আয়োজক কমিটির মতবিনিময় সভায় সম্পূর্ণ নজরুলকে তুলে ধরার উপর গুরুত্বারোপ
- প্রকাশের সময় : ০১:৪০:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ জানুয়ারী ২০১৬
- / ১৩০১ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: আগামী ২৮-২৯ মে নিউইয়র্কে দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ষোড়শ উত্তর আমেরিকা নজরুল সম্মেলন-২০১৬। এই সম্মেলন সফল করতে ইতিমধ্যেই আয়োজক কমিটি গঠন করা হয়েছে। সম্মেলনের মূল আয়োজক সংগঠন হচ্ছে শতদল। সহযোগী সংগঠন হচ্ছে জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটি। সিটির কুইন্স বরোর বাংলাদেশী অধ্যুষিত জামাইকার সুজান বি এন্থনী স্কুলে অনুষ্ঠিতব্য এবারের নজরুল সম্মেলন উপলক্ষ্যে জ্যামাইকায় আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা ‘নজরুল সম্মেলনে’ প্রবাসী বাংলাদেশী সহ নতুন প্রজন্মের কাছে সম্পূর্ণ কাজী নজরুল ইসলামকে তুলে ধরার নিমিত্তে গবেষণা ও নিরীক্ষাধর্মী উপস্থাপনার উপর গুরুত্বারোপ করেন। সেমিনার ও সাংস্কৃতিক পর্বের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণে একটি প্রাণবন্ত ও সফল সম্মেলন আয়োজনে বিভিন্ন পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন বিশিষ্টজন। সভায় ‘নজরুল সম্মেলন’ আয়োজন সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন এবং অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্মরণে উত্তর আমেরিকায় বিগত ১৫ বছর ধরে ‘নজরুল সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
সিটির জামাইকার হিলসাইড এভিনিউস্থ ষ্টার কাবাব রেষ্টুরেন্ট মিলনায়তনে গত ৬ জানুয়ারী বুধবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন নজরুল সম্মেলন ২০১৬-এর আহ্বায়ক মোহাম্মদ কবির কিরণ। সভা পারিচালনা করেন নজরুল সম্মেলনের সদস্য সচিব মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার। সভায় নিউইয়র্ক ও ট্রাইষ্টেট শহরের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নজরুল সংগঠক, গবেষক, শিল্পী, কর্মী ও অনুরাগী অংশ নেন। খবর ইউএনএ’র।
সভার শুরুতে মোহাম্মদ কবির কিরণ আসন্ন নজরুল সম্মেলন আয়োজনের অগ্রগতি ও বাজেট সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা করেন । এরপর নজরুল সম্মেলন আয়োজনের গুরুত্ব, মূলনীতি ও পদ্ধতি নিয়ে বিশদ আলোচনায় অংশ নেন উপস্থিত সুধীজন।
মতবিনিময় সভার আলোচনায় অংশ নেন আয়োজক কমিটির অন্যতম উপদেষ্টা ডা. ওয়াদুদ ভূঁইয়া, প্রধান সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীর ডিকেন্স, অর্থ উপ-কমিটির সভাপতি পরেশ সাহা, প্রধান নির্বাহী সহ-আহ্বায়ক বিলাল চৌধুরী এবং অন্যতম সমন্বয়কারী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম।
এছাড়াও সভায় উল্লেখযোগ্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্যজন জামাল উদ্দিন হোসেন, সাপ্তাহিক ঠিকানা’র প্রধান সম্পাদক মুহাম্মদ ফজলুর রহমান, সাপ্তাহিক বাঙালী সম্পাদক কৌশিক আহমেদ, টাইম টেলিভিশন-এর সিইও এবং সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা’র সম্পাদক আবু তাহের, অধ্যাপিকা হুসনে আরা বেগম, বিশিষ্ট রাজনীতিক ড. প্রদীপ রঞ্জন কর, হককথা ও বার্তা সংস্থা ইউএনএ সম্পাদক এবিএম সালাহউদ্দিন আহমেদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ফাহিম রেজা নূর, বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী এবিএম ওসমান গনি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন ইউএসএ’র সভাপতি বিষ্ণু গোপ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন ইউএসএ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী শফিকুল হক জুয়েল, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট ইঞ্জিনিয়ার বিদ্যুৎ দাস, ড. সুলতান আহমেদ, বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক’র সংস্কৃতিক সম্পাদিক মনিকা রায়, বিশিষ্ট উপস্থাপিকা শারমিন রেজা ইভা, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ মনির হোসেন, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট রোকেয়া আক্তার, কবি অবিনাশ আচার্য্য, জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রেজাউল আজাদ ভুইয়া ও উপদেষ্টা ছদরুন নূরসহ শেখ হায়দার আলী, অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান বাবু, ইফজাল আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সভায় কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, ওয়েলকেয়ার-এর সিনিয়র ম্যানেজার ও বাপাফ-এর সভাপতি সালেহ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন ইউএসএ’র সাবেক সভাপতি অধ্যাপক স্বপন দাস, বিশিষ্ট রাজনীতিক সামসুদ্দিন আজাদ ও আবু তালেব চৌধুরী চান্দু, গোলাম সোহরাব, আহসান হাবিব, সৈয়দ ইলিয়াস খসরু, আফজাল শাহেদ আলী, মনিরুজ্জামান, আফিয়া, সুলতানা খানম, হুমায়ুন কবির, মেহের কবির, শিবলী সাদেক, এএফ মিসবাহউজ্জামান, সাঈদা লুৎফা শাহানা, স্বীকৃতি বরুয়া, এম. এ. রহমান, ওয়াহিদুজ্জামান, রেজাউল করিম চৌধুরী, শেখ এইচ. আলী, সৈয়দ লিটন আলী, বিপ্লব সেন গুপ্ত, মোহাম্মদ নিসফার আলী, এহসান উদ্দিন আজাদ, আফরোজা, ওমর ফারুক, জুয়েল মিয়া, সহদেব তালুকদার প্রমুখ সহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভার শেষে সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক পর্বের আয়োজন করা হয় ।
সভায় মোহাম্মদ কবির কিরণ বলেন, ষোড়শ উত্তর আমেরিকা নজরুল সম্মেলন-২০১৬ এর ভেন্যু ঠিক হয়ে গেছে। সম্মেলনে কবি নজরুলের উপর ডকুমেন্টারী প্রদর্শন, চিত্র প্রদর্শণী, শিশু-কিশোর-কিশোরীদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, আলোচনা, সঙ্গীত, নৃত্য প্রভৃতি অনুষ্ঠান থাকবে। সম্মেলনে কবি পরিবারের সদস্যসহ দেশে বিদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ যোগ দেবেন। তিনি বলেন, আমরা সবার সহযোগিতায় ‘ফ্রুটফুল নজরুল সম্মেলন’ উপহার দিতে চাই।
ডা. ওয়াদুদ ভুইয়া বলেন, আমরা প্রবাসে অনেক সম্মেলন করেছি, অনেক অনুষ্ঠান করেছি। কিন্তু এবারের নজরুল সম্মেলন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে বিশেষ গুরুত্ববহন করছে। তাইন এই সম্মেলন সফল করা সবার দায়িত্ব। তিনি বলেন, সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় কমিউনিটির বিপুল সংখ্যক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিই প্রমাণ করে আমরা কবি নজরুলকে ভালবাসি, তাকে জানতে চাই, বুঝতে চাই। কবি নজরুলকে প্রবাসী বাংলাদেশী আর নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চাই। এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
জামাল উদ্দিন হোসেন বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম সমাজের সকল পর্যায়েই বিচরণ করছেন। দু’দিনের সম্মেলনে তার জীবনের সব দিক নিয়ে আলোচনা করে শেষ করা যাবে না। কাজী নজরুলকে একজন অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী সাম্প্রদায়িকতা আর জঙ্গীবাদের যে বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়েছে তার প্রেক্ষাপটে নজরুলের ভূমিকাকে গুরুত্ব দিয়ে বা এমন বিষয় সম্মেলনের মূল বিষয় নির্ধারণ করে সম্মেলন সফল করা যেতে পারে।
মুহাম্মদ ফজলুর রহমান সভার কোন কোন বক্তার বক্তব্যের রেশ ধরে বলেন, নজরুল সম্মেলন করতে গিয়ে যেনো আমরা আবার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেই ছোট করে না ফেলি। তিনি বলেন, রবীন্দ্রের জায়গায় ররি আর নজরুলের জায়গায় নজরুল। কারো সাথে কারো তুলনা হয়না। বিষয়গুলো আমাদের মাথায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, রবীন্দ্র নাথ বিশ্বকবি এটা সর্বজন স্বীকৃত। কাজী নজরুলকে আমরা বিশ্বের কবি বলতে পারি।
কৌশিক আহমেদ বলেন, আমরা কাজী নজরুলকে ‘বিদ্রোহী কবি’, ‘সাম্যের কবি’, ‘প্রেমের কবি’ প্রভৃতি বিশেষনে আখ্যায়িত করে মূলত: কবিকেই ছোট করে ফেলি। এসব কবি নজরুলের এক একটি চরিত্র মাত্র। তাই আমাদেরকে সম্পূর্ণ নজরুলকেই আবিষ্কার করতে হবে। তার সম্পর্কে জানতে হলে আগে পড়তে হবে।
আবু তাহের বলেন, ‘নজরুল সম্মেলন’ যেনো নজরুল সম্মেলনেই পরিণত হয় সেই দিকে আয়োজকদের সচেতন থাকতে হবে। সম্মেলনের দর্শক-শ্রোতা যেনো সম্মেলন স্থলে প্রবেশ থেকে শুরু করে বের হওয়া পর্যন্ত কবি নজরুলকেই অবিষ্কার, উপলব্দি, জানতে ও বুঝতে পারেন।
অধ্যাপিকা হুসনে আরা বেগম বলেন, কবি নজরুল সব সময় সাম্যের কথা বলেছেন, নর-নারীকে সমান চোখে দেখেছেন। নজরুল সম্মেলনেও আমাদেরকে সম অধিকারের বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
ড. প্রদীপ রঞ্জন কর আজকের মতবিনিময় সভার বক্তাদের আলোচনার বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে আয়োজকদেরকে নজরুল সমম্মেলন সফল করতে হবে। এজন্য আমাদের সকল প্রকার সহযোগিতা থাকবে।
এবিএম সালাহউদ্দিন আহমেদ ‘নজরুল সম্মেলন’ যেনো নজরুল সম্মেলনই হয়, অন্য কোন সম্মেলনে যেনো পরিণত না হয় সেদিকে সজাগ থাকতে হবে। এই সম্মেলনে যেসব অনুষ্ঠান হবে তা যেনো শুধু কবি নজরুলকে ঘিরেই হয়। কমিউনিটির অন্যান্য সমম্মেলনের মতো কারো কারো আতœপ্রচারের সম্মেলনে যেনো পরিনত না হয়। আমাদের মনে রাখতে হবে এটি ‘নজরুল সম্মেলন’ অন্য কোন সম্মেলন নয়। তাহলেই নজরুল সম্মেলন সফল হবে।
ফাহিম রেজা নূর বলেন, সবার সহযোগিতা পেলে অবশ্যই নজরুল সম্মেলন সফল হবে।
এবিএম ওসমান গনি আমরা সবাই সহওেযাগিতা করলে সম্মেলন সফল করতে অর্থের কোন সমস্যা হবে না।
বিষ্ণু গোপ ‘নজরুল সম্মেলন’ সফল করতে আমরা সকল প্রকার সহযোগিতা করবো।
কাজী শফিকুল হক জুয়েল বলেন, কাউকে সম্মান দিতে হলে আগে তার সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে হবে। তার নাম শুদ্ধ করে জানতে আর উচ্চারণ করতে হবে। ভুল উচ্চারণ, ভুল উপস্থাপনা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ব্যথিত করে, ছোট করে।
ইঞ্জিনিয়ার বিদ্যুৎ দাস বলেন, নজরুল সম্মেলনে নজরুল ভক্ত-শ্রোতাদের সম্পৃক্ত করতে হবে। সবার কাছে কবি নজরুলকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে হবে।
সভায় পরেশ সাহা বলেন, এখন পর্যন্ত এবারের নজরুল সম্মেলনের বাজেট হচ্ছে ৪০ হাজার ডলার। তবে দিনে দিনে আমাদের পরিকল্পনাও বাড়ছে, সেই সাথে বাজেটের পরিমাণও বাড়ছে। সম্মেলনের অর্থ যোগান দিতে তিনি স্পন্সরদের সহযোগিতা কামনা করেন। ছবি : ইউএনএ