নিউইয়র্ক ১১:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৮ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

ওসমানী উদ্যানের ‘রাগ ভাঙতে’ আর কত দেরি

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০১:২৭:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ৫০ বার পঠিত

২০১৭ সালের শেষের দিকের কথা; খুব আয়োজন করে রাজধানীর ফুসফুস হিসেবে খ্যাত ওসমানী উদ্যানের সংস্কারকাজ শুরু হয়। ২০১৮ সালের শুরুর দিকে ওসমানী উদ্যানে জনসাধারণের প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। অস্থায়ী প্রাচীরে ঘিরে ফেলা হয় চারিদিক। উদ্যানটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অধীন। ওই সময় সংস্থাটির মেয়র ছিলেন সাঈদ খোকন।

উদ্বোধনের সময় তিনি কথা দিয়েছিলেন, ১০ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে উদ্যানটি।সাঈদ খোকন উদ্যানটির নাম পরিবর্তন করেন। ২০১৮ সালে নতুন করে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরুর আগে এর নাম ঠিক করা হয়েছিল ‘গোস্সা নিবারণী পার্ক’। সহজ ভাষায় ‘রাগ ভাঙানোর পার্ক’। এরপর মেয়রের দায়িত্বে আসেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তার সময়েও উদ্যানটির উন্নয়নের কাজ চলেছে। গত বছরে তিনি অপসারিত হন। দক্ষিণ সিটির দায়িত্বে বসানো হয় নতুন প্রশাসক। বর্তমানেও উদ্যানটির উন্নয়নকাজ চলছে। স্থানীয়রা বলছেন, ‘সাত বছর পার হলেও ‍রাগ ভাঙেনি পার্কটির।’ তাদের প্রশ্ন, ‘কবে ভাঙবে পার্কটির রাগ?’ রাজধানীর গুলিস্তান সংলগ্ন আর সচিবালয়ের প্রধান ফটক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয়ের (নগর ভবন) ঠিক উল্টো দিকে অবস্থিত ওসমানী উদ্যান। যা সাত বছর ধরে টিন আর কংক্রিটের তৈরি প্রাচীরে আবদ্ধ। কেউ এটি ব্যবহার করতে পারছেন না। তবে, উদ্যানটির সংস্কারের গল্প এমন ছিল না। সে সময় উদ্যানটির অভিভাবক ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন থেকে বলা হয়েছিল, উদ্যানটির নাম হবে ‘গোস্সা নিবারণী পার্ক’।

বলা হয়েছিল, এ পার্কে আগতদের মন ভালো করতে, উৎফুল্ল রাখতে এখানে থাকবে জলাধার, চা, কফি ও স্যান্ডউইচ খাওয়ার ব্যবস্থা। খেলা দেখার জন্য পার্কের ভেতরে থাকবে বড় কয়েকটি টিভি স্ক্রিন। ভেতরে ঢুকতেই পার্কটির জলাধারের পাশ থেকে পুরোনো দিনের গান ভেসে আসবে। শোনা যাবে নতুন দিনের নানা সংগীতও, যা মনকে সতেজ করবে। অর্থাৎ পার্কটিতে ঢুকলে মানুষের গোস্সা বা রাগ ভালো হয়ে যাবে, মন হবে উৎফুল্ল।

প্রায় ২৪ একর জায়গার ওপর পার্কটির উন্নয়নকাজ চলমান। প্রথমে এর নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৯০ কোটি টাকা। পরে মেয়র তাপস এসে ওসমানী উদ্যানের নাম পরিবর্তন করে ‘গোস্সা নিবারণী পার্ক’ রাখার বিরোধিতা করেন। সিদ্ধান্ত হয় আগের নামই থাকবে। ওসমানী উদ্যানের অবকাঠামো উন্নয়নের নামে গত সাত বছরে প্রায় ৭৮ কোটি টাকা খরচ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। সেখানে আরও ৩০ কোটি টাকা খরচের পরিকল্পনা রয়েছে। সবমিলিয়ে ওসমানী উদ্যানের উন্নয়নে ১০৮ কোটি টাকা ব্যয় হবে । সিটি কর্পোরেশন এটির উন্নয়নের নামে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ করে রেখেছে। আমরা এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে পার্কটি দ্রুত খুলে দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকবার সিটি কর্পোরেশনকে জানিয়েছি। কিন্তু তারা বারবার বলছে, উদ্যানটির উন্নয়নকাজ চলছে। কাজ শেষ হলেই খুলে দেওয়া হবে। সাত বছরেও ‍রাগ ভাঙেনি পার্কটির। কবে ভাঙবে রাগ?

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ওসমানী উদ্যানের উন্নয়ন কাজ এখনও চলমান। দ্রুতই এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। সেখানে থাকছে নগর জাদুঘর, একটি পাঠাগার, নির্দিষ্ট জায়গায় একাধিক খাবারের দোকান, গাড়ি রাখার স্থান, ব্যায়ামাগার, শিশুদের খেলার জায়গা, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, টেবিল টেনিস ও বিলিয়ার্ড খেলার ব্যবস্থা। এ ছাড়া থাকছে এটিএম বুথ ও ওষুধের দোকান। এখন লেকের পাড় উন্নয়ন, ঘাট তৈরি, মাঠ উন্নয়ন ও বিদ্যুতের উপকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে।

ওসমানী উদ্যানের কাছাকাছি নাজিম উদ্দিন সড়কের স্থায়ী বাসিন্দা মুকিদুর রহমান। অবসরপ্রাপ্ত এ কর্মকর্তা বলেন, আগে এটি সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। তখন আমরা নিয়মিত সেখানে গিয়ে প্রাতর্ভ্রমণ করতাম। বিকেলে বাচ্চারা খেলাধুলা ও দৌড়াদৌড়ি করত। কিন্তু অনেক বছর হলো ওসমানী উদ্যান বন্ধ করে রাখা হয়েছে। একজন নাগরিক হিসেবে, স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে আমরা পার্কটি ব্যবহার করতে পারছি না। সিটি কর্পোরেশন এটির উন্নয়নের নামে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ করে রেখেছে। আমরা এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে পার্কটি দ্রুত খুলে দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকবার সিটি কর্পোরেশনকে জানিয়েছি। কিন্তু তারা বারবার বলছে, উদ্যানটির উন্নয়নকাজ চলছে। কাজ শেষ হলেই খুলে দেওয়া হবে। ‘সাত বছরেও ‍রাগ ভাঙেনি পার্কটির। কবে ভাঙবে রাগ’— প্রশ্ন রাখেন মুকিদুর রহমান। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই দায়ী। তারা কাজ শুরু করতে দেরি করেছে। এ ছাড়া নানা অভিযোগ ছিল প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। পরে ওই ঠিকাদারকে বাদ দিয়ে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারাও কাজ করতে দেরি করেছে। এখন দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই এটির কাজ শেষ হবে এবং সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে দায়িত্বপ্রাপ্ত এক প্রকৌশলী, ওসমানী উদ্যানের সামনে দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন ব্যবসায়ী শহীদ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আগে যাওয়া-আসার সময় এ উদ্যানে নিয়মিত বসতাম, হাঁটতাম। আমার মতো হাজার হাজার পথচারী উদ্যানে ঢুকে বিশ্রাম নিত, নির্মল বাতাস গ্রহণ করত। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এটির উন্নয়নের নামে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। পার্কটির চারিদিকে রঙিন টিন দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। গেটগুলোতে তালা ঝুলানো থাকে সবসময়। চলতি পথে ইচ্ছা থাকলেও পার্কটিতে ঢুকতে পারি না আমরা। ক্লান্ত পথচারীরা এখানে এসে বিশ্রাম নিতেন। বয়স্করা ভোরে পার্কটিতে হাঁটাহাঁটি করতেন, বাচ্চারা খেলাধুলা করত। অথচ ছয়-সাত বছর ধরে পার্কটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে।সার্বিক বিষয় নিয়ে উদ্যানটির প্রকল্প পরিচালক খায়রুল বাকের বলেন, নানা কারণে উদ্যানটির উন্নয়নকাজ শেষ করা যায়নি। দীর্ঘ সময় লেগে গেছে। এখন দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব কাজ শেষ করে এটি উন্মুক্ত করে দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। আশা করা যায়, আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।

কাজে এত ধীরগতি কেন— জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের দায়িত্বে থাকা এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মূলত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই দায়ী। তারা কাজ শুরু করতে দেরি করেছে। এ ছাড়া নানা অভিযোগ ছিল প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। পরে ওই ঠিকাদারকে বাদ দিয়ে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারাও কাজ করতে দেরি করেছে। এখন দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই এটির কাজ শেষ হবে এবং সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘রাজধানীতে পার্ক, উদ্যান, খেলার মাঠের এমনিতেই সংকট। এর মধ্যে যেগুলো আছে সেগুলোতে কংক্রিটের ব্যবহার করে, উন্নয়ন অবকাঠামো তৈরি করে আসল রূপ নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। ওসমানী উদ্যান সাধারণ মানুষের সম্পত্তি। উন্নয়নের নামে এটি এত দিন বন্ধ করে রাখা অন্যায়। উন্নয়নকাজ শেষ করতে এত বছর কেন লাগল, এত টাকা কেন ব্যয় হলো— এসব বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। অন্যদিকে, সিটি কর্পোরেশনের উচিত দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে সর্বসাধারণের জন্য এটি উন্মুক্ত করে দেওয়া। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয়ের (নগর ভবন) ঠিক উল্টো দিকে এবং সচিবালয় সংলগ্ন ২৪ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত ওসমানী উদ্যান। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানীর নামে উদ্যানটির নামকরণ করা হয়। এখানে রয়েছে সবুজ গাছগাছালি, ছায়ায় ঘেরা নিরিবিলি পরিবেশ; আছে দুটি জলাশয়।

পরিবেশ নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনগুলোর মতে, কোনো পার্ক বা উদ্যানে পাঁচ শতাংশের বেশি অবকাঠামো নির্মাণ করা যায় না। কিন্তু ওসমানী উদ্যানে ২৩ শতাংশের বেশি অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে উদ্যানটির আসল রূপ নষ্ট হতে পারে। সূত্র : ঢাকা পোস্ট।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

ওসমানী উদ্যানের ‘রাগ ভাঙতে’ আর কত দেরি

প্রকাশের সময় : ০১:২৭:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫

২০১৭ সালের শেষের দিকের কথা; খুব আয়োজন করে রাজধানীর ফুসফুস হিসেবে খ্যাত ওসমানী উদ্যানের সংস্কারকাজ শুরু হয়। ২০১৮ সালের শুরুর দিকে ওসমানী উদ্যানে জনসাধারণের প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। অস্থায়ী প্রাচীরে ঘিরে ফেলা হয় চারিদিক। উদ্যানটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অধীন। ওই সময় সংস্থাটির মেয়র ছিলেন সাঈদ খোকন।

উদ্বোধনের সময় তিনি কথা দিয়েছিলেন, ১০ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে উদ্যানটি।সাঈদ খোকন উদ্যানটির নাম পরিবর্তন করেন। ২০১৮ সালে নতুন করে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরুর আগে এর নাম ঠিক করা হয়েছিল ‘গোস্সা নিবারণী পার্ক’। সহজ ভাষায় ‘রাগ ভাঙানোর পার্ক’। এরপর মেয়রের দায়িত্বে আসেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তার সময়েও উদ্যানটির উন্নয়নের কাজ চলেছে। গত বছরে তিনি অপসারিত হন। দক্ষিণ সিটির দায়িত্বে বসানো হয় নতুন প্রশাসক। বর্তমানেও উদ্যানটির উন্নয়নকাজ চলছে। স্থানীয়রা বলছেন, ‘সাত বছর পার হলেও ‍রাগ ভাঙেনি পার্কটির।’ তাদের প্রশ্ন, ‘কবে ভাঙবে পার্কটির রাগ?’ রাজধানীর গুলিস্তান সংলগ্ন আর সচিবালয়ের প্রধান ফটক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয়ের (নগর ভবন) ঠিক উল্টো দিকে অবস্থিত ওসমানী উদ্যান। যা সাত বছর ধরে টিন আর কংক্রিটের তৈরি প্রাচীরে আবদ্ধ। কেউ এটি ব্যবহার করতে পারছেন না। তবে, উদ্যানটির সংস্কারের গল্প এমন ছিল না। সে সময় উদ্যানটির অভিভাবক ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন থেকে বলা হয়েছিল, উদ্যানটির নাম হবে ‘গোস্সা নিবারণী পার্ক’।

বলা হয়েছিল, এ পার্কে আগতদের মন ভালো করতে, উৎফুল্ল রাখতে এখানে থাকবে জলাধার, চা, কফি ও স্যান্ডউইচ খাওয়ার ব্যবস্থা। খেলা দেখার জন্য পার্কের ভেতরে থাকবে বড় কয়েকটি টিভি স্ক্রিন। ভেতরে ঢুকতেই পার্কটির জলাধারের পাশ থেকে পুরোনো দিনের গান ভেসে আসবে। শোনা যাবে নতুন দিনের নানা সংগীতও, যা মনকে সতেজ করবে। অর্থাৎ পার্কটিতে ঢুকলে মানুষের গোস্সা বা রাগ ভালো হয়ে যাবে, মন হবে উৎফুল্ল।

প্রায় ২৪ একর জায়গার ওপর পার্কটির উন্নয়নকাজ চলমান। প্রথমে এর নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৯০ কোটি টাকা। পরে মেয়র তাপস এসে ওসমানী উদ্যানের নাম পরিবর্তন করে ‘গোস্সা নিবারণী পার্ক’ রাখার বিরোধিতা করেন। সিদ্ধান্ত হয় আগের নামই থাকবে। ওসমানী উদ্যানের অবকাঠামো উন্নয়নের নামে গত সাত বছরে প্রায় ৭৮ কোটি টাকা খরচ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। সেখানে আরও ৩০ কোটি টাকা খরচের পরিকল্পনা রয়েছে। সবমিলিয়ে ওসমানী উদ্যানের উন্নয়নে ১০৮ কোটি টাকা ব্যয় হবে । সিটি কর্পোরেশন এটির উন্নয়নের নামে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ করে রেখেছে। আমরা এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে পার্কটি দ্রুত খুলে দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকবার সিটি কর্পোরেশনকে জানিয়েছি। কিন্তু তারা বারবার বলছে, উদ্যানটির উন্নয়নকাজ চলছে। কাজ শেষ হলেই খুলে দেওয়া হবে। সাত বছরেও ‍রাগ ভাঙেনি পার্কটির। কবে ভাঙবে রাগ?

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ওসমানী উদ্যানের উন্নয়ন কাজ এখনও চলমান। দ্রুতই এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। সেখানে থাকছে নগর জাদুঘর, একটি পাঠাগার, নির্দিষ্ট জায়গায় একাধিক খাবারের দোকান, গাড়ি রাখার স্থান, ব্যায়ামাগার, শিশুদের খেলার জায়গা, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, টেবিল টেনিস ও বিলিয়ার্ড খেলার ব্যবস্থা। এ ছাড়া থাকছে এটিএম বুথ ও ওষুধের দোকান। এখন লেকের পাড় উন্নয়ন, ঘাট তৈরি, মাঠ উন্নয়ন ও বিদ্যুতের উপকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে।

ওসমানী উদ্যানের কাছাকাছি নাজিম উদ্দিন সড়কের স্থায়ী বাসিন্দা মুকিদুর রহমান। অবসরপ্রাপ্ত এ কর্মকর্তা বলেন, আগে এটি সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। তখন আমরা নিয়মিত সেখানে গিয়ে প্রাতর্ভ্রমণ করতাম। বিকেলে বাচ্চারা খেলাধুলা ও দৌড়াদৌড়ি করত। কিন্তু অনেক বছর হলো ওসমানী উদ্যান বন্ধ করে রাখা হয়েছে। একজন নাগরিক হিসেবে, স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে আমরা পার্কটি ব্যবহার করতে পারছি না। সিটি কর্পোরেশন এটির উন্নয়নের নামে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ করে রেখেছে। আমরা এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে পার্কটি দ্রুত খুলে দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকবার সিটি কর্পোরেশনকে জানিয়েছি। কিন্তু তারা বারবার বলছে, উদ্যানটির উন্নয়নকাজ চলছে। কাজ শেষ হলেই খুলে দেওয়া হবে। ‘সাত বছরেও ‍রাগ ভাঙেনি পার্কটির। কবে ভাঙবে রাগ’— প্রশ্ন রাখেন মুকিদুর রহমান। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই দায়ী। তারা কাজ শুরু করতে দেরি করেছে। এ ছাড়া নানা অভিযোগ ছিল প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। পরে ওই ঠিকাদারকে বাদ দিয়ে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারাও কাজ করতে দেরি করেছে। এখন দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই এটির কাজ শেষ হবে এবং সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে দায়িত্বপ্রাপ্ত এক প্রকৌশলী, ওসমানী উদ্যানের সামনে দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন ব্যবসায়ী শহীদ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আগে যাওয়া-আসার সময় এ উদ্যানে নিয়মিত বসতাম, হাঁটতাম। আমার মতো হাজার হাজার পথচারী উদ্যানে ঢুকে বিশ্রাম নিত, নির্মল বাতাস গ্রহণ করত। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এটির উন্নয়নের নামে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। পার্কটির চারিদিকে রঙিন টিন দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। গেটগুলোতে তালা ঝুলানো থাকে সবসময়। চলতি পথে ইচ্ছা থাকলেও পার্কটিতে ঢুকতে পারি না আমরা। ক্লান্ত পথচারীরা এখানে এসে বিশ্রাম নিতেন। বয়স্করা ভোরে পার্কটিতে হাঁটাহাঁটি করতেন, বাচ্চারা খেলাধুলা করত। অথচ ছয়-সাত বছর ধরে পার্কটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে।সার্বিক বিষয় নিয়ে উদ্যানটির প্রকল্প পরিচালক খায়রুল বাকের বলেন, নানা কারণে উদ্যানটির উন্নয়নকাজ শেষ করা যায়নি। দীর্ঘ সময় লেগে গেছে। এখন দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব কাজ শেষ করে এটি উন্মুক্ত করে দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। আশা করা যায়, আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।

কাজে এত ধীরগতি কেন— জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের দায়িত্বে থাকা এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মূলত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই দায়ী। তারা কাজ শুরু করতে দেরি করেছে। এ ছাড়া নানা অভিযোগ ছিল প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। পরে ওই ঠিকাদারকে বাদ দিয়ে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারাও কাজ করতে দেরি করেছে। এখন দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই এটির কাজ শেষ হবে এবং সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘রাজধানীতে পার্ক, উদ্যান, খেলার মাঠের এমনিতেই সংকট। এর মধ্যে যেগুলো আছে সেগুলোতে কংক্রিটের ব্যবহার করে, উন্নয়ন অবকাঠামো তৈরি করে আসল রূপ নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। ওসমানী উদ্যান সাধারণ মানুষের সম্পত্তি। উন্নয়নের নামে এটি এত দিন বন্ধ করে রাখা অন্যায়। উন্নয়নকাজ শেষ করতে এত বছর কেন লাগল, এত টাকা কেন ব্যয় হলো— এসব বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। অন্যদিকে, সিটি কর্পোরেশনের উচিত দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে সর্বসাধারণের জন্য এটি উন্মুক্ত করে দেওয়া। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয়ের (নগর ভবন) ঠিক উল্টো দিকে এবং সচিবালয় সংলগ্ন ২৪ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত ওসমানী উদ্যান। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানীর নামে উদ্যানটির নামকরণ করা হয়। এখানে রয়েছে সবুজ গাছগাছালি, ছায়ায় ঘেরা নিরিবিলি পরিবেশ; আছে দুটি জলাশয়।

পরিবেশ নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনগুলোর মতে, কোনো পার্ক বা উদ্যানে পাঁচ শতাংশের বেশি অবকাঠামো নির্মাণ করা যায় না। কিন্তু ওসমানী উদ্যানে ২৩ শতাংশের বেশি অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে উদ্যানটির আসল রূপ নষ্ট হতে পারে। সূত্র : ঢাকা পোস্ট।