নিউইয়র্ক ০৭:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

দেনা করে মৌলিক চাহিদা পূরণ করছে দেশের ৪ কোটি মানুষ

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৩:২০:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ মার্চ ২০২৪
  • / ৮২ বার পঠিত

চড়া মূল্যস্ফীতি আর লাগামহীন দ্রব্যমূল্যে অতিষ্ঠ দেশের চার কোটি মানুষ খাবার কিনছে ধার-দেনা করে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভঙ্গুর অর্থনীতির প্রতিফলন উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খাদ্য নিরাপত্তা জরিপে। সংকট কাটাতে সঠিক পরিকল্পনা ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি বাড়ানোর তাগিদ অর্থনীতিবিদদের।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পঞ্চাশোর্ধ ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সিরাজ। বছর দুয়েক ধরে চলা মূল্যস্ফীতির মোটাদাগের প্রভাব তার জীবনে। আয়ের তুলনায় বেড়েছে ব্যয়। অর্ধেকে নামিয়েছেন খাওয়া-দাওয়া। চলতে হচ্ছে ধার-দেনায়। তিনি বলেন, আগে দিনে তিন/চারবার খেয়েছি। এখন দুই থেকে তিনবার খেয়ে হলেও চলতে হবে। ধরে আমি একবেলা কম খেলাম। কিন্তু বাচ্চাদের তো ঠিক রাখতে হবে।

আর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে তাল মেলাতে এনজিও থেকে ঋণ করেছেন রিকশাচালক আবদুর রাজ্জাক। সংকটের এমন চিত্র উঠে এসেছে প্রথমবারের মতো প্রকাশিত বিবিএসের খাদ্য নিরাপত্তা প্রতিবেদনে। তিনি বলেন, এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছি। কিন্তু সেটা শোধ করতে পারছি না। পরিশোধ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। অনেক সময় না খেয়েও থাকতে হয়।

বিবিএসের প্রতিবেদন বলছে, দেশের চার ভাগের এক ভাগ মানুষ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের মতো মৌলিক চাহিদা মেটাচ্ছে ঋণ করে। যাতে সবচেয়ে বেশি ২৮ শতাংশ ঋণের দায় গ্রামের মানুষের। অন্যদিকে শহরে ২৪ এবং সিটি করপোরেশনের বাসিন্দাদের ঋণ করতে হচ্ছে ১৫ শতাংশ হারে। যার জন্য চলমান অর্থনৈতিক সংকট এবং লাগামহীন বাজার ব্যবস্থাকেই দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এই অবস্থায় তাল সামলানোর বেশি চাপে মধ্যবিত্ত শ্রেণি।

বিআইআইসিসির গবেষণা পরিচালক মাহফুজ কবীর বলেন, অর্থনৈতিক চাপ রয়েছে। মূল্যস্ফীতির কারণে তাদের প্রকৃত আয় কমে গেছে। এসময়ে কর্মসংস্থান হয়েছে ঠিকই, কিন্তু গুণগত হয়নি। ফলে পর্যাপ্ত আয়-উপার্জন নেই। যে কারণে তারা বিভিন্ন খাত থেকে ধার-দেনা করেছে।

বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক ড. জাহিদ হোসেন বলেন, দেশের অর্থনীতি কতটা ভঙ্গুর, এই তথ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে। ঋণ করে নিজের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করছেন অনেকে। প্রয়োজন মেটাতেই এটা করছেন তারা।

বিবিএস বলছে, ২২ শতাংশ পরিবার মাঝারি বা তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত থাকলেও সবচেয়ে বেশি ২৬ দশমিক ১৩ শতাংশ কৃষক পরিবারের সমস্যা খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা।ড. জাহিদ হোসেন বলেন, যারা দরিদ্রসীমার ওপরে আছেন, তাদেরও যে আয় বেশি সেটা কিন্তু নয়। তারা আরামদায়ক পরিস্থিতিতে আছেন, ঠিক তেমনটা নয়।

বিআইআইসিসির গবেষণা পরিচালক মাহফুজ কবীর বলেন, এটা বাংলাদেশের জন্য রেড অ্যালার্ম। খাদ্য নিরাপত্তাহীন মানুষগুলো জনসম্পদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবেন। যদি দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থায় থাকেন। ২০২২ সালের জুনের ১৫ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার খানার ওপর এই জরিপ চালায় বিবিএস। সূত্র : প্রতিদিনের সংবাদ।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

দেনা করে মৌলিক চাহিদা পূরণ করছে দেশের ৪ কোটি মানুষ

প্রকাশের সময় : ০৩:২০:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ মার্চ ২০২৪

চড়া মূল্যস্ফীতি আর লাগামহীন দ্রব্যমূল্যে অতিষ্ঠ দেশের চার কোটি মানুষ খাবার কিনছে ধার-দেনা করে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভঙ্গুর অর্থনীতির প্রতিফলন উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খাদ্য নিরাপত্তা জরিপে। সংকট কাটাতে সঠিক পরিকল্পনা ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি বাড়ানোর তাগিদ অর্থনীতিবিদদের।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পঞ্চাশোর্ধ ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সিরাজ। বছর দুয়েক ধরে চলা মূল্যস্ফীতির মোটাদাগের প্রভাব তার জীবনে। আয়ের তুলনায় বেড়েছে ব্যয়। অর্ধেকে নামিয়েছেন খাওয়া-দাওয়া। চলতে হচ্ছে ধার-দেনায়। তিনি বলেন, আগে দিনে তিন/চারবার খেয়েছি। এখন দুই থেকে তিনবার খেয়ে হলেও চলতে হবে। ধরে আমি একবেলা কম খেলাম। কিন্তু বাচ্চাদের তো ঠিক রাখতে হবে।

আর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে তাল মেলাতে এনজিও থেকে ঋণ করেছেন রিকশাচালক আবদুর রাজ্জাক। সংকটের এমন চিত্র উঠে এসেছে প্রথমবারের মতো প্রকাশিত বিবিএসের খাদ্য নিরাপত্তা প্রতিবেদনে। তিনি বলেন, এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছি। কিন্তু সেটা শোধ করতে পারছি না। পরিশোধ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। অনেক সময় না খেয়েও থাকতে হয়।

বিবিএসের প্রতিবেদন বলছে, দেশের চার ভাগের এক ভাগ মানুষ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের মতো মৌলিক চাহিদা মেটাচ্ছে ঋণ করে। যাতে সবচেয়ে বেশি ২৮ শতাংশ ঋণের দায় গ্রামের মানুষের। অন্যদিকে শহরে ২৪ এবং সিটি করপোরেশনের বাসিন্দাদের ঋণ করতে হচ্ছে ১৫ শতাংশ হারে। যার জন্য চলমান অর্থনৈতিক সংকট এবং লাগামহীন বাজার ব্যবস্থাকেই দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এই অবস্থায় তাল সামলানোর বেশি চাপে মধ্যবিত্ত শ্রেণি।

বিআইআইসিসির গবেষণা পরিচালক মাহফুজ কবীর বলেন, অর্থনৈতিক চাপ রয়েছে। মূল্যস্ফীতির কারণে তাদের প্রকৃত আয় কমে গেছে। এসময়ে কর্মসংস্থান হয়েছে ঠিকই, কিন্তু গুণগত হয়নি। ফলে পর্যাপ্ত আয়-উপার্জন নেই। যে কারণে তারা বিভিন্ন খাত থেকে ধার-দেনা করেছে।

বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক ড. জাহিদ হোসেন বলেন, দেশের অর্থনীতি কতটা ভঙ্গুর, এই তথ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে। ঋণ করে নিজের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করছেন অনেকে। প্রয়োজন মেটাতেই এটা করছেন তারা।

বিবিএস বলছে, ২২ শতাংশ পরিবার মাঝারি বা তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত থাকলেও সবচেয়ে বেশি ২৬ দশমিক ১৩ শতাংশ কৃষক পরিবারের সমস্যা খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা।ড. জাহিদ হোসেন বলেন, যারা দরিদ্রসীমার ওপরে আছেন, তাদেরও যে আয় বেশি সেটা কিন্তু নয়। তারা আরামদায়ক পরিস্থিতিতে আছেন, ঠিক তেমনটা নয়।

বিআইআইসিসির গবেষণা পরিচালক মাহফুজ কবীর বলেন, এটা বাংলাদেশের জন্য রেড অ্যালার্ম। খাদ্য নিরাপত্তাহীন মানুষগুলো জনসম্পদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবেন। যদি দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থায় থাকেন। ২০২২ সালের জুনের ১৫ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার খানার ওপর এই জরিপ চালায় বিবিএস। সূত্র : প্রতিদিনের সংবাদ।