নিউইয়র্ক ০৭:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত : ভূমিকম্পে কাঁপলো বাংলাদেশ : নিহত ৩, আহত শতাধিক

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৪:০৭:০২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ জানুয়ারী ২০১৬
  • / ৭৬৩ বার পঠিত

ঢাকা: রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। সোমবার (৪ জানুয়ারী) ভোর ৫টা ৫ মিনিটের দিকে এ ভূকম্পন অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্র ছিল ৬ দশমিক ৮। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের মণিপুরের রাজধানী ইমপাল থেকে ৩৩ কিলোমিটার পশ্চিম উত্তর-পশ্চিম এবং ঢাকা থেকে ৩৫১ কিলোমিটার পূর্ব উত্তরে। পূর্ব ভারত-মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায়। উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠের ৩৫ কিলোমিটার গভীরে। প্রাথমিকভাবে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিকাল সার্ভে (ইউএসজিএস)।
বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবরে জানা গেছে, ভূমিকম্প আতঙ্কে মারা গেছেন ৩জন। সারাদেশে আহত হয়েছেন শতাধিক। ঢাকার জুরাইনে হুড়োহুড়ির মধ্যে আতঙ্কে আতিকুর রহমান আতিক (২৭) নামের এক যুবকরে মৃত্যু হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পাশ্ববর্তি মেহেরচন্ডি এলাকায় নিজ বাড়িতে বঙ্গবন্ধু হলের প্রধান বাবুর্চি খলিলুর রহমান নিহত হন। ভারতের নিকটবর্তী লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার কদুরবাজার এলাকায় আব্দুল কুদ্দুস (৪০) আতঙ্কে মারা যান। ওই এলাকায় আহত হন ৩জন। এছাড়া ভূমিকম্পের আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে গিয়ে আহত হয়ে ঢাকা ও সিলেটসহ সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন শতাধিক।
এদিকে ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে সারাদেশের ঘুমন্ত মানুষ। রাজধানীবাসীর বেশিরভাগই বাসার ছাদে কিংবা রাস্তায় নেমে যায়। এখন পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা গেছে, ভূমিকম্পে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাত শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ঢাবির সূর্যসেন হলের দু’জন, জসিম উদ্দীন হলের দু’জন, বঙ্গবন্ধু হলের দু’জন ও জিয়া হলের একজন। তারা সবাই আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় ভবন থেকে নিচে নামতে গিয়ে আহত হন। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত ২৫ এপ্রিল অনুভূত হওয়া ভূমিকম্পে ঢাবির ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ফাটল দেখা দেয়।
সারাদেশ: এদিকে ঢাকার পাশাপাশি সারাদেশেরই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, নোয়াখালী, বরিশাল, রাজশাহী, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, চুয়াডাঙ্গা সহ সারাদেশে ভূমিকম্প অনুভ’ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জেলাগুলোর নগরীর মসজিদে তখনই ফজরের আযান হয়নি। অধিকাংশ লোক তখনও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। হঠাৎ চারদিকে মানুষের আর্ত-চিৎকার। কয়েক সেকেন্ডে স্থায়ী ওই ভূমি কম্পনের ফলে মানুষের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে নগরগুলোর বহুতল ভবনের বাসিন্দারা ভয়ে আতংকিত হয়ে ভবন থেকে নীচে রাস্তায় নেমে আসে। এসব জনপদের ঘূমন্ত অনেক মানুষ জেগে ওঠে এবং ঘর-বাড়ি থেকে দ্রুত বাইরে ফাঁকা স্থানে গিয়ে আশ্রয় নেয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোথাও থেকে ক্ষয়ক্ষতির কোন খবর পাওয়া যায়নি।
গোয়াইনঘাট (সিলেট): ভয়াবহ ভুমিকম্পে আতংক ছড়িয়ে পড়ে ওপারে ভারতের ডাউকি শহর ও বাংলাদেশের সিলেটের জাফলংয়ে। মুহুর্তেই কেপে ওঠে দুই দেশের স্পর্ষকাতর এ দুস্থানের সবকটি বাড়িঘরসহ সকল স্থাপনা। ঘুমন্ত আতংকিত হাজার হাজার মানুষ মুহুর্তেই দিক বিদিক ছুটাছুটি শুরু করে। নেমে আসে রাস্তায়। আতংকিত মানুষের আর্ত চিৎকার চেচামেচিতে দু-দেশের সীমানা প্রাচীরের ব্যবধান ক্ষনিকের জন্য মুছে দেয়। উভয় দেশের বসবাসরতরা মোবাইলফোনসহ সামাজিক গণ যোগাযোগ মাধ্যমে পরস্পর ক্ষয়ক্ষতির খবর নিতে থাকেন ।
ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া): শক্তিশালী ভূমিকম্পে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারাও কেঁপে উঠে। ভোর ৫টা ৮ মিনিটের দিকে পরপর দুবার হঠাৎ করেই কেঁপে উঠে সব কিছু। গভীর ঘুমে থাকা মানুষজন আতঙ্কে জেগে উঠে ছোটাছুটি করতে থাকে। রাস্তায় নেমে আসে মানুষজন। অনেকেই মনে করে ডাকাত পড়েছে। মানুষের মাঝে চরম আতংক ছড়িয়ে পড়ে। ৮০ বছরের বৃদ্ধ আসলাম উদ্দীন জানিয়েছেন, আমার জীবনে এমন ভয়াবহ ভূমিকম্প দেখিনি। সব কিছুই খুব জোরে জোরে কাঁপতে থাকে। কাঁপার দুলানি থাকে প্রায় ২ মিনিট। বড় ও পুরাতন কয়েকটি বিল্ডিং এ ফাটল দেখা দেয়।
সাদুল্যাপুর (গাইবান্ধা): সারা দেশের ন্যায় গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। ভূমিকম্পের আতঙ্কে বাসা-বাড়ি থেকে তাড়াহুড়া করে বেরুতে থাকে মানুষ। আশ্রয় নিয়েছিল নিরাপদ স্থানে।
এদিকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অধিকাংশ রাজ্যে চার থেকে পাঁচ সেকেন্ড স্থায়ী ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। প্রচন্ড ঝাঁকুনিতে ইম্ফলের বিভিন্ন ভবনের দেয়াল, সিঁড়ি ও ছাদ ধসে পড়েছে। মনিপুরের অনেকে এলাকায় টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলে টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে জানানো হয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত : ভূমিকম্পে কাঁপলো বাংলাদেশ : নিহত ৩, আহত শতাধিক

প্রকাশের সময় : ০৪:০৭:০২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ জানুয়ারী ২০১৬

ঢাকা: রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। সোমবার (৪ জানুয়ারী) ভোর ৫টা ৫ মিনিটের দিকে এ ভূকম্পন অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্র ছিল ৬ দশমিক ৮। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের মণিপুরের রাজধানী ইমপাল থেকে ৩৩ কিলোমিটার পশ্চিম উত্তর-পশ্চিম এবং ঢাকা থেকে ৩৫১ কিলোমিটার পূর্ব উত্তরে। পূর্ব ভারত-মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায়। উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠের ৩৫ কিলোমিটার গভীরে। প্রাথমিকভাবে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিকাল সার্ভে (ইউএসজিএস)।
বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবরে জানা গেছে, ভূমিকম্প আতঙ্কে মারা গেছেন ৩জন। সারাদেশে আহত হয়েছেন শতাধিক। ঢাকার জুরাইনে হুড়োহুড়ির মধ্যে আতঙ্কে আতিকুর রহমান আতিক (২৭) নামের এক যুবকরে মৃত্যু হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পাশ্ববর্তি মেহেরচন্ডি এলাকায় নিজ বাড়িতে বঙ্গবন্ধু হলের প্রধান বাবুর্চি খলিলুর রহমান নিহত হন। ভারতের নিকটবর্তী লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার কদুরবাজার এলাকায় আব্দুল কুদ্দুস (৪০) আতঙ্কে মারা যান। ওই এলাকায় আহত হন ৩জন। এছাড়া ভূমিকম্পের আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে গিয়ে আহত হয়ে ঢাকা ও সিলেটসহ সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন শতাধিক।
এদিকে ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে সারাদেশের ঘুমন্ত মানুষ। রাজধানীবাসীর বেশিরভাগই বাসার ছাদে কিংবা রাস্তায় নেমে যায়। এখন পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা গেছে, ভূমিকম্পে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাত শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ঢাবির সূর্যসেন হলের দু’জন, জসিম উদ্দীন হলের দু’জন, বঙ্গবন্ধু হলের দু’জন ও জিয়া হলের একজন। তারা সবাই আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় ভবন থেকে নিচে নামতে গিয়ে আহত হন। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত ২৫ এপ্রিল অনুভূত হওয়া ভূমিকম্পে ঢাবির ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ফাটল দেখা দেয়।
সারাদেশ: এদিকে ঢাকার পাশাপাশি সারাদেশেরই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, নোয়াখালী, বরিশাল, রাজশাহী, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, চুয়াডাঙ্গা সহ সারাদেশে ভূমিকম্প অনুভ’ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জেলাগুলোর নগরীর মসজিদে তখনই ফজরের আযান হয়নি। অধিকাংশ লোক তখনও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। হঠাৎ চারদিকে মানুষের আর্ত-চিৎকার। কয়েক সেকেন্ডে স্থায়ী ওই ভূমি কম্পনের ফলে মানুষের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে নগরগুলোর বহুতল ভবনের বাসিন্দারা ভয়ে আতংকিত হয়ে ভবন থেকে নীচে রাস্তায় নেমে আসে। এসব জনপদের ঘূমন্ত অনেক মানুষ জেগে ওঠে এবং ঘর-বাড়ি থেকে দ্রুত বাইরে ফাঁকা স্থানে গিয়ে আশ্রয় নেয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোথাও থেকে ক্ষয়ক্ষতির কোন খবর পাওয়া যায়নি।
গোয়াইনঘাট (সিলেট): ভয়াবহ ভুমিকম্পে আতংক ছড়িয়ে পড়ে ওপারে ভারতের ডাউকি শহর ও বাংলাদেশের সিলেটের জাফলংয়ে। মুহুর্তেই কেপে ওঠে দুই দেশের স্পর্ষকাতর এ দুস্থানের সবকটি বাড়িঘরসহ সকল স্থাপনা। ঘুমন্ত আতংকিত হাজার হাজার মানুষ মুহুর্তেই দিক বিদিক ছুটাছুটি শুরু করে। নেমে আসে রাস্তায়। আতংকিত মানুষের আর্ত চিৎকার চেচামেচিতে দু-দেশের সীমানা প্রাচীরের ব্যবধান ক্ষনিকের জন্য মুছে দেয়। উভয় দেশের বসবাসরতরা মোবাইলফোনসহ সামাজিক গণ যোগাযোগ মাধ্যমে পরস্পর ক্ষয়ক্ষতির খবর নিতে থাকেন ।
ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া): শক্তিশালী ভূমিকম্পে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারাও কেঁপে উঠে। ভোর ৫টা ৮ মিনিটের দিকে পরপর দুবার হঠাৎ করেই কেঁপে উঠে সব কিছু। গভীর ঘুমে থাকা মানুষজন আতঙ্কে জেগে উঠে ছোটাছুটি করতে থাকে। রাস্তায় নেমে আসে মানুষজন। অনেকেই মনে করে ডাকাত পড়েছে। মানুষের মাঝে চরম আতংক ছড়িয়ে পড়ে। ৮০ বছরের বৃদ্ধ আসলাম উদ্দীন জানিয়েছেন, আমার জীবনে এমন ভয়াবহ ভূমিকম্প দেখিনি। সব কিছুই খুব জোরে জোরে কাঁপতে থাকে। কাঁপার দুলানি থাকে প্রায় ২ মিনিট। বড় ও পুরাতন কয়েকটি বিল্ডিং এ ফাটল দেখা দেয়।
সাদুল্যাপুর (গাইবান্ধা): সারা দেশের ন্যায় গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। ভূমিকম্পের আতঙ্কে বাসা-বাড়ি থেকে তাড়াহুড়া করে বেরুতে থাকে মানুষ। আশ্রয় নিয়েছিল নিরাপদ স্থানে।
এদিকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অধিকাংশ রাজ্যে চার থেকে পাঁচ সেকেন্ড স্থায়ী ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। প্রচন্ড ঝাঁকুনিতে ইম্ফলের বিভিন্ন ভবনের দেয়াল, সিঁড়ি ও ছাদ ধসে পড়েছে। মনিপুরের অনেকে এলাকায় টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলে টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে জানানো হয়েছে।