হ্যাপি ফাদার্স ডে : আমার বাবা

- প্রকাশের সময় : ১০:৪২:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ জুন ২০১৫
- / ১১৭১ বার পঠিত
টাঙ্গাইল: আমার বাবা – যাকে আমি পরিশ্রম করতে দেখেছি । দেখেছি দারিদ্রতার বিরুদ্বে কিভাবে পরিশ্রম করে বেঁচে থাকতে হয়। নদী-ভাঙ্গা বৃদ্ব এই মানুষটা এখনও থেমে যায়নি। আমাদের ৬ ভাইয়ের লেখাপড়ার ব্যপারে তিনি সবসময়ই সচেতন থাকতেন। শহরের সবচেয়ে নামকরা স্কুল আর কলেজে তিনি আমাদের পড়িয়েছেন। যদিও নাম-যশ আর খ্যাতিতে আমারা কেও আমাদের বাবাকে ছুতে পারিনি। এখনও টাঙ্গাইল শহরে অনেকেই বলে তুমি অমুল্য—-ভাইয়ের ছেলে—- আজাদ টেইলার্সের মালিক। আমার বাবাকে দেখছি এখনও তিনি লন্ড্রী থেকে ইস্ত্রি করা কেতাদুরস্থ কাপড় পরেন।
আমি যখন ক্লাস সিক্স বা সেভেনে পড়ি তখন বাবা কাজ শেষে রাত ৯-১০ টায় বাসায় ফিরতেন। সেই দুরের থেকে বাবার জুতোর শব্দ শুনতে পেতাম আর পূলকিত হতাম যে বাবা আসছেন। বাবা হাতে করে নিয়ে আসতেন কলার পাতায় মোড়ানো মাখন-পনির যা সারারাত একটা জলভরা পাত্রের উপর ভাসিয়ে রাখতেন আর সকালে আমরা সেটা দিয়ে নাস্তা করতাম। আহা কি যে মজা পেতাম !!
বাবা যখন তার ব্যবসা বদল করে ইলেকট্রনিক্সের ব্যবসা শুরু করলেন । তখন বাবা আরো ভিষন ব্যস্ত হয়ে পরেন। যদিও সে সময় আমি আমার বাবার কাছ থেকে তখন অনেকটা হারিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু গত কয়েক বছরে বাবার ব্যবসাটা ভাল চলেনি। আমি দেখেছি তিনি তাতেও ভেঙ্গে পরেননি।তিনি কয়েকটি এনজিওর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে সংসারের ঘানি টেনেছেন। টাঙ্গাইল শহরের সবচেয়ে বড় রোড হলো ভিক্টোরিয়া রোড। তিনি এখনও সে রোডের ব্যবসায়ীদের নেতা। মালিক সমিতির সভাপতি ছিলেন কয়েকবার।
কিন্তু ইদানিং মার্কেট ভেঙ্গে নতুন মার্কেট করার সময়কালীন তাকে অনেকটা হতাশাগ্রস্থ লাগছে। তিনি দাড়ি রেখেছেন। যদিও আমি দাড়ি রাখার ঘোর বিরোধী । প্রতিদিন সকালে বাবাকে দেখেছি সেভেন ও ক্লক ব্লেড দিয়ে ক্লিন শেভ করতে। সেই বাবাকে দাড়িওয়ালা দেখতে আমার ভাল লাগেনা। আমি সেটা তাকে বলতেও পারিনা।
আমাদের বাড়ীতে এমন কোন ফলের গাছ নেই যে তিনি তা লাগাননি। সারাদিন পরিশ্রম করেন। কিন্তু শরীর সেটা মানবে কেন? ওটাতো যন্ত্র নয়। তাই মাঝে মাঝে বাবাকে যখন বিছানায় অসুস্থ হয়ে পরে থাকতে দেখি তখন আমার আর কিছু ভাল লাগেনা।(ফেসবুক থেকে)