ওয়াশিংটনে আ’লীগ বনাম রাষ্ট্রদূত : নেতৃবৃন্দের সাথে অসৌজন্য আচরণ

- প্রকাশের সময় : ০৪:২২:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ জানুয়ারী ২০১৫
- / ১১৭২ বার পঠিত
ওয়াশিংটন ডিসি: ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিনের দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। এ সময় রাষ্ট্রদূত ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মধ্যে প্রচন্ড বাক-বিতন্ডা হয়। রাষ্ট্রদূত আওয়ামী লীগ নেতাদের নানা ধরনের হুমকি-ধামকি দেন। আওয়ামী লীগ নেতারাও পাল্টা রাষ্ট্রদূততে দেখে নেবেন বলে হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন। ৫ জানুয়ারী নির্বাচনের এক বছর উপলক্ষে ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কর্মসূচীতে অংশ নেয়া নেতাকর্মী ও সংবাদ কাভারেজের দায়িত্বে থাকা সাংবাদিকসহ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের এ ঘটনা হতবাক করেছে।
সেদিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও হোয়াইট হাউজের সামনে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর বিক্ষোভ কর্মসূচির পর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ প্রমুখের নেতৃত্বে বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী নেতাকর্মীরা গিয়েছিলেন বাংলাদেশ দূতাবাস ভবনে। আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নেতাকর্মীদের বলেছিলেন, রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন তাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং দুপুরের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্ত সেদিনের সেই প্রচন্ড শীতের কষ্ট সহ্য করে দূতাবাস ভবনের সামনে পৌঁছে তারা এক বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হন।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, কোন রকম অভ্যর্থনা তো দূরের কথা, তাদেরকে প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরেই ঢুকতে দেয়া হয়নি। ফটকে ঝুলছিল বড় তালা, মোতায়েন করা হয়েছিল অতিরিক্ত নিরাপত্তা রক্ষী। নিরাপত্তা রক্ষীরা আওয়ামী লীগ নেতাদের জানিয়ে দেন তাদের ভেতরে প্রবেশ নিষিদ্ধ। এ সময় রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন দূতাবাস ভবনের ভেতরেই ছিলেন। কিন্তু নেতৃবৃন্দ ও আগত সকলের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করা দূরে থাক তিনি বাইরে এসেও দেখা করতে চাননি। এমনকি কাউকে ভেতরে ঢোকারও অনুমতি মেলেনি।
এ সময় ভেতরে প্রবেশ করা নিয়ে দূতাবাসের নিরাপত্তায় থাকা সিকিউরিটি ও দূতাবাস কর্মচারীদের সাথে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ আজাদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের উত্তপ্ত বাক্বিত-া হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে কয়েকজনকে ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়। রাষ্ট্রদূত নিজে বাইরে না আসায় ড. সিদ্দিকুর রহমান, সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ প্রমুখ শীর্ষ নেতারা ভেতরে যেতে অস্বীকৃতি জানান। এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ আজাদ কয়েকজনকে নিয়ে ভেতরে যান। এদের সঙ্গে দৈনিক ইত্তেফাক-এর বিশেষ প্রতিনিধি শহিদুল ইসলামও ছিলেন। কিন্তু সেখানে তারা রাষ্ট্রদূতের দুর্ব্যবহারের শিকার হন। দেখা করতে যাওয়া নেতৃবৃন্দের সাথে রাষ্ট্রদূত বিতন্ডায় লিপ্ত হন। উভয়ের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এক পর্যায়ে আবদুস সামাদ আজাদ নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় দিলে রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন বলেন, আমিও আওয়ামী লীগের একজন বড় নেতা। তিনি সামাদ আজাদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করবেন বলে হুঁশিয়ারী দেন। এছাড়া দৈনিক ইত্তেফাকের শহিদুল ইসলামকেও তিনি দেখে নিবেন এবং তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করবেন বলে হুমকি দেন।
প্রচ- শীতে দূর-দূরান্ত থেকে সরকারের পক্ষে আন্দোলন করতে আসা মানুষদের সাথে রাষ্ট্রদূতের এমন আচরণে সকলে হতবাক হয়ে যান। রাষ্ট্রদূত হিসাবে একটি দেশের সকল জনগণের প্রতিনিধি হয়ে তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দিতে পারেন কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এই আচরণে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দসহ উপস্থিত সবাই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পক্ষান্তরে, একটি রাজনৈতিক কর্মসূচীতে অংশ নেয়া শত শত মানুষকে নিয়ে কোনো দূতাবাসের আতিথ্য গ্রহণ কতটা যুক্তিসঙ্গত এ নিয়েও সাধারণের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। (সাপ্তাহিক আজকাল)