নিউইয়র্ক ১১:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ জরুরী: নানা আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির নেতা-কর্মীরা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৯:৩৭:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ অগাস্ট ২০১৬
  • / ৬৬৩ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র কমিটি নেই প্রায় চার বছর ধরে। ফলে দলের মধ্যে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় গ্রুপিং, পাল্টা গ্রুপিং-এর শেষ নেই। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র ব্যানারে তিন, চার গ্রুপে চলছে দলীয় কর্মকান্ড। এমতাবস্থায় দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আপাতত: যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য বিএনপি’র কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। সেই উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় নিউইয়র্ক ষ্টেট বিএনপি’র কমিটি গঠন প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র দ্বিধা-বিভক্ত দুই গ্রুপের নেতা-কর্মীদের হাতাহাতির ঘটনা এখন টক অব দ্য কমিউনিটি। গত ২৪ জুলাই রোববার জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় এই ঘটনা ঘটে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিতে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা আর বছরের পর বছর ধরে কমিটি না হওয়ায় মূলত: ঐদিন হাতাহাতির মূল কারণ । দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র পাল্টা-পাল্টি সভা, সমাবেশ, গ্রুপিং, মারামারি-হাতাহাতি বন্ধে অবিলম্বে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। পাশাপাশি তারা নানা আশঙ্কায়ও ভুগছেন। তাদের মনে প্রশ্ন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিতে কখন কি হয়? অপরদিকে ২৪ জুলাইর ঘটনার পর হাতাহাতিতে জড়িত দলীয় নেতা-কর্মীরা নতুন করে হিসেব-নিকেশ করতে শুরু করেছেন। নিউইয়র্ক থেকে শুরু করে ঢাকায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
কথায় বলে, রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই। এই কথার ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিতে ‘ডা. মুজিব-জিল্লু-মজনু’, ‘স¤্রাট-গিয়াস-বাবুল’, ‘বাবু-জসিম’ আবার স¤্রাট-জিল্লু-গিয়াস-বাবুল’, বা ‘ডা. মুজিব-জিল্লু-বাবু’ প্রভৃতি গ্রুপের শেষ নেই। নিকট অরীতে ডা. মুজিব-স¤্রাট-জিল্লু-গিয়াস কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক শিক্ষা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলনকে যুক্তরাষ্ট্রে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেছিলেন আবার তাদেরই কেউ কেউ কেন্দ্রীয় নেতা মিলনের সাথে বর্তমারেন ঐক্য গড়েছেন। এভাবে ব্ধমফৃজিক্যাল চেঢ়ারের মত অবস্থান পরিবকর্তন দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের মাঝে নানা সময়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমানের নির্দেশ ও পরামর্শে কেন্দ্রীয় বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলন গত বছর প্রথম দফায় যুক্তরাষ্ট্রের ছয়টি অঙ্গরাজ্যে বিএনপির ষ্টেট কমিটি গঠন করেন। দ্বিতীয় দফায় তিনি নিউইয়র্ক ষ্টেট কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিলে নতুন করে দলের মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়। কেন্দ্রীয় নেতা মিলন তার দ্বিতীয় মিশন নিউইয়র্ক ষ্টেট বিএনপি’র কমিটি গঠনের প্রাথমিক উদ্যোগ হিসেবে গত রমজান মাসে দলীয় নেতা-কর্মীদের বাসায় বাসায় গিয়ে ইফতার গ্রহণ এবং নিজ বাসায় ইফতারের আয়োজন করে নেতা-কর্মীদের বিভক্তি দূর করতে কৌশল গ্রহণ করেন। এই কৌশলে তিনি প্রথমে আংশিত সফল হলেও ঈদের পরপরই দ্রুত অবস্থার অবনতি শুরু হয়। আপাতত: যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কোন কমিটি গঠিত হচ্ছেনা- এমন একটি খবর সকলে অবগত হওয়ার পর নিউইয়র্ক ষ্টেট বিএনপি হঠাৎ খুবই গুরুত্বপুর্ন হয়ে উঠে এবং ষ্টেট কমিটির নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে নতুন করে বিভক্ত হয়ে পড়ে প্রায় সকল গ্রুপ। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ স¤্রাট, সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি গিয়াস আহমেদ,সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল প্রমুখ কেন্দ্রীয় নেতা মিলনের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঘরোয়া সভা-সমাবেশ শুরু করেন। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. মুজিবুর রহমান মজুমদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লু, সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি শরাফত হোসেন বাবু, , সাবেক কোষাধ্যক্ষ জসিম ভূঁইয়া প্রমুখরা কেন্দ্রীয় নেতা মিলনের বিরুদ্ধে ‘চাঁদাবাজী’র অভিযোগ তোলেন এবং নিউইয়র্ক ষ্টেট বিএনপি’র কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার সাথে দ্বিমত পোষণ করার পাাপাশি প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র কমিটি গঠনের দাবী অব্যহত রাখেন। বিশেষ করে নিউইয়র্ক ষ্টেট বিএনপি’র কমিটি গঠনের জন্য বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এম আজিজকে প্রধান করে নির্বাচন কমিশন গঠন করার পরপরই বাবু-জিল্লুর-জসীম ভুইয়া গ্রুপটি প্রতিবাদী হয়ে উঠেন। অভিযোগ ওঠে এম আজিজ কখনো বিএনপি করেননি। আবার এম আজিজের পক্ষ থেকে বলা হয়, জিল্লুর রহমান জিল্লু ও তার সমর্থকরাই এক সময় তাকে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র সভাপতি করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এম আজিজ আরো জানান যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কোন পদের প্রতিই তাঁর কোন লোভ কখনোই ছিলনা এবং এখনো নেই।
বিশ্বস্ত সূত্রমতে, ২৪ জুলাই রোববার জ্যাকসন হাইটসস্থ ইত্যাদী রেষ্টুরেন্টের মিলনায়তনটি প্রথমে ভাড়া করে ‘ডা. মুজিব-জিল্লু-বাবু-বাবলু-বাদল’ গ্রুপ এর সমর্থক নিউইয়র্ক ষ্টেট বিএনপির সভাপতি ওলিউল্লাহ আতিক ও সাঈদুর রহমান সাঈদ। তাদের সাংবাদিক সম্মেলনের নিধৃঅরিত সময় ছিল ২৪ জুলাই রাত ৮টা। অপরদিকে এহসানুল হক মিলনের সমর্থক স¤্রাট-গিয়াসের পক্ষে উক্ত ঈত্যাদি মিলনায়তন ভাড়া নেওয়া হয় সাংবাদিক সম্মেলনের মাত্র একদিন আগে ওলিউল্লাহ-আতিক-সাঈদ দের নিধৃারিত সময়ের ২ ঘন্টা পুর্বে ২৪ জুলাই ৬ টায়। ৬টার পরিবর্তে এহসানুল হক মিলন-স¤্রাট-গিয়াস গ্রুপের সাংবাদিক সম্মেলন শুরু হয় সন্ধ্যা ৭টার দিকে। সাংবাদিক সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবে সভাপতি আবদুল লতিফ স¤্রাট। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলন। তিনি তাঁর বিরুদ্ধে উত্থাপিত চাঁদাবাজীর অভিযোগ সমউর্ন অস্বীকার করেন এবং বলেন ষ্টেট কমিটি গঠনে এখনো পর্যন্ত কারো কাছে কোন চাঁদা গ্রহণ করা হয়নি। তবে বিএনপির সদস্যপদ গ্রহনে ১ ডলার চাঁদা ধার্য করা হয়েছে এবং সংগঠনের ব্যয় নির্বাহের জন্য ষ্টেট কমিটি গঠনের সময় কিছু ফি ধার্য করা হতে পারে। সাপ্তাহিক পরিচয় এর এক প্রশ্নের উত্তরে আবদুল লতিফ স¤্রাট ও এহসানুল হক মিলন বলেন, নিউইয়র্কে ব্েিনপির জন্য একটি ইনকরপরেপেটেড কোম্পানী ে খাণা হয়েছে এবং যার সকল আয়ব্যায় একাউন্টেট দ্বারা যাচাই-বাছাই করা হবে। সব ধরনের আইনী স্বচ্ছতার দিকে নজর রাখা হবে।
এহসানুল হক মিলন সাংবাদিক সম্মেলন শেষ করে চলে যেতে চাইলে আবদুল লতিফ স¤্রাট, গিয়াস আহমেদ ও তাঁদের সমর্থকদের অনুরোধে কয়েক গজ হেঁটে ডাইভারসিটি প্লাজায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধনে যোগ দেন। মিলনের সমর্থনে মুহর্মুহ শ্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে ডাইভারিসিটি প্লাজা। ঘড়ির কাঁটায় সময় তখন রাত ৮.১৬ মিনিট। এসময় ‘ডা. মুজিব-জিল্লু-বাবু-জসীম’ এর সমর্থকরা ডাইভারসিটি প্লাজার স্ামনের দিক দিয়ে তাদের নির্ধারিত সাংবাদিক সম্মেলনের স্থান ইত্যাদি রেস্টুরেন্টের প্রবেশমুখে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে প্রথমে কয়েক সেকেন্ড উত্তেজিত বাক্য বিনিময়ের পর হাতাহাতি-সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। পারভেজ সাজ্জাদ ও আবদুর সবুৃরসহ আরো কয়েকজন এহসানুল হক হক মিলনকে নিয়ে দ্রুত ডাইভারসিটি প্লাজা ত্যাগ করার পরও প্রায় ১৫/২০ মিনিট উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে।
পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন আনে। কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। তবে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের আবদুল লতিফ স¤্রাট জানান এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনী ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে। তবে এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণের খবর পাওয়া যায়নি।
পরিস্থিতি শান্ত হলে ‘ডা. মুজিব-জিল্লু-বাবু-জসীম’ গ্রুপের সাংবাদিক সম্মেলন শুরু হয় এবং সাংবাদিক সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ঐক্যবদ্ধ করার পরিবর্তে নানা প্রক্রিয়ায় বিভাজন সৃষ্টি করে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য এহসানুল হক মিলন, আব্দুল লতিফ স¤্রাট ও গিয়াস আহমেদের নেতৃত্বাধীন গ্রুপকে দায়ী করা হয়। বিভিন্ন বক্তা মিলনকে কেন্দ্রীয় নেতার মতো আচরণের অনুরোধ জানান।
এদিকে ঐদিন সংঘর্ষ শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক মিনিট পূর্বে পরিচয় সম্পাদকের সাথে আলাপচারিতায় এহসানুল হক মিলন বলেন, সকলকে সাথে নিয়েই তিনি নিউইয়র্ক ষ্টেট বিএনপির কমিটি গঠন করতে চান। সকলে সম্পৃক্ত না হলে তাঁর মিশনতো শতভাগ সফল হবেনা এবং কেন্দ্রের নিকটও তা গ্রহণযোগ্য হবেনা। তিনি দেশের চলমান সঙ্কটময় মুহুর্তে বিএনপি তথা বেগম জিয়া ও তারেক রহমানের হাতকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সকল প্রকার ভেদাভেদ ভুলে প্রবাসের সকল বিএনপি নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানানোর কয়েক মিনিটের মধ্যেই শুরু হয় সেই লজ্জ্বাষ্কর কর্মকান্ড।
অনেক বিএনপি নেতা-কর্মীর প্রশ্ন: কেন সেদিন জ্যাকসন হাইটসে এতো জায়গা থাকতে আবদুল লতিফ স¤্রাট ও গিয়াস আহমেদ এবং তাঁদের সমর্থকরা ইত্যাদি রেষ্টুরেন্টেই জনাব মিলনের সাংবাদিক সম্মেলন আহবান করেছিলেন? শোডাউনের মানসিকতা থেকে যদি এমনটি করা হয়ে থাকে তাহলে লাভ-ক্ষতি কার হলো?
উল্লেখ্য, আগামী ১৪ আগষ্ট নিউইয়র্ক ষ্টেট বিএনপি’র কমিটি গঠনের লক্ষ্যে কাউন্সিল অধিবেশন অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি’র সদস্য/কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে ষ্টেট কমিটি বিশেষ করে সভাপতি/সাারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন। এই কমিটির সভাপতি পদের জন্য ইতিমধ্যেই বিএনপি নেতা, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, তারেক রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সংগ্রাম পরিষদ যুক্তরাষ্ট্রের সভাপতি এবং মাহমুদুর রহমান ও শফিক রেহমান মুক্তি পরিষদের আহ্বায়ক পারভেজ সাজ্জাদ দলীয় এক নীতি নির্ধারনী সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীতা ঘোষণা দিয়েছেন। নিউইয়র্ক ষ্টেট কমিটির সভাপতি পদে দায়িত্ব পেতে চান ব্রুকলীন বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বিল্লাল আহম্মদ চৌধুরী, জাকির হাওলাদার। তাছাড়া‘ডা. মুজিব-জিল্লু-বাবু-জসীম’ গ্রুপের পক্ষ থেকে ষ্টেট কমিটির সভাপতি পদে সমর্থন করা হচ্ছে মাওলানা অলিউল্লাহ আতিকুর রহমানকে। তবে পরিস্থিতি বর্তমানে যা দাঁিড়য়েছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে নিউইয়র্ক ষ্টেট বিএনপির কোন কমিটি গঠন না হওয়ারই সম্ভাবনা বেশী বলে মনে করছেন অনেকে। (সাপ্তাহিক পরিচয়)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ জরুরী: নানা আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির নেতা-কর্মীরা

প্রকাশের সময় : ০৯:৩৭:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ অগাস্ট ২০১৬

নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র কমিটি নেই প্রায় চার বছর ধরে। ফলে দলের মধ্যে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় গ্রুপিং, পাল্টা গ্রুপিং-এর শেষ নেই। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র ব্যানারে তিন, চার গ্রুপে চলছে দলীয় কর্মকান্ড। এমতাবস্থায় দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আপাতত: যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য বিএনপি’র কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। সেই উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় নিউইয়র্ক ষ্টেট বিএনপি’র কমিটি গঠন প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র দ্বিধা-বিভক্ত দুই গ্রুপের নেতা-কর্মীদের হাতাহাতির ঘটনা এখন টক অব দ্য কমিউনিটি। গত ২৪ জুলাই রোববার জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় এই ঘটনা ঘটে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিতে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা আর বছরের পর বছর ধরে কমিটি না হওয়ায় মূলত: ঐদিন হাতাহাতির মূল কারণ । দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র পাল্টা-পাল্টি সভা, সমাবেশ, গ্রুপিং, মারামারি-হাতাহাতি বন্ধে অবিলম্বে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। পাশাপাশি তারা নানা আশঙ্কায়ও ভুগছেন। তাদের মনে প্রশ্ন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিতে কখন কি হয়? অপরদিকে ২৪ জুলাইর ঘটনার পর হাতাহাতিতে জড়িত দলীয় নেতা-কর্মীরা নতুন করে হিসেব-নিকেশ করতে শুরু করেছেন। নিউইয়র্ক থেকে শুরু করে ঢাকায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
কথায় বলে, রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই। এই কথার ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিতে ‘ডা. মুজিব-জিল্লু-মজনু’, ‘স¤্রাট-গিয়াস-বাবুল’, ‘বাবু-জসিম’ আবার স¤্রাট-জিল্লু-গিয়াস-বাবুল’, বা ‘ডা. মুজিব-জিল্লু-বাবু’ প্রভৃতি গ্রুপের শেষ নেই। নিকট অরীতে ডা. মুজিব-স¤্রাট-জিল্লু-গিয়াস কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক শিক্ষা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলনকে যুক্তরাষ্ট্রে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেছিলেন আবার তাদেরই কেউ কেউ কেন্দ্রীয় নেতা মিলনের সাথে বর্তমারেন ঐক্য গড়েছেন। এভাবে ব্ধমফৃজিক্যাল চেঢ়ারের মত অবস্থান পরিবকর্তন দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের মাঝে নানা সময়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমানের নির্দেশ ও পরামর্শে কেন্দ্রীয় বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলন গত বছর প্রথম দফায় যুক্তরাষ্ট্রের ছয়টি অঙ্গরাজ্যে বিএনপির ষ্টেট কমিটি গঠন করেন। দ্বিতীয় দফায় তিনি নিউইয়র্ক ষ্টেট কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিলে নতুন করে দলের মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়। কেন্দ্রীয় নেতা মিলন তার দ্বিতীয় মিশন নিউইয়র্ক ষ্টেট বিএনপি’র কমিটি গঠনের প্রাথমিক উদ্যোগ হিসেবে গত রমজান মাসে দলীয় নেতা-কর্মীদের বাসায় বাসায় গিয়ে ইফতার গ্রহণ এবং নিজ বাসায় ইফতারের আয়োজন করে নেতা-কর্মীদের বিভক্তি দূর করতে কৌশল গ্রহণ করেন। এই কৌশলে তিনি প্রথমে আংশিত সফল হলেও ঈদের পরপরই দ্রুত অবস্থার অবনতি শুরু হয়। আপাতত: যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কোন কমিটি গঠিত হচ্ছেনা- এমন একটি খবর সকলে অবগত হওয়ার পর নিউইয়র্ক ষ্টেট বিএনপি হঠাৎ খুবই গুরুত্বপুর্ন হয়ে উঠে এবং ষ্টেট কমিটির নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে নতুন করে বিভক্ত হয়ে পড়ে প্রায় সকল গ্রুপ। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ স¤্রাট, সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি গিয়াস আহমেদ,সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল প্রমুখ কেন্দ্রীয় নেতা মিলনের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঘরোয়া সভা-সমাবেশ শুরু করেন। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. মুজিবুর রহমান মজুমদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লু, সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি শরাফত হোসেন বাবু, , সাবেক কোষাধ্যক্ষ জসিম ভূঁইয়া প্রমুখরা কেন্দ্রীয় নেতা মিলনের বিরুদ্ধে ‘চাঁদাবাজী’র অভিযোগ তোলেন এবং নিউইয়র্ক ষ্টেট বিএনপি’র কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার সাথে দ্বিমত পোষণ করার পাাপাশি প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র কমিটি গঠনের দাবী অব্যহত রাখেন। বিশেষ করে নিউইয়র্ক ষ্টেট বিএনপি’র কমিটি গঠনের জন্য বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এম আজিজকে প্রধান করে নির্বাচন কমিশন গঠন করার পরপরই বাবু-জিল্লুর-জসীম ভুইয়া গ্রুপটি প্রতিবাদী হয়ে উঠেন। অভিযোগ ওঠে এম আজিজ কখনো বিএনপি করেননি। আবার এম আজিজের পক্ষ থেকে বলা হয়, জিল্লুর রহমান জিল্লু ও তার সমর্থকরাই এক সময় তাকে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র সভাপতি করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এম আজিজ আরো জানান যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কোন পদের প্রতিই তাঁর কোন লোভ কখনোই ছিলনা এবং এখনো নেই।
বিশ্বস্ত সূত্রমতে, ২৪ জুলাই রোববার জ্যাকসন হাইটসস্থ ইত্যাদী রেষ্টুরেন্টের মিলনায়তনটি প্রথমে ভাড়া করে ‘ডা. মুজিব-জিল্লু-বাবু-বাবলু-বাদল’ গ্রুপ এর সমর্থক নিউইয়র্ক ষ্টেট বিএনপির সভাপতি ওলিউল্লাহ আতিক ও সাঈদুর রহমান সাঈদ। তাদের সাংবাদিক সম্মেলনের নিধৃঅরিত সময় ছিল ২৪ জুলাই রাত ৮টা। অপরদিকে এহসানুল হক মিলনের সমর্থক স¤্রাট-গিয়াসের পক্ষে উক্ত ঈত্যাদি মিলনায়তন ভাড়া নেওয়া হয় সাংবাদিক সম্মেলনের মাত্র একদিন আগে ওলিউল্লাহ-আতিক-সাঈদ দের নিধৃারিত সময়ের ২ ঘন্টা পুর্বে ২৪ জুলাই ৬ টায়। ৬টার পরিবর্তে এহসানুল হক মিলন-স¤্রাট-গিয়াস গ্রুপের সাংবাদিক সম্মেলন শুরু হয় সন্ধ্যা ৭টার দিকে। সাংবাদিক সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবে সভাপতি আবদুল লতিফ স¤্রাট। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলন। তিনি তাঁর বিরুদ্ধে উত্থাপিত চাঁদাবাজীর অভিযোগ সমউর্ন অস্বীকার করেন এবং বলেন ষ্টেট কমিটি গঠনে এখনো পর্যন্ত কারো কাছে কোন চাঁদা গ্রহণ করা হয়নি। তবে বিএনপির সদস্যপদ গ্রহনে ১ ডলার চাঁদা ধার্য করা হয়েছে এবং সংগঠনের ব্যয় নির্বাহের জন্য ষ্টেট কমিটি গঠনের সময় কিছু ফি ধার্য করা হতে পারে। সাপ্তাহিক পরিচয় এর এক প্রশ্নের উত্তরে আবদুল লতিফ স¤্রাট ও এহসানুল হক মিলন বলেন, নিউইয়র্কে ব্েিনপির জন্য একটি ইনকরপরেপেটেড কোম্পানী ে খাণা হয়েছে এবং যার সকল আয়ব্যায় একাউন্টেট দ্বারা যাচাই-বাছাই করা হবে। সব ধরনের আইনী স্বচ্ছতার দিকে নজর রাখা হবে।
এহসানুল হক মিলন সাংবাদিক সম্মেলন শেষ করে চলে যেতে চাইলে আবদুল লতিফ স¤্রাট, গিয়াস আহমেদ ও তাঁদের সমর্থকদের অনুরোধে কয়েক গজ হেঁটে ডাইভারসিটি প্লাজায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধনে যোগ দেন। মিলনের সমর্থনে মুহর্মুহ শ্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে ডাইভারিসিটি প্লাজা। ঘড়ির কাঁটায় সময় তখন রাত ৮.১৬ মিনিট। এসময় ‘ডা. মুজিব-জিল্লু-বাবু-জসীম’ এর সমর্থকরা ডাইভারসিটি প্লাজার স্ামনের দিক দিয়ে তাদের নির্ধারিত সাংবাদিক সম্মেলনের স্থান ইত্যাদি রেস্টুরেন্টের প্রবেশমুখে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে প্রথমে কয়েক সেকেন্ড উত্তেজিত বাক্য বিনিময়ের পর হাতাহাতি-সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। পারভেজ সাজ্জাদ ও আবদুর সবুৃরসহ আরো কয়েকজন এহসানুল হক হক মিলনকে নিয়ে দ্রুত ডাইভারসিটি প্লাজা ত্যাগ করার পরও প্রায় ১৫/২০ মিনিট উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে।
পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন আনে। কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। তবে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের আবদুল লতিফ স¤্রাট জানান এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনী ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে। তবে এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণের খবর পাওয়া যায়নি।
পরিস্থিতি শান্ত হলে ‘ডা. মুজিব-জিল্লু-বাবু-জসীম’ গ্রুপের সাংবাদিক সম্মেলন শুরু হয় এবং সাংবাদিক সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ঐক্যবদ্ধ করার পরিবর্তে নানা প্রক্রিয়ায় বিভাজন সৃষ্টি করে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য এহসানুল হক মিলন, আব্দুল লতিফ স¤্রাট ও গিয়াস আহমেদের নেতৃত্বাধীন গ্রুপকে দায়ী করা হয়। বিভিন্ন বক্তা মিলনকে কেন্দ্রীয় নেতার মতো আচরণের অনুরোধ জানান।
এদিকে ঐদিন সংঘর্ষ শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক মিনিট পূর্বে পরিচয় সম্পাদকের সাথে আলাপচারিতায় এহসানুল হক মিলন বলেন, সকলকে সাথে নিয়েই তিনি নিউইয়র্ক ষ্টেট বিএনপির কমিটি গঠন করতে চান। সকলে সম্পৃক্ত না হলে তাঁর মিশনতো শতভাগ সফল হবেনা এবং কেন্দ্রের নিকটও তা গ্রহণযোগ্য হবেনা। তিনি দেশের চলমান সঙ্কটময় মুহুর্তে বিএনপি তথা বেগম জিয়া ও তারেক রহমানের হাতকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সকল প্রকার ভেদাভেদ ভুলে প্রবাসের সকল বিএনপি নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানানোর কয়েক মিনিটের মধ্যেই শুরু হয় সেই লজ্জ্বাষ্কর কর্মকান্ড।
অনেক বিএনপি নেতা-কর্মীর প্রশ্ন: কেন সেদিন জ্যাকসন হাইটসে এতো জায়গা থাকতে আবদুল লতিফ স¤্রাট ও গিয়াস আহমেদ এবং তাঁদের সমর্থকরা ইত্যাদি রেষ্টুরেন্টেই জনাব মিলনের সাংবাদিক সম্মেলন আহবান করেছিলেন? শোডাউনের মানসিকতা থেকে যদি এমনটি করা হয়ে থাকে তাহলে লাভ-ক্ষতি কার হলো?
উল্লেখ্য, আগামী ১৪ আগষ্ট নিউইয়র্ক ষ্টেট বিএনপি’র কমিটি গঠনের লক্ষ্যে কাউন্সিল অধিবেশন অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি’র সদস্য/কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে ষ্টেট কমিটি বিশেষ করে সভাপতি/সাারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন। এই কমিটির সভাপতি পদের জন্য ইতিমধ্যেই বিএনপি নেতা, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, তারেক রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সংগ্রাম পরিষদ যুক্তরাষ্ট্রের সভাপতি এবং মাহমুদুর রহমান ও শফিক রেহমান মুক্তি পরিষদের আহ্বায়ক পারভেজ সাজ্জাদ দলীয় এক নীতি নির্ধারনী সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীতা ঘোষণা দিয়েছেন। নিউইয়র্ক ষ্টেট কমিটির সভাপতি পদে দায়িত্ব পেতে চান ব্রুকলীন বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বিল্লাল আহম্মদ চৌধুরী, জাকির হাওলাদার। তাছাড়া‘ডা. মুজিব-জিল্লু-বাবু-জসীম’ গ্রুপের পক্ষ থেকে ষ্টেট কমিটির সভাপতি পদে সমর্থন করা হচ্ছে মাওলানা অলিউল্লাহ আতিকুর রহমানকে। তবে পরিস্থিতি বর্তমানে যা দাঁিড়য়েছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে নিউইয়র্ক ষ্টেট বিএনপির কোন কমিটি গঠন না হওয়ারই সম্ভাবনা বেশী বলে মনে করছেন অনেকে। (সাপ্তাহিক পরিচয়)