১১১ ছিটমহলের আকাশে উড়ছে লাল-সবুজের পতাকা
- প্রকাশের সময় : ০৮:৫৫:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ অগাস্ট ২০১৫
- / ৯৩৬ বার পঠিত
ঢাকা: ৩০ জুলাই শুক্রবার রাত ১২ টা ০১ মিনিটে শেষ হয় ছিটমহলবাসীদের ৬৮ বছরের বঞ্চনার ইতিহাস। ভারত-বাংলাদেশের ছিটমহল শব্দটি এখন ইতিহাসের পাতায়। অবরুদ্ধ জীবন থেকে মুক্তি পেল দুই দেশের ১৬২টি ছিটমহলের মানুষ। নানা বর্নিল আয়োজনে পালিত হয়েছে নাগরিকত্বের বন্দীদশার মুক্তিগান। নীলফামারী, লালমনিরহাট আর পঞ্চগড়ের ১১১টি ছিটমহলের আকাশে উড়ছে বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা। পালিত হচ্ছে নানা কর্মসূচি। আনন্দে আত্মহারা মানুষ মেতেছে উৎসবে।
১ আগষ্ট শনিবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এ তিন জেলার ছিটমহলগুলোতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়।
নীলফামারী: জেলার ডিমলা উপজেলার চার ছিটমহলের ১১৯টি পরিবারের ৫৪৫ জন মানুষ পেয়েছে তাদের পরিচয়, নির্দিষ্ট ভুখন্ডে বসবাসের সুযোগ এবং প্রিয় মাতৃভূমির জাতীয় পতাকা ও মানচিত্র। দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে ছিটমহলগুলোয় শুরু হয় বাঁধভাঙা উল্লাস। যা চলে শনিবার সকাল অবধি। উৎসবের অংশ হিসেবে চার ছিটমহলে বানানো হয়েছে তোরণ, প্যান্ডেল। চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর পটকা ফোটানো। রাত ১২টা ১ মিনিটে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে আনন্দ আয়োজনে পূর্ণতা দেয়া হয়। এ উপলক্ষে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার অভ্যন্তরে ২৯ নম্বর বড়খানকি খারিজা গিতালদহ ছিটমহলে মিজানুর রহমানের বাড়িতে আনুষ্ঠানিকভাবে ৬৮টি মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করেন সেখানকার নাগরিকরা। তারা ঝেড়ে ফেলেন বঞ্চিত জীবনের সেই কালো অধ্যায়। আজ থেকে তারা বাংলাদেশি।
শনিবার সুর্যোদয়ের সাথে সাথে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ছিটমহলগুলোতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। এরপর মিষ্টি বিতরণ করা হয়, অনুষ্ঠিত হচ্ছে ক্রীড়া প্রতিযোগীতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শনিবার দিনব্যাপী পালিত হওয়ার কথা নানা কর্মসূচি। এসব কর্মসূচির আয়োজন করেছেন ডিমলার অভ্যন্তরে বাংলাদেশের আওতাভুক্ত চার ছিটমহলবাসী।
২৮ নম্বরে মোফাজ্জল হোসেন, ২৯ ও ৩০ নম্বরে মিজানুর রহমান এবং ৩১ নম্বরে জয়নাল আবেদীনের বাড়ির উঠানে চলছে এসব আনন্দ আয়োজন। ছিটবাসীরা নিজ উদ্যোগে উৎসব কর্মসূচী গ্রহণ করেছেন। মুক্তির এ মহেন্দ্রক্ষনে ছিটমহলবাসীরা তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেছে নানাভাবে। তাদের মতে, আমরা যেন হাঁপ ছেড়ে উঠলাম। এতদিন সাপের গর্তে বাস করে আসছিলাম। না ছিলো নিরাপত্তা, না ছিলো নিশ্চয়তা। দীর্ঘদিন পর হলেও পাশ্ববর্তী রাষ্টের নাগরিকত্ব পাওয়ায় আমরা নিজেদের অস্তিত্ব খুঁজে পেলাম।
লালমনিরহাট: শনিবার সকাল ৬টায় লালমনিরহাটের উত্তর গোতামারী ছিটমহলে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে লাল সবুজের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন হাতীবান্ধার ইউএনও মাহবুবুর রহমান। এ সময় অšে^ষা শিল্পী সংস্কৃতি গোষ্ঠীর বাধ্যযন্ত্রের সহযোগিতায় সদ্য মুক্তি পাওয়া মানুষগুলো রাতভর আনন্দ উল্লাস শেষে শনিবার প্রত্যুষে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে মনের আনন্দে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে নিজেকে ধন্য মনে করছেন। একই ভাবে লালমনিরহাটে সাথে মিশে ৫৯ টি ছিটমহলেও পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্র মতে, এই প্রথম বারের মতো বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ১১১টি ছিটমহলে সরকারী ভাবে উত্তোলন করা হলো জাতীয় পতাকা, জানানো হলো রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধা। বাংলাদেশের নাগরিক স্বীকৃতি দিয়ে ছিটবাসীদের মিষ্টি মুখ করে সরকারী ভাবে বরন করেন সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।
শনিবার সকালে নতুন উত্তর গোতামারীতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বাচ্চু, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মতিন প্রধান, কালীগঞ্জ কেইউপি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খুরশীদুজামান আহম্মেদ, স্থানীয় প্রবীন ছকবর আলী।
উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালের স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ৩১ জুলাই মধ্যরাতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিনময় হলো ১৬২টি ছিটমহল। ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতীয় ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের ভূখণ্ড এবং ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ভারতের ভূখণ্ড হয়ে গেছে।