নিউইয়র্ক ০৭:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

ক্ষতিপূরণের মামলা আটকে আছে এক বছর

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১০:২১:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ এপ্রিল ২০১৬
  • / ৫৫০ বার পঠিত

ঢাকা: রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ভুক্তভোগীরা একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় ক্ষতিপূরণের অর্থ বুঝে পেয়েছেন। তবে আইনি ভিত্তি না থাকায় ভবিষ্যতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে এটি আর প্রযোজ্য হবে না। অবশ্য আইনি কাঠামোর ম​েধ্য নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। উচ্চ আদালতের নির্দেশে সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতির মাত্রা ও ক্ষতিপূরণের হার নির্ধারণ করে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কমিটি। তবে কমিটির দেওয়া প্রতিবেদনের ওপর শুনানি প্রায় এক বছর ধরে হাইকোর্টে আটকে আছে।
শ্রমিকনেতারা বলছেন, ভবনধসে আহত ও নিহত শ্রমিকদের দেওয়া অর্থ ক্ষতিপূরণ নয়, অর্থ-সহায়তা। মূলত যাঁদের কারণে শ্রমিকের ক্ষতি হয়, ক্ষতিপূরণ তাঁকেই দিতে হয়। হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত সে জন্যই দরকার। তা ছাড়া সিদ্ধান্ত না এলে ভবিষ্যতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে শ্রমিকেরা ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পাবেন না। অন্যদিকে পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতারা চান না নতুন করে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসুক। তাতে মালিকদের ওপর চাপ বাড়বে।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসের পরপরই আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টসহ (ব্লাস্ট) কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে চারটি রিট আবেদন করে। একই সঙ্গে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একটি রুল দেন। রুল শুনানির একপর্যায়ে উচ্চ আদালত বলেন, রানা প্লাজা ধসের ঘটনা কোনো দুর্ঘটনা নয়, অপরাধ। এ জন্য আইন অনুসারে দোষী ব্যক্তিদের যেমন ফৌজদারি অপরাধের বিচার হতে হবে, তেমনি দোষী ব্যক্তিদের অপরাধের জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তখন রানা প্লাজা ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতির মাত্রা ও ক্ষতিপূরণের হার নির্ধারণ করতে আদালত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেন। সেই ধারাবাহিকতায় একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি। কমিটি দুটি উপকমিটি গঠন করে। উপকমিটির সদস্যরা প্রত্যেক নিহত, নিখোঁজ শ্রমিকের পরিবার এবং স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যাওয়া শ্রমিকের জন্য ১৪ লাখ ৫১ হাজার ৩০০ টাকা ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করেন। আর আহত হওয়ার ধরন অনুযায়ী শ্রমিকদের জন্য নির্ধারণ করেন দেড় লাখ থেকে সাড়ে সাত লাখ টাকা।
জানা যায়, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি আবদুর রবের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে গত বছরের ২০ এপ্রিল ক্ষতিপূরণ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদন জমা পড়ে। এরপর প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শুরু করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন। তবে কিছুদিন পর হাইকোর্টের বেঞ্চ পুনর্গঠন করা হয়। তারপর বিষয়টি হাইকোর্টের অন্য কোনো বেঞ্চে শুনানি হয়নি।
রিট আবেদনগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা জানান, প্রতিবেদনটির ওপর চূড়ান্ত শুনানি অনেক দিন ধরে আটকে আছে। দীর্ঘদিন ধরে আদালতের কোনো বেঞ্চে মামলাটি উঠছে না। এরই মধ্যে বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার আপিল বিভাগে নিয়োগ পেয়ে গেছেন। তাই আগের বেঞ্চে শুনানির সুযোগ নেই।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং বার কাউন্সিলের হিউম্যান রাইটস ও লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান জেড আই খান পান্না শুরু থেকে ক্ষতিপূরণ মামলাটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এক কথায় বলতে গেলে মামলাটি স্টাক (আটকে) হয়ে গেছে। রিট আবেদনকারী ও রাষ্ট্রপক্ষের যৌথ উদ্যোগ নিয়ে মামলাটি যত দ্রুত সম্ভব এ অবস্থা থেকে বের করে আনা উচিত।’
জানতে চাইলে রিট আবেদনকারী পক্ষের অন্যতম আইনজীবী সারা হোসেন আগামী মাসে বিষয়টি হাইকোর্টের কোনো বেঞ্চের নজরে (মেনশন) আনবেন বলে জানান।
আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনে চাপে পড়ে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে রানা প্লাজা সমন্বয় কমিটি গঠিত হয়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এটির নেতৃত্বে ছিল। গঠিত হয় রানা প্লাজা ডোনারস ট্রাস্ট ফান্ড। তহবিলে বিভিন্ন বিদেশি ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান অর্থ দেয়। নিহত শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীল পরিবারের সদস্যসংখ্যা এবং আহত শ্রমিকদের আহতের ধরন অনুসারে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করে সমন্বয় কমিটি।
জানা যায়, সমন্বয় কমিটি ২ হাজার ৮৮৯ জন আহত ও নিহত শ্রমিকের পরিবারের ৫ হাজার ১২৬ জন্য সদস্যকে ১০৭ কোটি টাকা বা ১ কোটি ৩৮ লাখ ডলার দিয়েছে। এ ছাড়া ধসে যাওয়া রানা প্লাজায় থাকা নিউ ওয়েব বটমের প্রায় ৬০০ শ্রমিকের ক্ষতিপূরণের পুরো অর্থ দিয়েছে প্রাইমার্ক। এই ক্ষতিপূরণের পরিমাণ হচ্ছে ৬৩ লাখ ডলার। এর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে দেওয়া অর্থ সমন্বয় করা হয়। আহত শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য ১০ লাখ ডলার রাখা হয়। একজন নিহত ব্যক্তির পরিবার সর্বোচ্চ ৭৮ লাখ টাকা পেয়েছে। অন্যরা সর্বনিম্ন ১০ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকা পেয়েছে। আহত শ্রমিকেরা সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা করে পেয়েছেন।
সমন্বয় কমিটির সদস্য ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) সহকারী নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক্ষতিপূরণ যেটি দেওয়া হয়েছে, সেটির আইনি কোনো ভিত্তি নেই। তাই ভবিষ্যতে এটি উদাহরণ হিসেবে ব্যবহৃত হবে না।’
বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, রানা প্লাজা ধসে আহত অনেক শ্রমিক এখনো সুস্থ হননি। মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাঁদের চিকিৎসা দরকার। তাই ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ও চিকিৎসার বিষয়টি নতুন করে নির্ধারণ করা দরকার।
এদিকে বিজিএমইএ শুরু থেকে বিষয়টির বিপক্ষে অবস্থান নেয়। কমিটির সদস্য বিজিএমইএর সাবেক একজন সহসভাপতি চূড়ান্ত সুপারিশে স্বাক্ষর করলেও তাতে লিখে দেন, ক্ষতিপূরণ শ্রম আইন অনুযায়ীই হতে হবে। বর্তমানে শ্রম আইনে দুর্ঘটনায় মৃত শ্রমিকের জন্য তাঁর পরিবার ১ লাখ টাকা পাবে এবং স্থায়ীভাবে অক্ষম শ্রমিকের জন্য ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা আছে।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি ফারুক হাসান গত বৃহস্পতিবার বলেন, হাইকোর্টের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক না। তবে ক্ষতিপূরণ যা দেওয়া হয়েছে, সেটি বাংলাদেশের মানদণ্ডের অনেক ওপরে। আন্তর্জাতিক মানের। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক শিল্প খাত আছে। সবার সক্ষমতা চিন্তা করে ক্ষতিপূরণের হার নির্ধারণ করতে হবে।
বিশেষজ্ঞ কমিটির উপকমিটির অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ বলেন, হাইকোর্টে দ্রুত শুনানি হলে দোষী চিহ্নিত করে আইন অনুসারে ক্ষতিপূরণ আদায় করা যায়। যদি সরকারের মধ্যে কেউ দোষী হয়ে থাকেন, কিংবা পোশাক কারখানার মালিকেরা দোষী হন বা রানা প্লাজার মালিক দোষী হন, তাহলে তাঁদের ফৌজদারি অপরাধের জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হতো।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

ক্ষতিপূরণের মামলা আটকে আছে এক বছর

প্রকাশের সময় : ১০:২১:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ এপ্রিল ২০১৬

ঢাকা: রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ভুক্তভোগীরা একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় ক্ষতিপূরণের অর্থ বুঝে পেয়েছেন। তবে আইনি ভিত্তি না থাকায় ভবিষ্যতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে এটি আর প্রযোজ্য হবে না। অবশ্য আইনি কাঠামোর ম​েধ্য নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। উচ্চ আদালতের নির্দেশে সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতির মাত্রা ও ক্ষতিপূরণের হার নির্ধারণ করে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কমিটি। তবে কমিটির দেওয়া প্রতিবেদনের ওপর শুনানি প্রায় এক বছর ধরে হাইকোর্টে আটকে আছে।
শ্রমিকনেতারা বলছেন, ভবনধসে আহত ও নিহত শ্রমিকদের দেওয়া অর্থ ক্ষতিপূরণ নয়, অর্থ-সহায়তা। মূলত যাঁদের কারণে শ্রমিকের ক্ষতি হয়, ক্ষতিপূরণ তাঁকেই দিতে হয়। হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত সে জন্যই দরকার। তা ছাড়া সিদ্ধান্ত না এলে ভবিষ্যতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে শ্রমিকেরা ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পাবেন না। অন্যদিকে পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতারা চান না নতুন করে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসুক। তাতে মালিকদের ওপর চাপ বাড়বে।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসের পরপরই আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টসহ (ব্লাস্ট) কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে চারটি রিট আবেদন করে। একই সঙ্গে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একটি রুল দেন। রুল শুনানির একপর্যায়ে উচ্চ আদালত বলেন, রানা প্লাজা ধসের ঘটনা কোনো দুর্ঘটনা নয়, অপরাধ। এ জন্য আইন অনুসারে দোষী ব্যক্তিদের যেমন ফৌজদারি অপরাধের বিচার হতে হবে, তেমনি দোষী ব্যক্তিদের অপরাধের জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তখন রানা প্লাজা ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতির মাত্রা ও ক্ষতিপূরণের হার নির্ধারণ করতে আদালত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেন। সেই ধারাবাহিকতায় একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি। কমিটি দুটি উপকমিটি গঠন করে। উপকমিটির সদস্যরা প্রত্যেক নিহত, নিখোঁজ শ্রমিকের পরিবার এবং স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যাওয়া শ্রমিকের জন্য ১৪ লাখ ৫১ হাজার ৩০০ টাকা ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করেন। আর আহত হওয়ার ধরন অনুযায়ী শ্রমিকদের জন্য নির্ধারণ করেন দেড় লাখ থেকে সাড়ে সাত লাখ টাকা।
জানা যায়, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি আবদুর রবের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে গত বছরের ২০ এপ্রিল ক্ষতিপূরণ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদন জমা পড়ে। এরপর প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শুরু করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন। তবে কিছুদিন পর হাইকোর্টের বেঞ্চ পুনর্গঠন করা হয়। তারপর বিষয়টি হাইকোর্টের অন্য কোনো বেঞ্চে শুনানি হয়নি।
রিট আবেদনগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা জানান, প্রতিবেদনটির ওপর চূড়ান্ত শুনানি অনেক দিন ধরে আটকে আছে। দীর্ঘদিন ধরে আদালতের কোনো বেঞ্চে মামলাটি উঠছে না। এরই মধ্যে বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার আপিল বিভাগে নিয়োগ পেয়ে গেছেন। তাই আগের বেঞ্চে শুনানির সুযোগ নেই।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং বার কাউন্সিলের হিউম্যান রাইটস ও লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান জেড আই খান পান্না শুরু থেকে ক্ষতিপূরণ মামলাটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এক কথায় বলতে গেলে মামলাটি স্টাক (আটকে) হয়ে গেছে। রিট আবেদনকারী ও রাষ্ট্রপক্ষের যৌথ উদ্যোগ নিয়ে মামলাটি যত দ্রুত সম্ভব এ অবস্থা থেকে বের করে আনা উচিত।’
জানতে চাইলে রিট আবেদনকারী পক্ষের অন্যতম আইনজীবী সারা হোসেন আগামী মাসে বিষয়টি হাইকোর্টের কোনো বেঞ্চের নজরে (মেনশন) আনবেন বলে জানান।
আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনে চাপে পড়ে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে রানা প্লাজা সমন্বয় কমিটি গঠিত হয়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এটির নেতৃত্বে ছিল। গঠিত হয় রানা প্লাজা ডোনারস ট্রাস্ট ফান্ড। তহবিলে বিভিন্ন বিদেশি ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান অর্থ দেয়। নিহত শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীল পরিবারের সদস্যসংখ্যা এবং আহত শ্রমিকদের আহতের ধরন অনুসারে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করে সমন্বয় কমিটি।
জানা যায়, সমন্বয় কমিটি ২ হাজার ৮৮৯ জন আহত ও নিহত শ্রমিকের পরিবারের ৫ হাজার ১২৬ জন্য সদস্যকে ১০৭ কোটি টাকা বা ১ কোটি ৩৮ লাখ ডলার দিয়েছে। এ ছাড়া ধসে যাওয়া রানা প্লাজায় থাকা নিউ ওয়েব বটমের প্রায় ৬০০ শ্রমিকের ক্ষতিপূরণের পুরো অর্থ দিয়েছে প্রাইমার্ক। এই ক্ষতিপূরণের পরিমাণ হচ্ছে ৬৩ লাখ ডলার। এর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে দেওয়া অর্থ সমন্বয় করা হয়। আহত শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য ১০ লাখ ডলার রাখা হয়। একজন নিহত ব্যক্তির পরিবার সর্বোচ্চ ৭৮ লাখ টাকা পেয়েছে। অন্যরা সর্বনিম্ন ১০ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকা পেয়েছে। আহত শ্রমিকেরা সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা করে পেয়েছেন।
সমন্বয় কমিটির সদস্য ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) সহকারী নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক্ষতিপূরণ যেটি দেওয়া হয়েছে, সেটির আইনি কোনো ভিত্তি নেই। তাই ভবিষ্যতে এটি উদাহরণ হিসেবে ব্যবহৃত হবে না।’
বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, রানা প্লাজা ধসে আহত অনেক শ্রমিক এখনো সুস্থ হননি। মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাঁদের চিকিৎসা দরকার। তাই ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ও চিকিৎসার বিষয়টি নতুন করে নির্ধারণ করা দরকার।
এদিকে বিজিএমইএ শুরু থেকে বিষয়টির বিপক্ষে অবস্থান নেয়। কমিটির সদস্য বিজিএমইএর সাবেক একজন সহসভাপতি চূড়ান্ত সুপারিশে স্বাক্ষর করলেও তাতে লিখে দেন, ক্ষতিপূরণ শ্রম আইন অনুযায়ীই হতে হবে। বর্তমানে শ্রম আইনে দুর্ঘটনায় মৃত শ্রমিকের জন্য তাঁর পরিবার ১ লাখ টাকা পাবে এবং স্থায়ীভাবে অক্ষম শ্রমিকের জন্য ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা আছে।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি ফারুক হাসান গত বৃহস্পতিবার বলেন, হাইকোর্টের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক না। তবে ক্ষতিপূরণ যা দেওয়া হয়েছে, সেটি বাংলাদেশের মানদণ্ডের অনেক ওপরে। আন্তর্জাতিক মানের। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক শিল্প খাত আছে। সবার সক্ষমতা চিন্তা করে ক্ষতিপূরণের হার নির্ধারণ করতে হবে।
বিশেষজ্ঞ কমিটির উপকমিটির অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ বলেন, হাইকোর্টে দ্রুত শুনানি হলে দোষী চিহ্নিত করে আইন অনুসারে ক্ষতিপূরণ আদায় করা যায়। যদি সরকারের মধ্যে কেউ দোষী হয়ে থাকেন, কিংবা পোশাক কারখানার মালিকেরা দোষী হন বা রানা প্লাজার মালিক দোষী হন, তাহলে তাঁদের ফৌজদারি অপরাধের জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হতো।