদেশী মালিকানাধীন বিভিন্ন কোচিং সেন্টারগুলোতে উৎসবমূখর পরিবেশ বিরাজ করছে। হাসি ফুটে উঠেছে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের মুখে। কেননা, স্পেশালাইজড স্কুলে ভর্তির সুযোগ পাওয়া মানে জীবনের সাফল্য অর্জন করা। আর এই সাফল্য অর্জনের জন্য কোচিং সেন্টারগুলোর অব্যাহত সহযোগিতা, শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে হয়েছে। সেজন্যই সংশ্লিস্ট সবার মুখে আসি।
স্পেশালাইজড স্কুলে ভর্তির ফল প্রকাশের পর পরই খানস টিউটোরিয়াল জ্যাকসন হাইটস্থ প্রধান শাখায় ৫ মার্চ শনিবার সন্ধ্যায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মিলনমেলার আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে স্বাগত জানান প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নাইমা খান এবং সিইও ডা. ইভান খান। টাইম টেলিভিশন অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে।
অপরদিকে সিটির স্পেশালাইজড হাইস্কুলের ভর্তি পরীক্ষায় সফলতা অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের তাৎক্ষনিক সংর্বধনার আয়োজন করে মামুন’স টিউটোরিয়াল। ব্রঙ্কসের স্টারলিং এভিনিউতে গড়ে উঠা মামুন’স টিউটোরিয়ালে ৫ মার্চ শনিবার সন্ধ্যায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে বাংলাদেশী শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং টিউটোরিয়াল সংশ্লিষ্টরা। অনুষ্ঠানে পিতৃহারা শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নেয়া মামুন’স টিউটোরিয়ালের কর্ণধার শেখ আল মামুনকে ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন স্পেশালাইজড স্কুলে যোগত্যা অর্জনকারি হৃদিতা দত্তের মা। ভালো ফলাফলের এই আনন্দের মাঝে খানিকটা স্তব্ধ যায় পুরো আয়োজন।
হৃদিতা দত্তের মা মেয়ের সাফল্যে অনুষ্ঠানে আবেগাপ্লুত হয়ে কান্নাজরিত কন্ঠে বলেন, হৃদিতার বাবা মারা যাওয়ার পর ভেবেছিলাম ওর (মেয়ে) লেখাপড়া হবেনা। ভালো কোন স্কুলে ভর্তি হতে পারবে না। এরপর শেখ আল মামুনের কাছে এসে আর্থিক অবস্থার কথা জানালে তিনি (শেখ আল মামুন) আমার মেয়েকে বিনা পয়সায় টিচিং দিয়েছেন। তার এই মহানুভবতার কথা আমি ভুলবো না। আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ। এসময় শেখ আল মানুমসহ উপস্থিত বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
শেখ আল-মামুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বাংলাদেশী প্রজন্মের অভাবনীয় সাফল্যের অনুভূতি তুলে ধরেন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা। এবারের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা সিটির নামকরা স্কুলগুলোর মধ্যে স্ট্যাইভিসেন্ট, ব্রঙ্কস সায়েন্স ও ব্রুকলীন টেক’সহ ন’টি স্পেশালাইজড স্কুলেই অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। মাত্র দুটি শাখা নিয়েও মামুন’স টিটোরিয়ালের প্রায় ৫০জন শিক্ষার্থীর বেশীর ভাগই সুযোগ পেয়েছে ব্রঙ্কস সায়েন্স-এ।
অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাদেও প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখে গালিব, সাজিদ, কানিজ ফাতেমা, আদনান, অহনা, ওআসিকা প্রমুখ। এছাড়া অভিভাবকদের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন রফিকুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে শেখ আল মামুন বলেন, সবার সহযোগিতায় মামুনস টিউটোরিয়ালের শিক্ষার্থীরা সাফল্য অর্জন করেছে। আমাদের সাফল্য প্রতি বছরই বাড়ছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা ভালো করছে। তাদের এই সাফল্য আমাদের কমিউনিটিরও সাফল্য। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।