নিউইয়র্ক ০৪:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

ঝুঁকিপূর্ণ ৪২ সরকারি ভবন ভাঙার নির্দেশনা মানছে না কেউ

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০২:২৭:৪০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ মার্চ ২০২৪
  • / ৫১ বার পঠিত

রাজধানী ঢাকাকে মৃত্যুপুরী, আতঙ্কের শহর, ঝুঁকিপূর্ণ নগরী, জীবন্ত বোমার অলিগলিসহ অনেক নামেই আখ্যা দেওয়া হয়েছে অতীতে। কারণ হিসেবে নিমতলীর আগুন, চুড়িহাট্টা, এফআর টাওয়ার, আরমানিটোলা, নারায়ণগঞ্জ সেজান জুস কারখানা, নিউমার্কেট, মগবাজার বিস্ফোরণ, সিদ্দিকবাজার, বঙ্গবাজার ট্র্যাজেডিসহ একের পর এক হৃদয় বিদারক ঘটনার সাক্ষী হতে হয়েছে রাজধানীর বাসিন্দাদের। সবশেষ এই তালিকায় যুক্ত হলো বেইলি রোড ট্র্যাজেডি। সেখানে ঝরেছে ৪৬ প্রাণ ও আহত শতাধিক। প্রতিটি ট্র্যাজেডির পর সংশ্লিষ্ট সবারই উচ্চকন্ঠে শোনা গেছে ঝুঁকিমুক্ত শহর গড়ার প্রতিশ্রুতি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আড়ালে চলে গেছে প্রতিটি ঘটনা। নতুন করে বড় ঘটনা ঘটলে আবার শুরু হয় আশার বাণী শোনানোর প্রতিযোগিতা।

রাজউকের আওতাধীন এলাকার ভবনগুলোর ওপর বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আরবান রেজিলিয়ান্স প্রকল্পের আওতায় ভূমিকম্পে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষিত ৪২টি সরকারি ভবন ভাঙতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। গত বছরের ১২ মার্চের ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয় তিন মাসের মধ্যে এসব ভবন না ভাঙলে রাজউক নিজ উদ্যোগে ভাঙবে। এরই মধ্যে প্রায় ১ বছর পার হয়ে গেলেও ঝুঁকিপূর্ণ একটি ভবনও ভাঙেননি কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান।

অতি ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ২০২৩ সালেরে ১২ মার্চ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি ভবন ভাঙার সুপারিশ করেছিল রাজউক। এই প্রতিষ্ঠানের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ ভবন, অর্থনীতি বিভাগ ভবন, কলা ভবনের দুটি অংশ। এই ভবনগুলোতে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করেন। মাঝে মধ্যে এসব ভবনের ক্লাসরুমের ওপরের ছাদ থেকে পলেস্তারা ও ইট খসে পড়ে। বিশেষ করে কলা ভবনের অবস্থা খুবই খারাপ। প্রায়ই ছাদ থেকে পলেস্তারাসহ ইট খুলে পড়ছে।

একইভাবে রাজধানীর শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) যে ভবনটিতে বসেন, সেটি অতি ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ ১৭ তলার ডি ব্লকও। বিএসএমএমইউর ‘এ’, ‘বি’ ও ‘ডি’ ব্লকের ভবনকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে সেগুলো খালি করতে নির্দেশ দেয় রাজউক। মে মাসে চিঠি দেওয়ার পর এখন পর্যন্ত বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলটিও ভাঙার সুপারিশ করেছিল রাজউক। পাশাপাশি জাবির পুরনো কলা ভবন, নতুন কলা ভবন, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবন এবং জাবি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবন মজবুতকরণের সুপারিশও করা হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে একাধিকবার চিঠি দিলেও কার্যকরী ব্যবস্থা নিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার টেকনোলজি ভবন, মাদরাসা বোর্ডের ভবন এবং শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের ভবনও ঝুঁকিতে রয়েছে। বারবার সতর্ক করার পরও কোনো সংস্থা কাজ করছে না ফলে রাজউক আবারও চিঠি দেয়। কিন্তু এরপরও টনক নড়ছে না প্রতিষ্ঠান প্রধানদের।

আরবান রেজিলিয়ান্স প্রকল্পের জরিপে এই প্রকল্পের আওতায় ৩ হাজার ২৫২টি ভবনের ওপর কাজ করার কথা রয়েছে। এর মধ্যে ২২৯টি ভবনের ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট (ডিআইএ) করা হয়। তাতে ১৮৭টি ভবনকে রেট্রোফিটিং করার পরামর্শ দেয় রাজউক। সেসব ভবনের মধ্যে ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির তিনটি, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের চারটি, মাদরাসা বোর্ডের ছয়টি, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ১০টি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ১৫৪টি ভবন রয়েছে। এ বিষয়ে কয়েকদফা চিঠি দিয়েও কাজ হয়নি। তাই চরম ঝুঁকি নিয়েই কাজ চলছে হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিদফতরের কাজ।

অতি ঝুঁকিপূর্ণ ৪২ সরকারি ভবন ভাঙার নির্দেশনা মানছে না কেন এবং এই ক্ষেত্রে রাজউকের করণীয় কী জানতে চাইলে রাজউকের উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ সদস্য মোহাম্মদ আবদুল আহাদ বলেন, ‘রাজধানীর কোনো ভবনে, ‘কোনো দুর্ঘটনা হলেই এর দোষ পরে রাজউকের ওপর। অবশ্যই রাজউকের দেখভালের দায়িত্ব বেশি। কিন্তু যারা নিরাপত্তার জন্য অন্যান্য ছাড়পত্র দেন, যেমন বিদ্যুৎ ও পানিসহ প্রায় এক ডজন সংস্থা। তাদেরও ওই সকল ভবনে নিরাপত্তার বিকল্প ব্যবস্থা আছে কি না সেগুলো দেখা উচিত। অতি ঝুকিপূর্ণ ৪২টি ভবন ভাঙার বিষয়ে বারবার সতর্ক করে চিঠি আদান-প্রদান করার পরও কোনো সরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ থেকে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না যা খুবই দুঃখজনক।’ সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

ঝুঁকিপূর্ণ ৪২ সরকারি ভবন ভাঙার নির্দেশনা মানছে না কেউ

প্রকাশের সময় : ০২:২৭:৪০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ মার্চ ২০২৪

রাজধানী ঢাকাকে মৃত্যুপুরী, আতঙ্কের শহর, ঝুঁকিপূর্ণ নগরী, জীবন্ত বোমার অলিগলিসহ অনেক নামেই আখ্যা দেওয়া হয়েছে অতীতে। কারণ হিসেবে নিমতলীর আগুন, চুড়িহাট্টা, এফআর টাওয়ার, আরমানিটোলা, নারায়ণগঞ্জ সেজান জুস কারখানা, নিউমার্কেট, মগবাজার বিস্ফোরণ, সিদ্দিকবাজার, বঙ্গবাজার ট্র্যাজেডিসহ একের পর এক হৃদয় বিদারক ঘটনার সাক্ষী হতে হয়েছে রাজধানীর বাসিন্দাদের। সবশেষ এই তালিকায় যুক্ত হলো বেইলি রোড ট্র্যাজেডি। সেখানে ঝরেছে ৪৬ প্রাণ ও আহত শতাধিক। প্রতিটি ট্র্যাজেডির পর সংশ্লিষ্ট সবারই উচ্চকন্ঠে শোনা গেছে ঝুঁকিমুক্ত শহর গড়ার প্রতিশ্রুতি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আড়ালে চলে গেছে প্রতিটি ঘটনা। নতুন করে বড় ঘটনা ঘটলে আবার শুরু হয় আশার বাণী শোনানোর প্রতিযোগিতা।

রাজউকের আওতাধীন এলাকার ভবনগুলোর ওপর বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আরবান রেজিলিয়ান্স প্রকল্পের আওতায় ভূমিকম্পে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষিত ৪২টি সরকারি ভবন ভাঙতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। গত বছরের ১২ মার্চের ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয় তিন মাসের মধ্যে এসব ভবন না ভাঙলে রাজউক নিজ উদ্যোগে ভাঙবে। এরই মধ্যে প্রায় ১ বছর পার হয়ে গেলেও ঝুঁকিপূর্ণ একটি ভবনও ভাঙেননি কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান।

অতি ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ২০২৩ সালেরে ১২ মার্চ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি ভবন ভাঙার সুপারিশ করেছিল রাজউক। এই প্রতিষ্ঠানের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ ভবন, অর্থনীতি বিভাগ ভবন, কলা ভবনের দুটি অংশ। এই ভবনগুলোতে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করেন। মাঝে মধ্যে এসব ভবনের ক্লাসরুমের ওপরের ছাদ থেকে পলেস্তারা ও ইট খসে পড়ে। বিশেষ করে কলা ভবনের অবস্থা খুবই খারাপ। প্রায়ই ছাদ থেকে পলেস্তারাসহ ইট খুলে পড়ছে।

একইভাবে রাজধানীর শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) যে ভবনটিতে বসেন, সেটি অতি ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ ১৭ তলার ডি ব্লকও। বিএসএমএমইউর ‘এ’, ‘বি’ ও ‘ডি’ ব্লকের ভবনকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে সেগুলো খালি করতে নির্দেশ দেয় রাজউক। মে মাসে চিঠি দেওয়ার পর এখন পর্যন্ত বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলটিও ভাঙার সুপারিশ করেছিল রাজউক। পাশাপাশি জাবির পুরনো কলা ভবন, নতুন কলা ভবন, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবন এবং জাবি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবন মজবুতকরণের সুপারিশও করা হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে একাধিকবার চিঠি দিলেও কার্যকরী ব্যবস্থা নিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার টেকনোলজি ভবন, মাদরাসা বোর্ডের ভবন এবং শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের ভবনও ঝুঁকিতে রয়েছে। বারবার সতর্ক করার পরও কোনো সংস্থা কাজ করছে না ফলে রাজউক আবারও চিঠি দেয়। কিন্তু এরপরও টনক নড়ছে না প্রতিষ্ঠান প্রধানদের।

আরবান রেজিলিয়ান্স প্রকল্পের জরিপে এই প্রকল্পের আওতায় ৩ হাজার ২৫২টি ভবনের ওপর কাজ করার কথা রয়েছে। এর মধ্যে ২২৯টি ভবনের ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট (ডিআইএ) করা হয়। তাতে ১৮৭টি ভবনকে রেট্রোফিটিং করার পরামর্শ দেয় রাজউক। সেসব ভবনের মধ্যে ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির তিনটি, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের চারটি, মাদরাসা বোর্ডের ছয়টি, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ১০টি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ১৫৪টি ভবন রয়েছে। এ বিষয়ে কয়েকদফা চিঠি দিয়েও কাজ হয়নি। তাই চরম ঝুঁকি নিয়েই কাজ চলছে হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিদফতরের কাজ।

অতি ঝুঁকিপূর্ণ ৪২ সরকারি ভবন ভাঙার নির্দেশনা মানছে না কেন এবং এই ক্ষেত্রে রাজউকের করণীয় কী জানতে চাইলে রাজউকের উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ সদস্য মোহাম্মদ আবদুল আহাদ বলেন, ‘রাজধানীর কোনো ভবনে, ‘কোনো দুর্ঘটনা হলেই এর দোষ পরে রাজউকের ওপর। অবশ্যই রাজউকের দেখভালের দায়িত্ব বেশি। কিন্তু যারা নিরাপত্তার জন্য অন্যান্য ছাড়পত্র দেন, যেমন বিদ্যুৎ ও পানিসহ প্রায় এক ডজন সংস্থা। তাদেরও ওই সকল ভবনে নিরাপত্তার বিকল্প ব্যবস্থা আছে কি না সেগুলো দেখা উচিত। অতি ঝুকিপূর্ণ ৪২টি ভবন ভাঙার বিষয়ে বারবার সতর্ক করে চিঠি আদান-প্রদান করার পরও কোনো সরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ থেকে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না যা খুবই দুঃখজনক।’ সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক।