নিউইয়র্ক ০৯:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

কাঁদলেন ড. ইউনূস

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০২:১২:০১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৭৭ বার পঠিত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের দেখতে বিভিন্ন হাসপাতালে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। হাসপাতালে তাদের দেখে এসে সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে কাঁদলেন নোবেল বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদ।

রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি কার্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে হতাহতদের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি, কাঁদতেও দেখা যায় তাকে।

বেলা ১১টায় শুরু হয়ে এ সভা চলে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত। মতবিনিময় সভায় ড. ইউনূসসহ অন্যদের উপস্থিত আহত শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে কথা বলতে এবং খোঁজখবর নিতে দেখা যায়। সভায় উপস্থিত ছিলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, বন-পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।

মতবিনিময় সভায় ড. ইউনূস বলেন, আন্দোলনে আহতদের দেখতে যখন হাসপাতালে যাই, তাকাতে কষ্ট হয়। একটা ছেলে, একটা মেয়ে এই রকমভাবে কীভাবে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পা চলে গেছে, এদিকে…, এ কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন ড. ইউনূস।

তিনি বলেন, কালকে একটা হাসপাতালে (নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল) গেলাম, আবার সেই দৃশ্য, কচি কচি প্রাণ, মাথার খুলি উড়ে গেছে। মাথার অর্ধেক নেই, গুলি মাথার ভেতর রয়ে গেছে। রংপুরের হাসপাতালের দৃশ্য, এক্স-রে দেখা হচ্ছে ওখানে দাগ, ছোট ছোট ফুটো করা, আমি বুঝতে পারলাম না আমাকে কি দেখাচ্ছে, আমি জিজ্ঞেস করলাম, এগুলো কি, এতগুলো গুলি তার শরীরে রয়ে গেছে, সে বেঁচে আছে রাবার বুলেট নিয়ে, যতবার দেখি যতবার শুনি আবার নতুন করে প্রতিজ্ঞা করতে হয়, যে স্বপ্নের জন্য তারা প্রাণ দিয়েছে সেই স্বপ্নকে আমরা বাস্তবায়ন করব।

আপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, একজন তাজা তরুণ রংপুরে আমাকে বলল, স্যার আমি সারাজীবন ক্রিকেট খেলতে চেয়েছিলাম। ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলাম। এখন দেখেন আমার পা কেটে ফেলেছে…কেঁটে ফেলেছে ওই পা রাখার উপায় ছিল না। সে আমাকে জিজ্ঞেস করেছে স্যার ক্রিকেট খেলব কী করে। ক্রিকেট তার মাথা থেকে যাচ্ছে না।

পা নেই যতবার দেখি ততবার মনের সঙ্গে প্রশ্ন জাগে, এটিই আমরা বাংলাদেশ বানিয়েছি যে এতগুলো তাজাপ্রাণ, তাদেরকে ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে, আমরা যারা আজকে এখানে বসে কথা বলছি, তাদের একমাত্র দায়িত্ব তাদের এই ত্যাগ, এই জীবনের বিনিময়ে তারা আমাদের এখানে বসার সুযোগ দিয়েছে, আমরা সরকারের মধ্যে বসেছি …কেউই এই ভূমিকায় আসতে পারতাম না।

শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ চিন্তায় অনড় থাকার আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, যে যত পরামর্শ দেয় এটা থেকে বেরিয়ে আসার, সে পরামর্শ তোমরা গ্রহণ কর না। তোমাদের চিন্তা স্বচ্ছ, সঠিক— এটা মুঠো থেকে ছাড়বে না। যদি আমরা এ স্বপ্ন থেকে দূরে সরার কোনো কাজ করি স্মরণ করিয়ে দেবে। আমাদের কারো কোনো ইচ্ছা নেই এ স্বপ্ন থেকে বাইরে যাওয়ার, এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা আমাদের সার্বক্ষণিক কাজ।

তিনি বলেন, এতদিন চুপচাপ শুয়ে শুয়ে এরা স্বপ্নের মধ্যে ছিল। স্বপ্ন দেখছিল, আনন্দ সহকারে লুটপাট করে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে তাদের ঘুম ভাঙে। তারা কি চুপচাপ বসে থাকবে? খুব চেষ্টা করবে তোমাদেরকে আবার দুঃস্বপ্নে ফিরিয়ে নিতে। শান্তিতে তাদের আবার রাজত্ব চালাতে। কাজেই যে কাজ শুরু করেছ তা সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এর থেকে বেরিয়ে যেও না।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্ম থেকে ৫৩ বছরে এ সুযোগ আর আসে নাই। যে সুযোগ তোমরা আমাদের দিয়েছ। এ সুযোগ যেন হাতছাড়া না হয়। এ সুযোগ হাতছাড়া হলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ থাকবে না। এটা কোনো রাষ্ট্র আর থাকবে না।’

ড. ইউনূস বলেন, ‘এটা যেন শুধু রাষ্ট্র নয়, পৃথিবীর সম্মানিত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। যেহেতু তরুণরা এটার হাল ধরেছে। এ কারণে এটা ইউনিক, অনন্য দেশ আমরা তৈরি করতে চাই।’

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

কাঁদলেন ড. ইউনূস

প্রকাশের সময় : ০২:১২:০১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের দেখতে বিভিন্ন হাসপাতালে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। হাসপাতালে তাদের দেখে এসে সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে কাঁদলেন নোবেল বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদ।

রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি কার্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে হতাহতদের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি, কাঁদতেও দেখা যায় তাকে।

বেলা ১১টায় শুরু হয়ে এ সভা চলে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত। মতবিনিময় সভায় ড. ইউনূসসহ অন্যদের উপস্থিত আহত শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে কথা বলতে এবং খোঁজখবর নিতে দেখা যায়। সভায় উপস্থিত ছিলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, বন-পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।

মতবিনিময় সভায় ড. ইউনূস বলেন, আন্দোলনে আহতদের দেখতে যখন হাসপাতালে যাই, তাকাতে কষ্ট হয়। একটা ছেলে, একটা মেয়ে এই রকমভাবে কীভাবে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পা চলে গেছে, এদিকে…, এ কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন ড. ইউনূস।

তিনি বলেন, কালকে একটা হাসপাতালে (নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল) গেলাম, আবার সেই দৃশ্য, কচি কচি প্রাণ, মাথার খুলি উড়ে গেছে। মাথার অর্ধেক নেই, গুলি মাথার ভেতর রয়ে গেছে। রংপুরের হাসপাতালের দৃশ্য, এক্স-রে দেখা হচ্ছে ওখানে দাগ, ছোট ছোট ফুটো করা, আমি বুঝতে পারলাম না আমাকে কি দেখাচ্ছে, আমি জিজ্ঞেস করলাম, এগুলো কি, এতগুলো গুলি তার শরীরে রয়ে গেছে, সে বেঁচে আছে রাবার বুলেট নিয়ে, যতবার দেখি যতবার শুনি আবার নতুন করে প্রতিজ্ঞা করতে হয়, যে স্বপ্নের জন্য তারা প্রাণ দিয়েছে সেই স্বপ্নকে আমরা বাস্তবায়ন করব।

আপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, একজন তাজা তরুণ রংপুরে আমাকে বলল, স্যার আমি সারাজীবন ক্রিকেট খেলতে চেয়েছিলাম। ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলাম। এখন দেখেন আমার পা কেটে ফেলেছে…কেঁটে ফেলেছে ওই পা রাখার উপায় ছিল না। সে আমাকে জিজ্ঞেস করেছে স্যার ক্রিকেট খেলব কী করে। ক্রিকেট তার মাথা থেকে যাচ্ছে না।

পা নেই যতবার দেখি ততবার মনের সঙ্গে প্রশ্ন জাগে, এটিই আমরা বাংলাদেশ বানিয়েছি যে এতগুলো তাজাপ্রাণ, তাদেরকে ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে, আমরা যারা আজকে এখানে বসে কথা বলছি, তাদের একমাত্র দায়িত্ব তাদের এই ত্যাগ, এই জীবনের বিনিময়ে তারা আমাদের এখানে বসার সুযোগ দিয়েছে, আমরা সরকারের মধ্যে বসেছি …কেউই এই ভূমিকায় আসতে পারতাম না।

শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ চিন্তায় অনড় থাকার আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, যে যত পরামর্শ দেয় এটা থেকে বেরিয়ে আসার, সে পরামর্শ তোমরা গ্রহণ কর না। তোমাদের চিন্তা স্বচ্ছ, সঠিক— এটা মুঠো থেকে ছাড়বে না। যদি আমরা এ স্বপ্ন থেকে দূরে সরার কোনো কাজ করি স্মরণ করিয়ে দেবে। আমাদের কারো কোনো ইচ্ছা নেই এ স্বপ্ন থেকে বাইরে যাওয়ার, এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা আমাদের সার্বক্ষণিক কাজ।

তিনি বলেন, এতদিন চুপচাপ শুয়ে শুয়ে এরা স্বপ্নের মধ্যে ছিল। স্বপ্ন দেখছিল, আনন্দ সহকারে লুটপাট করে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে তাদের ঘুম ভাঙে। তারা কি চুপচাপ বসে থাকবে? খুব চেষ্টা করবে তোমাদেরকে আবার দুঃস্বপ্নে ফিরিয়ে নিতে। শান্তিতে তাদের আবার রাজত্ব চালাতে। কাজেই যে কাজ শুরু করেছ তা সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এর থেকে বেরিয়ে যেও না।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্ম থেকে ৫৩ বছরে এ সুযোগ আর আসে নাই। যে সুযোগ তোমরা আমাদের দিয়েছ। এ সুযোগ যেন হাতছাড়া না হয়। এ সুযোগ হাতছাড়া হলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ থাকবে না। এটা কোনো রাষ্ট্র আর থাকবে না।’

ড. ইউনূস বলেন, ‘এটা যেন শুধু রাষ্ট্র নয়, পৃথিবীর সম্মানিত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। যেহেতু তরুণরা এটার হাল ধরেছে। এ কারণে এটা ইউনিক, অনন্য দেশ আমরা তৈরি করতে চাই।’