নিউইয়র্ক: বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, প্রখ্যাত জননেতা, জাতীয় পার্টির (একাংশ) চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমদ স্মরণে আয়োজিত শোক সভায় বক্তারা বলেছেন, দেশের রাজনীতিতে তার অভাব অপূরণীয়। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তার অবদান ভুলার নয়। দেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটে তার চলে যাওয়া জাতির জন্য কাম্য ছিলনা। বক্তারা বলেন, কাজী জাফর আহমদ দেশের ইতিহাসের অংশ, স্বাধীনতার অতন্ত্র প্রহরী। ছিলেন দেশের শ্রমিক রাজনীতির সূতিকাগার। তাঁর অভাব জাতি চিরদিন অনুভব করবে। তাঁর শূণ্যতা পূরণ হবার নয়। খবর ইউএনএ’র।
‘প্রবাসী বাংলাদেশী সমাজ-প্রবাস’-এর ব্যানারে সিটির জ্যাকসন হাইটস্থ হাটবাজার রেষ্টুরেন্টের মিলনায়তনে গত ৪ অক্টোবর রোববার সন্ধ্যায় আয়োজিত শোক সভায় সভাপতিত্ব করেন মরহুম কাজী জাফরের এক সময়ের সহকর্মী, সাবেক ছাত্রনেতা ও আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির (আইএফসি) চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান ইউসুফজাই সালু। সভা পরিচালনা করেন সাবেক ছাত্রনেতা আলী ইমাম শিকদার। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট রাজনীতিক, সাবেক মন্ত্রী, ঢাকার সাবেক মেয়র ও কাজী জাফরের আরেক সহযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর এবং কাজী জাফর আহমদের সহকর্মী, বিশিষ্ট লেখক আব্দুর রহিম আজাদ। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন প্রবীণ সাংবাদিক মঞ্জুর আহমেদ, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিষ্ট মঈনুদ্দীন নাসের, আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির (আইএফসি) সেক্রেটারী জেনারেল সৈয়দ টিপু সুলতান, অষ্ট্রেলিয়ার সিডনী ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, সাবেক এমপি শহীদুল ইসলাম, বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক নিউইায়র্কের সাবেক সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন খান, খন লন্ডন থেকে আগত ব্যারিষ্টার শরফুল ইসলাম, কাজী জাফর আহমদের ব্যক্তিগত আইনজীবি এডভোকেট ওয়াহিদুর রহমান, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট মুনির হোসেন, প্রফেসর দেলোয়ার হোসেন, কাজী আশ্রাফ হোসেন নয়ন, আতাউর রহমান আতা, আটলান্টা প্রবাসী মরহুমের ভাতিজা ও সাবেক ছাত্র নেতা কাজী মোহাম্মদ নাহিদ, সোসাল অ্যাক্টিভিষ্ট কাজী ফৌজিয়া প্রমূখ।
সভায় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে বাংলাদেশের ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড খ্যাত’ কোকিল কন্ঠী গায়িকা বেবী নজনীন, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি এম এ আজিজ, বর্তমান সভাপতি আজমল হোসেন কুনু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম হাওলাদার, সহ সভাপতি ফারুক হোসেন মজুমদার সহ কমিউনিটির সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভার শুরুতে মরহুম কাজী জাফর আহমেদের বিদেহী আতœার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন এবং বক্তব্য রাখেন কমিনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট আলহাজ আব্দুর রহমান। সভায় বক্তারা জননেতা কাজী জাফর আহমদ তার জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পরও যথাযথ সম্মান না পাওয়া ও না দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এটা প্রতিহিংসার রাজনীরিতই বহি:প্রকাশ। এই রাজনীতির অবসান প্রয়োজন উল্লেখ করে তারা বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার উর্দ্ধে উঠে জাতির কৃতি সন্তানদের যথাযথ মর্যাদা দেয়া জাতিরই দায়িত্ব। বক্তারা বলেন, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদ সর্বশেষ জাতীয় পার্টির রাজনীতি করলেও তিনি ছিলেন সবার কাছে সমানভাবে গ্রহণযোগ্য একজন মানুষ। তারঁ মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন না করায় সরকারের দীনতায় প্রকাশ পেয়েছে। এতে সরকারের ভাবমূর্তি বাড়েনি বরং কমেছে।
সভায় সাদেক হোসেন খোকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদের স্মৃতি চারণ করে বলেন, দেশের সকল সঙ্কটে কাজী জাফরের সাহসী ভূমিকা ও নেতৃত্ব জাতি চিরদিন স্মরণ করবে। দেশের শ্রমিক রাজনীতিতে কাজী জাফর একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশ সত্যিকারের একজন জননেতাকে হারিয়েছে।
আলমগীর কবির বলেন, কাজী জাফর আহমদ ছিলেন বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী, সময়ের সাহসী যোদ্ধা, সৎ, ত্যাগী প্রজ্ঞাবান নেতা। তার তুলনা তিনি নিজেই। কিন্তু জীবদ্দশায় তো বটেই মৃত্যুর পরও তিনি রাষ্ট্রীয় সম্মান পেলেন না। যা খুই দু:খজনক।
আব্দুর রহিম আজাদ বলেন, কাজী জাফর ছিলেন আমাদের সময়ের সাহসী মেধাবী নেতা।
সভাপতির বক্তব্যে আতিকুর রহমান ইউসুফজাই সালু মরহুম কাজী জাফরের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, জাফর ভাই ছিলেন ইতিহাসের অংশ ও স্বাধীনতার অতন্ত্র প্রহরী। যা মুছে ফেলা যাবেনা। তিনি মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন, তার রাজনীতি ছিল মানুষকে ভালবাসার রাজনীতি। জাফর ভাই ছিলেন সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তি। তিনি বলেন, কাজী জাফরের প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধা জানাতে হলে দেশের রাজনীতিতে আজ ‘হিংসার বিপরীতে ভালবাসার রাজনীতি, সহমর্মিতার রাজনীতি’ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। দেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতি ফিরে আনতে হবে।
আতিকুর রহমান ইউসুফজাই স্মৃতিচারণ করে বলেন, ১৯৭০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী ঢাকায় ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে লক্ষ লোকের সমাবেশে স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ববাংলা প্রতিষ্ঠার যে ডাক আমরা তুলে ছিলাম, সেদিন নেতৃত্বের পূরভাগেই ছিলেন জননেতা কাজী জাফর আহমেদ, রাশেদ খান মেনন, হায়দার আকবর খান রনো, মোস্তফা জামাল হায়দার, আব্দুল মান্নান ভূইয়া, ড. মাহবুবুল্লাহ, হায়দার আনোয়ার খান জুনো, আব্দুল্লাহ আল নোমান প্রমুখরা। সেই সমাবেশের প্রস্তাব পূর্ব সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমিই পাঠ করেছিলাম। যা ইতিহাসের সত্য। সালু বলেন, তার মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় কাজী জাফরের দাফন না করায় সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।