নিউইয়র্ক ০৩:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

অফিস ছাড়াই চলছে দলীয় কর্মকান্ড : নানা সমস্যা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৪:৩৭:৩২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ ডিসেম্বর ২০১৪
  • / ১৬৯৪ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের প্রধান চারটি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় পার্টি (জাপা) ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর শাখা থাকলেও নেই কোন দলের অফিস। নেই দলগুলোর অঙ্গ সংগঠনগুলোর অফিসও। দলগুলোর দপ্তর সম্পাদক থাকলেও কার্যত দপ্তর সম্পাদকদের কোন কাজ নেই অফিস না থাকার কারণে। এনিয়ে নেই কারো কোন মাথাব্যথা। অফিস ছাড়াই দলীয় কর্মকান্ড চললেও দলের নেতা-কর্মীদের বসার কোন জায়গা নেই। ফলে এখানে-সেখানে, হোটেল-রেস্তোরায় বসেই মূলত: দলের সভা-সমাবেশ করতে হচ্ছে দলগুলোকে। নানা সমস্যাও হচ্ছে দলের কর্মকান্ড পরিচালনায়। এদিকে বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরায় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের সভা-সমাবেশ, বৈঠকের ফলে সংশ্লিষ্টদের ব্যবসার চেয়ে বিব্রতই হতে হয় বেশী। কখনো কখনো অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে এসব সভা-সমাবেশ, বৈঠকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক সময় পুলিশের সাহায্য পর্যন্ত নিতে হয়। সব মিলিয়ে জরুরী হয়ে পড়েছে দলগুলোর নিজস্ব অফিস।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাপা ও জাসদের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের দাবীও দলের নিজস্ব অফিস। তারা বলেন, দলের নিজস্ব অফিস থাকলে দল পরিচালনা যেমন সহজ হবে, তেমনি দলের মধ্যে সাংগঠনিক শৃঙ্খলাও বজায় থাকবে। সেই সাথে বাড়বে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যকার সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি আর ভ্রাতৃত্ববোধ। তারা বলেন, দলের কর্মকান্ড পরিচালনায় হাজার হাজার ডলার খরচ হচ্ছে, নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় কেউ কেউ হাজার হাজার ডলার ব্যয় করছেন। অথচ দলের অফিসের ব্যাপারে নেতাদের কারো কোন মাথাব্যথা নেই। তারা মনে করেন দলের নেতা-কর্মীদের চাঁদা বা অনুদানে দলের কর্মকান্ড পরিচালিত হয়ে থাকে। সেই অর্থের আংশিক যদি অফিসের জন্য ব্যয় করা হয় তাহলেই তো নিজস্ব অফিস পরিচালনা করা যায়। আর নিজস্ব অফিস থাকলে দলীয় কর্মকান্ড পরিচালনায় স্বচ্ছতার পাশাপাশি দলীয় ‘গোপনীয়তা’ও  রক্ষা করা অনেকাংশে সম্ভব হবে। তাদের দাবী যেহেতু নিউইয়র্ক কেন্দ্রীক দলগুলোর রাজনীতি তাই নিউইয়র্কের কোন ভবনের বেসমেন্ট অথবা কোন ভবন ক্রয় করে দলের নিজস্ব অফিস হতে পারে। তারা আরো বলেন, প্রত্যেক দলের কোষাধ্যক্ষ রয়েছেন, রয়েছেন দপ্তর সম্পাদক। অপিস না থাকায় তাদের কাজও থাকে না। তাহলে এসব পদের কি দরকার? তাছাড়া অফিস না থাকায় দলগুলোর আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছ হিসাবও নেই কারো কাছে।
এদিকে হোটেল-রেস্তোরায় রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সভা-সমাবেশ আয়োজিত হওয়ায় ব্যবসায় লাভের চেয়ে না অসুবিধাই হচ্ছে বেশী। এমন তথ্য জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায়ী বলেন, অনেক সময় রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা ঘন্টার ঘন্টা চেয়ার-টেবিল দখল করে রাজনৈতিক আলোচনায় ব্যস্ত থাকেন, উচ্চস্বরে কথা বলেন। এতে আশপাশের ক্রেতারা বিব্রত ও নাখোশ হন। আবার অনেক দলের পক্ষ থেকে হল ভাড়া নিয়ে সভা-সমাবেশ আয়োজন করার পর সেখানে দেখা দেয় গন্ডগোল। এমনকি হাতাতির মত ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কখনো কখনো পুলিশ পর্যন্ত ডাকতে হয়। আবার অনুষ্ঠান শেষে হলভাড়াসহ খাবারের মূল্য পরিশোধ নিয়েও চলে নানা দেন-দরবার, যা রীতিমত বিব্রতকর। এমতাবস্থায় কোন কোন হোটেল কর্তৃপক্ষ দেয়ালে দেয়ালে টাঙ্গিয়েছেন ‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ নিষেধ, ধন্যবাদ-কর্তৃপক্ষ’, ‘আস্তে কথা বলুন’ প্রভৃতি স্টীকার।
নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাপা, জাসদ-এর কোন অফিস না থাকলেও মিসবাহ আহমেদ ও ফরিদ আলম নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের অফিস রয়েছে জ্যামাইকায়। অফিসটি সুসজ্জিত। এই অফিস থেকেই যুবলীগের সংগঠনক সভা-সমাবেশ পরিচালিত হচ্ছে। অপরদিকে তারিকুল হায়দার চৌধুরী ও বাহার খন্দকার সবুজ নেতৃত্বাধীন যুবলীগের পক্ষ থেকে সম্প্রতি জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউতে অফিস ভাড়া নেয়া হয়েছে। কয়েক বছর পূর্বে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র থিঙ্ক ট্যাঙ্ক হিসেবে গড়ে উঠা আইবিএনপি প্রতিষ্ঠার পর বাংলাদেশ সোসাইটি ইন্্ক নিউইয়র্কের ভবনের বেসমেন্ট ভাড়া করে সেখানে লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হলেও কয়েক মাস পর সেই অফিসটি আর ঠিকে থাকেনি। বর্তমানে আইবিএনপি’র কার্মকান্ড নেই বললেই চলে। এছাড়া বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী সাবেক ছাত্রনেতাদের সংগঠন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী ফোরাম ইউএসএ’র পক্ষ থেকেও অফিস নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হলেও সেটিও সম্ভব হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
AL Logoযুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অফিস সম্পর্কে দলের সভাপতি ড.সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। শুধু যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগই নয়, কোন রাজনৈতিক দলেরই অফিস নেই। তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে অফিস নেয়ার পক্ষে এবং উদ্যোগও নিয়েছিলোম, কিন্তু বিভিন্ন কারণে সফল হতে পারিনি। তিনি বলেন, দলের নিজস্ব অফিস থাকলে ভাড়ার খরচ দরকার, দরকার অফিস বেয়ারার, দরকার অফিস সামগ্রী। আর এজন্য প্রয়োজন মোট অংকের অর্থ। আমরা কাজের ফাঁকে মনের তাগিদে দল করি। আমাদের বাসা-বাড়ীই দলের ঠিকানা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। দলের কর্মকান্ড পরিচালিত হয় নেতা-কর্মীদের অনুদানে। তবে ভবিষ্যতে অফিসের ব্যাপারটি বিশেষ বিবেচনা করা হবে বলে তিনি জানান।
BNP Logoযুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র অফিস সম্পর্কে সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ সম্রাট বলেন, সত্যি কথা বলতে আমাদের সুনির্দিষ্ট কোন অফিস নেই। তবে সঙ্গত কারণেই দলের অফিস থাকা জরুরী। দলের অফিস থাকলে নেতা-কর্মীদের যোগাযোগ সহজ হয়, সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি না দলীয় কোন্দল, পাল্টাপাল্টি, কোন্দল, উপ কোন্দল প্রভৃতি কারণে অফিস নেয়া সম্ভব হয়নি। আবার বাংলাদেশের মতো দৈনন্দিন কোন কর্মকান্ড না থাকায় অফিসের বিষযটি তত গুরুত্ব পায়নি। তাছাড়া একটি অফিস মেইনটেইন করাও সহজ নয়। এজন্য দরকার সুনির্দিষ্ট আয়। যা আমাদের নেই। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায় অনেকে অফিস ভাড়া নিয়মিত দিতে চায় না। ফলে অফিস নেয়া সম্ভব হয়নি। যদিও দলের কর্মকান্ড চলে নেতা-কর্মীদের অনুদানে। তিনি মনে করেন, দলের নতুন কমিটি গঠিত হলে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র একটি নিজস্ব অফিস হবে। যেখানে আমরা নেতা-কর্মীরা বসে দলীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করতে পারবো।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লু বলেন, সবদিক বিবেচনায় দলীয় অফিস থাকা জরুরী। আমরা কয়েক বছর আগে ইস্ট এলমহার্স্টে একটি অফিস নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। সেখানে গবেষণার জন্য লাইব্রেরীও চালু করা হয়েছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে সেই উদ্যোগের সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত ছিলেন তাদের অনেকেই পরবর্তী কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত না থাকায় তারাও নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় আর সেই সময়ের কমিটিও অফিসটি ধরে রাখতে পারেনি। তিনি বলেন, আমরা আবার নতুন করে অফিস নেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছি। জ্যাকসন হাইটস এলাকায় স্বল্প মূল্যে অফিস নেয়ার কথা হচ্ছে। তবে দলের নতুন কমিটি না হওয়া পর্যন্ত নানা কারণেই দলের নিজস্ব অফিস নেয়া সম্ভব হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
দলীয় অফিস সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র সাবেক সহ সভাপতি সামসুল ইসলাম মজনু বলেন, সুষ্ঠুভাবে সংগঠন পরিচালনায় অফিস থাকা জরুরী ও গুরুত্বপূর্ণ। নিজস্ব অফিস থাকলে দলীয় কর্মকান্ড, দলের সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হয়। ইতিপূর্বে আইবিএনপি ও জাতীয়তাবাদী ফোরামের পক্ষ থেকে অফিস নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হলেও কার্যত তা সফল হয়নি। ফলে এখানে-সেখানে, হোটেল-রেঁস্তোরায় আমাদেরকে সভা, বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। এতে দলের ভিতরের অনেক কথা বাইরে চলে আসছে। তিনি মনে করেন, সবাই উদ্যোগ নিলে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র অফিস নেয়া কঠিন কাজ নয়। শুধু সদিচ্ছা দরকার। তিনি মনে করেন নতুন কমিটি গঠিত হলে এব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হবে।
jatiya-partyযুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব চৌধুরী চান্দু বলেন, আমাদের নিজস্ব অফিস না থাকলেও দলের অন্যতম উপদেষ্টার গিয়াস মজুমদারের অফিসেই আমরা নিজেদের সভা করে থাকি। বড় ধরণের অনুষ্ঠান হোটেল-রেষ্টুরেন্টে করে থাকি। তবে নিজস্ব অফিস থাকলে দলের কর্মকান্ড পরিচালনা অনেক ভালো হতো, দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যেও নিয়সিত যোগাযোগ বৃদ্ধি পেতো।
Jatiyo_Samajtantrik_Dal_Logoযুক্তরাষ্ট্র জাসদ-এর সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম জিকু বলেন, এটা সত্য যে যুক্তরাষ্ট্র জাসদ-এর কোন অফিস নেই। তাছাড়া একটি অফিস ‘মেইনটেইন করাও এক্সপেনসিভ’ বটে। তবে যেকোন দল বা সংগঠনের অফিস থাকা ভালো। নিজস্ব অফিস থাকলে সংগঠন পরিচালনা সহজতর হয়। তিনি বলেন, নানা কারণেই আমাদের অফিস নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে দলের কর্মকান্ড পিছিয়ে নেই। দেশীয় হোটেল রেষ্টুরেন্টে আমাদের সভা-সমাবেশ হচ্ছে। তবে সবাই চাইলে অফিস নেয়া অসম্ভব কিছু নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

অফিস ছাড়াই চলছে দলীয় কর্মকান্ড : নানা সমস্যা

প্রকাশের সময় : ০৪:৩৭:৩২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ ডিসেম্বর ২০১৪

নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের প্রধান চারটি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় পার্টি (জাপা) ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর শাখা থাকলেও নেই কোন দলের অফিস। নেই দলগুলোর অঙ্গ সংগঠনগুলোর অফিসও। দলগুলোর দপ্তর সম্পাদক থাকলেও কার্যত দপ্তর সম্পাদকদের কোন কাজ নেই অফিস না থাকার কারণে। এনিয়ে নেই কারো কোন মাথাব্যথা। অফিস ছাড়াই দলীয় কর্মকান্ড চললেও দলের নেতা-কর্মীদের বসার কোন জায়গা নেই। ফলে এখানে-সেখানে, হোটেল-রেস্তোরায় বসেই মূলত: দলের সভা-সমাবেশ করতে হচ্ছে দলগুলোকে। নানা সমস্যাও হচ্ছে দলের কর্মকান্ড পরিচালনায়। এদিকে বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরায় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের সভা-সমাবেশ, বৈঠকের ফলে সংশ্লিষ্টদের ব্যবসার চেয়ে বিব্রতই হতে হয় বেশী। কখনো কখনো অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে এসব সভা-সমাবেশ, বৈঠকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক সময় পুলিশের সাহায্য পর্যন্ত নিতে হয়। সব মিলিয়ে জরুরী হয়ে পড়েছে দলগুলোর নিজস্ব অফিস।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাপা ও জাসদের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের দাবীও দলের নিজস্ব অফিস। তারা বলেন, দলের নিজস্ব অফিস থাকলে দল পরিচালনা যেমন সহজ হবে, তেমনি দলের মধ্যে সাংগঠনিক শৃঙ্খলাও বজায় থাকবে। সেই সাথে বাড়বে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যকার সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি আর ভ্রাতৃত্ববোধ। তারা বলেন, দলের কর্মকান্ড পরিচালনায় হাজার হাজার ডলার খরচ হচ্ছে, নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় কেউ কেউ হাজার হাজার ডলার ব্যয় করছেন। অথচ দলের অফিসের ব্যাপারে নেতাদের কারো কোন মাথাব্যথা নেই। তারা মনে করেন দলের নেতা-কর্মীদের চাঁদা বা অনুদানে দলের কর্মকান্ড পরিচালিত হয়ে থাকে। সেই অর্থের আংশিক যদি অফিসের জন্য ব্যয় করা হয় তাহলেই তো নিজস্ব অফিস পরিচালনা করা যায়। আর নিজস্ব অফিস থাকলে দলীয় কর্মকান্ড পরিচালনায় স্বচ্ছতার পাশাপাশি দলীয় ‘গোপনীয়তা’ও  রক্ষা করা অনেকাংশে সম্ভব হবে। তাদের দাবী যেহেতু নিউইয়র্ক কেন্দ্রীক দলগুলোর রাজনীতি তাই নিউইয়র্কের কোন ভবনের বেসমেন্ট অথবা কোন ভবন ক্রয় করে দলের নিজস্ব অফিস হতে পারে। তারা আরো বলেন, প্রত্যেক দলের কোষাধ্যক্ষ রয়েছেন, রয়েছেন দপ্তর সম্পাদক। অপিস না থাকায় তাদের কাজও থাকে না। তাহলে এসব পদের কি দরকার? তাছাড়া অফিস না থাকায় দলগুলোর আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছ হিসাবও নেই কারো কাছে।
এদিকে হোটেল-রেস্তোরায় রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সভা-সমাবেশ আয়োজিত হওয়ায় ব্যবসায় লাভের চেয়ে না অসুবিধাই হচ্ছে বেশী। এমন তথ্য জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায়ী বলেন, অনেক সময় রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা ঘন্টার ঘন্টা চেয়ার-টেবিল দখল করে রাজনৈতিক আলোচনায় ব্যস্ত থাকেন, উচ্চস্বরে কথা বলেন। এতে আশপাশের ক্রেতারা বিব্রত ও নাখোশ হন। আবার অনেক দলের পক্ষ থেকে হল ভাড়া নিয়ে সভা-সমাবেশ আয়োজন করার পর সেখানে দেখা দেয় গন্ডগোল। এমনকি হাতাতির মত ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কখনো কখনো পুলিশ পর্যন্ত ডাকতে হয়। আবার অনুষ্ঠান শেষে হলভাড়াসহ খাবারের মূল্য পরিশোধ নিয়েও চলে নানা দেন-দরবার, যা রীতিমত বিব্রতকর। এমতাবস্থায় কোন কোন হোটেল কর্তৃপক্ষ দেয়ালে দেয়ালে টাঙ্গিয়েছেন ‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ নিষেধ, ধন্যবাদ-কর্তৃপক্ষ’, ‘আস্তে কথা বলুন’ প্রভৃতি স্টীকার।
নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাপা, জাসদ-এর কোন অফিস না থাকলেও মিসবাহ আহমেদ ও ফরিদ আলম নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের অফিস রয়েছে জ্যামাইকায়। অফিসটি সুসজ্জিত। এই অফিস থেকেই যুবলীগের সংগঠনক সভা-সমাবেশ পরিচালিত হচ্ছে। অপরদিকে তারিকুল হায়দার চৌধুরী ও বাহার খন্দকার সবুজ নেতৃত্বাধীন যুবলীগের পক্ষ থেকে সম্প্রতি জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউতে অফিস ভাড়া নেয়া হয়েছে। কয়েক বছর পূর্বে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র থিঙ্ক ট্যাঙ্ক হিসেবে গড়ে উঠা আইবিএনপি প্রতিষ্ঠার পর বাংলাদেশ সোসাইটি ইন্্ক নিউইয়র্কের ভবনের বেসমেন্ট ভাড়া করে সেখানে লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হলেও কয়েক মাস পর সেই অফিসটি আর ঠিকে থাকেনি। বর্তমানে আইবিএনপি’র কার্মকান্ড নেই বললেই চলে। এছাড়া বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী সাবেক ছাত্রনেতাদের সংগঠন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী ফোরাম ইউএসএ’র পক্ষ থেকেও অফিস নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হলেও সেটিও সম্ভব হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
AL Logoযুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অফিস সম্পর্কে দলের সভাপতি ড.সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। শুধু যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগই নয়, কোন রাজনৈতিক দলেরই অফিস নেই। তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে অফিস নেয়ার পক্ষে এবং উদ্যোগও নিয়েছিলোম, কিন্তু বিভিন্ন কারণে সফল হতে পারিনি। তিনি বলেন, দলের নিজস্ব অফিস থাকলে ভাড়ার খরচ দরকার, দরকার অফিস বেয়ারার, দরকার অফিস সামগ্রী। আর এজন্য প্রয়োজন মোট অংকের অর্থ। আমরা কাজের ফাঁকে মনের তাগিদে দল করি। আমাদের বাসা-বাড়ীই দলের ঠিকানা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। দলের কর্মকান্ড পরিচালিত হয় নেতা-কর্মীদের অনুদানে। তবে ভবিষ্যতে অফিসের ব্যাপারটি বিশেষ বিবেচনা করা হবে বলে তিনি জানান।
BNP Logoযুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র অফিস সম্পর্কে সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ সম্রাট বলেন, সত্যি কথা বলতে আমাদের সুনির্দিষ্ট কোন অফিস নেই। তবে সঙ্গত কারণেই দলের অফিস থাকা জরুরী। দলের অফিস থাকলে নেতা-কর্মীদের যোগাযোগ সহজ হয়, সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি না দলীয় কোন্দল, পাল্টাপাল্টি, কোন্দল, উপ কোন্দল প্রভৃতি কারণে অফিস নেয়া সম্ভব হয়নি। আবার বাংলাদেশের মতো দৈনন্দিন কোন কর্মকান্ড না থাকায় অফিসের বিষযটি তত গুরুত্ব পায়নি। তাছাড়া একটি অফিস মেইনটেইন করাও সহজ নয়। এজন্য দরকার সুনির্দিষ্ট আয়। যা আমাদের নেই। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায় অনেকে অফিস ভাড়া নিয়মিত দিতে চায় না। ফলে অফিস নেয়া সম্ভব হয়নি। যদিও দলের কর্মকান্ড চলে নেতা-কর্মীদের অনুদানে। তিনি মনে করেন, দলের নতুন কমিটি গঠিত হলে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র একটি নিজস্ব অফিস হবে। যেখানে আমরা নেতা-কর্মীরা বসে দলীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করতে পারবো।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লু বলেন, সবদিক বিবেচনায় দলীয় অফিস থাকা জরুরী। আমরা কয়েক বছর আগে ইস্ট এলমহার্স্টে একটি অফিস নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। সেখানে গবেষণার জন্য লাইব্রেরীও চালু করা হয়েছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে সেই উদ্যোগের সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত ছিলেন তাদের অনেকেই পরবর্তী কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত না থাকায় তারাও নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় আর সেই সময়ের কমিটিও অফিসটি ধরে রাখতে পারেনি। তিনি বলেন, আমরা আবার নতুন করে অফিস নেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছি। জ্যাকসন হাইটস এলাকায় স্বল্প মূল্যে অফিস নেয়ার কথা হচ্ছে। তবে দলের নতুন কমিটি না হওয়া পর্যন্ত নানা কারণেই দলের নিজস্ব অফিস নেয়া সম্ভব হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
দলীয় অফিস সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র সাবেক সহ সভাপতি সামসুল ইসলাম মজনু বলেন, সুষ্ঠুভাবে সংগঠন পরিচালনায় অফিস থাকা জরুরী ও গুরুত্বপূর্ণ। নিজস্ব অফিস থাকলে দলীয় কর্মকান্ড, দলের সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হয়। ইতিপূর্বে আইবিএনপি ও জাতীয়তাবাদী ফোরামের পক্ষ থেকে অফিস নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হলেও কার্যত তা সফল হয়নি। ফলে এখানে-সেখানে, হোটেল-রেঁস্তোরায় আমাদেরকে সভা, বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। এতে দলের ভিতরের অনেক কথা বাইরে চলে আসছে। তিনি মনে করেন, সবাই উদ্যোগ নিলে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র অফিস নেয়া কঠিন কাজ নয়। শুধু সদিচ্ছা দরকার। তিনি মনে করেন নতুন কমিটি গঠিত হলে এব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হবে।
jatiya-partyযুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব চৌধুরী চান্দু বলেন, আমাদের নিজস্ব অফিস না থাকলেও দলের অন্যতম উপদেষ্টার গিয়াস মজুমদারের অফিসেই আমরা নিজেদের সভা করে থাকি। বড় ধরণের অনুষ্ঠান হোটেল-রেষ্টুরেন্টে করে থাকি। তবে নিজস্ব অফিস থাকলে দলের কর্মকান্ড পরিচালনা অনেক ভালো হতো, দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যেও নিয়সিত যোগাযোগ বৃদ্ধি পেতো।
Jatiyo_Samajtantrik_Dal_Logoযুক্তরাষ্ট্র জাসদ-এর সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম জিকু বলেন, এটা সত্য যে যুক্তরাষ্ট্র জাসদ-এর কোন অফিস নেই। তাছাড়া একটি অফিস ‘মেইনটেইন করাও এক্সপেনসিভ’ বটে। তবে যেকোন দল বা সংগঠনের অফিস থাকা ভালো। নিজস্ব অফিস থাকলে সংগঠন পরিচালনা সহজতর হয়। তিনি বলেন, নানা কারণেই আমাদের অফিস নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে দলের কর্মকান্ড পিছিয়ে নেই। দেশীয় হোটেল রেষ্টুরেন্টে আমাদের সভা-সমাবেশ হচ্ছে। তবে সবাই চাইলে অফিস নেয়া অসম্ভব কিছু নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।