ঐক্যবদ্ধ জেবিবিএ’র সদস্য পদে ২৯০ জন ব্যবসায়ীর আবেদন : ডিসেম্বরে নির্বাচন!
- প্রকাশের সময় : ০৮:৫৩:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ অক্টোবর ২০১৫
- / ৫৭৫ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের সর্ববৃহৎ সংগঠন জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশী বিজনেস এসোসিয়েশন (জেবিবিএ) নিউইয়র্ক ইনক’র ঐক্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। জেবিবিএ ইনক ও জেবিবিএ নিউইয়র্ক ইনক ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পর গত সপ্তাহে জেবিবিএ ওয়ান ঐক্য প্রক্রিয়ায় সামিল হয়েছে। এদিকে চলতি সপ্তাহে জেবিবিএ’র সদস্য সংগ্রহ অভিযান সমাপ্ত হয়েছে। সংশিষ্ট সূত্র মতে আগামী ডিসেম্বর মাসে জেবিবিএ’র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগ্রহীরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। ঐক্যবদ্ধ জেবিবিএ’র সদস্য পদে ২৯০ জন ব্যবসায়ীর আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে।
জেবিবিএ’র বর্তমান কর্মকান্ড সম্পর্কে আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য মাহবুবুর রহমান ১১ অক্টোবর রোববার ইউএনএ প্রতিনিধিকে জানান, ১০ অক্টোবর শনিবার ছিলো সদস্য হওয়ার শেষ দিন। নতুন-পুরাতন সবমিলিয়ে জেবিবিএ’র সদস্য হওয়ার জন্য ২৯০জন প্রার্থী আবেদন করেছেন। নতুন সদস্য/ভোটারদের আবেদনপত্র যাছাই-বাছাই করতে সপ্তাহ খানেক সময় লাগবে। তাই এখনই চুড়ান্ত সদস্য সংখ্যার হিসাব বলা ঠিক হবে না। আবেদনপত্রগুলো দেখার পর চুড়ান্ত সদস্য/ভোটার তালিকা নির্ধারণ করা যাবে। তিনি আরো বলেন, আগামী সপ্তাহে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে কবে নাগাদ জেবিবিএ’র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
জেবিবিএ সূত্রে জানা গেছে, আগামী ডিসেম্বর মাসে জেবিবিএ’র নির্বাচন হতে পারে। কেননা, আসছে নতুন বছর অর্থাৎ আগামী জানুয়ারী মাস থেকে জেবিবিএ’র সদস্যদের অনেকেই ব্যবসায়িক কারণেই বিশেষ করে ট্যাক্স সিজন উপলক্ষে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। এছাড়া উইন্টার অর্থাৎ শীতকাল চলমান থাকায় ডিসেম্বর মাসে অন্যান্য ব্যবসায় মন্দাভাব বিরাজ করবে। ফলে সবমিলিয়ে ডিসম্বের মাসই নির্বাচন অনুষ্ঠানের উত্তম সময় বলে একাধিক জেবিবিএ নেতা ইউএনএ প্রতিনিধিকে জানান।
জেবিবিএ’র আগামী নির্বাচনে কে বা কারা প্রার্থী হতে পারেন এমন প্রশ্নে একাধিক নেতা বলেন, জেবিবিএ’র ভোটারদের গোপন ভোটে নির্বাচনের মাধ্যমেই নতুন কমিটি গঠিত হবে এটা সত্য। কিন্তু কে বা কারা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন এনিয়ে এখনো ভাববার সময় আসেনি। কেননা, সবার দৃষ্টি এখন বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের সদস্য/ভোটার পদ চুড়ান্ত করা। কেননা, এই সদস্য/ভোটার করা না করাকে কেন্দ্র করেই জেবিবিএ বিভক্ত হয়ে পড়েছিলো। তাই দায়িত্বশীল সকলেই এব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করে চলেছেন।
সূত্র মতে, জেবিবিএ’র আসন্ন নির্বাচনে দুটি প্যানেল হতে পারে। এই প্যানেলে বিগত দিনে বিভক্ত দুই জেবিবিএ’র শীর্ষ কর্মকর্তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেবিবিএ’র সাবেক এক সভাপতি এই প্রতিনিধিকে বলেন, জেবিবিএ এখন প্রবাসে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন। দিনে দিনে এর গুরুত্ব ও মর্যাদাও বাড়ছে। জেবিবিএ’র মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণ ছাড়াও কমিউনিটির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক জোরদারও হতে পারে। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে এখনো কিছু ভাবছি না। সকল ব্যবসায়ীরা যাতে জেবিবিএ’র সদস্য হতে পারেন এটাই এখন আমাদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। তবে সদস্যরা চাইলে নির্বাচন করতে পারি।
জেবিবিএ’র সাবেক এক সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা সবেমাত্র ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। এজন্য অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছে, অনেক ত্যাগ শিকার করতে হয়েছে। নির্বাচন হবে, তবে নির্বাচনে কে বা কারা প্রার্থী হবেন তা নিয়ে এখনও প্রকাশ্যে কিছু বলার সময় আসেনি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘একটু অপেক্ষা করুন’।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্কে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশী ও ব্যবসায়ীদের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত জ্যাসকন হাইটস। এই জ্যাকসন হাইটসের ব্যবসায়ী বাংলাদেশীদের শীর্ষ সংগঠন জেবিবিএ। ১৯৯৭ সালে জেবিবিএ’র প্রতিষ্ঠার সময় এর নামকরণ করা হয় ‘জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশী বিজনেস এসোসিয়েশন ইনক’। প্রবাসে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের সংগঠন হিসেবে জেবিবিএ কমিউনিটি ও মূলধারায় ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণ ছাড়াও পথমেলা আয়োজনের মাধ্যমে সবার দৃষ্টিও আকর্ষণ করে। কিন্তু নেতৃত্বের কোন্দল আর কতিপয় ব্যবসায়ীর অনাকাংখিত কর্মকান্ড এবং সর্বশেষ ২০১৩ সালের জুন মাসে ভোটার তালিকা প্রণয়ণ নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে জেবিবিএ।
বিভক্তির পর ব্যবসায়ীদের একটি অংশ জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশী বিজনেস এসোসিয়েশন ইনক আর অপর অংশ জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশী বিজনেস এসোসিয়েশন নিউইয়র্ক ইনক নামে বিভক্ত হয়ে পড়ে। আর এই বিভক্তির ধারাবাহিকতায় ‘জেবিবিএ ওয়ান’ নামে আরো একটি সংগঠন করার উদ্যোগ নেয়া হয়। ফলে ত্রি-ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ে জেবিবিএ। কিন্তু এই বিভক্তিতে বাংলাদেশী সাধারণ ব্যবসায়ীরা অস্বস্তিবোধ করতে থাকেন। পাশাপাশি উভয় জেবিবিএ’র কর্মকর্তাদের মধ্যে নেতৃত্বের কোন্দল, বিভেদ-বিভক্তিও বাড়তে থাকে। চলে পাল্টা-পাল্টি সভা-সমাবেশ, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ। এমনি প্রেক্ষাপটে সাধারণ ব্যবসায়ীদের দাবীর প্রেক্ষিতে জেবিবিএ’র প্রতিষ্ঠাতা ও সিনিয়র কর্মকর্তাদের উদ্যোগে ঐক্যে প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং সর্বশেষ গত ২৬ আগষ্ট উভয় সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ঐক্যবদ্ধ হন এবং ৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন সাঈদ রহমান মান্নান, কাজী মন্টু, মাহবুবুর রহমান, এস. রহমান ও পারভেজ কাজী। জেবিবিএ’র নতুন নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আহ্বায়ক কমিটিই দায়িত্ব পালন করবে। আহ্বায়ক কমিটির পাঁচজনই সদস্য এবং তারা সবাই সমান পদমর্যাদার। এই কমিটিতে নেই কোন আহ্বায়ক বা সভাপতি বা কোন মেম্বার সেক্রেটারী।