নিউইয়র্ক ১০:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

হার্ডিঞ্জের শতবর্ষ ৪ মার্চ

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১০:০২:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ মার্চ ২০১৫
  • / ১০৩৬ বার পঠিত

পাবনা: ব্রিটিশ আমলের কথা। তখনও সড়ক যোগাযোগ শুরু হয়নি। সড়কে চলত গরু, ঘোড়া ও গাধায় টানা গাড়ি। সেই সময়ে অবিভক্ত ভারতে রেল যোগাযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা করে সরকার। আসাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ সহজ করার লক্ষ্যে পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রয়োজন পড়ে। খুলনা থেকে দিনাজপুরের পার্বতীপুর পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের জন্য ওই সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়। প্রায় ২৪ হাজার শ্রমিক পাঁচ বছর কাজ করে ইস্পাত দিয়ে সেতুটি তৈরি করে।
১৯১৫ সালের ৪ মার্চ সেই সেতু চলাচলের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। ওই ঘটনার ১০০ বছর পূর্ণ হচ্ছে ৪ মার্চ বুধবার। এই দিনে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশীতে তৈরি ওই সেতু উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ। তাঁর নামানুসারেই সেতুটির নামকরণ করা হয়। ঈশ্বরদী উপজেলা সদর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দক্ষিণে পাকশীতে পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত হার্ডিঞ্জ সেতু রাজধানী ঢাকা ও দেশের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সেতুর একপাশ পাকশীর সাঁড়াঘাট, অন্য পাশ কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার দামুকদিয়া রায়টাঘাট। পার্বতীপুর থেকে খুলনা পর্যন্ত ব্রডগেজ (প্রশস্ত) রেলপথকে সংযুক্ত করেছে এই সেতু।
একনজরে ইতিহাস: রেলওয়ে পাকশী বিভাগের সেতু প্রকৌশলীর কার্যালয়ে সংরক্ষণ করা ‘দ্য হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ওভার দ্য লোয়ার গাঙ্গেজ অ্যাট সাঁড়া’ বই থেকে জানা যায়, বিগত ১৮৮৯ সালে সেতুটি নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়। ১৯০২ সালে স্যার এফ জে ই স্প্রিং সেতুর ওপর একটি বিস্তারিত প্রকল্প প্রস্তুত করেন। সেতুটির স্থান নির্বাচন নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। ১৯০৭ সালে একটি কমিটি সাঁড়ায় বাণিজ্যিক সুবিধার কথা বিবেচনা করে সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করে। এটি অনুমোদনের পর ১৯০৮ সালে রেলওয়ের প্রকৌশলী স্যার রবার্ট গেইলসকে হার্ডিঞ্জ সেতু নির্মাণের জন্য প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সেতুটির জরিপ কাজ শুরু হয় ১৯০৯ সাল থেকে। জরিপ শেষে পদ্মার দুই পাড়ে সেতু রক্ষাবাঁধ নির্মাণ শুরু হয় ১৯১০-১৯১১ সালে। সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল ব্রেথ ওয়াইট অ্যান্ড ক্লার্ক। ১৯১২ সালে শুরু হয় সেতুর গাইড ব্যাংক নির্মাণের কাজ। পাশাপাশি সেতুর গার্ডার নির্মাণের জন্য কূপ খননের কাজ চলতে থাকে। সে সময়ের খর¯্রােতা পদ্মা নদীতে প্রথমে পাঁচটি কূপ খনন করা হয়। কূপ খনন শেষ হওয়ার পরে মোট ১৫টি স্প্যান গড়ে তোলা হয়। সেতুর দুই পাশে ৭৫ ফুট পর পর আরো তিনটি ল্যান্ড স্প্যান আছে। ২৪ হাজার ৪০০ শ্রমিক পাঁচ বছর কাজ করে ১৯১৫ সালে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করে। সেতু নির্মাণে সেই সময়ে ব্যয় হয় চার কোটি ৭৫ লাখ ৫০ হাজার ভারতীয় রুপি। সেতু নির্মাণ ও ব্যাজ রক্ষা বাঁধের জন্য ১৬ কোটি ঘনফুট মাটির কাজ করা হয়। মোট ইস্পাত ব্যবহার করা হয় ৩০ হাজার মেট্রিক টন, এক লাখ ৭০ হাজার ড্রাম সিমেন্ট ও ১২ লাখ টন কিলড সিমেন্ট।
ওই বইয়ে আরো লেখা আছে, ১৯১৪ সালের শেষ নাগাদ সেতুর কাজ শেষ হওয়ার পর ১৯১৫ সালের ১ জানুয়ারী পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম মালগাড়ি ট্রেন নিম্নমুখে (অর্থাৎ খুলনা অভিমুখে) চালানো হয়। একই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারী ঊর্ধ্বমুখে (অর্থাৎ পার্বতীপুর অভিমুখে) দ্বিতীয় পরীক্ষামূলক ট্রেনটি সেতু অতিক্রম করে। ১৯১৫ সালের ৪ মার্চ সেতুর ওপর ডাবল লাইন দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করেন তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ।
একাত্তরে অঙ্গহানি: ‘বাংলাপিডিয়া’য় উল্লেখ আছে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সেতুর ১২তম স্প্যানটি মর্টারের আঘাতে ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। স্প্যানটির একপ্রান্ত ভিত্তিস্তম্ভের সঙ্গে বিপজ্জনকভাবে ঝুলছিল এবং আরেক প্রান্তের ১২ দশমিক ১৯ মিটার অংশ ধ্বংস হয়েছিল। ১৫তম স্প্যানের একটি ক্রুজগার্ডার ও দুটি স্ট্রিগার এবং দ্বিতীয় ভিত্তিসন্তম্ভের ওপর ইস্পাত ট্যাসেলও মর্টারের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে সেতুর ওপর দিয়ে রেল যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
পাকশী রেল সূত্র জানায়, স্বাধীনতার পর ব্রিটিশ সরকারের খরচে সেতুর ভাঙা অংশ উদ্ধার ও মেরামতকাজ শুরু হয়। মেরামতের পর ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর হার্ডিঞ্জ সেতুর ওপর দিয়ে আবার রেলচলাচল শুরু হয়। এটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী।
যে কারণে অনন্য: রেল সূত্র জানায়, এই সেতুর ফাউন্ডেশন (ভীত) গভীরতম পানির সর্বনিম্ন সীমা থেকে ১৬০ ফুট (১৯২ এমএসএল মার্লির) নিচে। সেতুর ১৫ নম্বর স্প্যানের কুয়া নির্মিত হয়েছে পানির নিম্ন সীমা থেকে ১৫৯ দশমিক ৬০ ফুট নিচে এবং সর্বোচ্চ সীমা থেকে ১৯০ দশমিক ৬০ ফুট বা সমুদ্র গড় উচ্চতা থেকে ১৪০ ফুট নিচে। সেই সময়ে পৃথিবীতে এ ধরনের ভিত্তির মধ্যে এটাই ছিল গভীরতম। রেলওয়ে পাকশী বিভাগের সেতু প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘১৯৭২ সালে মেরামতের পরে সেতুতে আর কোনো ভাঙাগড়া বা মেরামত কাজ হয়নি। বিভাগীয়ভাবে প্রতি পাঁচ বছর পর পর সেতু রং করা হয়।’
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন প্রফেসর ইকবাল মতিন বলেন, ‘হার্ডিঞ্জ সেতুর নির্মাণশৈলী আজও প্রকৌশলীদের আগ্রহের বিষয়। লাইফ টাইম (মেয়াদ) পার হয়ে যাওয়ার পরও এতে কোনো ফাটল ধরেনি। এমনকি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় গোলার আঘাতে সেতুর একটি স্প্যান ভেঙে যাওয়া ও পরে তা মেরামতের পরও সেতুর কাঠামে এবং স্থিতিশীলতা দুর্বল হয়ে পড়েনি। এটা প্রকৌশলীদের বিস্ময়ের বিষয়। সেতুটি যাতে আরো ১০০ বছর টিকে থাকতে পারে এ জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’
নীরবে শতবর্ষ: পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোল্লা মাহমুদ হাসান বলেন, ‘ঐতিহাসিক হার্ডিঞ্জ সেতু শুধু প্রকৌশলীদের আগ্রহের বিষয় বা পর্যটকদের ভালো লাগার স্থাপনা নয়, এটি একটি সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই)। সেখানে নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। স্থাপনাটি রেলওয়ের, তারা আমাদের সঙ্গে শতবর্ষ পূর্তি নিয়ে যোগাযোগ করেনি।’
পাকশী রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘হার্ডিঞ্জ সেতুর শতবর্ষ নিয়ে আমাদের কোনো কর্মসূচি নেই। রেল বিভাগ থেকেও কোনো কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়নি।’ তিনি জানান, স্থানীয় কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন শতবর্ষ পালনের দিন সেতুর নিচে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।(দৈনিক কালের কন্ঠ)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

হার্ডিঞ্জের শতবর্ষ ৪ মার্চ

প্রকাশের সময় : ১০:০২:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ মার্চ ২০১৫

পাবনা: ব্রিটিশ আমলের কথা। তখনও সড়ক যোগাযোগ শুরু হয়নি। সড়কে চলত গরু, ঘোড়া ও গাধায় টানা গাড়ি। সেই সময়ে অবিভক্ত ভারতে রেল যোগাযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা করে সরকার। আসাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ সহজ করার লক্ষ্যে পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রয়োজন পড়ে। খুলনা থেকে দিনাজপুরের পার্বতীপুর পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের জন্য ওই সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়। প্রায় ২৪ হাজার শ্রমিক পাঁচ বছর কাজ করে ইস্পাত দিয়ে সেতুটি তৈরি করে।
১৯১৫ সালের ৪ মার্চ সেই সেতু চলাচলের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। ওই ঘটনার ১০০ বছর পূর্ণ হচ্ছে ৪ মার্চ বুধবার। এই দিনে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশীতে তৈরি ওই সেতু উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ। তাঁর নামানুসারেই সেতুটির নামকরণ করা হয়। ঈশ্বরদী উপজেলা সদর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দক্ষিণে পাকশীতে পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত হার্ডিঞ্জ সেতু রাজধানী ঢাকা ও দেশের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সেতুর একপাশ পাকশীর সাঁড়াঘাট, অন্য পাশ কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার দামুকদিয়া রায়টাঘাট। পার্বতীপুর থেকে খুলনা পর্যন্ত ব্রডগেজ (প্রশস্ত) রেলপথকে সংযুক্ত করেছে এই সেতু।
একনজরে ইতিহাস: রেলওয়ে পাকশী বিভাগের সেতু প্রকৌশলীর কার্যালয়ে সংরক্ষণ করা ‘দ্য হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ওভার দ্য লোয়ার গাঙ্গেজ অ্যাট সাঁড়া’ বই থেকে জানা যায়, বিগত ১৮৮৯ সালে সেতুটি নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়। ১৯০২ সালে স্যার এফ জে ই স্প্রিং সেতুর ওপর একটি বিস্তারিত প্রকল্প প্রস্তুত করেন। সেতুটির স্থান নির্বাচন নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। ১৯০৭ সালে একটি কমিটি সাঁড়ায় বাণিজ্যিক সুবিধার কথা বিবেচনা করে সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করে। এটি অনুমোদনের পর ১৯০৮ সালে রেলওয়ের প্রকৌশলী স্যার রবার্ট গেইলসকে হার্ডিঞ্জ সেতু নির্মাণের জন্য প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সেতুটির জরিপ কাজ শুরু হয় ১৯০৯ সাল থেকে। জরিপ শেষে পদ্মার দুই পাড়ে সেতু রক্ষাবাঁধ নির্মাণ শুরু হয় ১৯১০-১৯১১ সালে। সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল ব্রেথ ওয়াইট অ্যান্ড ক্লার্ক। ১৯১২ সালে শুরু হয় সেতুর গাইড ব্যাংক নির্মাণের কাজ। পাশাপাশি সেতুর গার্ডার নির্মাণের জন্য কূপ খননের কাজ চলতে থাকে। সে সময়ের খর¯্রােতা পদ্মা নদীতে প্রথমে পাঁচটি কূপ খনন করা হয়। কূপ খনন শেষ হওয়ার পরে মোট ১৫টি স্প্যান গড়ে তোলা হয়। সেতুর দুই পাশে ৭৫ ফুট পর পর আরো তিনটি ল্যান্ড স্প্যান আছে। ২৪ হাজার ৪০০ শ্রমিক পাঁচ বছর কাজ করে ১৯১৫ সালে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করে। সেতু নির্মাণে সেই সময়ে ব্যয় হয় চার কোটি ৭৫ লাখ ৫০ হাজার ভারতীয় রুপি। সেতু নির্মাণ ও ব্যাজ রক্ষা বাঁধের জন্য ১৬ কোটি ঘনফুট মাটির কাজ করা হয়। মোট ইস্পাত ব্যবহার করা হয় ৩০ হাজার মেট্রিক টন, এক লাখ ৭০ হাজার ড্রাম সিমেন্ট ও ১২ লাখ টন কিলড সিমেন্ট।
ওই বইয়ে আরো লেখা আছে, ১৯১৪ সালের শেষ নাগাদ সেতুর কাজ শেষ হওয়ার পর ১৯১৫ সালের ১ জানুয়ারী পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম মালগাড়ি ট্রেন নিম্নমুখে (অর্থাৎ খুলনা অভিমুখে) চালানো হয়। একই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারী ঊর্ধ্বমুখে (অর্থাৎ পার্বতীপুর অভিমুখে) দ্বিতীয় পরীক্ষামূলক ট্রেনটি সেতু অতিক্রম করে। ১৯১৫ সালের ৪ মার্চ সেতুর ওপর ডাবল লাইন দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করেন তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ।
একাত্তরে অঙ্গহানি: ‘বাংলাপিডিয়া’য় উল্লেখ আছে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সেতুর ১২তম স্প্যানটি মর্টারের আঘাতে ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। স্প্যানটির একপ্রান্ত ভিত্তিস্তম্ভের সঙ্গে বিপজ্জনকভাবে ঝুলছিল এবং আরেক প্রান্তের ১২ দশমিক ১৯ মিটার অংশ ধ্বংস হয়েছিল। ১৫তম স্প্যানের একটি ক্রুজগার্ডার ও দুটি স্ট্রিগার এবং দ্বিতীয় ভিত্তিসন্তম্ভের ওপর ইস্পাত ট্যাসেলও মর্টারের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে সেতুর ওপর দিয়ে রেল যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
পাকশী রেল সূত্র জানায়, স্বাধীনতার পর ব্রিটিশ সরকারের খরচে সেতুর ভাঙা অংশ উদ্ধার ও মেরামতকাজ শুরু হয়। মেরামতের পর ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর হার্ডিঞ্জ সেতুর ওপর দিয়ে আবার রেলচলাচল শুরু হয়। এটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী।
যে কারণে অনন্য: রেল সূত্র জানায়, এই সেতুর ফাউন্ডেশন (ভীত) গভীরতম পানির সর্বনিম্ন সীমা থেকে ১৬০ ফুট (১৯২ এমএসএল মার্লির) নিচে। সেতুর ১৫ নম্বর স্প্যানের কুয়া নির্মিত হয়েছে পানির নিম্ন সীমা থেকে ১৫৯ দশমিক ৬০ ফুট নিচে এবং সর্বোচ্চ সীমা থেকে ১৯০ দশমিক ৬০ ফুট বা সমুদ্র গড় উচ্চতা থেকে ১৪০ ফুট নিচে। সেই সময়ে পৃথিবীতে এ ধরনের ভিত্তির মধ্যে এটাই ছিল গভীরতম। রেলওয়ে পাকশী বিভাগের সেতু প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘১৯৭২ সালে মেরামতের পরে সেতুতে আর কোনো ভাঙাগড়া বা মেরামত কাজ হয়নি। বিভাগীয়ভাবে প্রতি পাঁচ বছর পর পর সেতু রং করা হয়।’
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন প্রফেসর ইকবাল মতিন বলেন, ‘হার্ডিঞ্জ সেতুর নির্মাণশৈলী আজও প্রকৌশলীদের আগ্রহের বিষয়। লাইফ টাইম (মেয়াদ) পার হয়ে যাওয়ার পরও এতে কোনো ফাটল ধরেনি। এমনকি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় গোলার আঘাতে সেতুর একটি স্প্যান ভেঙে যাওয়া ও পরে তা মেরামতের পরও সেতুর কাঠামে এবং স্থিতিশীলতা দুর্বল হয়ে পড়েনি। এটা প্রকৌশলীদের বিস্ময়ের বিষয়। সেতুটি যাতে আরো ১০০ বছর টিকে থাকতে পারে এ জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’
নীরবে শতবর্ষ: পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোল্লা মাহমুদ হাসান বলেন, ‘ঐতিহাসিক হার্ডিঞ্জ সেতু শুধু প্রকৌশলীদের আগ্রহের বিষয় বা পর্যটকদের ভালো লাগার স্থাপনা নয়, এটি একটি সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই)। সেখানে নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। স্থাপনাটি রেলওয়ের, তারা আমাদের সঙ্গে শতবর্ষ পূর্তি নিয়ে যোগাযোগ করেনি।’
পাকশী রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘হার্ডিঞ্জ সেতুর শতবর্ষ নিয়ে আমাদের কোনো কর্মসূচি নেই। রেল বিভাগ থেকেও কোনো কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়নি।’ তিনি জানান, স্থানীয় কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন শতবর্ষ পালনের দিন সেতুর নিচে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।(দৈনিক কালের কন্ঠ)